নাড়ি টিপে রোগ নির্ণয় করতে পারা প্রতিথযশা চিকিৎসক ও বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের (Bidhan Chandra Roy) জন্ম ও মৃত্যু দিবসকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে আজ সবাই পালন করে Doctors Day (চিকিৎসক দিবস)। আর আজ এই শ্রদ্ধা নিবেদনে অন্য অনেককে পেছনে ফেলে দিয়েছেন ১ জুলাই সরকারি ছুটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে। নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবান মনে হয়, যখন মনে করি ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির যে পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন ২০১৮ সালে সেই পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ আমারও হয়েছিল।
ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়কে (Bidhan Chandra Roy) বাংলার রূপকার বলা হত দুর্গাপুর, বিধাননগর, কল্যাণী-সহ একাধিক প্রকল্পের জন্য। আর আজ নিজেকে আরও গর্বিত মনে হয় যখন অনুভব করি এই জীবনে এমন একজন মহীয়সী নেত্রীর সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, যিনি পেশায় চিকিৎসক না হয়েও এ রাজ্যে চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটিয়েছেন। সম্পূর্ণ পিছিয়ে পড়া বাংলার সার্বিক দায়িত্ব নিয়ে ১১ কোটি মানুষের কাছে যেভাবে সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের আলো পৌঁছে দিয়েছেন, তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ শুধু বাংলার নবরূপকার নন, তিনি রাজ্যের মানুষের পরম বন্ধু— কারও ঈশ্বর, কারও আল্লা, কারও যিশু— সবার ত্রাতা।
আরও পড়ুন: বায়োপিক রকেট্রি দ্য নাম্বি এফেক্ট
দেশের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী রেকর্ড করেন স্বাস্থ্যের দায়িত্বভার নিজের হাতে রেখে। এরপর বিগত ১১ বছরে স্বাস্থ্যের সর্বস্তরে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন তা আগামীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের কোনও কেন্দ্রীয় সরকার স্বাস্থ্যের বিষয়ে নজর না দেওয়ার কারণে আজ দেশের স্বাস্থ্য বাজেট পার্শ্ববর্তী ছোট ছোট প্রতিবেশী রাষ্ট্রের থেকেও কম। অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার প্রতি বাজেটে সার্বিক অসুবিধা ও কেন্দ্রের অসহযোগিতা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যের বরাদ্দ বাড়িয়েছেন। আজ সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন অনেক বেসরকারি হাসপাতালের ঈর্ষার কারণ।
হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রতি জেলায় নতুন নতুন মেডিক্যাল কলেজ তৈরি, মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরি, স্বাস্থ্য জেলা তৈরি, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি, হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও নিয়মিত নিয়োগ চালু করা— প্রভৃতি একাধিক পদক্ষেপ আজ বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য দফতরকে এনে দিয়েছে স্কচ অ্যাওয়ার্ড-সহ একাধিক স্বীকৃতি ও সম্মান। বাংলার সর্বস্তরের মানুষ আজ সরকারি হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা পান। বাম আমলে যখন ডাক্তারি ছাত্র ছিলাম, তখন ১ টাকা দামের জ্বরের ওষুধও কিনে খেতে হত। এমারজেন্সিতে পাওয়া যেত না ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ। আর আজ সামান্য ওষুধ থেকে দামি ক্যান্সারের ওষুধ সবই বিনামূল্যে। এক্সরে, ইউএসজি, ব্লাড টেস্ট থেকে সিটি স্ক্যান, এমআরআই, পিইটি স্ক্যান— সবটাই সর্বসাধারণের জন্য বিনামূল্যে— বাংলার মানুষের জন্য যা স্বপ্নেরও অতীত ছিল। বেসরকারি হাসপাতালেও বিনামূল্যে পরিষেবার জন্য রয়েছে সরকারের স্বাস্থ্যস্বাথী প্রকল্প, যার মাধ্যমে রাজ্যের বাইরেও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করানো যায়।
নটী বিনেদিনীকে স্বীকৃতি দিয়ে নারীশক্তির বিকাশের বার্তা দিয়েছিল এই বাংলা। আর সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তাবাহক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মধ্য দিয়ে আরও একবার নারীর অধিকার সুরক্ষিত করলেন। পৃথিবীর কোনও মেডিক্লেম বা হেল্থ ইনসিওরেন্স পলিসি বাড়ির গৃহকর্ত্রীর নামে হয় না। বাংলার তৃণমূল সরকারের এই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হয় বাড়ির মহিলাদের নামে। এই বাংলায় তৈরি হয়েছে এশিয়ার সর্বোৎকৃষ্ট মাতৃদুগ্ধ ব্যাঙ্ক ও ব্লাড ব্যাঙ্ক। বেসরকারি হাসপাতালে যাতে বঞ্চনার স্বীকার না হতে হয় তার জন্য তৈরি হয়েছে West Bengal Clinical Establishment Regulatory Board.
কেরলে ওমাস উৎসব বা দিল্লির দীপাবলি বা মুম্বইয়ের গণেশ চতুর্থীর পর করোনা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে দুর্গোৎসব কালীপূজা, ছটপূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা ও বড়দিন পালিত হলেও করোনা থেকেছে নিয়ন্ত্রণে। হাইড্রোস্কিক্লোরোকুইন, অক্সিজেন, ভ্যাকসিন-সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সার্বিক অসহযোগিতা থাকলেও উত্তরপ্রদেশের মতো বাংলায় নদীতে করোনায় মৃত রোগীর দেহ ভাসেনি, জ্বলেনি গণচিতা। সেদিনকার বাংলার নবরূপকার বিধানচন্দ্র রায়ের মতো আজও জননেত্রীর নেতৃত্বে বাংলা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে হৃত সম্মান পুনরুদ্ধারের পথে।