বাবলি

খুব কম বাঙালি সাহিত্যপ্রেমী রয়েছেন যাঁরা বুদ্ধদেব গুহর কালজয়ী উপন্যাস ‘বাবলি’ পড়েননি। এবার সেলুলয়েডে সেই ‘বাবলি’কেই নিজস্ব ভাবনায় তুলে ধরলেন বিশিষ্ট পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তাঁর এই রোম্যান্টিক মিউজিক্যাল ড্রামা। ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় এবং আবির চট্টোপাধ্যায়। আদরে, উষ্ণতায় প্রেমে জমে-ওঠা অভি আর বাবলির রসায়নে মজলেন দর্শক। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

বুদ্ধদেব গুহর গল্প মানেই যেন বাঙালির হৃদয়ের সঙ্গে আদুরে আবদারে মাখা এক অনুভূতি। প্রেমের অমন বন্য, একরোখা চেহারা খুব কম সাহিত্যিকই তাঁর মতো করে ভাবে ভাষায় প্রকাশ করতে পেরেছেন। যে প্রেম বাধাবন্ধনহীন খোলা আকাশে উন্মুক্ত। যদিও এমন দামাল প্রেমের গল্প বুদ্ধদেব গুহ অগুন্তি লিখেছেন। কিন্তু ‘বাবলি’ (Babli) হল তাঁর বেস্টসেলার। ফলে বাঙালির মনে বহু আগে থেকেই জায়গা করে নিয়েছে উপন্যাসটি। তাই এবার সেই ‘বাবলি’ সেলুলয়েডে। পরিচালনায় রাজ চক্রবর্তী।

রাজের যে কোনও ছবির প্রেজেন্টেশন খুব স্মার্ট হয়। তিনি ছবি পরিচালনার ক্ষেত্রে সবসময় বিনোদন বিষয়টার উপরেই জোর দিয়েছেন। বিষয় যেমনই হোক তাঁর প্রেজেন্টেশনটা যেন মানুষকে বিনোদনের রসদ জোগায় ফলে তার রোম্যান্টিক মিউজিক্যাল ছবি ‘বাবলি’ নিঃসন্দেহে স্মার্ট এবং সাহসী প্রেজেন্টেশন। মিউজিক্যাল— কারণ এই ছবিতে পাঁচ-পাঁচটা গান রয়েছে যেগুলো এককথায় অসাধারণ। গানের সুর দিয়েছেন সঙ্গীত পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত।

‘বাবলি’ (Babli) যাকে তেমন করে চোখে পড়ে না, চেহারায় নেই আতিশয্য, বেশ একটু মোটার দিকেই, যে অনেক ভিড়ে হারিয়ে যেতে পারে, ঘরোয়া, আলগা মিষ্টি এক বাঙালিনি। তাঁর মধ্যে ভালবাসা আছে, হিংসে আছে, সেও নিজেকে উজাড় করে দিতে পারে নিজের ভালবাসার মানুষের কাছে। অন্যদিকে, গল্পের নায়ক সাহিত্যিক অভিরূপ সেন বা অভি হল যাকে বলে হ্যান্ডসাম হাঙ্ক। সাঁতার থেকে ব্যাডমিন্টন— সবেতেই সে সিদ্ধহস্ত। যেন সেই পারফেক্ট হিরোটি। এই বাবলি আর অভি-র রসায়নই হল বুদ্ধদেবের উপন্যাসের টান। আর সেই অভি আর বাবলির উষ্ণ রসায়নের টানের দেখা মিলবে রাজ চক্রবর্তীর ছবি ‘বাবলি’তেও।

লেখক-সাহিত্যিকদের চোখে গল্পের নায়িকা মানেই সুন্দরী, ছিপছিপে আর বুদ্ধিদীপ্ত। কিন্তু বাবলি দলছুট। তাই বাবলির ভাল লাগে না লেখকদের বা তাঁদের গল্পের নায়িকাদের! কিন্তু সে কি জানত যে সেও একদিন লেখকের কলমেই এক মধুর প্রেমের উপাখ্যানের নায়িকা হয়ে উঠবে! তার জীবনেও আসবে এক নায়ক। যে তাকে দেখে মুগ্ধ হবে, তারই প্রেমে পড়বে! সাহিত্যিক অভিবাবুর চোখে বাবলি সুন্দরী। অভি আর বাবলি অচেনা দুই নারী-পুরুষ এক দুঃসাহসিক পথে পাড়ি দিল। যাকে বলে রোম্যান্টিক, অ্যাডভেঞ্চারাস জার্নি। গহন জঙ্গল, পাহাড় তাঁদের তীব্র ইন্ধন জোগাল আর তাতেই জমে উঠল প্রেমের রসায়ন। কিন্তু আবার সেই ত্রিকোণ প্রেমের ট্যুইস্ট। অভি আর বাবলির জীবনে এসে হাজির ঝুমা বোস। পেশায় এয়ারহোস্টেস। বাবলিরই বান্ধবী। সুন্দরী, ঝকঝকে, স্মার্ট, তন্বী। অভি-বাবলির মধ্যে দূরত্ব তো তৈরি হবেই! বাবলি ভুল বুঝতে থাকল অভিকে! যারা উপন্যাস পড়েননি, তাঁদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কী হবে এরপর? যাঁরা এখনও ছবিটা দেখেননি তাঁদের জন্য সেটা না হয় রহস্য থাক।

মোটমাট একটা ঝরঝরে, নিটোল গল্প ‘বাবলি’। টাইম লাইনটা ১৯৯৫-এর আশপাশ। ভীষণ সুন্দর প্রেক্ষাপট। একরাতের আকস্মিক ঘটনা। প্রকৃতিই তো সব সুন্দর সৃষ্টির মূলে দাঁড়িয়ে এই ছবি দেখলেই বোঝা যায়।
পরিচালক রাজ চক্রবর্তী কেরিয়ারের শুরুতে যখন টেলিফিল্ম বানাতেন, একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তখন থেকেই তাঁর ‘বাবলি’ বানানোর ইচ্ছে। তখন বুদ্ধদেববাবুর সঙ্গে কথাও হয়েছিল। তবে সেই সময় বাজেট, সময়, সবকিছুর কারণে আর কাজ এগোয়নি। আবার আর একটা মজার এবং আশ্চর্যজনক ঘটনা হল বুদ্ধদেব গুহ তাঁর সৃষ্টি-করা বাবলি চরিত্রটির জন্য নাকি শুভশ্রীকেই ভেবেছিলেন। এতদিন বাদে সেই দুটো অপূর্ণ স্বপ্নই পূর্ণ হল।

আরও পড়ুন- চিকিৎসা আর বিচারব্যবস্থায় ধর্মঘট করা যায় না, বার্তা সুপ্রিম কোর্টের

বাংলা ছবিতে এক নতুন শুভশ্রীকে পাচ্ছি আমরা বেশ কয়েকবছর যাবৎ। ‘বাবলি’তে তিনি অনবদ্য। ‘পরিণীতা’র পর আবার প্রেমের ছবি করলেন রাজ। ছক ভেঙেছেন পরিচালকও। নায়িকা পৃথুলা, গোলগাল, সাদামাঠা হলেও বেশ বোল্ড। যে পাহাড়ি পথে জিপ চালায়, সৎ, সাহসী, বুদ্ধিদীপ্ত। প্রেমিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে তার অস্বস্তি হয় না। এই ছবির মাধ্যমে আবার ঠিক দশ বছর পর একসঙ্গে কাজ করলেন রাজ চক্রবর্তী এবং আবির চট্টোপাধ্যায়। আবিরকে নিয়ে নতুন করে বলার কিন্তু কিছু নেই।

ছবিটি সম্পর্কে আবির জানালেন, ‘বুদ্ধদেব গুহ-র উপন্যাস পড়েই আমার বড় হওয়া। বড়পর্দায় এই ছবি আদতে ওঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য। বহুদিন পর বাংলা ছবিতে ফের এরকম নিটোল প্রেমের গল্প দেখতে পাবেন দর্শক। আগে ভাবতাম বাংলা প্রেমের ছবি দেখতে দর্শক আসবেন না। এখন মনে হয়, সাহিত্য-নির্ভর প্রেমের ছবি যত্ন নিয়ে বানালে অবশ্যই প্রেক্ষাগৃহে আসবেন তাঁরা।’ আবির, শুভশ্রী ছাড়াও এই ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌরসেনী মৈত্র, সোহিনী সেনগুপ্ত প্রমুখ। ছবির শ্যুটিং হয়েছে মূলত ইম্ফল, কোহিমা, ডিমাপুর এবং উত্তরবঙ্গের কিছু জায়গায়। এই ছবির প্রযোজক রাজ চক্রবর্তীর নিজস্ব প্রোডাকশন হাউজ।

Latest article