‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তৈরি ৭ সদস্যের কমিটি এবং তার রিপোর্ট গোটা আইনি প্রক্রিয়াকেই কলঙ্কিত করছে।’
ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার হাইকোর্টে রাজ্যের তরফে এভাবেই তোপ দাগা হয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ৭ সদস্যের কমিটি এবং কমিটির পেশ করা ‘পক্ষপাতদুষ্ট রিপোর্টকে৷
আরও পড়ুন: বিজেপির ভাঁওতা ফের প্রকাশ্যে, ভ্যানচালকের পাশে সেই রাজ্যই
মঙ্গলবার হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে রাজ্য পুলিশের ডিজি’র তরফে সওয়াল করেন বিশিষ্ট আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি এবং সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়৷ মনু সিংভি এদিন একের পর এক যুক্তির ভিত্তিতে বলেন :
◾জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ দলের এই রিপোর্ট একটা ধাঁধার মত এবং ত্রুটিপূর্ণ।
◾ আমরা এই কমিটির দু’ তিন জন সদস্যের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছি। বোঝা যাচ্ছে,এরা পক্ষপাতদুষ্ট। যদি একজন সদস্যের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ ওঠে, তাহলে এখনই এই রিপোর্ট খারিজ করা উচিত এবং এই রিপোর্টকে কলুষিত বলে চিহ্নিত করা উচিত।
◾৯ জুলাই এই কমিটির অন্যতম সদস্য আতিফ রশিদ একজন পুলিশ সুপারের সাথে কথোপকথনের ভিডিও তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলে আপলোড করেছিলেন। ১৩ জুলাই কমিশনের কমিটি তার চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেছিল। আর কমিটির মনোভাব ৯ জুলাই এর ওই কথোপকথন থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
◾ এই কমিটির অন্য এক সদস্য, মিঃ দেশাই সরাসরি বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। এইসব কারণেই আমরা মনে করছি রিপোর্টে পক্ষপাতিত্বের যথেষ্ট কারণ রয়েছে৷
◾অভিযোগ পত্রের ধরন দেখেই মনে হচ্ছে, এগুলো আগে থেকেই তৈরি করা ছিল৷ এই রিপোর্টে ২৯ এপ্রিলের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যা ভোটের ফল ঘোষণার আগে হয়েছে। কমিটি ঠিকই করে রেখেছিল, যা অভিযোগ আসবে সব রিপোর্টে ঢুকিয়ে দাও।
আরও পড়ুন: করোনায় এগরাবাসীর কথা, ফেসবুকে শুনবেন বিধায়ক
◾ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের অর্থ, ভোটের ফল ঘোষণার অব্যবহিত পরেই যা হলো, তারও একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে। এই রিপোর্টে সে সব উপেক্ষা করে, যে সব অভিযোগের কথা বলা হয়েছে, তার বেশির ভাগেরই সঙ্গেই ভোট-পরবর্তী হিংসার কোনও যোগ নেই।
◾অভিযোগকারীরা বাংলায় তাদের অভিযোগ জানিয়েছেন, কমিটির সদস্যরা সেগুলিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। বাংলা থেকে ইংরেজি করার সময় প্রায় সম্পূর্ণ বক্তব্যই পাল্টে ফেলা হয়েছে। অনুবাদ করার সময় ‘তৃণমূলের গুন্ডা’ শব্দ যুক্ত করা হয়েছে, যা এই মামলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। ইংরেজি অনুবাদে দেখা গিয়েছে যে অভিযোগকারী বলছেন তিনি ভয়ের কারণে অভিযোগ দায়ের করতে পারেননি। কিন্তু আসলে দেখা যাচ্ছে যে পুলিশ বলার পরেও তিনি অভিযোগ দায়ের করতে চাননি। এসব থেকেই বোঝা যায় যে বক্তব্যের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে ।
◾জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কমিটির কাছ থেকে পুলিশ ১৪২৯টি অভিযোগ পেয়েছে৷ তার মধ্যে ১৩৩৮টি অভিযোগের উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: কৃষিপণ্যের ক্ষতি কমিয়ে কোল্ড চেইন প্রকল্পকে উৎসাহ দিতে কী ব্যবস্থা? প্রশ্ন অভিষেকের
এদিনই ‘’ভোট পরবর্তী হিংসা’’ মামলার শুনানি শেষ হয়েছে৷ রায়দান স্থগিত রেখেছে কলকাতা হাইকোর্ট। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আরও কিছু বলার থাকলে বুধবারের মধ্যে তা লিখিতভাবে দাখিল করতে হবে।