ব্রিজটাউন, ২৯ জুন : আনরিখ নর্খিয়ার ব্যাট ছুঁয়ে বল মিড উইকেটে যেতেই হাঁটু মুড়ে বসে পড়লেন হার্দিক পান্ডিয়া। মাটিতে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়েছেন রোহিত শর্মা। চোখে জল জসপ্রীত বুমরা, সূর্যকুমার যাদব, ঋষভ পন্থ, মহম্মদ সিরাজদের। সাপোর্ট স্টাফদের সঙ্গে নিয়ে দৌড়ে মাঠে নেমে পড়েছেন রাহুল দ্রাবিড়। বিশ্বকাপ জিতেই জাতীয় দলের কোচের পদ ছাড়লেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘দ্য ওয়াল’। ১৭ বছর আগে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজেই বিশ্বকাপ হারানোর অভিশপ্ত অধ্যায় আষ্টেপৃষ্ঠে ছিল টিম ইন্ডিয়ার তৎকালীন অধিনায়ক দ্রাবিড়ের ক্রিকেটজীবনের সঙ্গে। আইসিসি ট্রফি জয়ের খরা কাটানোর পাশাপাশি বার্বাডোজে কাপ জিতে সেই যন্ত্রণামুক্তির তৃপ্তিও দ্রাবিড়ের সঙ্গী। ১৭ বছর আগে সেদিন নেতা দ্রাবিড়ের সঙ্গী ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, শচীন তেন্ডুলকর, বীরেন্দ্র শেহবাগরা। সমাজমাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে দ্রাবিড়দের অভিনন্দন জানিয়েছেন সৌরভ, শচীনরাও। অধিনায়ক রোহিত বিশ্বকাপ তুলে দিলেন গুরু দ্রাবিড়কে। গোটা দলের তরফেই বিদায়ী কোচকে উপহার।
আরও পড়ুন-শেষ টি-২০ ম্যাচ খেলে ফেললাম, বার্তা বিরাটের
ক্রিকেটারদের জড়িয়ে ধরে ভালবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন রোহিতদের বিদায়ী কোচ। বিশ্বজয়ের আনন্দে উদ্বেল ক্রিকেটাররা। সাড়ে সাত মাস আগে আমেদাবাদেও চোখের জল ফেলেছিলেন রোহিত। কিন্তু এই কান্না আনন্দের। চাপের মুখে শেষ ওভারে দুরন্ত বোলিং করা হার্দিককে চুমু খাচ্ছেন রোহিত। ছাড়তেই চাইছেন না। কয়েক মাস আগেও আইপিএলের মঞ্চে দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে কত শব্দই না খরচ হয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই দেখা যায় রোহিত ও বিরাট একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রয়েছেন। বিশ্বকাপের নক আউটে বারবার ব্যর্থতা দেখেছেন তাঁরা। এই কোহিনুর জয়ের আনন্দও তাই ভাগ করে নিলেন ওঁরা।
ততক্ষণে মাঠে নেমে পড়েছেন ক্রিকেটারদের স্ত্রী, সন্তানরা। রোহিতের আলিঙ্গনে স্ত্রী ঋতিকা। বুমরাকে জড়িয়ে স্ত্রী সঞ্জনা। বিরাট ভিডিও কলে কথা বলছেন স্ত্রী অনুষ্কার সঙ্গে। হার্দিক একহাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে ঘুরছেন। সিরাজ কেঁদেই চলেছেন। জীবনের সেরা মুহূর্তে আবেগতাড়িত সবাই। অধিনায়ক রোহিত বললেন, “গত ৩-৪ বছরের পরিশ্রমের ফল। অনেক হাইপ্রেসার ম্যাচ খেলে ভুল জায়গায় শেষ করেছিলাম। অবশেষে আমরা ফিনিশিং লাইন পেরোতে পারলাম। এই মঞ্চে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। সেটা ফাইনালে নিজের স্কিল দিয়ে দেখিয়ে দিল বিরাট। ওকে নিয়ে কিছু বলার নেই। গোটা দেশ এই মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিল। আমরা আজ দারুণ খুশি।”
আরও পড়ুন-অপেক্ষার অবসান মুঠোয় কাপ
চোখে জল নিয়ে হার্দিক বললেন, “প্রচণ্ড আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছি। ৬ মাস আগে কী অবস্হায় আমি ছিলাম, সেসব নিয়ে কোনও শব্দ খরচ করিনি। জানতাম পরিশ্রমের ফল পাবই। ভাল লাগছে রাহুল দ্রাবিড়ের বিদায়কে এভাবে আমরা স্মরণীয় করে রাখতে পারলাম।”
টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটার হয়েছেন বুমরা। ফাইনালেও ম্যাচ ঘোরানো ১৮তম ওভারটা করলেন। বলছিলেন, “সাধারণত আমি এতটা আবেগ দেখাই না। কিন্তু আজ নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। আমরা চাপে পড়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে এসেছি। আমার জীবনের সেরা অনুভূতি।” বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক অক্ষর প্যাটেল বললেন, “চোট সমস্যায় ভুগতে হয়েছে। দেশের হয়ে খেলতে পারছিলাম না। বিশ্বকাপ জয় অনেক কিছু থেকে মুক্তি দিল।”