রাজনীতিবিদদের গ্রেফতার করলেই তারা দুর্বৃত্ত, দুর্নীতির ধারকবাহক! আমাদের মতো অধ্যাপক রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ অংশ নিলে গালাগালের যোগ্য! আর কোনও সাংবাদিক যা খুশি করলেও সে গণতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক? গণমাধ্যম গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি ও তার স্বাধীনতা অত্যাবশ্যক। আসলে সত্য বলতে— সত্য কিছু নেই?
আজ যারা নিরপেক্ষ তদন্ত, সময় দেওয়া, নোটিশ দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি বলছেন, তাঁরা তো তৃণমূল মুখপাত্র বা সমর্থকদের রোজ গাল দেওয়া দেখেও বলেন না যে ওদের মর্যাদা রয়েছে, বা ফেসবুক-ট্যুইটার (এক্স)-ইউটিউবের গালাগাল মোছেন না! কই রাজনীতিবিদরা ধরা পড়লে তো ইত্যাদি ইত্যাদি বলেন না? পুলিশদের যখন বাপ-বাপান্ত করা হয় তখন তো টিআরপির জন্য বারবার দেখান! খালিস্তানি বললে কানে শোনেন না? কঠিন প্রশ্ন হলে প্রযুক্তিগত সমস্যা বলে এড়িয়ে যান! আবার মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে নানান অছিলায় নানান ভাবে মর্যাদাহীনকর কথা বলা হলেও কাউকে আটকান না! আবার বিরোধী দলনেতা কোনও কোনও সাংবাদিককে বা সংবাদমাধ্যমকে চটিচাটা বা পিসির চ্যানেল বললে কোনও প্রতিবাদ হয় না! একটাও শুভেন্দু বা বিজেপি বিরোধী শব্দ উচ্চারণ হয় না? বিএসএফের কাজের জন্য চার-চারটি শিশুমৃত্যুর অভিযোগ কিংবা ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে কোনও আগুন ঝরানো, চোখে চোখ রেখে, চড়া গলায় প্রশ্ন করার বৈকালিক অনুষ্ঠান করা হয়েছে? উত্তর— না।
আসলে বুম ধরলেই সত্যতার পরাকাষ্ঠা? মানে আইনের ঊর্ধ্বে? কিছু গণমাধ্যম সারাদিন তাদের চ্যানেলে আগুন জ্বালিয়ে জোর গলায় তৃণমূল কংগ্রেস দলকে চোরের দল বলে যাচ্ছে। বিকেল ৫টা বাজলেই উসকানিমূলক অনুষ্ঠান। প্রাথমিক, উচ্চপ্রাথমিক কিংবা উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে চাকরি প্রার্থীদের মঞ্চে গিয়ে তাঁদের আবেগকে উসকানি দিয়ে সরকার-বিরোধী প্রচার ও নিজের ব্যাঙ্কখাত বৃদ্ধি! আর যখন সরকার চাকরির ব্যবস্থা করছে তখন তা নিয়ে কোনও খবর নেই? যখন বিচারক গাঙ্গুলি বলেন যে রাস্তায় আন্দোলন করে কোনও লাভ হবে না, আন্দোলনকারীদের আদালতে যেতে হবে— তখন এরা চুপ। বারবার যখন সরকার-বিরোধী মঞ্চকে নিজের লাভের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, বড়লোকদের দল থেকে দামি দামি উপহার নিয়ে তাদের হয়ে প্রচার হয়েছে তখন তাদের নৈতিকতা কোথায় থাকে? কই তখন তো আজ যাদের সহদরের মতো আচরণ করছেন তাঁরা বিরোধিতা করেন না? নাকি তাঁরাও লাভের ভাগিদার?
আসলে লেন্সটা ও টিআরপি বড় বালাই! আপনি যদি অর্ধেক গ্লাস ফাঁকা দেখান তবে বাকি অংশ পূর্ণ বলতে অসুবিধা কোথায়? কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন তাই ২০২১ সালে বাংলায় এমন কিছু বৈদ্যুতিন গণমাধ্যম তৈরি হয়েছে যারা প্রতিনিয়ত সরকারের বিরোধিতা করে যায়। সেটা ভুল নয়। কিন্তু সমস্যা উপস্থাপনায়। একদিকে, চূড়ান্ত উসকানি আর অন্যদিকে সম্মতি বিনির্মাণের চেষ্টা। আবার বাংলায় বিরোধী দলের হয়ে সম্মতি নির্মাণের নির্লজ্জ প্রয়াস চলে। তাদের কোনও ভুল না দেখিয়ে তাদের প্ররোচিত করা।
সন্দেশখালিতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ এলে তাদেরকে এক লপ্তে সামাজিক ভাবে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা হয়। কিন্তু ঠিক সেই একই কারণে যখন কোনও সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়, তখন কেন গণমাধ্যমগুলি নারীর সম্ভ্রমের কথা ভুলে যায়! মাথায় রাখতে হবে বাংলায় ইউএপিএ-র ধারায় কোনও আটক হয়নি। যখনই কোনও সাংবাদিক (Journalist) মোদি-বিরোধিতা করেছে তার পরিণতি— ইউএপিএ-র ধারায় আটক, চাকরি চলে যাওয়া। গত ১০ বছরে ভারতব্যাপী কত সাংবাদিক হত্যা হয়েছে তাও উদাহরণযোগ্য। কিন্ত বাংলায় এমন ঘটনা হয় না। আর যদি সাংবাদিক গ্রেপ্তারের বিষয়টি ভুল হত তাহলে পুলিশের দাবিতে আদালত সিলমোহর দিল কেন? যে অভিযোগ এসেছে তা আদালত ফেলে দিতে পারেনি। আরও মনে রাখতে হবে, যে ধারায় গ্রেপ্তার হয়েছে তাতে তারও ধারার পর ধারা দিয়ে দিনের পর দিন সাংবাদিক আটক রাখার ঘটনা মমতা সরকারের আমলে হয়নি।
আরও পড়ুন- আদিবাসী উন্নয়নে কড়া মুখ্যমন্ত্রী, চোপড়ার মৃতদের পরিবারকে সাহায্য
যে সংবাদমাধ্যম আজ এত সরকার বিরোধী প্রচার চালাচ্ছে তারা সেই এক কাজ ভারতব্যাপী করে না কেন? তখন তাদের হয় বিনা বিচারে আটকের ভয় থাকে, নয়তো তারা সরকারি অনুদানের জন্য লালায়িত হয়। নয়তো সাংবাদিক (Journalist) সিদ্দিকি কাপ্তানকে উত্তরপ্রদেশের হাথরাসের ধর্ষণের খবর করতে গিয়ে দেশবিরোধী ধারায় বিনা বিচারে চার বছর আটকে রাখার প্রতিবাদ সেই সাংবাদিক বা সংবাদমাধ্যম করেনি কেন? কিংবা মধ্যপ্রদেশে সরকারকে প্রশ্ন করার অপরাধে সাংবাদিকদের জামা কাপড় খুলিয়ে শুধু অন্তর্বাস পড়িয়ে আটক রাখার প্রতিবাদ হয়নি কেন? এদের উদ্দেশ্য, শুধুই বাংলা-বিরোধী প্রচার চালিয়ে যাওয়া।
মা-মাটি-মানুষের সরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যে উন্নয়নমুলক কাজ করে চলেছে তার একটাও প্রচার বাংলায় কাজ শুরুর পর থেকে তারা করল না কেন? শুধুই উসকানি আর নির্লজ্জ আক্রমণ! তবে তো এটাও বলা যায়, দিদি বাংলায় সেই পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যাতে সংবাদমাধ্যম ভয়ডরহীনভাবে কাজ করতে পারে। সেই জন্যেই প্রতি সন্ধ্যায় আলোচনায় বা বির্তকে সরকারের চূড়ান্ত সমালোচনা চলে। শুধু তাই নয় তৃণমূল মুখপাত্র বা সমর্থকদের ব্যক্তি আক্রমণ চলে নির্মম ভাবে। কই তখন তো সেইসব সঞ্চালক বিরোধিতা করেন না! বরং তারা আরও উসকানিমূলক নীতি গ্রহণ করে।
সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতায় ভারতের স্থান ১৮১টি রাষ্ট্রের মধ্যে ১৬১। অবাক লাগে না! কারণ শুধুই মোদিবন্দনা! কিন্তু বাংলা থেকেই রাজা রামমোহন সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করেন, এবং সাংবাদিকদের (Journalist) স্বাধিকার ফিরিয়ে দেন। আমরা সেই আদর্শে বিশ্বাসী। পুণ্য প্রসুন বাজপেয়ী, আভিসার শর্মা এদের নাম নিশ্চিত ভাবে কেউ ভোলেনি। এদের চাকরি গিয়েছিল শুধুই মোদি সরকারকে যথাযথ প্রশ্ন করার জন্য। অরুণ শৌরি বা সাবরিনা সিদ্দিক্কিকে চুড়ান্ত নিগ্রহের শিকার শুধু সোজাসাপটা প্রশ্নের জন্য। কালবুর্গি বা গৌরী লংকেশের ঘটনাও কারও অজানা নয়। তখন তো আগুন ঝরিয়ে কোনও অনুষ্ঠান হয়নি!
আর একটা কথা। বাংলায় নারীর সম্ভ্রমের উপর হাত পড়লে কেউ ছাড় পাবে না, সে যতই গলার শিরা চিরে আগুন ঝরাক না কেন!