প্রতিবেদন : সুপ্রিম কোর্টে মুখ পুড়ল রাজ্যপাল তথা আচার্যের। উপাচার্য নিয়োগের ক্ষমতা থাকল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই। সোমবার সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়ে দেয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই সম্ভাব্য উপাচার্যর নামের তালিকা তৈরি করে রাজ্যপাল তথা আচার্যের কাছে পাঠাবেন, তারপর রাজ্যপাল তথা আচার্য সেই বিষয়ে তাঁর মতামত দেবেন। আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে দাবি করেছিলেন, সম্ভাব্য উপাচার্যের নামের তালিকা তৈরি করে দিক প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতের নেতৃত্বাধীন কমিটি৷ কিন্তু এই আবেদন পত্রপাঠ খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট৷ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই গোটা আদালতের এই পর্যবেক্ষণকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন-দ্রুত নিয়োগ চায় রাজ্যও স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী
শুনানির শুরুতেই রাজ্য সরকারের তরফে সওয়াল করতে গিয়ে শীর্ষ আদালতে রাজ্যের স্ট্যান্ডিং কাউন্সেল আস্থা শর্মা অভিযোগ করেন, উপাচার্য নিয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ আদালতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিত কমিটির সুপারিশ মেনেই যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে, অথচ সেখানে আপত্তি জানাচ্ছেন আচার্য তথা রাজ্যপাল৷ যাঁদের সম্ভাব্য উপাচার্য হিসেবে বেছে নেওয়া হবে তাঁদের নামের তালিকা ইংরেজি বর্ণানুযায়ী তৈরি করা হবে নাকি মেধার ভিত্তিতে তৈরি হবে তালিকা— তা নিয়েই আপত্তি জানাচ্ছেন আচার্য তথা রাজ্যপাল৷ একই সুরে রাজ্য সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে প্রবীণ আইনজীবী জয়দীপ গুপ্ত বলেন, সুপ্রিম কোর্টের দিশা নির্দেশে উপাচার্য নিয়োগের গোটা পদ্ধতি যেভাবে এগোচ্ছে সেই ভাবেই এগোতে দেওয়া হোক৷ প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি উদয় ললিতের সার্চ কমিটির সুপারিশ মানার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে তালিকা তৈরি করবেন, তা পাঠানো হবে রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোসের কাছে৷ এই তালিকার কোনও নামে আপত্তি থাকলে আচার্য তা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবেন৷ এই ক্ষেত্রে দু-তরফে সহমত তৈরি না হলে শীর্ষ আদালত সে-বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবে৷
আরও পড়ুন-হাসিনা পদত্যাগ করেছেন কিনা জানেন না বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি! বর্তমান সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন
এর পরেই বিচারপতি উজ্জল ভুঁইয়া বলেন, রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শূন্য থাকা উপাচার্য পদে নিয়োগের কাজ যখন দ্রুত গতিতে চলছে, ঠিক সেই সময়ে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করলে গোটা পদ্ধতি বিলম্বিত হবে, যা কখনওই কাম্য নয়৷ তাঁরই সুরে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে তাঁরা কোনও বিতর্ক চান না৷ আপাতত বহাল থাকবে শীর্ষ আদালতের ১৮ জুলাইয়ের অর্ডার৷ যেভাবে উপাচার্য বাছাই করা হচ্ছে, তা চলবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ৯ ডিসেম্বর। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাশিত। রাজ্যপাল গোঁয়ার্তুমি না করলে এই পরিস্থিতি তৈরি হত না। সুষ্ঠুভাবেই উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হত। রাজ্য সরকার বেতন দেয়, পরিকাঠামো তৈরি করে। তাই রাজ্যের হাতেই উপাচার্য নিয়োগের ক্ষমতা থাকা উচিত। সুপ্রিম কোর্ট সেই সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দিল। মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই এই ক্ষমতা থাকার কথা।
আরও পড়ুন-মোটর স্পোর্টসেও দেখা গেল মনুকে
গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে রাজ্যের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ। প্রথম দফার ইন্টারভিউ চলবে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত। তারপর দীপাবলির ছুটি। পুনরায় দ্বিতীয় দফার ইন্টারভিউ শুরু হবে ৬ নভেম্বর। চলবে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রথম পর্যায়ে প্রায় কুড়ির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া-সম্পন্ন করা হবে।