৩৪ বছরের বাম অপশাসনে যতগুলো গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে নানুরের গণহত্যা (Nanoor massacre) অন্যতম। বীরভূম জেলার দক্ষিণ-পূর্ব ভাগে অজয় ও ময়ূরাক্ষীর মাঝখানে পলি দিয়ে গড়ে ওঠা এক সমভূমি অঞ্চল হল নানুর। নানুরের গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া শুষ্ক এবং উষ্ণ। বর্ষাকালে এই অঞ্চলে প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় অষ্টাদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এই অঞ্চলে প্রায় ১৩ বার ভয়ংকর খরা দেখা দেয়। এছাড়াও বেশ কয়েকবার এখানে বন্যাও হয়েছে। একুশ শতকে ২০০৪ সালের বন্যায় এই অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৪টি গ্রাম নিয়ে গঠিত নানুর ব্লক অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া একটি অঞ্চল। এখানে তফসিলি জাতি ও উপজাতির মানুষ-সহ বহু মুসলমান পরিবার বসবাস করেন। যার সিংহভাগ মানুষই কুটিরশিল্পের সাথে যুক্ত। সুযোগের অভাব ও উপেক্ষা তাদের উপার্জনের পথে প্রধান বাধা। বাম জমানায় রাজনৈতিকভাবে নানুর বীরভূম জেলার সর্বাধিক অশান্ত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত, যার জলজ্যান্ত প্রমাণ ২০০০ সালের ২৭ জুলাই যে দিন কিনা বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের পাতায় ‘নানুর দিবস’ হিসেবে খ্যাত। কী ঘটেছিল সেদিন?
নানুর থানা এলাকার সূচপুরে এগারো জন ভূমিহীন খেতমজুর হত্যার একটি ঘটনা। গরিব খেটে খাওয়া ভূমিহীন কৃষকরাও ওই লাল হার্মাদ নরখাদকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। একসাথে ১১ জন ভূমিহীন কৃষক যারা কিনা তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ছিলেন তাদেরকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করেছিল সিপিএমের জল্লাদ বাহিনী। যা নানুরের ‘সূচপুর গণহত্যা’ নামেও পরিচিত। তৎকালীন সময়ে রেলমন্ত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খবর পেয়ে দিল্লি থেকে ছুটে আসেন। নৃশংস ভাবে হত্যা করেও হার্মাদরা ক্ষান্ত হয়নি, নিহত ১১ জনের দেহ কবর দিতেও প্রবল বাধা সৃষ্টি করে। পরে মমতা দি-র নেতৃত্বে শেষকৃত্যসম্পন্ন হয়। সেই সময় দিদি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন নানুরের মাটি থেকে ঘোষণা করেছিলেন নিহত কর্মী সমর্থকদের পরিবার পিছু একজনের চাকরি হবে। নেত্রীর ঘোষণা মতো এগারোটি পরিবারই চাকরি পেয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা দিলে সেই কথা রাখতেও জানেন।
নানুর হত্যাকাণ্ডের পরে, সিপিএমের ঐ অঞ্চলের সাংসদ সোমনাথ চ্যাটার্জি, নিহতদের ‘ভাড়াটে গুন্ডা, ডাকাত এবং ভয়ঙ্কর সমাজবিরোধী’ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে নিহতেরা প্রকৃতপক্ষে ভূমিহীন কৃষক ছিল, যাদের জমি-সংক্রান্ত বিরোধের কারণে হত্যা করা হয়েছিল। লাল হার্মাদদের পলিটব্যুরো সদস্য এবং সিপিআই (এম)-এর নেতা অনিল বিশ্বাস এবং বিমান বসু, উভয়ই নানুর হত্যাকাণ্ডে কমরেডরাই যে যুক্ত তা স্বীকার করতে কার্যত বাধ্য হয়েছিল।
আরও পড়ুন-শক্তিশালী জাপানের গ্রুপে ব্লু টাইগ্রেসরা, মহিলা এশিয়ান কাপ
আজকে দাঁড়িয়ে শত-দ্বীপ জ্বালিয়ে গদি মিডিয়ার সান্ধ্যকালীন জলসায় বসে বুলি আওড়াতে আপনাদের লজ্জা করে না, ছিঃ! পরবর্তীতে নানুর হত্যাকাণ্ডের (Nanoor massacre) প্রধান সাক্ষী আব্দুল খালেক এবং তার রক্ষী জাহাঙ্গির আলম ২০০৫ সালের ১২ মে সিপিআই (এম) কর্মীদের বর্বরোচিত হামলায় আহত হন। পরে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া চারজনই যে শাসক দলের সাথে সম্পর্কযুক্ত তা স্থানীয় গ্রামবাসীরাই নিশ্চিত করেছিল।
সিপিএম যে কতটা নির্লজ্জ বেহায়া দুই কান কাটা অমানুষের দল তা আরও বেশি করে বোঝা যায় যখন ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নানুর গণহত্যার দুই প্রধান অভিযুক্ত নিত্য চ্যাটার্জি এবং মনিরুজ্জামান-কে প্রার্থী হিসেবে তারা দাঁড় করায়। আসলে কমরেড চৌধুরীবাবু, ঘোষবাবু, ভট্টাচার্যবাবুদের ডিএনএ-টাই কলঙ্কময়। ৩৪ বছরের কালিমালিপ্ত অধ্যায়ে ঐ নরখাদকের দল কত যে গণহত্যা করেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
সেই ১৯৭০ সালের ১৭ই মার্চ, সাঁইবাড়ি গণহত্যা- ছেলেকে খুন করে তার রক্ত দিয়ে ভাত মেখে তার মা-কেই খাইয়েছেন, ১৯৭৯ সালের ২৪ জানুয়ারি-মরিচঝাঁপি গণহত্যাকান্ড, ১৯৮২ সালের ৩০ এপ্রিল কলকাতায় বিজন সেতুর উপরে আনন্দমার্গীদের জ্যান্ত পুড়িয়ে হত্যা করলেন, ১৯৯০ সালের, ৩০ মে বাণতলা রোডে ধর্ষণ করলেন স্বাস্থ্য আধিকারীকদের, ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই কলকাতার রাজপথে ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীদের পুলিশ দিয়ে গুলি করে হত্যা করালেন, ২০০১ সালের ৪ জানুয়ারি, মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা থানার ছোটো আঙারিয়া গ্ৰামে ১১ জন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করলেন, ২০০৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, ধানতলায় বরযাত্রীদের বাস থামিয়ে গণধর্ষণ করলেন, ২০০৬ সালে সিঙ্গুরের বাজেমেলিয়া গ্ৰামে ১৬ বছরের মেয়ে তাপসী মালিককে ধর্ষণ করে খুন করলেন,২০০৭ সালের ১৪ মার্চ, নন্দীগ্রামে গণহত্যা করলেন, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি, লালগড়ের নেতাই গ্রামে নয় জন নিরীহ গ্ৰামবাসীকে গুলি করে নৃশংস ভাবে হত্যা করলেন। আর কত মানুষের রক্ত পান করলে আপনারা শান্তি পাবেন কমরেড-বলতে পারেন?
এতকিছু ঘটনার পরেও মাননীয়া জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে মা, মাটি, মানুষের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে ক্ষমতায় আসার আগেই স্লোগান দিয়েছিলেন ‘বদলা নয়,বদল চাই’। এটাই হল প্রকৃত রাজনৈতিক শিক্ষা। ২০১১ সালের পর থেকে এই ধরনের গণহত্যা তো দূর অস্ত, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া যে উন্নয়নের কর্মসূচি সারা বাংলা জুড়ে শুরু হয়েছেিল, তা আজও ক্রমপ্রসারমান।
১১ শহীদের রক্ত ঘাম, ভুলিনি নানুর (Nanoor massacre) সূচপুর গ্রাম।
—এই বার্তার মধ্যে দিয়েই মমতাদি-র নেতৃত্বে এবং অভিষেকদা-র সেনাপতিত্বে আজও প্রতি বছর আমরা সারা বাংলায় ‘নানুর দিবস’ পালন করি।
তাই ৩৪ বছরের লাল সন্ত্রাসের অপশাসন যাতে আর কোনওদিন কখনও এই বাংলার মাটিতে ফিরে না আসে তার জন্য আসুন সকলে মিলে আগামী ২০২৬ সালেও চতুর্থবারের মতো মা-মাটি-মানুষের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার গড়ে তুলি।
জয় বাংলা, খেলা হবে।