হ্যাঁ, আমাদেরও ‘ভাইজান’ আছে! প্রায় একা কুম্ভের মতো যিনি মেনস্ট্রিম বাংলা সিনেমার ‘গড়’ আগলে যুদ্ধটা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলাফল সব ক্ষেত্রে জেতা-হারা দিয়ে মাপা হয় না, লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মধ্যেও সমীহ লুকিয়ে থাকে। আর সেটাই করে দেখাচ্ছেন এক ও অদ্বিতীয় জিৎ। সমসাময়িক তো বটেই, আগের-পরের প্রায় সব স্টার যখন ‘মেনস্ট্রিম’ বাংলা ছবির জুতো ছুঁড়ে ফেলে ‘পরীক্ষামূলক’, ‘বিষয়ভিত্তিক’ কিংবা ‘আরবান’ ছবির বাইরে ভাবছেন না, একমাত্র জিৎ নিজের ‘মশালা’ ছবির সুপারস্টার পরিচয়ে আজও একইরকম গর্বিত, উত্তেজিত ও আনন্দিত! ঠিক যেমনটি বলিউডের ‘ভাইজান’, সলমন খান। আর ঘটনাচক্র এবার দুজনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ইদ উপলক্ষে আগামী ২১ এপ্রিল মুক্তি পাচ্ছে জিতের ‘চেঙ্গিজ’ (Chengiz) এবং সলমন খানের বহু প্রতীক্ষিত ‘কিসি কা ভাই কিসি কা জান’। কে কাকে কতটা টক্কর দেয়, এখন সেটাই দেখার। তবে ট্রেলার বলে দিচ্ছে জিৎ লড়াই দেবেন!
গল্প চেনা হলেও ট্রেলার চমকে দেওয়ার মতো। চমকে দেওয়ার মতো জিতের উপস্থিতিও। পর্দায় কীভাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করতে হয় তা তিনি জানেন, এবার আরও সতর্ক কারণ ‘চেঙ্গিজ’ (Chengiz) দেখবে সারা ভারত। হিন্দি ট্রেলারে না বলে দিলে বোঝার উপায় নেই, এটি আদতে আঞ্চলিক ছবি, হিন্দিতে ডাব! ডায়ালগ ডেলিভারি ও সংলাপের ধারও জিতের দর্শকের মন জয় করার মতোই। জিৎ-রাজেশ জুটি তাই প্রথম দর্শনে কামাল করতে পেরেছেন নিঃসন্দেহে। ট্রেড অ্যানালিস্ট তরণ আদর্শ তাই টিজার মুক্তির দিন থেকেই আশাবাদী। বাংলা ছবির জন্য নিঃসন্দেহে সুখবর।
১৯৭০ থেকে ১৯৯০— এই সময়ের আন্ডার ওয়ার্ল্ড ড্রাগ-মাফিয়াদের কারবার নিয়ে ছবির গল্প। “ওর বাবা পুলিশ ছিল, মামা পুলিশ, ও নিজেও পুলিশ হবে”, যে ছোট ছেলেটি সম্পর্কে এই ভবিষ্যৎ বাণী করা হয়, তার নাম জয়দেব সিং। কিন্তু জয়দেব বড় হয়ে পুলিশ নয়, হয় ড্রাগ মাফিয়া। আর তার কাজের ক্ষেত্র শুধু কলকাতা শহরে নয়, শহর ছাড়িয়ে একদিকে প্রতিবেশী বাংলাদেশ অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশ অবধি বিস্তৃত। পূর্বসূরি সব মাফিয়ার নাশ করে জয়দেব হয়ে ওঠে একমেবদ্বিতীয়ম ‘চেঙ্গিজ’। অঞ্চলের সবচেয়ে বড় গ্যাংস্টার। একচেটিয়া ব্যবসায় ও দাপটে যে ঘোল খাওয়ায় পুলিশ-প্রশাসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীদের। এমনকী উচ্চপদস্থ অফিসারের মুখোমুখি হয়েও ঘোষণা করে, “কলকাতায় গরম, বর্ষা, শীত সব আমার ইশারাতে হয় ডিসিডিডি সাহেব। তোমার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে এখন জয়দেব, দয়া করে চেঙ্গিজ (Chengiz) হতে বাধ্য কোরো না।”
ছবির মূল গল্প লিখেছেন নীরজ পাণ্ডে ও পরিচালক রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায়। শুধু অ্যাকশন বা রক্ত গরম করা সংলাপ নয়, ফর্মুলা মেনে আছে রোমান্স। আছে চমকে দেওয়ার মতো দৃশ্যপট। ছবির প্রচারে জিৎ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেলার প্রকাশের পর ‘চেঙ্গিজ’ নিয়ে উন্মাদনাও কানে গেছে তাঁর, সব মিলিয়ে জানিয়েছেন, ছবি নিয়ে কতটা আশাবাদী তিনি! এমনিতে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জিৎ তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মিডিয়ায় চর্চা করেন না। কথা বলতে ভালবাসেন শুধু কাজ নিয়ে। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। জিৎ জানান, “সবধরনের দর্শককে আনন্দ দেবার মতো ছবি করতেই আমি ভালবাসি, ‘চেঙ্গিজ’ও তেমনই ছবি। কিন্তু প্রতিটা ছবির বিষয়বস্তু আলাদা হয় এবং আমার অভিজ্ঞতাও নতুন নতুন হয়। যেমন এই ছবিটা করতে গিয়ে আমি ড্রাগ মাফিয়াদের দুনিয়াটা কেমন ছিল সেটা জানলাম, তাকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করলাম অভিনয়ের মাধ্যমে। কিন্তু এই ছবি যে আলাদা অভিজ্ঞতা দিচ্ছে তার কারণ এর প্যান-ইন্ডিয়া রিলিজ প্ল্যান। সারা ভারত জুড়ে আমার ছবি মুক্তি পাবে এটা ভেবেই একটা অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে। ভীষণ রকম উত্তেজিত আমি।’’
আরও পড়ুন- সংসদে তৃণমূলের তোপের মুখে বেসামাল গিরিরাজ
জিৎ-এর কেরিয়ারে অ্যাকশন বরাবরই বড় জায়গা নিয়েছে। আর এ ব্যাপারে নায়ক কতটা দক্ষ তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। সঙ্গে লুক ও ফিল-এর ব্যাপারেও জিৎ ভীষণ সচেতন। আড়াই ঘণ্টার ছবি যাতে নির্দিষ্ট বক্স অফিসের পয়সা-উশুল মাত্রায় হয় নায়ক জিৎ তা নিয়ে একশোভাগ সচেষ্ট। ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ মুভি-ভাবনায় কোনও খামতি রাখতে চাননি প্রযোজক জিৎও। জিতের বিপরীতে আছেন সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়। নিঃসন্দেহে সুস্মিতার কেরিয়ারে এটি বড় ব্রেক। আর আছেন আয়েশা ভট্টাচার্য, যিনি বর্তমানে ছোটপর্দার পরিচিত মুখ হলেও জিতের সঙ্গে একটা দুর্দান্ত যোগাযোগ আছে দীর্ঘদিনের। ১৪ বছর আগে জিতের ‘ওয়ান্টেড’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করেছিলেন আয়েশা। অন্যান্য চরিত্রে আছেন শাতাফ ফিগার, রোহিত বস রায়ের মতো অভিনেতা। ‘চেঙ্গিজ’ প্রযোজনা করেছেন জিৎ ফিল্মওয়ার্কস, গোপাল মাদনানি ও অমিত জুমরানি। নিবেদন, এ এ ফিল্মস। সংগীত পরিচালনা করেছেন অনীক ধর।