পায়ের তলায় সরষে? শীতের দিনে বেড়াতে ভালবাসেন? কাছেপিঠে আছে অনেক জায়গা। দু-এক দিনের জন্য ঘুরে আসা যায়। পাঁচ-ছয় দিন সময় পেলে উড়ে যাওয়া যায় দূরে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পছন্দ করেন অনেকেই। বহু মানুষ আকৃষ্ট হন স্থাপত্য সৌন্দর্যে। রাজস্থানের ভরতপুরে গেলে উপভোগ করা যায় দুটিই। মোটামুটি পাঁচ-ছয় দিন পেলে যথেষ্ট। স্থাপত্যের পাশাপাশি সবুজের সমারোহ নিয়ে জায়গাটি রাজস্থানের আকর্ষণ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ভরতপুর (Bharatpur) এবং আশেপাশে আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান।
ভরতপুর (Bharatpur) প্যালেস
রাজপুত ও মুঘল স্থাপত্য শৈলীতে তৈরি ভরতপুর প্যালেস। এই প্যালেস রাজস্থানের ইতিহাসের সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে। এখানে রয়েছে একটি জাদুঘর। সুন্দর ভাস্কর্য, প্রাচীন শিলালিপি এবং অন্যান্য প্রাচীন সামগ্রী প্রদর্শনের জন্য সুসজ্জিত রয়েছে। নিদর্শনগুলো মোটামুটি দ্বিতীয় শতাব্দীর। এই অঞ্চলের শিল্প ও দক্ষতাকে প্রতিফলিত করে। প্যালেসের দেয়ালে শোভা পায় আকর্ষণীয় নকশা। দেখে চোখ ফেরানো মুশকিল। নানা কারণে স্থানটিকে একটি মহান স্মৃতিস্তম্ভ মনে করা হয়।
লোহাগড় দুর্গ
ভরতপুরের জাঠ শাসকরা লোহাগড় দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। প্রায় ২৯০ বছর আগে। মহারাজা সুরজ মাল এই দুর্গ নির্মাণের জন্য নিজের সমস্ত শক্তি ও সম্পদ উজাড় করে দিয়েছিলেন। বিদেশি শত্রুদের আক্রমণ প্রতিহত করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। দুর্গের স্থাপত্য দেখার মতো। মোগল ধাঁচে গড়া। কঠিন, নিরেট আর দুর্ভেদ্য বলে দুর্গের নাম হয়েছিল লৌহগড়। অনেক ছবি নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়াও আছে তিনটি প্রাসাদ। তার মধ্যে কামরা প্রাসাদে রয়েছে মিউজিয়াম, লছমনজি কা মন্দির, গঙ্গা মন্দির।
কেওলাদেও জাতীয় পার্ক
আগ্রা-জয়পুর হাইওয়ের পাশে অবস্থিত ভরতপুর কেওলাদেও জাতীয় পার্ক। ঝোপঝাড়, জলাভূমি, পর্ণমোচীর জঙ্গল আর ঘাসবন নিয়ে সেজে উঠেছে এই বিশাল অভয়ারণ্য। প্রায় ৪০০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। প্রতি বছর শীতের মরশুমে বিভিন্ন দেশের পাখির ঝাঁক এখানে যেন পুনর্মিলনের জন্য উড়ে আসে। অভয়ারণ্যের ভেতরে ঘোরার জন্যে গেট থেকে পাওয়া যায় রিকশা, টাঙ্গা। হেঁটেও ঘোরা যায়। পাওয়া যায় গাইড। তাঁরা এগিয়ে যেতে যেতে চেনাতে থাকেন নানা অচেনা ও অজানা পাখিদের। জঙ্গলে গাছের মগডালে চোখে পড়তে পারে ইগল। বসার পোজ দেখলে মনে হবে ওয়াচ টাওয়ারে বসে নজরে রাখছে জঙ্গলটাকে। ওড়ে মাছরাঙা। ঝুপ করে পড়ে এসে জলে। কোথাও জলাশয়ে পাতাঝরা গাছে এসে বসে পানকৌড়ির ঝাঁক। জলার ধারে দেখা মিলতে পারে কচ্ছপের, বকের দলের। পরিযায়ী বড়সড় হাঁসেদের উড়ে যাওয়া দেখে অবাক হতে হয়। কিছু পাখি জলাশয়ে ডুবে সাঁতার কেটে আবার ডালে বসে ডানা শুকোয়। জঙ্গলে মাঝেমধ্যে দেখা দেয় ময়ূর। আবার কখনও গাছের কোটরে চোখ বন্ধ করে বসে আলসে পেঁচা। জঙ্গলের এই প্রান্ত ওই প্রান্ত ঘুরতে ঘুরতে প্রচুর জন্তু-জানোয়ারও দেখা যায়। আছে হরিণ, নীলগাই, খরগোশ, বেজি, সম্বর, চিতল ইত্যাদি। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে দেখা মেলে পাইথনের। এই জঙ্গলে কোনও হিংস্র জন্তু-জানোয়ার নেই। তাই পর্যটকরা অবাধে ঘুরে বেড়াতে পারেন। দেখতে দেখতে যেন নেশা লেগে যায়। জঙ্গলের মাঝে আছে ওয়াচ টাওয়ার। উপর থেকে দেখা যায় দিগন্তবিস্তৃত জলাভূমি। আছে প্রাচীন কেওলদেও মহাদেব মন্দির। এই মন্দিরের নামেই নামকরণ ‘কেওলদেও ঘানা ন্যাশনাল পার্ক’। ‘ঘানা’ শব্দের অর্থ ঘন জঙ্গল। চেনা-অচেনা পাখি ও জন্তু জানোয়ারের সঙ্গে এখানে স্বপ্নের মতো দিন কাটানো যায়। এককথায় ভরতপুর পাখিপ্রেমীদের কাছে স্বর্গরাজ্য। এই অভয়ারণ্য ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে স্বীকৃত।
অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
ভরতপুর (Bharatpur) থেকে ১১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত অলওয়র। দারুণ জায়গা। এখানে দেখে নেওয়া যায় সিটি প্যালেস তথা মিউজিয়াম, বালা কিলা বা অলওয়র দুর্গ, মুসি মহারানি কি ছত্রি, করণীমাতা মন্দির, পুরজন বিহার, বিনয় বিলাস প্রাসাদ, জয়সমন্দ লেক এবং শিলিশেড় লেক ও প্রাসাদ। এই জায়গাগুলো ঘুরতেই কমপক্ষে একদিন লাগবে। ভরতপুর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি মথুরা এবং মথুরা-লাগোয়া বৃন্দাবন ঘুরে নেওয়া যায়। ভরতপুর থেকে ডিগ খুব কাছে। সড়কপথে দূরত্ব ৩৮ কিলোমিটার। ডিগে রয়েছে সুরজমল ফোর্ট। আঠারো শতকে জাঠ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বদন সিং এই দুর্গ তৈরি করেছিলেন। পরে রাজা সুরজমল সংস্কার করেন। ভরতপুরের রাজাদের কাছে ডিগ ছিল গ্রীষ্মের আবাস। কারণ এই অঞ্চলের মনোরম আবহাওয়া। দুর্গটি পরিখা দিয়ে ঘেরা। দুর্গের দেওয়ালের উচ্চতা ২০ মিটার। এক-একটি পাশ ২৭৪ মিটার। প্রবেশদ্বারটি উত্তরমুখী। আকর্ষণীয়। আশেপাশে পাহাড়ের মাথায় বসানো রয়েছে কামান। দুর্গটি বর্তমানে অনেকটাই বিধ্বস্ত।
কীভাবে যাবেন?
রাজস্থানে অবস্থিত হলেও নিকটতম বিমানবন্দর আগ্রা। দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। আগ্রা ও মথুরা থেকে নিয়মিত বাস যায় ভরতপুরে। নিকটতম রেলস্টেশন মুম্বই-দিল্লি ব্রডগেজ লাইনে ভরতপুর।
কোথায় থাকবেন?
ভরতপুর এবং আশেপাশে আছে অসংখ্য হোটেল। খরচ নাগালের মধ্যে। থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। এখন অনলাইনে যোগাযোগ করা যায়। ফলে আগে থেকে হোটেল বুকিং করে গেলেই ভাল। ভরতপুরের (Bharatpur) হস্তশিল্পের খ্যাতি রয়েছে। চাইলে কিনতে পারেন।