প্রতিবেদন : সুপ্রিম কোর্টে ষড়যন্ত্র ফাঁস হওয়ার আতঙ্ক? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠকের পর ইম্ফলে (Imphal) ফিরেই ইস্তফা দেওয়ার ঘোষণা করলেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। অডিও টেপ বিতর্কে মণিপুরে জাতিগত হিংসায় প্রত্যক্ষ ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বীরেনের বিরুদ্ধে। দেশের শীর্ষ আদালতে এই ইস্যুতে মামলা করেছে কুকি সংগঠন। সেই মামলার সর্বশেষ শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সরকারি ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে বিতর্কিত অডিও টেপ পরীক্ষা করে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুন-মোমোর মধ্যে লুকিয়ে আছে ৬০০ বছরের পুরনো ইতিহাস
মামলাকারীদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ দাবি করেছিলেন, বেসরকারিভাবে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য একটি ল্যাবে অডিও টেপটি বিজ্ঞানসম্মতভাবে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, কথোপকথনের ৯৩ শতাংশই বীরেন সিংয়ের গলার সঙ্গে মিলে গিয়েছে। অভিযোগ, এক হুইসল-ব্লোয়ারের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া সেই বিস্ফোরক টেপটিতে শোনা যাচ্ছে, খোদ মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী মেইতেই ও কুকিদের জাতিগত সংঘর্ষে ইন্ধন দিচ্ছেন। রাজ্যের সংখ্যালঘু ও অহিন্দু জনগোষ্ঠী কুকিদের উপর আক্রমণ চালানোর জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের লোকজনকে প্ররোচনা দিচ্ছেন বিজেপির এই শীর্ষনেতা। এমনকী তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা না করার আশ্বাস এবং অন্য জনগোষ্ঠীর উপর হামলা চালানোর জন্য অস্ত্র সরবরাহের কথাও রয়েছে ফাঁস হওয়া এই অডিও টেপে। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টে ফরেনসিক ল্যাবের আনুষ্ঠানিক রিপোর্ট জমা পড়ার আগেই তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শে বীরেন সিং মুখরক্ষায় ইস্তফা দিতে বাধ্য হলেন। বিরোধীদের দাবি, বিস্ফোরক অডিও টেপটির কথোপকথন সত্যিই বীরেন সিংয়ের বলে প্রমাণিত হলে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পদে থেকে হিংসায় প্রত্যক্ষ প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মণিপুর বিধানসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছিল কংগ্রেস। পাশাপাশি বীরেনের নেতৃত্ব নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন তাঁর রাজ্যের বিজেপি বিধায়কদের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে ভোটাভুটিতে বীরেন সিং সরকারের পতন হলে আরও মুখ পুড়ত বিজেপির। গত প্রায় দু’বছর ধরে লাগাতার গোষ্ঠী সংঘর্ষে অশান্ত উত্তর-পূর্বের এই বিজেপি রাজ্য। কয়েকশো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ ঘরছাড়া। মহিলাদের নগ্ন করে রাজপথে হাঁটানো এবং গণধর্ষণের মতো কুৎসিত ঘটনা নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে দেশের শীর্ষ আদালতও। এই পরিস্থিতিতে কৃতকর্মের দায় এড়াতে পদত্যাগের পথে হাঁটলেন এন বীরেন সিং।