রবীন্দ্রসদন-নন্দন প্রাঙ্গণ রীতিমতো কচিকাঁচাদের দখলে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ঘুরে বেড়াচ্ছে বড়দের হাত ধরে। কারণ, এই মুহূর্তে চলছে ‘ছোটদের বইমেলা’। সেইসঙ্গে আয়োজিত হয়েছে শিশু সাহিত্য উৎসব ও বিজ্ঞান মডেল প্রদর্শনী। আয়োজনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অন্তর্গত শিশু কিশোর আকাদেমি। ১২ সেপ্টেম্বর একতারা মুক্তমঞ্চে হয়েছে উদ্বোধন। উপস্থিত ছিলেন শিশু কিশোর আকাদেমির সভাপতি অর্পিতা ঘোষ, বিশেষ সচিব তথা সংস্কৃতি অধিকর্তা কৌশিক বসাক, অপর সংস্কৃতি অধিকর্তা তথা পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সচিব বাসুদেব ঘোষ, বরিষ্ঠ অপর সংস্কৃতি অধিকর্তা তথা লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্রের সচিব কৌস্তুভ তরফদার, প্রকাশক সুধাংশুশেখর দে, সাহিত্যিক দীপান্বিতা রায়, কবি রূপক চট্টরাজ প্রমুখ। সবাইকে বরণ করে নেন শিশু কিশোর আকাদেমির সচিব মন্দাক্রান্তা মহলানবিশ।
সভাপতি অর্পিতা ঘোষ বলেন, এই ছোটদের বইমেলা শুরু হয়েছে গত বছর থেকে। প্রায়ই বলা হয়, আজকালকার ছেলে-মেয়েরা বই পড়ে না। তারা সারাক্ষণ মোবাইল দেখে। সেটা কিন্তু খুব সত্যি নয়। তিনি আরও বলেন, ছোটবেলায় আমরা বিজ্ঞানের মডেল নিয়ে স্কুলে কাজ করতাম। আমাদের জানার ছিল, আজকের ছেলেমেয়েরা বিষয়টাকে কীভাবে দেখে। কারণ, এখন পৃথিবীটা অনেক ছোট হয়ে গেছে। হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। আমরা চট করে মোবাইলে, ইন্টারনেটে অনেক কিছু দেখে নিতে পারি। এই বইমেলা এবং বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পেরে আমরা বুঝতে পেরেছি ছোটরা এখনও বই পড়তে চায়, বিভিন্ন মডেল তৈরি করার ব্যাপারে তাদের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে।
প্রকাশক সুধাংশুশেখর দে বলেন, ছোটবেলায় আমরা প্রচুর বই উপহার পেতাম। পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোনোর পর ঠাকুরমা, পিসিমা, মামা আমাদের বই উপহার দিতেন। বইয়ের উপর শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখে দিতেন কিছু না কিছু। বই উপহার দেওয়ার রীতি এখন অনেকটাই কমে গেছে। এটা আবার ফিরিয়ে আনা দরকার। এখন পড়াশোনার চাপ আগে তুলনায় অনেক বেশি। সেটা মনে রেখেই মা-বাবাদের বলব, দিনে অন্তত আধঘণ্টা ছোটদের পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য কোনও বই পড়তে দিন। তাদের জানতে দিন কী লিখেছেন সুকুমার রায়, কী লিখেছেন লীলা মজুমদার, কী লিখেছেন সুখলতা রাও। এঁদের বই আমরা ছোটবেলায় পড়েছি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চাঁদের পাহাড়’ পড়তে পড়তে মনে হয়েছে, শঙ্করের মতো আমিও যেন চাঁদের পাহাড়ে চলে এসেছি। বই কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটায়। তাই ছোটদের হাতে বই তুলে দিন।
আরও পড়ুন- শিল্পীকর্মা
আছে ১৭টি স্টল। অংশ নিচ্ছে মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, আনন্দ পাবলিশার্স, দে’জ পাবলিশিং হাউস, পত্রভারতী, দেব সাহিত্য কুটীর, শিশু সাহিত্য সংসদ, আনন্দ প্রকাশন, পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড, শিশু কিশোর আকাদেমি প্রভৃতি প্রকাশন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান। ছোটরা বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে কিনছে পছন্দের বই। ভূত-গোয়েন্দা-রূপকথার গল্প, কবিতা-ছড়া, বিজ্ঞান বিষয়ক, মনীষীদের জীবনী ইত্যাদি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। একটি স্টলে পাওয়া যাচ্ছে ম্যাজিকের নানা উপকরণ। ভিড় চোখে পড়ছে সেখানেও।
প্রতিদিন আয়োজিত হচ্ছে ছোটদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অংশ নিচ্ছে মূলত ছোটরা। শিশু কিশোর আকাদেমি সরকারি হোমগুলোর সঙ্গে নিয়মিত কাজ করে। চারটি হোমের ছোটরাও অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে। বারোটা স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে ক্যুইজ প্রতিযোগিতার। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উৎসর্গ করা হয়েছে যোগীন্দ্রনাথ সরকারের নামে। বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রদর্শনীটি উৎসর্গ করা হয়েছে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর নামে। বইমেলাটি উৎসর্গ করা হয়েছে শিশু সাহিত্যিক সুখলতা রাওয়ের নামে। বিজ্ঞান মডেল প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন অনেকেই। উৎসাহিত করছেন ছোটদের। ১৪ এবং ১৫ সেপ্টেম্বর অবনীন্দ্র সভাঘরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শিশু সাহিত্য উৎসব। যাঁরা ছোটদের জন্য ছড়া-কবিতা লেখেন, তাঁরা ছড়া-কবিতা পাঠ করছেন। ছড়াগড়া কর্মশালায় অংশ নিয়েছে এমন কয়েকজন খুদে ছড়াশিল্পীও শোনাচ্ছে নিজেদের লেখা ছড়া। সবমিলিয়ে পুজোর মুখে শিশু কিশোর আকাদেমির আন্তরিক আয়োজন। চলবে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। দুপুর ৩টে থেকে রাত ৮টা। বাড়ির ছোটদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন।