মৌসুমি চৌধুরী
দক্ষিণের খোলা জানলা
পুজোর ঠিক আগেই পাহাড়ের নিচে সবুজ ঘাসে ঘেরা জমিতে চলছে প্র্যাকটিস দূরে শোনা যাচ্ছে আদিবাসীদের মাদলের শব্দ। পুজো তো তাদের কাছে পরব কিন্তু জগন্নাথের ছৌ দল নতুন প্রযোজনায় ব্যস্ত। একটু দূরে গাছের আড়ালে দাড়িয়ে মৌসুমি। জগন্নাথের মেয়ে। সেও চায় বাবার সঙ্গে ছৌ নাচতে। কিন্তু পুরুলিয়ায় ছৌ সম্প্রদায়ে এর আগে কোনও মেয়ে ছৌ নাচের কথা ভাবেনি। সমাজের প্রথা ভেঙে নতুন ট্রেন্ড তৈরি করতে চাইছেন মৌসুমি।
মৌসুমিদের বাড়ি মালদিহি গ্রামে। পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি পাহাড়ের নিচে। এই গ্রামকে বাবা-মেয়ে, জগন্নাথ-মৌসুমি পৃথিবীর সংস্কৃতির মানচিত্রে রঙিন করেছেন। প্রথা ভেঙে তৈরি করেছেন নতুন প্রথা। লোক সংস্কৃতিতে তুলে এনেছেন পুরুলিয়ার মেয়েদের। শিখিয়েছেন ছৌ নাচ। সংস্কৃতির এই লড়াই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন জেদ, যুক্তি আর আত্ম বিশ্বাস নিমেষে গুঁড়িয়ে দিতে পারে প্রথাগত লিঙ্গ বৈষম্যের ভেদ। ব্যতিক্রমী এই ভাবনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অন্য এক লড়াই।
ছৌ-এর কথকথা
লোকশ্রুত ইতিহাস বলে সেরাইকেলা, ময়ূরভঞ্জ, পুরুলিয়ার আদিবাসী মানুষ শিকারে যাওয়ার আগে নিজেদের উদ্দীপ্ত করতে পশুপাখির স্বর, অঙ্গভঙ্গি নকল করে নাচত। যা ছৌ হিসেবে পরিচিত। কালের সঙ্গে এর বিবর্তনও হয়েছে। তাই লোকশিল্পে তিন ধরনের ছৌ নাচ রয়েছে। ১) পুরুলিয়া ছৌ। পুরুষ-কেন্দ্রিক এই লোকনৃত্যের একটা আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে। বীররসাত্মক এই নাচ। এজন্য শারীরিক কসরত লাগে। তাই মেয়েদের এই নাচে প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই নাচের শিল্পীরা মুখোশ ব্যবহার করত। ২) সেরাইকেলা ছৌ। ঝাড়খণ্ডের খরসাওয়াঁ জেলার সদর সেরাইকেলায় এর উৎপত্তি। এখানে শিল্পীরাও মুখোশ ব্যবহার করে। ৩) ময়ূরভঞ্জ ছৌ। এই নাচে মুখোশ ব্যবহার করা হয় না। ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার এর উৎপত্তি। এই দুই ছৌ-তে মধুর রস ও হালকা চালের নাচ থাকে। ফলে এই ধরনের ছৌ নাচে মেয়েদের অংশগ্রহণ নিয়ে সমাজের কোনও আপত্তি নেই।
পেশা নয় নেশা
মৌসুমি কিন্তু সব সামাজিক বাধা উপেক্ষা করে বীররসাত্মক ছৌ শিল্পী হিসেবেই নিজের পরিচিতি করেছেন। তৈরি করেছেন নিজের ছৌ নাচের দল। এই দলে তিনি একা নন। রয়েছেন ছোট বোন এবং গ্রামের আরও ১৫টি মেয়ে। তাঁর স্বপ্নের এই ছৌ নাচের দল সাড়া ফেলেছে দেশে-বিদেশে। ছৌ ছন্দেই তাঁরা জেলায় জেলায় ঘুরে অভিনয় করেছেন। কখনও মহিষাসুর বধ কখনও তারকাসুর বধ আবার কখনও চিত্রাঙ্গদা কালমৃগয়া। লোকশিল্প প্রসারে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ পৌঁছেছে তাঁদের কাছে। ছৌ নাচ এখন আর তাঁদের কাছে শুধু পেশা নয়, নেশাও।
মৌসুমির ছৌ নাচে আসাতে প্রথম আপত্তি তুলেছিলেন তাঁর বাবা। ছৌ গুরু জগন্নাথ চৌধুরী। তাঁর নিজস্ব ছৌ দলও রয়েছে। কাকা ফাল্গুনীও জনপ্রিয় ছৌ নৃত্যশিল্পী। তবুও মৌসুমির ছৌ শেখা নিয়ে প্রথমে আপত্তি তুলেছিলেন তাঁর বাবা। সমাজও তাতে সুর মিলিয়েছিল। মৌসুমি বলেন, ছোট থেকেই বাবা-কাকাদের ছৌ নাচ দেখি। খুব আগ্রহ ছিল। কিন্তু বাড়ি থেকে সাহায্য পাচ্ছিলাম না। শেষে ২০১২ সালে গ্রামেই বসেছিল ছৌ নিয়ে কর্মশালা। আয়োজক বাংলা নাটক ডট কম। শুধুমাত্র ছেলেদের জন্যই আয়োজন করা হয়েছিল এই কর্মশালার। কারণ তখনও মেয়ে ছৌ শিল্পী ছিল না। বাবা ছিলেন এই কর্মশালার এক প্রশিক্ষক। আমি জেদ করলাম কর্মশালায় যোগ দেব। বাবা নারাজ। শেষে হার মানলেন। দিদিকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ছোট বোন শ্যামলী, পাড়ার মেয়ে সরলা, সীমারানি, করুণা, ভাগ্যবতীরা জেদ ধরেন ছৌ নাচ শেখার জন্য। শেষে সমাজের ছৌ গুরুরা মেয়েদের কর্মশালায় যোগ দেওয়ার অনুমতি দিলেন। সেখান থেকেই ছৌ শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনা মৌসুমি ও তাঁর দলের।
দুর্গতিনাশিনী ‘মেয়ে মানুষ’ মৌসুমি
তারপর নানা শারীরিক কসরত আর অনুশীলনের এক দীর্ঘ পরিক্রমা।
ছৌ নিয়ে মেতেছেন ঠিকই কিন্তু পড়াশোনা ছাড়েননি মৌসুমি। অনুপ্রাণিত করেছেন দলের মেয়েদেরও লেখাপড়া শেখার জন্য। কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছেন। এখন মৌসুমি সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা এমএ-র ছাত্রী। বোন শ্যামলীও বিএ বাংলা অনার্সের ছাত্রী। এই ছৌ দলের অন্যতম সদস্য সরলা এবার উচ্চমাধ্যমিক দেবেন। ভাগ্যবতী এবারই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সীমারানি। মৌসুমির দল এখন শিক্ষায় এবং সংস্কৃতিতে পিছনে ফেলেছে সামাজিক কুংস্কারকে। তাঁরাই এখন হয়ে উঠেছেন প্রত্যেকে ষড়ৈশ্বর্যশালিনী দুর্গা। মৌসুমিদের দুর্গতিনাশিনী হয়ে ওঠাতেও রয়েছে চমক। নিজের গ্রামে প্রথম যেদিন ছৌ নাচ করেছিলেন সেটা ছিল ব্যতিক্রমী এক অভিজ্ঞতা। কারণ অনেকগুলো বাধা পেরিয়ে তাঁকে নাচতে হয়েছিল। হতে হয়েছিল দুর্গতিনাশিনী। আমাদের প্রত্যেকের জীবনের বাধাগুলো এক-একটা অহংকারী অসুরের প্রতীকী, যা দেখে মনে হয় জয় করা সম্ভব নয়। কিন্তু সেই বাধা জয় করেই মানুষ হয়ে ওঠে ‘দুর্গতিনাশিনী’। ছৌ নাচের মাধ্যেমে মহিষাসুরবধের পালা দেখল গ্রামের সবাই, পালা শেষ হতেই দুর্গার মুখোশটা খুললেন যখন শিল্পী, গ্রামবাসীরা অবাক! এই এতক্ষণ মাদলের তালে চারদিক কাঁপাচ্ছিল একটা ‘মেয়েমানুষ’? ইনিই মৌসুমি চৌধুরী, নিজের চেষ্টায় ছৌ নাচের মতো কঠিন নৃত্যকে রপ্ত করতে পেরেছেন, শুধু নিজে নয়, শেখালেন আরও অনেককে। অনেকের অনেক কথা শুনেছেন এই কাজ করতে গিয়ে, কিন্তু নিজের লক্ষ্যেে থেকেছেন অবিচল।
বিশ্ব জুড়ে ছৌ
মৌসুমি শুধু পুরুলিয়ায় নয়, ছুটে গেছেন ইউরোপের দেশে। নরওয়েতে সম্মানিত হয়েছেন। ছৌ নাচ শিখিয়েছেন সেখানকার বাচ্চাদের। এ যেন বাংলার লোকসংস্কৃতির বিশ্বায়ন। নিজেও আপ্লুত হয়েছেন ইউরোপ ভ্রমণে। তাঁর কথায় স্বপ্ন স্বার্থক হয়েছে— ছোটবেলায় যখন নিজে ছৌ নাচ শিখতে শুরু করি তখন জানতাম না যে পুরুলিয়ার প্রথম মহিলা ছৌ শিল্পী হয়ে পাড়ি দেব ইউরোপের নরওয়েতে। আর সেখানে গিয়ে স্কুলের বাচ্চাদের এভাবে ছৌ শিখিয়ে এতটা আনন্দ পাব।
পুরুলিয়ায় বলরামপুরের গ্রাম মালডি। পাশে কুমারী নদী। এই মালডি গ্রামের মৌসুমিকে চিনেছে সারা বিশ্ব। মৌসুমি শুধু প্রতিবাদী হয়ে নিজে নাচেননি, গড়ে তুলেছেন ছৌ নাচের এক পরম্পরা। তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘও। সমাজ বদলে দিতে তাঁর অবদান মনে রাখার মতো। পরম্পরা শুধু পুরুলিয়ায় তৈরি হয়নি। হয়েছে ইউরোপেও। নরওয়ের ট্রন্ডেম শহর থেকে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক মৌসুমির নিজের নাচের ঘর হয়ে উঠেছে। পরম্পরাকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মৌসুমির স্বপ্নের দল ‘মিতালি ছৌ মালডি’ শুরু করেছে লোকসংস্কৃতি চর্চা। মৌসুমি বিশ্বাস করে পুরুলিয়া থেকে উঠে আসবে একঝাঁক ছৌ মৌসুমি। দাপিয়ে বেড়াবে বিশ্ব। এই স্বপ্নে বারবার মৌসুমি মোহিত হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: ঝাড়গ্রামে উদ্ধার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বোমা! জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
মীনাক্ষী মান্না
জলকন্যার রূপকথা
সময়টা ১৯৯৫ সাল। স্বামী নির্মল মান্নার ছিল যন্ত্র চালিত বড় ভুটভুটি। রেওয়াজ অনুযায়ী ভুটভুটির চালক এবং মৎস্যজীবীদের বরাত দিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতেন নির্মলবাবু। কিন্তু সে বছরই আগাম টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় ভুটভুটির চালক। কিন্তু মাছ ধরার মরশুমে একদিন না যাওয়া মানেই বিরাট ক্ষতি। ভুটভুটি বা ট্রলারের চালক না পেলে ক্ষতি তো আরও বেশি। মাঝসমুদ্রে মৎস্যজীবীদের ট্রলার চালকদের উপর নির্ভর করতে হবে। মাছের ঝাঁকের কাছে অতিসন্তর্পণে ট্রলার নিয়ে যায়। এই দিকে এতগুলো টাকা বেহাত হওয়ায় ব্যবসার ক্ষতি সামলাতে না পেরে ভেঙে পড়েছিলেন ঋণগ্রস্ত নির্মলবাবু।
মাঝসমুদ্রে পাড়ি
ঠিক সেই সময় জীবনের চিত্রনাট্য বদলে দেন মীনাক্ষী। স্বামীকে ভরসা জোগান। দু’-একবার ট্রলারে চেপেছিলেন ঠিকই। সেই ভরসাতেই স্বামীকে বলেছিলেন— ‘চলো মাছ ধরতে। আমি ট্রলার চালাব।’ নির্মলবাবু একবিন্দুও গুরুত্ব দেননি। উৎসাহও দেখাননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার মানতে হল স্ত্রী মীনাক্ষীর কাছে। তাঁদের ৩ ছেলে নন্দন, চন্দন এবং বিনন্দন তখন বেশ ছোট। তাদের আত্মীয়ের বাড়ি রেখে স্বামীর সঙ্গে সমুদ্রে পাড়ি দেন মীনাক্ষী। এলাকার মৎস্যজীবীরা হতবাক। এ কি গল্প নাকি সত্যি? তাই প্রতিবার মাছ ধরে ফেরার পর থেকেই এলাকার মেয়েরা তাঁকে ঘিরে ধরেন সমুদ্রের গল্প শোনার জন্য। মাঝসমুদ্রের গল্প যেখানে শুধু জল আর জল। যেখানে সবজি নেই ভাত রান্না নেই। আছে শুধু ট্রলার আর জাল। সেদিনের মীনাক্ষী মান্না আজকের মৎস্যকন্যা। সাহস দেখিয়েছিলেন বলে শুধু বাংলা নয়, তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছে সমস্ত বিশ্ব। পেয়েছেন স্বীকৃতি দেশে-বিদেশে। মীনাক্ষীর মাছ ধরতে যাওয়ার খবর বিদেশে পৌঁছলে তাঁকে স্বীকৃতি জানায় নরওয়ে। মাছ ধরার গল্প ও সমুদ্রের সঙ্গে লড়াইয়ের গল্প শুনিয়ে আসেন মানুষদের। মাছ নরওয়ের জীবিকা এবং অর্থনীতির অন্যতম অবলম্বন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাছ রফতানিকারী দেশ নরওয়ে। মীনাক্ষী নরওয়ের অভিজ্ঞ মৎস্যজীবীদের মন জয় করে দেশে ফিরেছিলেন। ১৩ দিনের সফর ছিল। সমুদ্রে ট্রলার চালিয়ে মাছ ধরে দেখিয়েছিলেন। তাঁদের বাংলার মৎস্যজীবীদের জীবনযাত্রার কথা শুনিয়েছিলেন। আর মাছের টক রেঁধে খাইয়েছিলেন। হাসতে হাসতে সেই গল্প শোনালেন মীনাক্ষী। দেশ থেকে চাল নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই চালে ভাত রাঁধলেন। তারপর সমুদ্র থেকে নিজের ধরা মাছের তরকারি। শেষ পাতে বাংলার নিজস্ব মাছের টক। টক খেয়ে সেখানকার বাসিন্দারা আত্মহারা। দোভাষীর মাধ্যমে বারবার মাছের টকের কথা, তার রেসিপির কথা জানতে চাইছিলেন সেখানকার সংগঠনের মাথারা।
জীবনের ওঠা-পড়া
জীবনের অনেক ওঠা-পড়া নিজের চোখে দেখেছেন মীনাক্ষী। সম্মান-স্বীকৃতিও পেয়েছেন। এখন পাড়ার মেয়ে বউরা অন্য চোখে দেখেন লড়াকু মীনাক্ষীকে। মীনাক্ষী শুধু নিজে বাঁচার লড়াই করেননি। লড়েছেন মৎস্যজীবীদের জন্যে। এমনকী প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। তাঁর জীবনের লড়াই এখনও থামেনি। যে ৩ ছেলেকে রেখে সমুদ্রে পাড়ি দিতেন তাঁরা এখন সংসারী। যৌথ পরিবারের সদস্যসংখ্যা এখন ১৫। এখনও মীনাক্ষী মাছ ধরেন তবে এখন মাছ ধরায় সঙ্গী ছেলেরাও। মাছ ধরার এই মরশুমে মীনাক্ষীর জীবনের শক্তি যেন বেড়ে যায়। তাঁর কথায়— ‘এখন প্রায় আড়াই মাস সমুদ্রে রোজ মাছ ধরা চলবে। বিন্ধা জালে পড়বে ছোট ছোট সামুদ্রিক মাছ। টুলা, তাপড়া, রুলি, ভোলা, দইচাক, কত ধরনের মাছ।’ তারপরই আষাঢ় মাস। শুরু হবে ইলিশের মরশুম। পাতা হবে মনোফিল জাল। প্রতি ট্রিপে তিন থেকে চারদিন থাকতে হবে সমুদ্রে। মাছ ধরে দিঘা মোহনা এবং পেটুয়াঘাটের বাজারে মাছ নিলাম করে ফিরবেন ডাঙায়। এটাই এখন মীনাক্ষীর জীবনচক্র।
জল-জীবনের গল্প
মীনাক্ষীর জল-জীবনের গল্প যতটা রোমাঞ্চকর, মাছ ধরাটা ততটা রোমাঞ্চের নয়। মাঝসমুদ্রে লড়াই আছে। সেই লড়াইয়ে পিছু হটতে চান না ৫০-ঊর্ধ্ব মীনাক্ষী। মীনাক্ষীদের মাছ ধরার নৌকাকে ট্রলার না বলে যন্ত্রচালিত বড় নৌকা বলাই ভাল। এখন মাঝসমুদ্রে ঘুরে বেড়ায় অনেক বড় বড় অত্যাধুনিক ট্রলার। সেখানে মীনাক্ষীদের ট্রলারটা ‘চুনোপুঁটি’। সেইসব রাঘববোয়াল ট্রলার ঝাঁকে খোঁজে মাছ। বলে দেয় কোথায় কত স্পিডে ট্রলার চালাতে হবে। ওই ট্রলারই ছিঁড়ে দেয় মীনাক্ষীদের ভুটভুটি নয়কার জাল। তবুও পিছিয়ে আসেন না মীনাক্ষীরা। সমাজের মিথ ভাঙার যে নেশায় নেমেছেন তার শেষ দেখে ছাড়তে চান। শঙ্করপুরের সারি সারি ট্রলার আর ভুটভুটি নৌকা আজও উৎসর্গ করা থাকে মহিলা দেবীদের নামে। মা মনসা, মা সন্তোষী, মা গঙ্গা, মা দুর্গা— এইসব দেবীর নামে। কিন্তু ট্রাজেডি— কোনও মহিলা এইসব নৌকা স্পর্শ করলে তারা মাছ ধরতে যেতে পারে না। সমাজের চোখে অশুচি হয়ে যায়। সমাজের এই চিত্রনাট্য বদলে দিয়েই মীনাক্ষী হয়ে উঠেছেন মৎস্যজীবী সমাজে প্রতিবাদের অন্য নাম।
*দীপা কর্মকার*
প্রদুনোভা গার্ল
চোট এবং আঘাতের ফলে বারংবার কেরিয়ারে বাধা এসেছে তাঁর। ২০১৫ সালে শেষবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছিলেন। ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিক গেমসে তাঁর পারফরম্যান্স ঝড় তুলেছিল গোটা জিমন্যাস্টিক্সের দুনিয়ায়। আমেরিকার অন্যতম সেরা জিমন্যাস্ট সিমোনা বাইলসের সঙ্গে একেবারে সমানে-সমানে লড়াই করেছিলেন তিনি। অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া হলেও ভারতের ক্রীড়াজগতে নয়া অধ্যায় রচনা করেন ‘প্রোদুনোভা গার্ল’ দীপা কর্মকার। ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে অন্যতম বড় তারকা দীপা।
ত্রিপুরার বাঙালিনি
ত্রিপুরার আগরতলায় বাঙালি পরিবারে জন্ম দীপার। ২০১৮ সালে তিনি FIG আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জ কাপে প্রথম হন। সেটা ছিল প্রথম ভারতীয় জিমন্যাস্ট হিসেবে তাঁর প্রথম সোনা। মাত্র ৬ বছর বয়স থেকেই তাঁর জিমন্যাস্টিকসে প্রশিক্ষণ শুরু। সেই সময় থেকেই তাঁর কোচ ছিলেন বিশ্বেশ্বর নন্দী। উচ্চতায় মাত্র চার ফুট এগারো ইঞ্চির দীপার ছিল ফ্ল্যাট ফিট, জন্মেছিলেন বেশ কিছু শারীরিক বিকৃতি নিয়ে। কিন্তু সেই ত্রুটি জীবনের প্রতিকূলতা তুচ্ছ করে দীপা মাত্র ১৪ বছর বয়সে জিতে নিয়েছিলেন ন্যাশনালস জুনিয়র। যা তাঁকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিচিতি দেয়। ২০১০ সালে দিল্লির কমনওয়েলথ গেমসেও অংশ নেন দীপা।
সংগ্রাম অন্তহীন
তাঁর দীর্ঘ ক্রীড়াজীবনে সংগ্রাম অন্তহীন। ২০১৬ সালের পর থেকেই বারবার চোট পান। হাঁটুর সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১৭-তে অস্ত্রোপচার হয় দীপার। সুস্থ হয়ে ২০১৯ সালে অংশগ্রহণ করেন বিশ্ব জিমন্যাস্টিক্সে। তারপর আর বড় কোনও প্রতিযোগিতায় দেখা যায়নি তাঁকে। তার আরও বড় কারণ ছিল। রিও অলিম্পিকে চতুর্থ স্থানাধিকারী দীপা কঠিন শাস্তির মুখে পড়েন। ২০২১ সালের অক্টোবর মাস থেকে কোনও খেলায় আর অংশ নিতে পারলেন না। কারণ নিষিদ্ধ ওষুধ খাওয়ার জন্য দীপাকে ২১ মাসের জন্য নির্বাসিত করে আন্তর্জাতিক টেস্টিং এজেন্সি। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। জানা যায় তাঁর শরীরে নাকি হাইজিনামিন নামের একটি নিষিদ্ধ পদার্থ পাওয়া যায়। যা বিটা ২-এর অধীনে পড়ে। এটি বিশ্ব অ্যান্টি ডোপিং এজেন্সির নিষিদ্ধ ড্রাগসের তালিকায় রয়েছে। হাইজিনামিন ফুসফুসে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর দীপার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেই নমুনার নিরিখে তাঁর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়। ২০২২-এর মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্টিক ফেডারেশন যখন তাঁর রাজ্যকে সাসপেন্ড করে দেয় তখন এই ঘটনা সামনে আসে। দীপার এই নির্বাসন শুরু হয় ২০২২-এর জুলাই থেকে এবং বহাল থাকে ২০২৩-এর ১০ জুলাই অবধি। তাঁর বিরুদ্ধে ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে তদন্ত চলছিল বলে ততদিন কোনও খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। কাজেই সেটাকেও শাস্তি হিসেবেই গণ্য করা হয়েছিল। দীপাকে ডোপ পরীক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি ডোপিং এজেন্সি বা ওয়াডা। কিন্তু তিনি সেই নির্দেশ মানেননি। একাধিকবার ওয়াডার নির্দেশ উপেক্ষা করার অভিযোগ রয়েছে দীপার বিরুদ্ধে। যা তাঁর নির্বাসনের প্রধান কারণ বলে ধরা হয়েছিল। খেলোয়াড় জীবনে বারবার চোট-আঘাত ভুগিয়েছে তাঁকে। চোট সারানোর জন্য কোনও ওষুধ খেয়েই সন্দেহের চোখে পড়েন তিনি। কারণ যেটাই হোক না কেন ভারতের অন্যতম সেরা জিমন্যাস্টের বিরুদ্ধে ডোপিং বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
আবার শিরোনামে
যদিও দীপা নিজে কখনওই এই অভিযোগ মানতে রাজি হননি। বছরের পর বছর মানসিক যন্ত্রণায় কাটিয়েছেন দীপা। কখনও মনে হয়েছে বেঁচে না থাকলেই ভাল কিন্তু একবার লড়াই না লড়ে তিনি ময়দান ছাড়তে চাননি। সেই দীর্ঘ লড়াইয়ে পরে আবার শিরোনামে দীপা। সম্প্রতি প্রথম ভারতীয় হিসাবে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতে ইতিহাস গড়লেন এই বাঙালিকন্যা।
অলিম্পিক্সের দলে সুযোগ পাননি দীপা কর্মকার। কিন্তু অলিম্পিক্সের আগে জিমন্যাস্টিক্সে ইতিহাস গড়লেন তিনি। প্রথম ভারতীয় হিসাবে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছেন।
উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে জিমন্যাস্টিক্সের ভল্ট ফাইনালে সোনা জিতেছেন ৩০ বছরের দীপা। উত্তর কোরিয়ার দুই প্রতিযোগীকে হারিয়ে এই কীর্তি স্থাপন। দ্বিতীয় স্থানে শেষ করে রুপো জিতেছেন কিম সন হ্যাং। ব্রোঞ্জ জিতেছেন জো কিয়ং বিয়ল। তাঁকে হারিয়েই স্বর্ণপদক পেলেন দীপা। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার পদক পেলেন দীপা।
প্রদুনোভা ভল্টে সেরা
দীপার আগে পর্যন্ত কোনও ভারতীয় সোনা জেতেননি। দীপাই দেশের প্রথম অ্যাথলিট হিসেবে সেই নজির গড়লেন। প্রথম ভারতীয় জিমান্যাস্ট হিসেবে অলিম্পিক্সে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি। মহিলাদের ভল্ট ইভেন্টে প্রোদুনোভা ভল্টে সারা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন দীপা। যদিও অল্পের জন্য পোডিয়াম ফিনিশ করতে পারেননি। দীপা শেষ করেছিলেন চতুর্থ স্থানে। নিজের অদম্য জেদে সফল হলেন দীপা। প্রদুনোভা ভল্ট দেওয়ার দিক থেকে তিনি হচ্ছেন ভারতীয়দের মধ্যে শীর্ষে। সফলভাবে এই ভল্ট দিতে পারা পাঁচজন মহিলার মধ্যে তিনি অন্যতম। যন্ত্রণাও যেমন পেয়েছেন তেমনই দীর্ঘ কেরিয়ারে পেয়েছেন বহু স্বীকৃতি।
স্বীকৃতি পুরস্কার
দীর্ঘ সংগ্রামমুখর ক্রীড়া জীবনে পেয়েছেন সম্মান এবং পুরস্কার। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ও কমনওয়েলথ গেমসে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য তাঁকে ২০১৫ সালে অর্জুন পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে তিনি পান খেলরত্ন। ২০১৭ সালে দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ পুরস্কার পদ্মশ্রীতে ভূষিত করা হয় তাঁকে। ২০১৭ সালে তিনি ফোর্বসের তালিকায় ৩০ বছরের কম বয়সি হিসেবে সুপার অ্যাচিভার লিস্টে জায়গা করে নেন।
অলিম্পিক্সে যোগ্যতা অর্জন করতে না পারার হতাশা ছিল তাঁর কারণ এশিয়ান সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে অলিম্পিক্সের একটিমাত্র জায়গাই ফাঁকা ছিল। সেরা অল-অ্যারাউন্ড পারফর্মারের, যেটি তৃতীয় স্থানাধিকারী ফিলিপিন্সের এম্মা মালাবুয়ো পেয়েছেন। ফলে দীপার জন্য কাজটা কঠিনই ছিল। দীপা অল-অ্যারাউন্ডের যোগ্যতা অর্জন পর্বে ষোড়শ ও ফাইনালে চতুর্দশ স্থান পান। অলিম্পিকে যেতে না পারলেও দীপা এই দেশের গর্ব।
অনসূয়া সেনগুপ্ত
কান-এর কন্যা
২০০৯ সালে পরিচালক অঞ্জন দত্তের ছবি ‘ম্যাডলি বাঙালি’তে অভিনয় আত্মপ্রকাশ তাঁর। অঞ্জন দত্তের হাত ধরেই বিগ ব্রেক এসছিল তাঁর জীবনে। কাজ করেছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘রে’ সিরিজে। পশ্চিমবঙ্গের খাস কলকাতার মেয়ে তিনি। ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে এই বাঙলার মেয়ের জয়জয়কার, গড়লেন ইতিহাস। তিনি অভিনেত্রী অনসূয়া সেনগুপ্ত। এই মঞ্চে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। বিশ্ব জুড়ে চর্চিত এই মঞ্চে তিনিই প্রথম ভারতীয়। তবে কোনও ভারতীয় ছবির জন্য নয় পরিচালক কনস্ট্যানটিন বোঁজ্যনভ-এর ছবি ‘দ্য শেমলেস’-এ অসাধারণ পারফর্ম্যান্সের জন্য অনসূয়া পেয়েছেন এই সম্মান। কলকাতার পরিচালক কিউয়ের পুরনো বন্ধু বুলগেরিয়ান এই পরিচালক। তাঁর সূত্র ধরেই কনস্ট্যানটিন খুঁজে পেয়েছিলেন অনসূয়াকে। উল্লেখ্যযোগ্য যেটা তা হল অনসূয়াই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে প্রথমবার সেরা অভিনেত্রী হিসাবে সম্মানিত হলেন। আঁ সার্তে রিগা বিভাগে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
সেরা অভিনয়
ছবির নাম ‘দ্য শেমলেস’। যেখানে এক যৌনকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনসূয়া। চরিত্রের নাম ‘রেণুকা’। এক যৌনপল্লির দুই সমকামী নারীর প্রেমের কথা বলে এই ছবিটি। উঠে এসেছে একজন যৌনকর্মীর কথা। সেই ছবির জন্য তৈরি হতে নিজেকে সময় দিয়েছেন প্রচুর। কখনও ছবি অনেক এঁকেছেন আবার কখনও মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন অনসূয়া। গল্পটা হল দিল্লির একটি পতিতাপল্লিতে একজন পুলিশকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় রেণুকা। আর সেই সফরে তার সঙ্গে পরিচয় হয় এই গল্পের দ্বিতীয় মুখ্যচরিত্রের সঙ্গে এবং গোটা সফরে তাঁদের সম্পর্কের ভালবাসা এবং দ্বন্দ্ব নিয়ে কাহিনি এগিয়ে চলে৷ দ্বিতীয় মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছেন ওমারা শেট্টি। প্রশিক্ষিত অভিনেত্রী না হলেও বহুদিন প্রোডাকশন ডিজাইনার হিসেবে কাজ করার সুবাদে হাতেকলমে অনেক কিছু শিখেছেন, অনেক পছন্দের অভিনেতা, অভিনেত্রীদের কাজ খুব কাছ থেকে দেখেছেন যেগুলো তাঁকে এমন নিখুঁত, অভিনেত্রী হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। তাঁর অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা হয়। অনসূয়ার পর পরিচালক পায়েল কাপাডিয়া তাঁর ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ় লাইট’ সিনেমার জন্য গ্রাঁ প্রি পেলেন। কিন্তু অনসূয়াকে নিয়ে বাড়তি আবেগের কারণ কলকাতা। ভারতীয় এবং বাঙালি মেয়ে হিসেবে কান চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে ইতিহাস তৈরি করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করলেন কল্লোলিনী তিলোত্তমার লেক গার্ডেন্সের মেয়ে অনসূয়া। এছাড়াও এই ছবিতে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিতা বশিষ্ঠ। প্রায় মাসখানেক ধরে, অর্ধেক ভারতে ও অর্ধেক নেপালে শ্যুটিং চলে এই ছবির।
হতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক
অনসূয়া সেনগুপ্তর পড়াশুনো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। কেরিয়ারের শুরুর দিকে সাংবাদিকতা করার স্বপ্ন দেখতেন অভিনেত্রী। হতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক। কিন্তু তা হওয়া হল না। পা রাখলেন শোবিজের দুনিয়াতে। প্রথমে তিনি সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। একটি ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান ছবি ক্লেয়ার ম্যাকার্থীর ‘দ্য ওয়েটিং সিটি’-তে কাজ করলেন। তারপরেই অঞ্জন দত্তের ছবি দিয়ে ফিল্মের একটি পার্শ্বচরিত্রে হাতেখড়ি হয় অনসূয়ার। মুম্বইয়ে চলে যাওয়ার আগে থিয়েটারে ডাবিং করতেন। এরপরে ২০১৩ সালে মুম্বইয়ে চলে আসেন। সেখানে প্রোডাকশন ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করেন। জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সের শো মাসাবা মাসাবা-তে প্রোডাকশন ডিজাইনিং টিমে ছিলেন তিনি। এই মুহূর্তে গোয়ায় থাকেন তিনি। সেখানকার শান্ত নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশে কাজ করে আনন্দ পান অনসূয়া। ডিজাইনিং টিমে কাজ করতে গিয়েই এই ছবির মুখ্য চরিত্রের জন্য ডাক পান।
সফল নারীমুখ
অনসূয়ার সাফল্যে আজ ভারতের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি গর্ববোধ করলেও বাংলা ছবি বা হিন্দি ছবি কোথাও কিন্তু মূল্যায়ন হয়নি অনসূয়ার। এত বলিষ্ঠ অভিনেত্রী অনেক আগেই লাইমলাইটে আসতেই পারতেন কিন্তু হয়তো হীরে চেনার ক্ষমতা সবার থাকে না। অনুসূয়ার এই সাফল্যে তাঁকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে নামী রাজনীতিবিদ, বলিউডের আলিয়া ভট্ট থেকে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মতো তাবড় তারকারা। তাঁর এই জয়কে অনসূয়া উৎসর্গ করেছেন ভারতীয় সিনেমার মহিলাদের এবং এই প্রসঙ্গে পরবর্তীতে তিনি লেখেন, ‘প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে এই পুরস্কার জিতে আমি অত্যন্ত গর্ব বোধ করছি। ধন্যবাদ জানাব জুরিদের, যাঁরা আমাকে যোগ্য ভেবেছেন। এই পুরস্কার আমার একার কৃতিত্ব নয়। ছবির অন্য কলাকুশলী ও পরিচালকের কাছে কৃতজ্ঞ। যিনি আমার প্রতিভার উপর আস্থা রেখেছেন। আমার ছবির পরিচালক জাদুকরের মতো আমার কাছে। এই ছবিটার গল্পের জোর যথেষ্টই ছিল। আমার এই জয় সেই সব মহিলার জন্য, যাঁরা শুধু গল্প বলার তাগিদে দিনরাত এই মাধ্যমটাকে ভালবেসে কাজ করে যাচ্ছেন।’ শেষে অনসূয়ার সংযোজন, ‘আমি আশা করব, আমার এই জয় ভারতীয় সিনেমায় মহিলাদের কাজের পথকে প্রশস্ত করবে। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের লক্ষ্যপূরণের স্বপ্ন দেখতে পারে।’