পাবলিক ট্রান্সপোর্টে গেলেই সামনের গাড়ির পেছনে দেখা যায় রকমারি সব লেখা। কোথাও ‘দেখবি আর ‘পাশের বাড়ির মেয়েটির কথা ভেবে হিংসে হয়। কেন জানো? সে যে তোমায় সকাল-সন্ধে দেখে। আমি তো দেখি না। এই ভারী অন্যায়। জানলাটা বন্ধ করে রেখো।’— নায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পাবলিক বাসে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে বের করে পড়ছেন এই প্রেমপত্র। পাশে দাঁড়ানো সহযাত্রীরা উঁকি মারছেন। ব্যক্তিগত গোপনীয় চিঠিও পাবলিক ট্রান্সপোর্টে আগলে রেখেছেন কিন্তু সহযাত্রীদের উৎসাহের সীমা নেই। ষাটের এবং সত্তরের দশকে এই ছিল কলকাতার জনপরিবহণ বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টের অবস্থা। ১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায় পাবলিক ট্রান্সপোর্টের এই এক টুকরো দৃশ্য তুলে ধরেন ‘অপুর সংসার’-এ, শহর বদলেছে। এসেছে নিত্যনতুন প্রযুক্তি। তবু বদলায়নি পাবলিক ট্রান্সপোর্টের আসল ছবিটা। লোকাল ট্রেন, বাস, ট্রাম— সবই হয়ে উঠেছে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের গুরুত্বপূর্ণ আধার।
আরও পড়ুন-নতজানু হই ছন্দের কাছে
বিশ্ব পাবলিক ট্রান্সপোর্ট দিবস : পরিক্রমা
সারা পৃথিবীতে জনপরিবহণ বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। প্রত্যেকে চাইছেন নাগরিকদের আরামদায়ক পরিষেবা দিতে। বিশ্ব জুড়ে উদযাপন করা হচ্ছে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ডে। প্রতি বছর নভেম্বর মাসের ১০ তারিখে এই দিনটি পালিত হয় বা উদযাপিত হয়। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমানো, যানজট কমানো এবং পরিবেশকে সুস্থ রাখার উপরই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই দিন আরও একবার বিশ্বের নাগরিকদের জানিয়ে দেওয়া হয় বাস-ট্রাম-পাতাল রেল এই পরিবহণকে বেশি বেশি করে ব্যবহার করতে। এতে বাতাসে কার্বনের পরিমাণ কমবে দূষণমুক্ত শহর এবং শহরতলির স্বপ্ন দেখতে পারবে আর উন্নত শহরেও গতি আসবে। সুপরিকল্পিত এই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বদলে দেবে বিশ্বের পরিবহণের চেহারা।
দিনের পর দিন শহর এবং নগর প্রসারিত হচ্ছে। পরিবেশ সংকটের সম্মুখে আসছে শুধু মাত্র পরিবহণের কারণে। শহর যত প্রসারিত হয় গাড়ির ব্যবহার তত বাড়ে। যানজট, বায়ুদূষণ এই সমস্যাগুলি প্রধান হয়ে ওঠে। এর মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজন সুপরিকল্পিত জনপরিবহণ ব্যবস্থা। এই দিনটিতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি বিভিন্ন পরিবেশ গোষ্ঠী এবং নগর পরিকল্পনা বিষয়ক সংস্থা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সচেতনতার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়। যাত্রীদের বোঝানোর চেষ্টা করে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ কমানো, বাতাসের গুণমান বাড়ানো, যানজট কমানো এবং বর্ধিত শহরে অনায়াসে যাতায়াতের সম্ভাবনা তৈরি করে। বিশ্ব পাবলিক ট্রান্সপোর্ট দিবসের ইতিহাস তাই পরিবহণের একটা স্থায়ী সমাধান খোঁজার চেষ্টা করে। পরিবেশ বান্ধব পরিবহণকে আশ্বস্ত করে। যাতে ব্যক্তিসমাজ এবং রাষ্ট্র উভয়েরই কল্যাণ হয়।
তেঁতুল পাতায় ৯ জন
সাধারণত পাবলিক ট্রান্সপোর্টে শেয়ার্ড প্যাসেঞ্জার পরিবহণের সুযোগ রয়েছে। কখনও এই জনপরিবহণ পরিচালিত হয় সরকারি সংস্থা আবার কখনও বা পরিচালিত হয় বেসরকারি সংস্থা দ্বারা। দিনে দিনে বিশ্বের উন্নত শহরগুলি এই জনপরিবহণকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ট্রাম, বাস, মেট্রো ছাড়াও ফেরি, কেবল কার, ফেনিকুলার, শেয়ার্ড ট্যাক্সি, সাইকেল শেয়ারিং, স্কুটার শেয়ারিং, প্যারাট্রানজিট পরিষেবা, মনোরেল, উচ্চগতির গাড়ি, এরিয়াল ট্রামওয়ে— এগুলো সবই পাবলিক ট্রান্সপোর্টে বৈচিত্র্য এনে দিয়েছে। এরিয়াল ট্রামওয়ে গন্ডোলা নামেও পরিচিত। পাহাড়ি এলাকায় এই এরিয়াল ট্রামওয়ে দেখা যায়।
পাবলিক ট্রান্সপোর্ট আসলে যাত্রীকে বেশ কিছু সুবিধা দেওয়ার জন্য অঙ্গীকার করে। এর ফলে রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমে যায়। ফলে যানজটের মাত্রাও কমে। ফলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণও কমে। পাবলিক ট্রান্সপোর্টের সবথেকে সুবিধা খরচের ক্ষেত্রে। ব্যক্তি গাড়ির মালিকানা ও রক্ষণাবেক্ষণের চেয়ে বেশি লাভজনক। পার্কিংয়ের যন্ত্রণার থেকে মুক্তি পাওয়া যায় পাবলিক ট্রান্সপোর্টে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয় যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে পরিবেশগত সুরক্ষা।
আরও পড়ুন-জনসংযোগ, রোড শো, পথসভা
আস্তে লেডিস, কোলে বাচ্চা
নগরায়ণ ভ্রমণের চাহিদা ও শহরাঞ্চলে ভ্রমণের সংখ্যা বাড়িয়েছে। আনুমানিক হিসাবগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, ২০৩০ সালের মধ্যে পরিবহণের সমস্ত পদ্ধতিতে মাথাপিছু ভ্রমণের হার ০.৮-১.৫৫ থেকে বেড়ে ১-২ হবে৷ তা সত্ত্বেও, শহুরে ভ্রমণের এই বৃদ্ধি যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা, আদর্শ অবস্থার থেকে কম ব্যস্ততম সময় (পিক-আওয়ার), ভ্রমণ অভিজ্ঞতা, অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও পরিবেশগত অবনতি-সহ প্রতিকূল পরিবহণ বাহ্যিকতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা ও চেন্নাই, এই মেট্রোপলিটন শহরগুলিতে বার্ষিক প্রায় ১৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের যানজট খরচ হয়। ২০২২ সালে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি ৪৬১,৩১২টি সড়ক দুর্ঘটনা রিপোর্ট করেছে, যার ফলে ১৬৮,৪৯১ জন মারা গিয়েছেন, এবং ৪৪৩,৩৬৬ জন আহত হয়েছেন, যা গত বছরের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১১.৯ শতাংশ, মৃত্যুতে ৯.৪ শতাংশ এবং আহত হওয়ার ঘটনার ১৫.৩ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিনিধিত্ব করে।
তার উপর, শহরগুলির মধ্যে পিক আওয়ার ভ্রমণের গতি ২৬-১৭ কিমি প্রতি ঘণ্টা থেকে ৮-৬ কিমি প্রতি ঘণ্টায় হ্রাস পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ ক্রমবর্ধমান যানজট শহরগুলিতে বায়ুর মানও খারাপ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালে দিল্লি, কলকাতা ও মুম্বইয়ের বায়ুর গুণমান যথাক্রমে ৩০৪, ২৩৩ এবং ১৫৮ এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) মান-সহ বিপজ্জনক, অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ও অস্বাস্থ্যকর হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ হয়েছিল।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় টেঁকসই মাস র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম (এমআরটিএস)-এর জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা প্রয়োজন। এই বাধ্যবাধকতায় সাড়া দিয়ে শহরগুলি বাস-ভিত্তিক বিকল্পগুলির চেয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে রেল-ভিত্তিক গণ-পরিবহণ ব্যবস্থাগুলিতে বিনিয়োগ করেছে বা বিনিয়োগ করতে চায়।
আরও পড়ুন-কেরলে কংগ্রেস বলছে বাম-বিজেপি ভাই-ভাই
ভারতীয় শহরগুলিতে
গণ-পরিবহণের হালচাল
বর্তমানে, ২৪টি ভারতীয় শহরে এমআরটিএস রয়েছে এবং ১৬টিতে মেট্রো রেল বা বিআরটি সমন্বিত একক ধরনের দ্রুত ট্রানজিট ব্যবস্থা রয়েছে। মাত্র পাঁচটি শহরে শহরতলির রেল, মেট্রো এবং বিআরটিএসের সমন্বয়-সহ দুই বা ততোধিক দ্রুত ট্রানজিট ব্যবস্থা রয়েছে। রেল-ভিত্তিক ট্রানজিট সিস্টেমের মধ্যে মেট্রো রেল ব্যবস্থা বর্তমানে ১৬টি শহরে চালু রয়েছে, ছ’টি শহরে নির্মাণাধীন এবং চারটি শহরে মূল্যায়ন পর্যায়ে রয়েছে। বিশটি শহর মেট্রো লাইটের সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন পরিচালনা করছে, আর তিনটি একই সঙ্গে মেট্রো নিও-র সম্ভাব্যতা অন্বেষণ করছে।
যাই হোক, এই সব তথ্য বোঝায় যে ব্যবহারকারীর সংখ্যা (রাইডারশিপ) কোনও ভারতীয় শহরের চালু মেট্রো রেল ব্যবস্থার ক্যারেজ ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মেট্রো রেল ব্যবস্থাগুলি তাদের বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদনে (ডিপিআর) রাইডারশিপের যে পূর্বাভাস দিয়েছিল তা তারা অর্জন করতে পারেনি৷ মুম্বই (পর্যায় ১) তার আনুমানিক রাইডারশিপের ৮৯ শতাংশ অর্জন করেছে, যেখানে চেন্নাই ও হায়দরাবাদ যথাক্রমে ৩৫ শতাংশ ও ২৬ শতাংশে পৌঁছেছে। উপরন্তু, বাকি ১৩টি শহর আনুমানিক ২০ শতাংশ রাইডারশিপ অর্জনের জন্য লড়াই করেছে।
বিপরীতভাবে, ন’টি শহরে বাস-ভিত্তিক ট্রানজিট ব্যবস্থার জন্য রাইডারশিপ ডেটার লেখককৃত একটি বিশ্লেষণ যথেষ্ট বৈষম্য প্রকাশ করে এবং বেশিরভাগ শহরে মেট্রো রেলের রাইডারশিপের চেয়ে বেশি বাসযাত্রী সংখ্যা (কমিউটার ভলিউম) প্রদর্শন করে। সমস্ত শহরে বাস বহনের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও যাত্রীরা এই শহরগুলিতে রেল-ভিত্তিক ট্রানজিট সিস্টেমের তুলনায় ০.৯ থেকে ১৯.৭ গুণ বেশি পাবলিক বাস ব্যবহার করেন।
রেল-ভিত্তিক ট্রানজিট সিস্টেমের মধ্যে মেট্রো রেল ব্যবস্থা বর্তমানে ১৬টি শহরে চালু রয়েছে, ছ’টি শহরে নির্মাণাধীন এবং চারটি শহরে মূল্যায়ন পর্যায়ে রয়েছে।
বেশিরভাগ ভারতীয় শহর আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রকের প্রতি লক্ষ জনসংখ্যার জন্য ন্যূনতম ৪০-৬০ বাসের বহরের নির্দেশিকা মেনে চলে না। প্রতি লক্ষ জনসংখ্যার বাসের সংখ্যা শহর থেকে শহরে পরিবর্তিত হয়, লখনউয়ে ছ’টি থেকে সর্বাধিক বেঙ্গালুরুর ৪৫ পর্যন্ত, আর অন্য সমস্ত শহর এই বর্ণালির মধ্যে পড়ে।
অপ্রতুল বাস ফ্লিট সত্ত্বেও বাস-ভিত্তিক ট্রানজিট ব্যবস্থার উচ্চতর রাইডারশিপ এবং মেট্রো রেল ব্যবস্থার কম রাইডারশিপ প্রমাণ করে ভারতীয় শহরগুলি পরিবহণের বর্তমান পদ্ধতিগুলিকে, বিশেষ করে বাসগুলিকে, উন্নত বা অপ্টিমাইজ করার পরিবর্তে মেগা রেল-ভিত্তিক প্রকল্পগুলি নির্মাণের উপর বেশি জোর দেয়। এটি এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যেখানে শহরের মধ্যে গণ-পরিবহণের সমস্ত পদ্ধতি একে অপরের পরিপূরক হওয়ার পরিবর্তে একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, যার ফলে গণ-পরিবহণের সমস্ত পদ্ধতি অসংহত ও অ-টেঁকসই হয়ে যায়।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
পাবলিক-এর মার কেওড়াতলা পার
দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরবাসীকে গণপরিবহণ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। মানুষ একেবারেই গণপরিবহণ ব্যবহার করতে অনিচ্ছুক। তাঁরা হয় নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করেন নয়তো ক্যাব ব্যবহার করেন।
এতে যেমন বৃদ্ধি পায় বায়ুদূষণের মাত্রা, তেমনই রাস্তায় যানজটও লেগে থাকে। কিন্তু শহরবাসীর গণপরিবহণ ব্যবহার করতে অনীহা কেন? সম্প্রতি এর উপর একটি সমীক্ষা (Government Survey on transport) চালিয়েছে সরকার। তাতে জানা গিয়েছে, শহরগুলিতে গণ-পরিবহণ পরিষেবার অনিশ্চয়তা, পরিবহণের জন্য অনেক বেশিক্ষণ অপেক্ষা করা, সফরে দেরি হওয়া, বাসে অমানুষিক ভিড় এবং একাধিক বাস স্টপ হওয়ার ফলে শহরবাসী এগুলি ব্যবহার করতে চান না। দেশের ৪৬টি শহরে ২ লক্ষ মানুষের উপর এই সমীক্ষা চালিয়েছিল আবাসন মন্ত্রালয়।
হিংসা কোরো না, তোমারও হবে
সমীক্ষা অনুসারে, ৬৪ শতাংশ মানুষ গণপরিবহণের ভরসা করেন না। পাশাপাশি, ৬৮ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, বাস ও বাস স্টপে অমানুষিক ভিড় হয়। তাই তাঁরা এগুলি ব্যবহার করেন না। এই সমীক্ষায় ১৫ হাজারেরও বেশি বাস চালক ও কন্ডাক্টরদের ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা যানজট, অটো রিকশা এবং বাস থামবার জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা অটো রিকশা নিয়ে নাজেহাল।
সমীক্ষা অনুসারে, ৫৩ শতাংশ মানুষ সফর করার সময় নগদ টাকা দিতে পছন্দ করেন। অন্যদিকে, ৫৪ শতাংশ মানুষ ডিজিটাল মাধ্যমে টাকা দিতে পছন্দ করেন। যদিও অটো রিকশা বা ক্যাবের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ যাত্রীই নগদ লেনদেন পছন্দ করেন।
বাস চালক ও কন্ডাক্টররাও বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। যেমন কাজ করতে করতে বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন তাঁরা। প্রায় ৪০ শতাংশ বাস চালক জানিয়েছেন খারাপ আবহাওয়া, নিয়মিত বাসের রক্ষণাবেক্ষণ না করা এবং বাসের খারাপ হয়ে যাওয়ার ফলে তাঁরা নিরাপদ বোধ করেন না। এছাড়াও বাস ডিপোতে ডিউটির জন্য অনেক বেশিক্ষণ অপেক্ষা এবং অনিয়মিত কাজের সময় ও কম বিরতির ফলেও কাজ করতে অসুবিধার কথা স্বীকার করেন তাঁরা।
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর মুকুটে ৬৪টি হীরে : ব্রাত্য
দেখলে হবে খরচা আছে
ভারত অদূর ভবিষ্যতে পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন মার্কেটে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখতে পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের মধ্যে, রাজস্ব US$7.58 বিলিয়নে পৌঁছবে বলে অনুমান করা হয়েছে। বার্ষিক বৃদ্ধির হার হবে (CAGR 2024-2029) 4.71%-সহ এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার ফলে ২০২৯ সালের মধ্যে বাজারের পরিমাণ US$9.54bn হবে।
কিন্তু, ভারতের পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন মার্কেটে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২৯ সালের মধ্যে ১.২০ বিলিয়ন ব্যবহারকারীতে পৌঁছবে।
ব্যবহারকারী অনুপ্রবেশ, যা ২০২৪ সালে ৬৯.৫% হলেও, ২০২৯ সালের মধ্যে কিছুটা কমে ৮০.1% হবে। ব্যবহারকারী প্রতি গড় আয় (ARPU) হবে US$7.57 বলে আশা করা হচ্ছে। অনলাইন বিক্রয় ২০২৯ সালের মধ্যে পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন মার্কেটে উত্পন্ন মোট আয়ের ২৯% হবে। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন মার্কেটে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব উৎপন্ন করবে বলে আশা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালে US$52bn অনুমান করা হয়েছে।
এই সেক্টরে ভারতের বিনিয়োগ ও বৃদ্ধি চিত্তাকর্ষক। উন্নয়নের জন্য প্রচুর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ভারতের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট মার্কেটে বৈদ্যুতিক বাস এবং মেট্রো রেল ব্যবস্থার মতো ভ্রমণের পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির চাহিদা বাড়ছে।
ভারতীয় শহরগুলি কীভাবে টেকসই শহুরে গণ-পরিবহণ অর্জন করে তা বিশ্বের শীর্ষ তিনটি অর্থনীতির মধ্যে থাকার সম্ভাবনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাসের বহর ও নেটওয়ার্ক বাড়ানোর পরিবর্তে আরও ব্যয়বহুল রেল-ভিত্তিক বিকল্পের জন্য অনুভূত প্রয়োজনীয়তার মূল্যায়ন না-করেই বেশ কয়েকটি শহর তাদের শহুরে পরিবহণ সমস্যাগুলির প্রতিষেধক হিসাবে মেট্রো রেলকে আলিঙ্গন করতে গিয়ে সময়ের আগেই অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে।
এর অর্থ এই নয় যে মেট্রো রেল ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই। দেশের অনেক টিয়ার ২ শহর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাক্ষী হয়েছে এবং মেট্রো রেলের প্রয়োজন হবে। কিন্তু তা হবে শুধুমাত্র তখনই যখন তাদের বাস-ভিত্তিক ব্যবস্থাগুলি পরিপূর্ণতার মাত্রায় পৌঁছবে। শহুরে পরিবহণ ব্যবস্থায় বিনিয়োগের সময় ও পরিমাণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধানের অভাব হয়েছে এবং সেই কারণেই বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলিকে বর্ধিত ও সুবিন্যস্ত করার কথা বিবেচনা না-করে অনেক ছোট শহর অনুপযুক্ত গণ-পরিবহণ বিকল্পগুলিতে অনাকাঙ্ক্ষিত অর্থ ব্যয় করতে দায়বদ্ধ হয়ে পড়েছে।