প্রতিবেদন : নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটার ইয়ান স্মিথ বলছেন, ‘দিস ইজ নট ন্যাচারাল, দিস ইজ ফার ফ্রম দ্যাট’। ঠিকই বলেছেন তিনি। একদিনের ক্রিকেটে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের (Glenn Maxwell) সর্বকালের সেরা ইনিংসকে তো এভাবেই বর্ণনা করা উচিত।
অথচ ভাবুন, ঠিক চার বছর আগের ছবিটা। ২০১৯ বিশ্বকাপ চলছে ইংল্যান্ডে। নেটে বাউন্সারের আঘাতে হাসপাতালে লড়াই করতে হচ্ছে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের ‘ম্যাড ম্যাক্স’-কে। গুরুতর চোটের ধাক্কা এতটাই তাঁকে মানসিকভাবে দুমড়ে-মুচড়ে দিল যে বিশ্বকাপের পরেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে ক্রিকেট থেকে বিরতি নিতে বাধ্য হলেন। ভাগ্যিস ব্রেকটা নিয়েছিলেন, না হলে ৭ নভেম্বর, ২০২৩-এর অতিমানব ম্যাক্সিকে হয়তো দেখতে পেত না ক্রিকেটবিশ্ব।
নিজের সঙ্গে লড়াই করে শুধু ফেরেননি, পুরনো অ্যাকশন হিরোর মেজাজেই প্রত্যাবর্তন ঘটালেন। ম্যাক্সির (Glenn Maxwell) ব্যাটিং তাণ্ডবের চেনা ছবিটা উজ্বল ক্যানভাসে জ্বলজ্বল করছে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভিনি রমনের সঙ্গে চার হাত এক হওয়াটাই যেন ছিল ম্যাক্সির অনুপ্রেরণা। বিয়ের পর স্ত্রীর উৎসাহ ও সমর্থন অস্ট্রেলীয় তারকাকে নতুন চেহারায় ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করেছে। ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের মাঠে ম্যাক্সওয়েলের এক পায়ে খেলা মহাকাব্যিক ২০১ নট আউট ইনিংস আশা-আশঙ্কার ঘূর্ণিপাকেই ওয়াংখেড়ের স্ট্যান্ড থেকে উপভোগ করেছেন অস্ট্রেলীয় তারকার স্ত্রী।
আরও পড়ুন- স্টোকসের সেঞ্চুরি, বড় জয় ইংল্যান্ডের
পায়ে টান ধরায় যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে বারবার মাঠে শুয়ে পড়েও এক পায়ে যেভাবে ব্যাটিং করে দলকে অকল্পনীয় জয় উপহার দিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল, মানবজাতির হার না মানার নতুন রূপকথা লিখেছেন, বিশ্ব ক্রিকেটে যে উদাহরণ বিরল। এমন অতিমানবীয় ইনিংস দেখার সময় স্ট্যান্ডে বসে ম্যাক্সওয়েল-পত্নীর নিশ্চয়ই মনে পড়েছে মানসিক অবসাদের বিরুদ্ধে স্বামীর লড়াইয়ের দিনগুলো। ম্যাচের পর সামাজিক মাধ্যমে ভিনির পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে। ইনস্টা স্টোরিতে ম্যাচের একটি মুহূর্তের ছবি দিয়ে লেখেন, ‘সব আবেগ ২০১* এর জন্য’।
বরাবরই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের ডাকাবুকো অ্যাকশন হিরো ম্যাক্সওয়েল। ছোট থেকে কখনও নিজেকে একটি খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি তিনি। ছোটবেলায় টেনিস খেলতেন। পেশাদার ক্রিকেটে আসার আগে গলফেও হাত পাকিয়েছেন ম্যাক্সি। ফলে বিভিন্ন ধরনের শট বা স্ট্রোক খেলার ক্ষমতা তাঁর সহজাত। গলফের স্কিল কাজে লাগিয়েই কি বিস্ময়কর ইনিংস খেললেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাওয়ার হিটিংয়ের ক্ষেত্রে পায়ের মুভমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ নয়, হাতের মুভমেন্টই আসল। গলফের নেশাটা এখনও একই রকম আছে ম্যাক্সওয়েলের। বিশ্বকাপের মধ্যেই গলফ কার্টে চড়তে গিয়ে চোটের কবলে পড়েন। ইংল্যান্ড ম্যাচটা খেলতে পারেননি।
স্বপ্নের ব্যাটিং করে অস্ট্রেলিয়াকে শেষ চারে তুলে ম্যাড ম্যাক্স বলেছেন, ‘‘আপাতত কিছুদিন গলফ কোর্স থেকে দূরে থাকব। বিশ্বকাপ জিততে হবে। বাকি সব পরে।’’ অতিমানব ম্যাক্সি স্বপ্ন দেখাচ্ছেন পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের।