দুর্গরহস্য

দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে বাংলা ছবির দর্শকদের জন্য ছিল ঝুলি-ভরা একগুচ্ছ উপহার। বেশকিছু ছবি এবং ওয়েব সিরিজ মুক্তি পেল এই সময়। যার মধ্যে রয়েছে বহুচর্চিত সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত গোয়েন্দা ওয়েব সিরিজ ‘দুর্গরহস্য’। গতকাল হৈ চৈ-তে স্ট্রিমিং শুরু হল এই সিরিজটির। সৃজিতের দুর্গরহস্যে ফের ব্যোমকেশের চরিত্রে দেখা যাবে অনির্বাণকে। কে সেরা দেব না অনির্বাণ তা দেখার জন্য মুখিয়ে দর্শক। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

শুভ শারদীয়াতে বাংলা ছবির দর্শকরা পেয়েছেন চার-চারটে উপহার। প্রায় একসঙ্গে মুক্তি পাচ্ছে চারটি ছবি। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের দশম অবতার, অরিন্দম শীলের জঙ্গলে মিতিন মাসি, অরুণ রায়ের বাঘাযতীন আর শিবপ্রসাদ-নন্দিতার রক্তবীজ। বক্স অফিসে চারটি ছবির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলবে। শুধু বড় পর্দায় নয় মুঠোফোনেও দর্শকের জন্যও রয়েছে বিশেষ উপহার। একদিকে সিলভার স্ক্রিনে সৃজিতের দশম অবতার, অন্যদিকে ওটিটিতে তাঁরই গোয়েন্দা ওয়েব সিরিজ ব্যোমকেশের ‘দুর্গরহস্য’ (Durgo Rahasya) হাজির।
কয়েক বছর ধরে কলকাতার চলচ্চিত্র এবং ওটিটি— সর্বত্র যেন ব্যোমকেশ-উৎসব লেগেছে। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত গোয়েন্দা সিরিজ ‘ব্যোমকেশ’-এর গল্প নিয়ে ছবি করছেন নামী পরিচালকরা, বড় বড় প্রযোজনা সংস্থা অর্থলগ্নি করছে এই চরিত্র নিয়ে সিনেমা বানাতে।
ব্যোমকেশ যেমন কালজয়ী একটি চরিত্র তেমনই এই চরিত্রের জনপ্রিয়তাও কালজয়ী। যা কালে কালে বেড়ে চলেছে। এর আগে বাংলায়, ‘ব্যোমকেশ’ হিসেবে দেখা গেছিল উত্তমকুমারকে। এরপর অভিনেতা রজিত কাপুরকে। তারপরে প্রয়াত বলিউডি অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত করেছেন ব্যোমকেশ। ইদানীং কলকাতায় আবির চট্টোপাধ্যায়, গৌরব চক্রবর্তী, যিশু সেনগুপ্ত এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্য, দেব-সহ আরও অনেককেই ‘ব্যোমকেশ’ চরিত্রের রূপদান করতে দেখা গেছে। আর ব্যোমকেশের স্ত্রী সত্যবতী রূপে আমরা পেয়েছি ঊষসী চক্রবর্তী, সোহিনী সরকার ও ঋদ্ধিমা ঘোষ, রুক্মিণী মৈত্রকে। ব্যোমকেশ যেন একটা প্রতিযোগিতা। যদিও প্রতিটি ব্যোমকেশ এবং তাঁর পরিচালকেরা নিজের ক্ষেত্রে সাবলীল, নিজের সেরাটা দিয়েছেন। তবু তুলনা তো এসেই যায়। সেই সঙ্গে আসে আলোচনা, সমালোচনা, বিতর্কও।
গতকাল বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর মধ্যেই মুক্তি পেল পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ওয়েব সিরিজ ‘দুর্গরহস্য’ (Durgo Rahasya)। দারুণ এক কাকতালীয়। ব্যোমকেশ-উৎসব আর দুর্গোৎসব দুয়েই এবারে মজবে বাঙালি। ঠাকুর দেখা, ভূরিভোজনের সঙ্গে জমিয়ে দুর্গরহস্য দেখতে দেখতে ছুটির মজা নেবেন তাঁরা।
এবার আসি দেব ভার্সেস সৃজিতে। এটা না থাকলে ‘ব্যোমকেশ’ যেন কেমন জোলো হয়ে যেত। আসলে হেলদি কম্পিটিশনটা সবসময় জরুরি যা সকলকে অনুপ্রাণিত করে। সৃজিত মুখোপাধ্যায় এবং দেব দুজনেই একই গল্প বেছে নিয়েছিলেন ছবি এবং সিরিজের জন্য। কার ছবি বেশি ভাল হয় সেটা দেখার জন্য মুখিয়ে ছিলেন দর্শক। আগে থাকতেই শুরু হয়ে গিয়েছিল বিতর্ক। যদিও সেই প্রসঙ্গের ইতি ঘটিয়ে ইতিমধ্যেই দেবের ছবি মুক্তি পেয়েছে। দর্শকদের থেকে মোটের উপর বেশ ভালই সাড়া পেয়েছে সেই ছবি। প্রথমবার ব্যোমকেশ হিসেবে নজর কেড়েছেন অভিনেতা দেব। এবার পালা সৃজিতের। তাঁর পরিচালিত এই সিরিজ দেবের ছবিকে টেক্কা দিতে পারল কিনা সেটাই এখন দেখার। তবে দেব বা সৃজিত এমনটা ভাবছেন না। কিন্তু ব্যোমকেশ দেখতে বসার দর্শকদের কাছে এটাও একটা কারণ যে কোনটা বেশি ভাল। মজাটা এখানেই।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ চরিত্রে রয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য এবং সত্যবতী হয়েছেন অভিনেত্রী সোহিনী সরকার। কয়েকদিন আগেই লঞ্চ হয়েছিল ছবির পোস্টার। তখন পরিচালক বলেছিলেন, ‘আমরা একটু অন্যরকম। পোস্টার দিয়ে সাধারণত শুরু হয়, আমরা পোস্টার দিয়ে শেষ করছি।’
১৯ অক্টোবর থেকে হইচই-তে স্ট্রিমিং শুরু হল এই ওয়েব সিরিজের। আরও চমক হল, ব্যোমকেশ হিসেবে নিজের যাত্রা শেষ করার ঘোষণা করলেন অনির্বাণ। পোস্টার লঞ্চের পরে একটি ছোট ভিডিও প্রকাশ করে অনির্বাণ জানিয়ে দিলেন, আর ব্যোমকেশের চরিত্রে অভিনয় করবেন না তিনি। এই প্রসঙ্গে অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য বললেন, ‘সব অভিনেতারই তো একটা লিমিটেশন থাকে। ব্যোমকেশ সমগ্র আমার পড়া। দুর্গরহস্য করার পর ভেবে দেখলাম নতুন কিছু ব্যোমকেশ মানুষটার ভেতর থেকে তুলে আনা বোধহয় আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়। সেখানে হয়তো একজন নতুন অভিনেতা বোধহয় আমাদের লাগবে, যে ব্যোমকেশের আন-এক্সপ্লোর্ড দিকটা তুলে আনবে, যেদিকটা এখনও দর্শক দেখেননি, সেরকম কারুর কাছেই চরিত্রের যাওয়াটা ঠিক হবে। আমার সীমাবদ্ধতা সমেত আমার যা যা কিছু পৌঁছনোর ছিল এই ব্যোমকেশ বক্সী মানুষটা হয়ে দর্শকের কাছে, আমার মনে হয় আমি সেটা পৌঁছে দিয়েছি। আমার ভাণ্ডার শেষ হয়ে গেছে।’
যাই হোক, এই ছবির ট্রেলার লঞ্চ হওবার পরে দেব এবং সৃজিতের চিত্রায়ণে বিস্তর ফারাক ধরা পড়ল। দুজনে যেন গল্পটিকে একেবারে দুই ভাবে তুলে ধরেছেন তাঁরা। ট্রেলারের শুরুতেই দেখা যায় উত্তম কুমারের চিড়িয়াখানা দেখে বেরোচ্ছেন তাঁরা সকলে। এরপরই দেখা যায় সত্যবতীর মা হওয়ার সুখবর। ১৯৬৭ সালের প্রেক্ষাপটে তৈরি হওয়া এই সিরিজে এবার উঠে আসে সেই দুর্গে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধনের কথা যা বহু শতাব্দী ধরে সুরক্ষিত আছে। কিন্তু তার সন্ধানে সম্প্রতি সাপের কামড়ে প্রাণ হারিয়েছেন চারজন। অপরাধী কে? সম্পত্তির লোভে কে-ই বা প্রিয়জনকে মারছে? কোন মন্ত্রে খুঁজে বের করবে সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ? এই সবের উত্তর মিলবে এই ওয়েব সিরিজে।
গল্পের টুকরো টুকরো ছবি ধরা পড়েছিল ট্রেলারে, যা নজর কেড়েছিল সেই সঙ্গে বাড়িয়েছিল প্রত্যাশাও। টানটান রহস্যে ঘেরা দুর্গরহস্যের (Durgo Rahasya) উন্মোচন করবেন সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সী।

কেমন ছিল শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা, সেই প্রসঙ্গে পরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, ‘খুব গরমের মধ্যে এই ছবির শ্যুটিং করেছি। বেলগাছিয়া রাজবাড়ি ও মধ্যপ্রদেশে। এই গল্পটা নিয়ে কাজ করার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ আমার খুব প্রিয়। আশা করি সকলের ভাল লাগবে এই সিরিজটা।’
ব্যোমকেশ নিয়ে সোহিনী সরকার বলেন, আমি খুব আশাবাদী যে এই দুর্গরহস্য সকলের নজর কাড়বে। এর আগে অনেকেই সত্যবতী চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যে যার মতন করে সেই চরিত্রগুলো করেছেন। আমি আমার মতো করে করেছি। আমার খুব ভাল লেগেছে অনির্বাণের সঙ্গে অভিনয় করে। আমাদের এই কেমিস্ট্রিটা দর্শক খুব সুন্দরভাবে গ্রহণ করেছেন। এটাই আমার বড় প্রাপ্তি। এই ওয়েব সিরিজে অজিতের ভূমিকায় রয়েছে অভিনেতা রাহুল অরুণোদয় ব্যানার্জি। এ-ছাড়া আছেন বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, অনুসা বিশ্বনাথন, দেবেশ রায়চৌধুরী-সহ অনেকেই।

আরও পড়ুন- আত্মপ্রচারে মগ্ন মোদি : এবার ‍‘নমো’ নামের ট্রেন উদ্বোধন, নিন্দায় তৃণমূল-সহ বিরোধীরা

Latest article