আমার কাছে একতার প্রতীক রাখি
ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়
আবৃত্তিকার
আমরা যেহেতু এক ভাই-এক বোন, ছোটবেলা থেকেই এই রাখিবন্ধন (Rakhi Bandhan) উৎসবের গুরুত্বটা বাবা-মা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এবং এর সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন এবং রবিঠাকুরের যে রাখিবন্ধন উৎসব ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গানটি গেয়ে দুই বাংলার বিভাজন আটকাতে দুই বাংলার মানুষকে পাশে রাখতে চেয়েছিলেন এবং রাখি পরিয়েছিলেন তো সেটার গুরুত্বও বাবা-মা বুঝিয়েছিলেন ছোটবেলা থেকেই। আমি ছোটবেলায় ভাই, ভাইয়ের বন্ধুদের যেমন রাখি পরাতাম তেমন বড় হয়ে নিজের বন্ধুদেরও রাখি পরাতাম। তো কোথাও একটা রবীন্দ্র ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। রাখি আমার কাছে একটা বন্ধন। ভাই, ভ্রাতৃসম মানুষদের সঙ্গে বন্ধন আবার বন্ধুত্বেরও বন্ধন। এখনও রাখিবন্ধনের তাৎপর্য অপরিসীম। ভাইকে এখনও রাখি পরাই, খুব ব্যস্ত না থাকলে দেখা হয়ই। আমি যখন ক্লাসে যাই আমার ছাত্রীরা আমাকে রাখি পরায়। আমি খুব খুশি হয়ে পরি। ওরা নিজে হাতে রাখি তৈরি করে নিয়ে আসে। এখানে কোনও লিঙ্গভেদ নেই, জাতিভেদ নেই, বর্ণভেদ নেই। আমার কাছে শ্রদ্ধা, ভালবাসা, সম্মান, স্নেহ, একতার প্রতীক রাখি। রাখি সাবেক হোক বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রচলিত— এটা সার্বিক সৌভ্রাতৃত্বের উৎসব।
মহাসমারোহে রাখি পালন করা উচিত
সৈকত মিত্র
সঙ্গীতশিল্পী
১৯০৫ সালে যখন বঙ্গভঙ্গের একটা নির্দেশ আসে তখন বাঙালি তথা বাংলার মনীষী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তখনকার বহু ভদ্র বাঙালি— কারণ এখন তো বাঙালিদের মধ্যে আপার বা আপার মিডল ক্লাস বা লোয়ার বা লোয়ার মিডল ক্লাসের মধ্যে একটা ভীষণ বিভাজন হয়ে গেছে— আমি যখনকার কথা বলছি তখনও সেটা হয়নি সেই আপামর জনতা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং খালি গায়ে রাস্তায় বেরিয়ে ‘বাংলার বায়ু বাংলার জল, বাংলার বায়ু বাংলার ফল’— এই গান গাইতে গাইতে কলকাতার রাজপথে নেমেছিলেন এবং হাজারে হাজারে মানুষ তাঁর পিছনে তাঁকে সঙ্গ দেয় এবং তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণনির্বিশেষে মানুষের কাছে পৌঁছেছিলেন। যে যেরকমভাবে পারেন যে অবস্থায় রয়েছেন সেইভাবে তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। এই নয় যে সুসজ্জিত হয়ে আসতে হবে বা রাখি পরিয়ে দিতে হবে। একটা ভ্রাতৃত্বের বন্ধন হিসেবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষকে রাখি পরিয়েছিলেন এবং এর প্রচলন করেছিলেন। সেই থেকে শুধু ভাই-বোনের মধ্যে এই উৎসব আর আটকে নেই। সাবেককালে মূলত অবাঙালিদের একটা প্রথা ছিল— মনে করা হত রাখি পরালে ভাই তার বোনকে সুরক্ষা দেবে, সেটাই ‘রক্ষাবন্ধন’। তবে রবীন্দ্রনাথের জন্য আমাদের বাঙালিদের কাছে সেই রাখির ভাবনা আরও অনেক বেশি উদার, অনেক সুন্দর হয়েছে। এই বছর ৯ অগাস্ট ভারত ছাড়ো আন্দোলনের দিনই রাখিপূর্ণিমা তাই এই দিনটায় রবীন্দ্রভাবনার প্রতিফলন আরও জোরদার হবে, সেটা আশা রাখি। যদিও তখন বঙ্গভঙ্গ হয়নি কিন্তু তারপরে ১৯৪৭ সালে আর একবার দেশভাগের কারণে বঙ্গভঙ্গ হয় কিন্তু সেই বঙ্গভঙ্গের পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন সেই তথাকথিত আমরা যাঁদেরকে ভদ্র বাঙালি বলছি তাঁরাই। এই আপার ক্লাস আপার মিডল ক্লাস তাঁরা। এখনও বাংলার বাইরে এই বাংলার শ্রমিকদের ওপর যে অত্যাচার হচ্ছে, বাংলা ভাষায় কথা বললে তাঁদেরকে জেলে ঢোকানোর কথাও বলা হচ্ছে—এটার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা দরকার। সেটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে আমার মনে হয় আবার কবিগুরুর মতোই সকলের রাস্তায় নামা উচিত রাখির দিন। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন যাতে দৃঢ় হয় সেটা আমাদের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের একযোগে মহাসমারোহে রাখি পালন করা উচিত। ছোটবেলায় রাখির ভাবনা অন্য ছিল, এই মাহাত্ম্যটা তখন বুঝতাম না, তখন পাড়ার সব দিদি ছিলেন, বোনেরা ছিল, আমার দিদি-বোন ছিল যারা আমাদের সবাইকে রাখি বাঁধত। তখন এটা আমার কাছে খুব মজার বিষয়। কে ক’টা রাখি পেল এবং হাতে পরল সেটা নিয়ে আমদের মধ্যে পুরোদস্তুর কম্পিটিশন চলত। বেশ লাগত যে আমি এতগুলো রাখি পেয়েছি। দিনে দিনে রাখি একটা বড় ইন্ডাস্ট্রি হয়ে উঠেছে। এর একটা বড় বাণিজ্যিক দিক আছে। কাজেই রাখি বহু মানুষের অর্থের সাধন এবং বড়মাপের উৎসবও। তবে এখন আমরা এমন একটা সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছি যখন বাংলা ভাষার ওপর নির্যাতন হচ্ছে, আক্রমণ হচ্ছে সারা ভারতবর্ষ জুড়ে, বিশেষ করে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোতে, সেটার বিরুদ্ধে দাঁড়াবার আমার মনে হয় এই দিনটা একটা খুব উচিত দিন। প্রত্যেক বাঙালি যে যেভাবে পারেন এইদিন এই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করা উচিত।
তাঁর রাখিবন্ধন ছিল প্রতিবাদের ভাষা
ডাঃ শর্মিলা সরকার
চিকিৎসক, সাংসদ
ছোটবেলায় ভাইকে রাখি পরাতাম, এখনও পরাই। তবে সত্যি কথা বলতে কী এখন তো আমরা সবাই খুব ব্যস্ত। সবসময় থাকি না শহরে। তাই কখনও কখনও পরানো হয়ে ওঠে না কিন্তু রাখির মতো সুন্দর এই রিচুয়ালটা খুব ভাল লাগে। ছোটবেলায় যেমন ভাইকে পরিয়েছি রাখি যখন আরজিকর-এ মেডিক্যাল পড়ছি তখন বন্ধুদেরও রাখি পরিয়েছি। আমার কাছে রাখি পরানো মানে শুধু ভাই-বোনের সম্পর্ক নয় আমার কাছে রাখি মানে বন্ধুত্ব, ভালবাসা, একটা বিশ্বাসের জায়গা যেটাকে দৃঢ় করে। যে যাকে রাখি পরায় তার একটা দায়িত্ব চলে আসে সেই মানুষটার প্রতি। বোন হোক, বন্ধু হোক তাঁকে রক্ষা করা, তার সম্মানরক্ষার দায়িত্ব তাঁর মধ্যে চলে আসে। সুতরাং এটা একজন মানুষকে দায়িত্বশীল করে তোলে। আর এই জায়গা থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাখিও কোথাও এক হয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় বাংলা বিভাজনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। বঙ্গভঙ্গ রোধে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে নিজেদের সমবেত করতে, একে অপরের প্রতি টান অনুভব করাতে, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষকে এক ভাবনার শরিক করতে রাখিবন্ধন (Rakhi Bandhan) উৎসব পালন করেছিলেন। এটা এক সার্বিক সৌভ্রাতৃত্বের ভাবনা যা অনুপ্রাণিত করেছিল প্রতিটা মানুষকে। সেখানে কে হিন্দু, কে মুসলিম, কে শিখ কোনও ভেদাভেদ ছিল না। সবাই সবাইকে রাখি পরিয়েছিল। তাঁর রাখি উৎসবের দর্শন অনেক গভীর, অনেক ব্যাপক। এই দর্শন নিয়েই যদি আমরা চলতে পারি তবে আমাদের মধ্যে বাঁধনটা আরও মজবুত হবে। যদি পারস্পরিক ভালবাসাকে, শ্রদ্ধাকে, একতাকে অগ্রাধিকার দিই তাহলে এই যে এত হানাহানি-কাটাকাটি এগুলো বন্ধ হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা যেমন সবসময় প্রাসঙ্গিক তার এই ভাবধারা ভীষণভাবেই আজকের নিরিখে প্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্রনাথ সবসময় প্রতিবাদী ছিলেন যেখানে যখন দরকার পড়েছে উনি প্রতিবাদ করেছেন কাজেই তাঁর রাখিবন্ধনটাও প্রতিবাদেরই ভাষা ছিল। এখন তো আবার হিন্দু-মুসলিম নয় বাঙালিদের আলাদা করার প্রচেষ্টা চলছে তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর রাখিবন্ধনকে দিনে দিনে আরও বেশি করে মনে পড়ছে, আরও বেশি করে ঐক্যবদ্ধ হবার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
ধর্মীয় উৎসবকে দিয়েছিলেন সার্বিক রূপ
পুনম ঝা
কাস্টিং ডিরেক্টর
আমাদের হিন্দুদের মধ্যে, বিশেষ করে অবাঙালিদের কাছে রাখি খুব বড় এবং ট্র্যাডিশনাল উৎসব। মহাভারতে রয়েছে শ্রীকৃষ্ণের হাত কেটে গিয়েছিল তখন দ্রৌপদী নিজের শাড়ি ছিঁড়ে হাতে বেঁধে দিয়েছিলেন এবং সেই মুহূর্ত থেকেই শ্রীকৃষ্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলেন দ্রৌপদীকে রক্ষা করবার জন্য। করেওছিলেন। তাই আমরা জানি যখন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ হয় সেই সময় উনি কীভাবে সেই সম্পর্কের মান রেখেছিলেন। এছাড়াও অনেক গল্প শুনেছি ছোট থেকেই। ছোটবেলা থেকেই আমাদের পরিবারে রাখি খুব বড় করে পালিত হয়। আমার নিজের দাদা আছে, কাজিন ভাইয়েরা আছে। ওরা সবাই আসে। বাড়িতে সেদিন রান্নাবান্না, খাওয়াদাওয়া এলাহি আয়োজন হয়। এটা আমার পাওনার দিন। ছোটবেলায় আমাকেই সবাই সুন্দর সুন্দর উপহার দিত। এখন বড় হওয়ার পর আমিও উপহার দিই, ভাই এবং দাদাকে রাখি পরাই, টিকা দিই। তবে রাখি কিন্তু এখন আর ভাই-বোনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বন্ধু-বান্ধব সবাই সবাইকে রাখি পরায়। আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে রাখিবন্ধন উৎসব পালন করেছিলেন সেটা পারিবারিকের চেয়েও বেশি। ঐক্যবদ্ধতার উৎসব ছিল। তিনি একটি ধর্মীয় উৎসবকে সার্বিক রূপ দিয়েছিলেন। একটা সামাজিক বার্তা দিয়েছিলেন, জাতি, ধর্ম, বর্ণ-নির্বিশেষকে। বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন খুব সুন্দর একটা নিয়মকে মান্যতা দিয়ে। তো এই রাখিবন্ধনও কিন্তু সেই একে অপরকে সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালবাসার কথাই বলে। আমরা সবাই এক জাতি— এই ভাবনাই ব্যক্ত করে। ফলে সাবেক রাখি আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাখির ভাবনা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। সৌভ্রাতৃত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
রাখি সর্বজনীন এক বন্ধনের উৎসব
মৌমা দাস
টেবিল টেনিস খেলোয়াড়
ছোটবেলায় ভাইদের রাখি পরিয়েছি। এখনও পরাই যদি আমি বা ভাই শহরে থাকি তবেই। কারণ সবাই ব্যস্ত। আমি একটা সময় টেবল টেনিসের জন্য বাইরে চলে গেলাম, তখন কী করতাম আমি সেখানে আমার সহ-সাথীদের রাখি পরাতাম। আমরা সবাই সবাইকে রাখি পরাতাম। কোচদের রাখি পরিয়েছি— এর আরও একটা কারণ ছিল, ওই সময়ই থাকত ফ্রেন্ডশিপ ডে কাজেই রাখিবন্ধন এবং বন্ধুত্বের বন্ধন এই দুই ভাবনা নিয়ে রাখি পরাতাম। এখনও ভাই শহরে থাকলে অবশ্যই রাখি কখনও মিস করি না। আমার ছাত্রছাত্রীরা এখন আমাকে রাখি পরায়। খুব ভাল লাগে আমার। রাখি এমন একটা রিচুয়াল আমার মনে হয় এর কোনও জাত, ধর্ম, সম্পর্কের সীমা নেই। রাখি সবার, রাখি সর্বজনীন এক বন্ধনের উৎসব তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাখিবন্ধন উৎসবের ভাবনার সঙ্গে সাবেক রাখির এত মিল। ভাই-বোনের সম্পর্কের ঊর্ধ্বে এ-এক সৌভ্রাতৃত্বের, সম্মেলনের উৎসব। যদিও আজকের যুগে ট্রাডিশন ব্রেক করে সবাই ক্ষণিকের আড়ম্বরের দিকে ঝুঁকছে। বিজ্ঞাপনী প্রচারটাই এখন যে কোনও উৎসবের আসল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ফলে তা গুরুত্ব হারাচ্ছে তাই আমার মনে হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নির্বিশেষে মানুষকে পথে নেমে গান গাইতে গাইতে রাখি পরিয়ে দিয়েছিলেন। তাই আমার মনে হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে নির্বিশেষ মানুষকে রাখি পরিয়েছিলেন ওটাই আসল রাখিবন্ধন ছিল।
সম্পর্কের বন্ধনকে সুদৃঢ় করে
শুভমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
সঙ্গীতশিল্পী
আমি মনে করি রাখি সহৃদয়তার বন্ধন, রবীন্দ্রনাথও সেটাই বলতে চেয়েছিলেন। ছোটবেলায় রাখি পরাতাম। এখনও রাখিপূর্ণিমার দিন কেউ ভ্রাতৃস্থানীয় এলে রাখি পরাই। এখন আমি নিয়ম করে রাখির দিন আমার বাড়ির গোপালঠাকুরকে রাখি পরাই। আড়ম্বর কিছু থাকে না। আমার ছাত্রছাত্রীরাও আমাকে রাখি পরায়। আমার মনে হয়, নিয়ম মেনে নয়, মনের টানেই রাখি পরানো উচিত। কারণ রাখি ভালবাসার, স্নেহের, শ্রদ্ধার, সম্মানের বন্ধন ছাড়া আর কিছু নয়। আজ যখন মানুষে-মানুষে কারও কথা বলার সময় নেই, মোবাইল ফোনসর্বস্ব হয়ে যাচ্ছে, সম্পর্কের ভিত্তিগুলো কেমন সুপার ফিশিয়াল হয়ে যাচ্ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে রাখি আমাদের সম্পর্কের বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে শেখায়। রবীন্দ্রনাথের ভাবনাও তাই ছিল— সৌভ্রাতৃত্বের, সবাই মিলে থাকার, সবাই মিলে চলার। কিন্তু আমার যেটা মনে হয় এখন যে কোনও উৎসব ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। উৎসবের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যের চেয়ে আড়ম্বর, বাণিজ্যিক বা বিজ্ঞাপনী দিকগুলোতেই এখন অনেক বেশি আগ্রহ। সবটাই কেমন লোক-দেখানো। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করাটাই মুখ্য হয়ে গেছে। এটা হলে হবে না। রাখির সঙ্গে সম্পর্ক হোক মন থেকে। মনটাই প্রাধান্য পাক। এখন তো বাঙালি-অবাঙালি বিভেদ করা হয় ফলে অন্য জাত-ধর্মের কথা তো ছেড়েই দিলাম! রবীন্দ্রনাথ যেদিন থেকে রাখিবন্ধন (Rakhi Bandhan) শুরু করেছেন তখন থেকে আজও তা প্রাসঙ্গিক, আগামী দিনেও তাই থাকবে, না হলে আমরা হারিয়ে ফেলতাম এটাকে।
এই দিনটা খুব স্পেশ্যাল আমার কাছে
নবমিতা চট্টোপাধ্যায়
অভিনেত্রী
আমাদের যৌথ পরিবার। প্রচুর ভাই-বোন। তাই যে কোনও উৎসব আমাদের বাড়িতে এমনিতেই বড় হয়ে যায়। ভাইফোঁটা অনেক বড় করে হয়, রাখিও তাই। এখন সবাই ব্যস্ত তাও রাখি সবাই পরতে আসে। আমার নিজের একটাই ভাই, অভিনেতা গৌরব চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া আমার কাজিনরা আছে। আমার ভাইকে নিয়ে পাঁচজন। গৌরবের শ্যুটিং থাকেই, রাখির দিন তাই ও সকাল-সকাল রাখি পরে বেরিয়ে যায়। আর অন্য ভাইরাও যে-যার সময়মতো আসে, রাখি পরে কাজে বেরিয়ে যায়। ছোটবেলায় কী হত সবাই থাকত, কেউ তো কোথাও যেত না, ওটা আরও মজার ছিল। এখনও মজা কারণ শুধু দাদা বা ভাই নয়, ভাইয়ের বউ বা দাদার বউদের জন্য ছোট ছোট উপহার কিনে দেওয়া হয়। তবে রাখি উপলক্ষে যে খাওয়াদাওয়া সেটা পরে কোনও একদিন হয়। সাধারণত উইক-এন্ডে সবার সময় দেখে, ছুটিছাটা বুঝে আমরা হয়তো সবাই মিলে কোথাও খেতে যাই। ভাই, বোন এবং ভাইয়ের বউ— সবাই মিলে যাই। পরিবারের আরও সদস্যরাও যোগ দেয় আমাদের সঙ্গে। এইদিনটা খুব স্পেশ্যাল আমার কাছে। আর রবীন্দ্রনাথের রাখিবন্ধন আমরা স্কুলে খুব পালন করেছি। সবাইকে রাখি পরাতাম, শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে বন্ধুদের। রাখি-কাম-ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড এমনটা একটা ভাবনা থেকে পরাতাম। কারণ তার আগে-পরেই থাকত ফ্রেন্ডশিপ ডে। রবীন্দ্রনাথের রাখিবন্ধন উৎসব তাই ছোট থেকেই আমাদের রক্তে মিশে আছে। আমার মনে হয় রাখিবন্ধন মানে রবীন্দ্রনাথের রাখিবন্ধনই। রাখি পারস্পরিক সুরক্ষার অঙ্গীকার করে। শুধু ভাই-বোন নয়, সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেই। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় কত যুগ আগে রবীন্দ্রনাথ কতটা অ্যাডভান্সড ছিলেন, কতদূর ভাবতে পেরেছিলেন! সেই সময়কার পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমন এক পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছিলেন। ওঁর রাখিবন্ধনটাই বাঙালির মনে চিরন্তন হয়ে আছে। উনি সর্বসাধারণের মধ্যে নিজের এই ভাবনাকে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন তাই সাবেক রাখির সঙ্গে তাঁর রাখিবন্ধনও যুগে যুগে প্রাসঙ্গিক হতে থাকবে।
আরও পড়ুন- ‘রবিহারা’: বিশ্বকবির প্রয়াণে নজরুলের স্বরচিত কবিতাপাঠ! পোস্ট করে ঐক্যের বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর