বলিউডে চলছে ডকুমেন্টারির ট্রেন্ড। কয়েক মাস আগেই মুক্তি পেয়েছে ‘অ্যাংরি ইয়াং মেন’। বিখ্যাত চিত্রনাট্যকার সেলিম খান এবং জাভেদ আখতারের জীবনের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে সলমন খান প্রযোজিত ওই ডকুমেন্টারিতে। সাতের দশকে বলিউডে তাঁদের পরিচিতি ছিল সেলিম-জাভেদ জুটি নামে। দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ‘জঞ্জির’, ‘শোলে’, ‘দিওয়ার’, ‘ডন’ প্রভৃতি সুপারহিট ছবি। ফলে তাঁদের ডকুমেন্টারি ঘিরে ছিল প্রবল আগ্রহ। উৎসাহের সঙ্গে দর্শকেরা কাজটি গ্রহণ করছেন।
সম্প্রতি আরও একটি ডকুমেন্টারি সাড়া জাগিয়েছে। সেটা মূলত একটি পরিবারকে ঘিরে। যে পরিবারের তিন প্রজন্ম বিনোদন জগতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। পরিবারটি নাগরথ পরিবার। বুঝতে অসুবিধা হল? যদি বলি রোশন পরিবারের নাম, তাহলে হয়তো সহজেই বোধগম্য হবে। ডকুমেন্টারির নাম ‘দ্য রোশনস’। পরিচালনা করেছেন শশী রঞ্জন। ১৭ জানুয়ারি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে। হয়েছে উচ্চপ্রশংসিত।
রোশনলাল নাগরথ ছিলেন কিংবদন্তি সুরকার। পাঁচ এবং ছয়ের দশকে বলিউডের বহু ছবির গানেই তিনি সুরারোপ করেছেন। তাঁর বেশকিছু গান আজও সঙ্গীতপ্রেমীদের মুখে মুখে ফেরে। তাঁর সুরে গেয়েছেন মহম্মদ রফি, মুকেশ, তালাত মাহমুদ, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোসলে প্রমুখ। মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন।
আরও পড়ুন-এত দ্বেষ-হিংসা, তবু ভালবাসারই জয়, মাগুরা থেকে এগরায় সঞ্চিতা
তাঁর দুই পুত্র রাকেশ এবং রাজেশ। রাকেশের কেরিয়ার শুরু হয় অভিনেতা হিসেবে। সাত এবং আটের দশকে বহু ছবিতেই তাঁকে দেখা গেছে। তবে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাননি। পরবর্তী সময়ে করেছেন ছবি প্রযোজনা, পরিচালনা। অন্যদিকে, রাজেশ অনুসরণ করেছেন বাবার পথ। সুরকার হিসেবে পেয়েছেন সাফল্য। রাকেশের পুত্র হৃতিক। নতুন শতাব্দীর শুরুতেই নায়ক হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ, ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’ ছবির মাধ্যমে। রচনা করেছেন ইতিহাস। রাতারাতি হয়ে গেছেন দর্শকদের নয়নের মণি, সুপারস্টার। এরপর ২৫ বছর ধরে রোশন পরিবারের ঐতিহ্যকে নিজের কাঁধে বয়ে নিয়ে চলেছেন তিনি।
‘নাগরথ’ তাঁদের আসল পদবি। হৃতিক ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে তাঁর ঠাকুর্দা রোশনলাল নাগরথের কারণে তাঁদের পরিবারের পদবি নাগরথ থেকে বদলে রোশন হয়ে গিয়েছে। রোশনলাল, রাকেশ রোশন, রাজেশ রোশন, হৃতিক রোশন। এক পরিবারের তিন প্রজন্মের চার পুরুষ। বিনোদন জগতে নিজেদের উজাড় করেছেন। পেয়েছেন অগণিত মানুষের ভালবাসা। এঁদের নিয়েই তৈরি হয়েছে ডকুমেন্টারিটি।
সুরকার রোশনলালের সুরে নানারকমের গান গেয়েছেন আশা ভোসলে। গেয়েছেন রাকেশের ছবিতে, রাজেশের সুরেও। ডকুমেন্টারিতে আশা ভোসলে জানিয়েছেন, একই পরিবারে চারজন শিল্পীর দেখা মেলাটা সত্যি বিরল।
অনিল কাপুর, সোনু নিগম, সঞ্জয় লীলা বানশালি, ভিকি কৌশল, অনু মালিক, প্রীতি জিনটা, রণবীর কাপুর, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া প্রমুখ রোশন পরিবারের সঙ্গে নিজেদের যোগাযোগের কথা তুলে ধরেছেন।
ডকুমেন্টারিতে রাকেশ রোশন জানিয়েছেন, কীভাবে অভিনেতা হিসাবে শতচেষ্টার পরেও সাফল্য তাঁর কাছে ধরা দেয়নি! তাই বাধ্য হয়ে পরিচালনায় হাত দিয়েছেন। সেইসঙ্গে ঠিক করেছেন, পরিচালক রাকেশ রোশন কোনওদিন অভিনেতা রাকেশ রোশনকে নিজের ছবিতে কাস্ট করবেন না। ছেলে যে অভিনেতা হতে পারে, তাও বিশ্বাস করতে পারেননি রাকেশ। কারণ চুপচাপ, ক্যামেরা থেকে দূরে পিছনের সারিতে দাঁড়ানো হৃতিক কোনওদিনই লাইমলাইটে আসতে চাননি। অভিষেক বচ্চন হৃতিকের শৈশবের বন্ধু। তাঁর কথায়, হৃতিক বরাবরই পিছনের সারিতেই থাকতে পছন্দ করত।
আরও পড়ুন-ট্যাংরার পর বীরভূম, ২ সন্তান-সহ মায়ের মৃত্যু
রাকেশ রোশনের ‘কিং আঙ্কেল’, ‘করণ অর্জুন’, ‘কোয়েলা’ ছবিতে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। ডকুমেন্টারিতে বক্তব্য রেখেছেন তিনি। দুই ভাই রাকেশ এবং রাজেশকে বাস্তব জীবনের করণ-অর্জুন বলে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। রাকেশ জানিয়েছেন, ‘করণ-অর্জুন’-এর চিত্রনাট্যে বিন্দুমাত্র ভরসা ছিল না শাহরুখের। সলমন এবং শাহরুখ শ্যুটিংয়ের সময় খুব দুষ্টুমি করতেন।
ডকুমেন্টারিতে রাজেশ রোশনের মিউজিক্যাল ট্যালেন্টের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন অনেকেই। মাত্র ১৭-১৮ বছর বয়সেই কালজয়ী গান কম্পোজ করেছেন রাজেশ। ‘ইয়ারানা’, ‘জুলি’র মতো ছবিতে সুর দিয়েছেন। হৃতিকের ডেবিউ ছবি রাকেশ রোশন পরিচালিত ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’। তাতেও ছিল রাজেশের সুর। রোশন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দেখা যায় দারুণ বন্ডিং। পরস্পরের প্রতি রয়েছে গভীর শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালবাসা।
আরও পড়ুন-সাইনবোর্ডে বাংলাভাষার ব্যবহার কতটা, যাচাই শুরু করল পুরসভা
এই ডকুমেন্টারিতে উঠে এসেছে রাকেশ রোশনের উপর হওয়া হামলার ঘটনাও। আন্ডার ওয়ার্ল্ডের হুমকির পর প্রকাশ্যে গুলি চালানো হয়েছিল তাঁর উপর। অল্পের জন্য বেঁচে যান তিনি।
ঝকঝকে, নির্মেদ একটি ডকুমেন্টারি ‘দ্য রোশনস’। তুলে ধরা হয়েছে বিনোদন জগতের একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের গৌরবময় ৭৫ বছরের ইতিহাস। সাফল্যে খুশি রোশন পরিবারের সদস্যরা। এক মাসের মধ্যে বহু মানুষ দেখেছেন। বেশকিছু অজানা ঘটনা, বিষয় উঠে এসেছে সামনে। ‘অ্যাংরি ইয়াং মেন’ এবং ‘দ্য রোশনস’-এর সাফল্য দেখে আরও অনেক পরিচালক ডকুমেন্টারি তৈরির ব্যাপারে উৎসাহিত হয়েছেন। বিনোদন জগতের জন্য যা রীতিমতো বড় খবর।