প্রতিবেদন : গ্রামীণ এলাকা উন্নয়নের ক্ষেত্রে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ অর্থ খরচের নিরিখে গোটা দেশে দু’নম্বরে উঠে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা। কমিশনের সুপারিশ মতো ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে দুটি কিস্তিতে রাজ্যের জন্য ৩,৩৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে তার মধ্যে ১,৫৩০ কোটি টাকা অর্থ মূল্যের প্রকল্প রূপায়ণের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে বলেই রাজ্য পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। অথচ জাতীয় স্তরে মোট ৬৫,০৬১ কোটি টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে মাত্র ১৫,৩৫৮ কোটি টাকা।
কেন্দ্রের তথ্য বলছে, জাতীয় স্তরে গ্রামীণ এলাকা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বরাদ্দ পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের মোট বরাদ্দের ৭৬.৩৯ শতাংশ টাকা খরচই করে উঠতে পারেনি রাজ্যগুলি। যেখানে জাতীয় স্তরের খরচ হয়েছে মাত্র ২৩.৬১ শতাংশ টাকা, সেখানে বাংলায় ৪৫.৯৪ শতাংশ টাকা খরচ করে প্রকল্পের রূপায়ণ সম্ভব হয়েছে। নয়া দিল্লির রিপোর্টেই প্রকাশ, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচের নিরিখে ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা।
গেরুয়া শিবির থেকে তো বটেই কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন সরকারের তরফেও দীর্ঘদিন ধরে প্রচার করা হচ্ছে, বাংলাকে টাকা দিলে রাজ্য প্রশাসন তা নির্দিষ্ট সময়ে খরচ করতে পারে না। ফলে ইচ্ছা থাকলেও রাজ্যের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ দিতে পারে না কেন্দ্র। কিন্তু এই দাবি যে একেবারে ভুল তা প্রমাণ করে দিচ্ছে কেন্দ্রের পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচ নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত চাঞ্চল্যকর রিপোর্টে। তাতে পরিষ্কার বলা হচ্ছে যে, গ্রামীণ এলাকা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বরাদ্দ পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচের নিরিখে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে মোদি সরকার। জাতীয় স্তরের তুলনায় এই ক্ষেত্রে অনেকগুণ এগিয়ে বাংলা। এ রাজ্যের ১০০ দিনের কাজ, আবাস প্রকল্প ও সড়ক যোজনার মতো গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পের বহু কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। কিন্তু, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা আটকানো সম্ভব হয়নি মোদি সরকারের পক্ষে। প্রতি অর্থবর্ষের মতো কেন্দ্রের রিপোর্ট এই কথাও বলছে দেশের প্রতিটি রাজ্য গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পের টাকা পেলেও, বাংলার থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, অসম, ওড়িশা, ত্রিপুরা, বিহার, মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশের মতো একাধিক ডাবল ইঞ্জিন এবং মোদি সরকারের শরিক রাজ্যগুলি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জাতীয় স্তরের থেকেও কী ভাবে এগিয়ে থাকলো বাংলা? এই বিষয়ে নবান্নের আধিকারিকদের দাবি, শুধু টাকা খরচের বিষয়টিই নয়, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকায় গৃহীত প্রকল্পগুলিও নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে মুখ্যমন্ত্রী বারবার জোর দিয়েছেন।
আরও পড়ুন-ক্রিকেটের আঁতুড় ঘরে কর্তা সৌরভ এবার এরিয়ান সভাপতি
রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর একাধিকবার রাজ্যের প্রতিটি জেলার সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠকে বসেছে। যে সমস্ত জেলার টাকা পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে, সেই সব জেলাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। চাপ দেওয়া হয়েছে দ্রুত কাজ শেষ করতে। তাতে কাজও হয়েছে। একই সঙ্গে এই প্রকল্প রূপায়নের ক্ষেত্রে যাতে কোনও ভাবেই দুর্নীতি বাসা না বাঁধে তার জন্য নবান্ন থেকে নজরদারি চালানো হয়েছে ওই সব জেলার কাজে। সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রথম কিস্তির টাকা পেতে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানিয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আগের টাকা খরচ না-হওয়ায়, অনেক রাজ্য এখনও তা করতে পারছে না।