আমি যাঁকে গুরু মানি

গুরু শুধু শিক্ষক নন, তিনি পথপ্রদর্শক এবং পরামর্শদাতাও। হতাশায় হোক বা কষ্টে, সমস্যায় হোক বা সিদ্ধান্তে যিনি প্রতি মুহূর্তে পথ চলতে সাহায্য করেন তিনিই গুরু। তাঁদের জীবনের সেই গুরু বা মেন্টরদের কথা বললেন বিশিষ্টরা। শুনলেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

গুরু উদয়শঙ্করকে
খুব কাছে থেকে দেখেছি
ছোটবেলায় যাঁদের-যাঁদের কাছে নৃত্যশিক্ষার শুরু তাঁরা প্রত্যেকেই আমার গুরু। সবার কথা তো বলা সম্ভব নয় কিন্তু একটু বড় হয়ে আমার প্রথম নৃত্যগুরু হলেন জয়কুমারীদি। যাঁর কাছে আমি কত্থক শিখেছি। এরপর রবীন্দ্রভারতীতে যখন ভর্তি হলাম তখন ভারতনাট্যমে পেয়েছিলাম মারুথাপ্পা পিল্লাইকে, নদীয়া সেন ছিলেন মণিপুরির গুরু, গোবিন্দন কুট্টি ছিলেন কথাকলির গুরু এবং মঞ্জুলিকা রায়চৌধুরী ছিলেন কত্থকের গুরু। এছাড়া বাংলার ফোক নৃত্যের গুরু ছিলেন রামকৃষ্ণ লাহিড়ী এবং রবীন্দ্রনৃত্যের গুরু ছিলেন বালকৃষ্ণ মেনন। আমার স্বামী এবং আমি একসঙ্গে নাচ করতাম সেই হিসেবে উনিও আমার গুরু। কিন্তু এত স্বনামধন্য মানুষের পাশাপাশি একজন ছিলেন যিনি আমাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছেন তিনি হলেন সৃজনশীল নৃত্যের রাজা গুরু উদয়শঙ্কর। আমি ওঁর শেষজীবন পর্যন্ত ওঁর সঙ্গে ছিলাম। ওঁর সঙ্গে আমেরিকা সফরে গিয়েছি তাছাড়া আরও অনেক জায়গায় অনুষ্ঠান করতে গিয়েছি। ওঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, অনেক কিছু শিখেছি। স্টেজ উঠে কী করা উচিত, শুধু যে নাচই করব তা নয় নিজের পোশাক সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা, স্টেজে কথা না-বলা, এমনকী স্টেজের লাইটও আমরা কন্ট্রোল করতে শিখেছি। ওঁর থেকে অনেক বড় বড় প্রাপ্তি আমার ঘটেছিল। যে কারণে আমি আমার নাচের মধ্যে ওঁকে নিয়ে চলেছি ওঁর আশীর্বাদ আমার প্রতিমুহূর্তের পাথেয় হয়ে উঠেছে।

দিদি আমার অনুপ্রেরণা
বীরবাহা হাঁসদা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
আমার জীবনের প্রথম গুরু, আমার রাজনৈতিক জীবনের গুরু তিনি হলেন আমার বাবা নরেন হাঁসদা। বাবা যখন জঙ্গলমহলে রাজনীতি করছিলেন তখন নিজের নামে একটা দল গঠন করে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করে সিপিএমকে হারিয়ে বিধানসভায় এসেছিলেন। প্রত্যেকটা দিন মানুষের পাশে থাকার যেভাবে উনি চেষ্টা করে গেছেন আমি সেটা খুব কাছ থেকে নিজের চোখে দেখেছি যা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। সেটা খুব কঠিন একটা সময় ছিল। এখন আমরা যাঁরা রাজনীতিতে রয়েছি, মানুষের জন্য কাজ করছি তাঁদের কাছে বিষয়টা অনেকটা সহজ। কিন্তু তখন লড়াই ততটাও সহজ ছিল না। বাবাকে দেখেই রাজনীতির প্রতি আগ্রহ। ছোটবেলায় দেখতাম সকাল-সন্ধ্যা বাড়িতে লোকজন আসত। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা চলত। বাবা মানুষের সুখ-দুঃখে শামিল হতেন। ওই সময় সিপিএমের অত্যাচার দেখে বড় হয়ে ওঠা একটি মেয়ে আমি। প্রত্যেকদিন গ্রামে গ্রামে তাঁদের অত্যাচারের নানান ঘটনা কানে আসত। বাবা রাত দুটোয় বাড়ি ফিরলেও আমাকে ঘুম থেকে জাগাতেন এবং সারাদিনের কর্মকাণ্ড বলতেন। সবটা বুঝতাম না আবার, অনেকটাই বুঝতাম। এমএলএ থাকাকালীনই খুব কমবয়সে বাবা চলে যান। এরপর মা আসেন রাজনীতিতে। মাকেও দেখেছি কাছ থেকে। পরবর্তীকালে আমি গুরু হিসেবে যাঁকে পেয়েছি, মেনেছি তিনি আমাদের নেত্রী, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২১-এ দলে আসি। দিদির আশীর্বাদে আমি আজ এত বড় একটা দায়িত্বে। তারপর থেকে আমি ওঁর লড়াইটাও দেখি। যখনই তাঁর সঙ্গে কোথাও দেখা হয়, যখন আমার সঙ্গে কথা বলেন আমি ওঁর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। ওই মানুষটার অনেক না-বলা কথা, অনেক কষ্টের কথা ওঁর চোখের মধ্যে ধরা পড়ে। উনিও তো লড়াই করে গেলেন সবার জন্য কিন্তু প্রতিদানে সবাই ভালটা ওঁকে দেননি। এখনও প্রত্যেকদিন উনি লড়াই করে চলেছেন। তাই মনে হয় নিজের কাজটা যেন আরও ভাল করে করতে পারি। চেষ্টা করি এমন কোনও ভুল না করতে যার জন্য ওঁর নামটা খারাপ হয় সেটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জিং। প্রত্যেকটা মুহূর্তে উনি আমার অনুপ্রেরণা।

বুম্বাদাই আমার মেন্টর
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিনেত্রী
জন্ম থেকে বড় হয়ে ওঠার এই জার্নিতে আমার মা-বাবা তো মেন্টর হয়ে পাশে ছিলেনই। তাঁদের থেকে আমি জীবনের শিক্ষা পেয়েছি কিন্তু পরবর্তীকালে গোটা অভিনয় জীবনে আমি আমার মেন্টর বা গুরু হিসেবে পেয়েছি বুম্বাদা অর্থাৎ অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে। ওঁর জন্যেই আমার এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসা। আমি নাচের জগতের মেয়ে ছিলাম, এর পাশাপাশি মডেলিং করতাম। বুম্বাদা আমার বাবাকে খুব ভাল চিনতেন। আমাকেও চিনতেন বিভিন্ন ইভেন্টে আমার সঙ্গে ওঁর দেখা হত। সিনেমা জগতে আসার সেই সিদ্ধান্তটা ওঁর জন্যই নিয়েছি। অর্পিতাদি (চট্টোপাধ্যায়) আমাকে ফোন করেছিলেন বুম্বাদার সঙ্গে একটা ছবি করার জন্য। তখন আমি সবে সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী। ওই সময় আমি সেই অফারটা নিতে পারিনি। বাবা-মা চেয়েছিলেন গ্র্যাজুয়েশনটা করে নিয়ে তারপর কেরিয়ারের দিকে মন দিই। আমিও তাই চেয়েছিলাম। একটা মিনিমাম যোগ্যতা ছাড়া কখনও কোনওকিছুতে চলে আসা ঠিক নয়। অভিনয় যেখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ এক মাধ্যম। আর অভিনয় পেশাটা সম্পর্কে তখন কিছুই জানি না। এরপর গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বুম্বাদার সঙ্গে দেখা করি। আমার প্রথম ছবি ছিল প্রভাত রায়ের ‘হ্যাংওভার’। বুম্বাদার সঙ্গেই ছিল ছবিটা। এরপর বুম্বাদার কথাতেই প্রথম পোর্টফোলিও তৈরি করি। ফটোগ্রাফার রানা বোস আমার পোর্টফোলিও করে দিয়েছিলেন। আমার পরিবারে কোনওদিন কেউ সিনেমা জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিল না ফলে পুরো গাইড করা থেকে শুরু করে সবটা বুম্বাদাই করেছিলেন। ক্যামেরা ফেস করা, সংলাপ বলা এই সব নিয়ে সোহাগ সেন তখন আমাকে গ্রুমিং ক্লাস করিয়েছিলেন। সবটাই বুম্বাদার তত্ত্বাবধানে। ফলে আমার অভিনয় জীবনে আসার কৃতিত্বটা বুম্বাদার। ওঁকে দেখে শিখেছি একজন শিল্পীর কী দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত। সময়কে মূল্য দেওয়া, গ্রাউন্ডেড হওয়া, সবটাই ওঁকে দেখেই শেখা। ওর নিয়মানুবর্তিতা, পরিশ্রম, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, ওঁর জ্ঞান সবটা আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছে সব সময়। তাই আমি খুব কৃতজ্ঞ বুম্বাদার কাছে।

আরও পড়ুন-কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা সুপ্রিম কোর্টের দুই প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির

কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়কে
দেখে শক্তি খুঁজে পাই
দেবারতি মুখোপাধ্যায়, সাহিত্যিক
সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে আমার সবচেয়ে বড় গুরু হল জীবনের অভিজ্ঞতা। কারণ জীবন থেকেই আমরা শিক্ষাও পাই আবার প্রেরণাও পাই। জীবনই আমাদের পুড়িয়ে পুড়িয়ে সোনা করে। এর পাশাপাশি যদি আমাকে কোনও একজন ব্যক্তিত্বের কথা বলতে হয় যিনি আমার অনুপ্রেরণা, পথপ্রদর্শক তিনি হলেন প্রথম মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়। ওঁকে নিয়ে আমার দুটো উপন্যাসও রয়েছে। আমার মনে যখন কোনও শঙ্কা আসে, দ্বিধা আসে বা কারও নেগেটিভ কোনও প্রতিক্রিয়াতে বিচলিত হই সেইসময় আমি ভাবি কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় আজ থেকে অত বছর প্রায় দেড়শো বছর আগে যখন মেডিক্যাল কলেজে ঢুকেছিলেন কোনও ছাত্রী ছিল না। কোনও লেডিজ টয়লেট ছিল না। উনি সেইভাবে থাকতেন সারাদিন। তখন উনি বিবাহিত এবং মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়তে গিয়ে পাঁচ বছরে একাধিক সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। অথচ পাঁচ বছরে উনি কলেজে অনুপস্থিত ছিলেন মাত্র তেরোদিন। যখন উনি ডাক্তারি পড়ছেন তখন নানাভাবে ওঁকে হিউমিলিয়েট করেছে। ডাক্তার হওয়ার পরে সেই সংগ্রাম আরও বেড়েছে। কারণ মহিলারা যে ডাক্তার হতে পারে এটা কেউ ভাবতে পারত না। উনি যখন ডাক্তার হলেন তখনকার দিনে সবচেয়ে নামজাদা একটি খবরের কাগজে লেখা হল— যে-নারী রাতের বেলা রোগী দেখার ছলে বাইরে বেরন তিনি বারবনিতা ছাড়া আর কিছু নয়! এতকিছুর পর উনি থেমে যেতে পারতেন, হেরে যেতে পারতেন কিন্তু হার মানেননি। তিনি এবং তাঁর স্বামী কোনও অন্যায় মেনে নেননি। সেই কাগজের সম্পাদকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। সমাজসংস্কারক ছিলেন। জীবনের শেষ দিনটিতেও রোগীর অপারেশন করেছেন। তাই যখনই কোনও কিছু নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ি বা মনে হয় অনেক কিছু সামলাতে হবে, অহেতুক কেউ ছোট করার চেষ্টা করে তখন ওঁর কথা মনে করি, ওঁকে দেখে শক্তি খুঁজে পাই। উনি যদি অত বছর আগে এত কিছু সহ্য করে এতটা এগোতে পারেন তাহলে আমি বা আমরা তো অনেক প্রিভিলেজড।

আরও পড়ুন-কাঁধে জোয়াল দিয়ে বলদের মতো হালচাষ করানো হল নবদম্পতিকে

আনন্দশঙ্কর আমাকে অনুপ্রাণিত করেন
রিমা মুখোপাধ্যায়, মনোবিদ
আমার জীবনে গুরু, মেন্টর কোনও একজন নয়, অনেকেই রয়েছেন যাঁরা ধাপে ধাপে আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। প্রথম গুরু হলেন আমার বাবা। উনি যতদিন বেঁচে ছিলেন সবরকম পরিস্থিতিতে উনি আমাকে সামলেছেন। সবসময় যে ওঁর কাছে ছিলাম তা নয় অনেক দূরে থেকেও বাবাকে পাশে পেয়েছি। সাতবছর বিদেশে ছিলাম। ইউকে-তে যখন যাই সঙ্গে একবছরের ছোট ছেলে। তখন বিদেশ থেকে দেশে ফোন কল খুব খরচসাপেক্ষ ছিল। আমি এবং আমার স্বামী দু’জনেই ডাক্তার। ওখানে পড়ার পাশাপাশি চাকরিও করছি। বাবা ফোন করতেন সপ্তাহে একবার। যেটুকু কথা বলতাম তাতেই উনি এমন একটা কিছু বলতেন যে মনে হত যেকোনও পরিস্থিতি হ্যান্ডেল করতে পারব। বাবা যে-কোনও কিছুকেই সম্পূর্ণ অন্য দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখতেন। খুব নিরপেক্ষভাবে মতামত দিতেন। ছোটবেলা থেকেই গান-বাজনা খুব পছন্দ করি। পিয়ানো বাজাতাম, আজও বাজাই। তখন কলেজে পড়ি, আনন্দশঙ্করকে দেখে আমি এবং আমার দাদা ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। ওঁর শিল্পসত্তা, ব্যক্তি মানুষ যতটা দুর থেকে জেনেছি আজও তিনি আমাকে অনুপ্রাণিত করেন। আনন্দশঙ্কর চলে গেলে আমরা খুব বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম। ওঁর স্ত্রী তনুশ্রীশঙ্করকে দেখেছি। হাজব্যান্ড খুব অল্প বয়সে চলে যাওয়ার পরেও অনেক বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে একটা নতুন নৃত্যশৈলীকে যেভাবে অন্যমাত্রায় গেছেন তা শিক্ষণীয়। ইউকে-তে দু’জন মহিলার আন্ডারে কাজ করতাম। একজন আইরিশ, অন্যজন ইংরেজ। তাঁদের কাজকর্ম, ভাবনা-চিন্তাও আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছিল কর্মজীবনে। ২০১০, ২০১১ সালে নিজে একটা খুব ব্যক্তিগত সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন অন্ধ্রপ্রদেশের এক চিকিৎসক যিনি নিজেকে স্পিরিচুয়াল সায়েনটিস্ট বলে পরিচয় দেন তিনি আমার ভাবনাকে আমূল বদলে দেন।

অরুণ ভাদুড়ী আমাকে খেয়াল শিখিয়েছেন
লোপামুদ্রা মিত্র, সঙ্গীতশিল্পী
আমার জীবনের বিশেষ করে গানের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ গুরুই আর জীবিত নেই। কিন্তু তাঁরা আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করেছেন, সমৃদ্ধ করেছেন। আমার প্রথম সঙ্গীতের গুরু ছিলেন আমার বাবা অমিত মিত্র। এরপর ঋতা দে, অরুণ ভাদুড়ী, সুকুমার মিত্র, সুভাষ চৌধুরীকে পেয়েছি গুরু হিসেবে। আমি খেয়াল শিখেছি অরুণ ভাদুড়ীর কাছে। খুব সুন্দর ছিল সেই অভিজ্ঞতা। নজরুলগীতি শিখেছি সুকুমার মিত্রের কাছে, রবীন্দ্রসঙ্গীতে জ্ঞানশিক্ষা সবটা পেয়েছি সুভাষ চৌধুরীর কাছে। ঋতা দে আমাকে খেয়াল আর ভজন শিখিয়েছিলেন। এগুলো আমার জীবনে এগিয়ে চলার রসদ। এছাড়া জীবনে যিনি আমাকে অনেকটা পথ চলতে সাহায্য করেন তিনি হলেন আমার এক কাকা সমীর চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে সম্পর্কটা বন্ধুর মতো ছিল। সব সময় ওঁর সমর্থন পেয়েছি। আমাদের সম্পর্কটা ছিল অনেকটা বন্ধুর মতো। বাবার সহকর্মী ছিলেন সেই সূত্রেই যোগাযোগ। যখন ‍‘প্রথা’ তৈরি করি অনেকেই আমাকে মানা করেছিল। নিজের পেশার বাইরে, গানের জগতের বাইরে আমি যাতে কোনও কিছু না করি কিন্তু কাকা আমাকে উৎসাহ দেন এবং আমি প্রথা খুলি। অনেক গান নিয়ে ওঁর সঙ্গে কথা বলতাম। জীবন কাকে বলে সেটা আমার তাঁর কাছেই শেখা।

আরও পড়ুন-মহারাষ্ট্রে মন্ত্রীর বাড়িতে নগদ টাকার ভিডিও ঘিরে তোলপাড়

কোচ লিম ছে উঙ শাসনও করতেন শিখিয়ে নিতেন
দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়, আর্চারি
আমাদের জীবনে প্রথম গুরু বাবা, মা-ই হন। আমারও তাই ছিল।তারপর একে একে গুরুরা এসেছেন যাঁদের কাছে আমি শিখেছি আমার গোটা কর্মজীবন, ক্রীড়াজীবনের অনেক কিছু। যা শিখেছি যাঁদের থেকে সেটাই পাথেয় হয়ে রয়ে গেছে। আর্চারি যখন শুরু করি তখন আমার কোচ ছিলেন প্রতাপ দাস এবং প্রবীর দাস। ওঁদের হাতে আমার আর্চারির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। প্রথম শেখা এবং জানা। পরবর্তীতে চলে যাই জামশেদপুর সেখানে মূল শিক্ষার শুরু সেখানে পেয়েছিলাম ধর্মেন্দ্র তিওয়ারিকে। এরপর ওখানেই একজন কোরিয়ান কোচ আমাদের প্রশিক্ষণ দিতে আসেন যাঁর প্রভাব আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি ছিল কারণ তিনি আসার পর আমার কেরিয়ারে একটা বিরাট পরিবর্তন এসে গেছিল। আমার দক্ষতা অনেকটা বেড়ে যায়। তাঁর নাম লিম ছে উঙ। প্রথমবার কোরিয়া থেকে এসেছিলেন উনি। শুরুতে ভাষাগত একটা সমস্যা হতই। কিন্তু খেলার ভাষা তো আর আলাদা হয় না, বুঝে নিতাম। উনি খুব ছোট ছোট ভুল যেগুলো হয়তো আমরা খুব একটা গুরুত্ব দিই না সেগুলো শুধরে দিতেন। ওঁর একটা বড় গুণ ছিল উনি সাইকোলজিক্যালি প্রতিটা খেলোয়াড়কে খুব ভাল বুঝতেন। কোনও ভুল হলে বকতেন না। অনুশীলনের সময় আলাদা করে আর আমার বা যে ভুলটা করছে তার সামনে আসতেন না। এমন একটা ভাব করতেন যেন উনি আমাদেরকে আর দেখিয়ে দেবেন না কিন্তু দুর থেকে আমাদের দিকে ঠিক লক্ষ্য রাখতেন। আবার ঠিক ডেকে নিতেন। ফলে ওঁর সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে কোনও অসুবিধেই হত না। প্রশিক্ষণে বা প্র্যাকটিসে যা যা অসুবিধে সেগুলো ধরে ফেলে এবং আবার আমাদের ভুল শুধরে ঠিক জায়গায় নিয়ে আসা— এটা খুব করতেন। হাল ছেড়ে দিতেন না। শাসন করতেন কিন্তু শিখিয়ে নিতেন। ওঁর থেকে আমি তাই লেগে থাকার, অনুশীলনের পরিশ্রমের অনুপ্রেরণা পেয়েছি। যেটা আমার খেলার বাইরের জীবনেও কাজে এসছে। হার মানিনি কখনও।

Latest article