ভয়ঙ্কর ‘ইকথিয়সরস’ (Ichthyosaurus)
প্রথমে মাছ। মাছের কানকোর বদলে ফুসফুস। কালের বিবর্তনে জলচর প্রাণীর অনেক রদবদল ঘটে গেছে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই পরিবর্তন। বিজ্ঞানীদের ভাষায় যাকে বলে অভিযোজন। অভিযোজনের ফলেই জলচর প্রাণীর বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যে নতুন ধরনের সৃষ্টি হয় তারই নাম আমরা জানি সরীসৃপ। সরীসৃপ মানে সাপ, টিকটিকি, গো-সাপ, কুমির। অর্থাৎ জলচর বা বুকে হেঁটে চলে। কুমিরও এদের পূর্বপুরুষ। জলে থাকলেও বুকে হেঁটে চলত তারা। এখানেই বলা মাছ থেকে সরীসৃপ হওয়ার সময় মাঝামাঝি আরও অসংখ্য প্রাণের সৃষ্টি হয়। এইসব প্রাণীদের মধ্যে একটি আশ্চর্যজনক প্রাণী হল ‘ইকথিয়সরস’ (Ichthyosaurus) বহু বছর আগে সৃষ্টি হওয়া এই প্রাণীর বিলুপ্তি থেকেই অসংখ্য ধরনের পাখির উদ্ভব। বিজ্ঞানী মহলে এ নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। লক্ষ লক্ষ বছর আগে সৃষ্টি হওয়া এই প্রাণীর বিলুপ্তি থেকেই নানা ধরনের পাখির উদ্ভব যেমন হয়েছে তেমনি বিশ্বসংসার সেজে উঠেছে বৈচিত্র্যের নানা ধারায়। শুনলে অবাক লাগে এই ‘ইকথিয়সরস’ (Ichthyosaurus) বহু বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এই পৃথিবী থেকে। এর চেহারা ছিল মাছ এবং সরীসৃপের মিশেলে ভয়ঙ্কর ধরনের। কুমিরের মতো লম্বাটে মুখে করাতের মতো ধারালো অস্ত্র বা দাঁত বলা যেতে পারে। তার আকার আকৃতি থেকেই বিজ্ঞানীদের ধারণা এই প্রাণীটি ছিল ভয়ঙ্কর ধরনের হিংস্র। যাকে বলে ওরা ছিল ‘জলজ আতঙ্ক’। সমুদ্রের বিশাল এলাকা নিয়ে তাদের ছিল আধিপত্য। ওরা যেখানে ঘোরাফেরা করত তার ধারে-কাছে নাকি বহু প্রাণী যেতে ভয় পেত। বড় প্রাণীর কাছে ছোট প্রাণীর আতঙ্ক থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু জলের তলার এই প্রাণীটিকে অনেকটাই সমীহ করে চলতে হত অন্যান্য জলজ প্রাণীকে। এরা শুধু আতঙ্কেরই নয়, সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই ‘ইকথিওসরস’-এর মৃতদেহের মধ্যে নাকি অনেক ছোট ছোট কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে। পৃথিবীর অনেক মিউজিয়ামে সেইরকম উদাহরণ রাখা আছে এখনও। অনেকেরই ধারণা এই জলজ ভয়ঙ্কর প্রাণীটি খিদে পেলে শুধু অন্য প্রাণীদেরই নয়, নিজের সন্তানদের নির্বিচারে পেটে পুরে নিত বা খেয়ে ফেলত। আশ্চর্যজনকভাবে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে এই ভয়ঙ্কর সামুদ্রিক প্রাণীটি। বলা বাহুল্য, বর্তমান দূষিত পৃথিবীর জলজ প্রাণীরা আজ বিলুপ্তির মুখে। জীব বৈচিত্র্যের প্রায় কয়েক লক্ষ জলজ প্রাণী আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণী জয়যাত্রা অব্যাহত
টেরোডাকটাইল বা উড়ুক্কু সরীসৃপ
উড়ুক্কু সাপকে পাখির আদিপুরুষ বলে চিহ্নিত করেছেন গবেষক বিজ্ঞানীরা। তাঁদের অনুমান লক্ষ লক্ষ বছরের অভিযোজন বা পরিবেশের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবার ফলেই সরীসৃপের সামনের হাতদুটো পাখায় পরিণত হয়। তারা অনেক চেষ্টায় বা নিজেদের প্রয়োজনেই উড়তে শিখে ছিল। খাদ্যের সন্ধানে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পৌঁছতে বা উড়ে যেতে শিখেছিল এরা। এ ঘটনা বা অভিযোজন আজকের নয় কয়েক লক্ষ বা কোটি বছর আগের কথা। একটু খুলেই বলা যাক। প্রবল শীত বা ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে বা আত্মরক্ষার কারণে এরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করল। সামনের পা দুটি তুলে পেছনের পায়ে ভর দিয়ে ছুটতে শেখে। সেখান থেকে একদিন উড়তে শেখে। পা দুটো হাতের মতো ব্যবহৃত হতে লাগল। ক্রমে সেই হাত ডানায় পরিণত হল। মাটি ছেড়ে উঁচুতে উড়তে শিখল। পড়ে যত সহজ এবং স্বাভাবিক মনে হচ্ছে তা কিন্তু নয়। জন্য লক্ষ লক্ষ বছর সময় লেগেছিল।
তখনও লেজ খসে পড়েনি। মুখের আকৃতি এবং দাঁতও হুবহু সরীসৃপের মতোই ছিল। অদ্ভুত এই প্রাণীটিকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছিলেন টেরোডাকটাইল। টেরেডাকটাইল পাখা মেলে নাকি ৩০ ফুট লম্বা হত। পাখাটা ছিল বাদুড়ের মতো। এরাই পরিবর্তিত বা অভিযোজিত হয়ে আজকের বিভিন্ন প্রজাতির পাখিতে পরিণত। এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীতে কয়েক লক্ষ প্রজাতির পাখি বর্তমান