সুমন করাতি হুগলি: নেই মৃন্ময়ী মূর্তি। নেই আড়ম্বরও। আছে শুধু আভিজাত্য। তার উপর ভর করেই চলে আসছে শেওড়াফুলি রাজবাড়ির মাতৃ আরাধনা। নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করে আসছে রাজ পরিবার। কথিত রয়েছে, বর্ধমানের পাটুলির রাজা মনোহর রায় মা সর্বমঙ্গলার স্বপ্নাদেশ পান৷ দেবী স্বপ্নে তাঁকে বলেন পুষ্করিণী খনন করে তাঁকে তুলে আনতে৷ সেইমতো তিনি পরদিন সকালে দুর্গারূপী মাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন৷ ১৭৩৩ সালে শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে মন্দির করে স্থাপন করেন দেবীকে৷ দেবী কাত্যায়নী মহিষাসুরমর্দিনী রূপে মা পূজিত হন এখানে। অষ্টধাতুর মূর্তি। রাজ পরিবারের পুজো হয়ে আসছে৷
আরও পড়ুন-ধর্মতলায় ১৬৩ ধারা সর্বদাই বিজ্ঞপ্তি শুধু মেয়াদ বাড়াতে
শেওড়াফুলি রাজবংশ মুঘল সম্রাটদের দ্বারা সম্মানিত। শ্রীরামপুরে ডেনিস উপনিবেশ থাকাকালীন শেওড়াফুলি রাজাদের ১৬০১ টাকা করে বার্ষিক খাজনা দিত ডেনিশরা। শ্রীরামপুর কোর্টের জমি সর্বমঙ্গলা দেবীর নামে। অর্থাৎ দেবোত্তর সম্পত্তি। সেই কারণে ইংরেজ আমলে এই রাজ পরিবারকে ৫০ টাকা কর দিতে হত তাদের। এই মূর্তি দশভূজা ও দেবী সিংহবাহিনী। এখানে সিংহের মুখ ঘোড়ার মতো। দশ হাতের দুর্গা ত্রিশূল নিয়ে মহিষাসুরকে বধ করছেন। দুর্গাপুজো ছাড়াও নিত্যদিন পুজো হয় দেবীর। এ বছর ২৫ সেপ্টেম্বর কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে বোধনের ঘট বসে পুজো শুরু হয়েছে। নিত্যদিন চলছে চণ্ডীপাঠ। মায়ের কাত্যায়নী রূপ, লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী এখানে পূজিত হন না। দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীতে নবপত্রিকার কলা বউয়ের পুজো হয়। সমস্ত নিয়ম মেনে মা দুর্গার আরাধনা হয়৷
আরও পড়ুন-ছ’টি হাসপাতালে শুরু রাত্তিরের সাথী
আগে এখানে মোষবলি হত, বর্তমানে হয় ছাগবলি৷ কুমারী পুজোর প্রচলন রয়েছে এই রাজ পরিবারে৷ ষাটের দশকের শেষে মন্দিরের দরজা ভেঙে মা সর্বমঙ্গলাকে চুরি করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্ত এই অষ্টধাতুর মূর্তি চোরেরা নিয়ে যেতে পারেনি। মাকে অন্নভোগ দেওয়া হয় না। চালের নৈবেদ্য ও লুচিভোগের প্রচলন রয়েছে। শেওড়াফুলি রাজবাড়ির বর্তমান উত্তরাধিকার বাসবী পাল বলেন, বর্ধমানের পাটুলিতে আসল রাজপ্রাসাদ ছিল। কিন্তু গঙ্গাভাঙনে দু’টি প্রাসাদ তলিয়ে যায়। এরপর থেকে শেওড়াফুলিতেই পাকাপাকি বাস শুরু হয় রাজাদের। এ বছর ২৯১তম বর্ষে পদার্পণ আমাদের পুজোর৷ রাজবাড়ির আরও এক সদস্য সৌরদীপ ঘোষ বর্মন বলেন, প্রাচীন বাংলার দুর্গা মহিষাসুরমর্দিনী রূপেই পূজিত হতেন। শেওড়াফুলির মা সর্বমঙ্গলার নামে রাজ্যের পাঁচ জেলায় দেবোত্তর সম্পত্তি রয়েছে। তবে বর্তমানে তা সবই সরকারের অধীনে।