আমার সঙ্গী রবীন্দ্রনাথ
অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য
আমার জীবনটাই রবীন্দ্রময়। আমি অনুক্ষণ রবীন্দ্রনাথকে (Kabiguru Rabindranath Tagore) খুঁজে যাচ্ছি। এটা শুধু মুখের কথা নয়, ১৯৬৬ সালে আমি অধ্যাপক হিসেবে বিশ্বভারতীতে জয়েন করেছি, সেদিন থেকে আজও পর্যন্ত প্রতিদিন উত্তরায়ণে রবীন্দ্রভবনে যাই এবং রবীন্দ্রনাথকে খোঁজার চেষ্টা করি। এইভাবে খুঁজতে খুঁজতে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ২০-২৫টার মতো বই লেখা হয়ে গেছে। পরিণত বয়সে আরও স্পষ্ট করে স্পর্শ করব বলে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখেছি। দীর্ঘ ঐতিহাসিক উপন্যাস। আমার পিতৃদেব অধ্যাপক বিজনবিহারী ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রসান্নিধ্য-ধন্য মানুষ। ১৯৩২-৪১ পর্যন্ত কবির কাছেই ছিলেন। গবেষণা সহায়ক হিসেবে। আমাদের বাড়িতে বাবাকে লেখা রবীন্দ্রনাথের নিজের হাতের বেশকিছু চিঠি আছে। পঁচিশে বৈশাখের দিন সেই চিঠিগুলো বের করে স্পর্শ করি। আসলে এই ঘরানায় আমার ছোটবেলা কেটেছে। রবীন্দ্রনাথ আমাদের কাছে ঈশ্বর। তাঁর চেয়ে মহোত্তর, শ্রেষ্ঠতর ঈশ্বর কল্পনাতেও আসে না। ১৯৬১ সালে পিতৃদেবের সঙ্গে প্রথম শান্তিনিকেতনে আসি। তারপর আমি কিন্তু সেই অর্থে শান্তিনিকেতনের বাইরে আর কোথাও যাইনি। বর্তমানে আমি বিশ্বভারতী পত্রিকার সম্পাদক। ডুবে আছি রবীন্দ্রচর্চার মধ্যেই। বলা যায়, আমার শয়নে-স্বপনে-জাগরণে রবীন্দ্রনাথ। তিনিই আমার শক্তি। তিনিই আমার প্রেরণা। তিনিই আমাদের জীবন। তিনিই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। আট বছর আগে স্ত্রীকে হারিয়েছি। বাড়িতে একাই থাকি। একাকী সময়ে আমার সঙ্গী সেই রবীন্দ্রনাথ। প্রতি মুহূর্তে অনুভব করি তাঁর উপস্থিতি।
আমার অদৃশ্য দাদু
অলকানন্দা রায়
আমি কোনওদিন রবীন্দ্রনাথকে (Kabiguru Rabindranath Tagore) দেখিনি। তবু মনে হয় তিনি আমার অদৃশ্য দাদু। তাঁর অদৃশ্য কোলে চেপে আমি বড় হয়েছি। তিনি আমাকে গল্প শুনিয়েছেন, গান, নাচ, আবৃত্তি শিখিয়েছেন। জীবনের প্রতি পদে, সমস্তরকম পরিস্থিতিতে আমি তাঁকে পেয়েছি। কিছুটা বুঝে, কিছুটা না বুঝে। সবকিছুর মধ্যে ঘিরে থাকেন তিনি। খুঁজলেই পাওয়া যায়। তাঁকে আমি পেয়েছি অজান্তে। শিখেছি পরিমিতিবোধ এবং সৎসাহস। প্রথা ভেঙে আমি অনেক কাজ করেছি। কম বয়স থেকেই। নাচের গ্রামারটা শিখেছি। তবে কস্টিউম, নাচ নিজের মতো রচনা করেছি। কাজের ধরনটা পুরোপুরি নিজস্ব। এখন এই বয়সে এসে বুঝি, সেটাও ওঁর প্রভাব। কারণ উনিও বাইরে থেকে অনেক কিছু আহরণ করে এনে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে উপস্থাপন করেছেন। কতটা নিতে হবে সেটাও উনি জানতেন। এই ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ আমার অদৃশ্য গুরু, অদৃশ্য পথিকৃৎ। আমি যা কিছু কাজ করতে যাই, ঘুরেফিরে সেই রবীন্দ্রনাথ। যাঁদের নিয়ে ‘বাল্মিকী প্রতিভা’ করেছি, তাঁদের জীবন যেন উনি আগেই লিখে রেখে গেছেন। রত্নাকর থেকে বাল্মীকি। সেটাকে নিয়েও আমি অনেক ভাঙচুরে করেছি। তবে ওঁকে ছাপিয়ে গিয়ে নয়। ওঁর ভাবকে কখনও নষ্ট করিনি। বারবার মনে হয়েছে, কখনও যেন ওঁর উপর দিয়ে না যাই। বড় হয়েছি ওঁর ছায়ায়, বুড়ো হচ্ছি ওঁর ছায়ায়। তাই আমার কাছে রবীন্দ্রনাথ হলেন সেই মানুষটি, যিনি সবকিছু বুঝতেন, সবাইকে বুঝতেন। মূল কথা হল, তিনি বুঝতেন এবং নিজের অনুভূতি সুন্দরভাবে প্রকাশ করতেন। এটা কিন্তু সবাই পারেন না। সবরকম ভাবে রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবন ঘিরে আছেন। রবীন্দ্রনাথের মতোই আমার জীবন জুড়ে আছেন অরবিন্দ-শ্রীমা। তাঁদের কাছ থেকেই শিখেছি মৃত্যুটা অন্য জিনিস। তাই আমার কোনও মৃত্যুভয় নেই। তবে কষ্টের ভয় আছে। রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুকে একটা সুন্দর রূপ দিয়েছেন। মনে করতেন, মৃত্যু শেষ না। পরম শান্তি। নিজে মৃত্যুশোক পেয়েছেন। চোখের সামনে চলে গেছেন অনেক কাছের মানুষ। উনি যদি মৃত্যুকে এত সুন্দর ভাবে দেখতে পারেন, তাহলে আর সবাই কেন পারেন না? প্রতি মুহূর্তে মনে জাগে এই প্রশ্ন।
ক্রান্তিদর্শী মানুষ ছিলেন
প্রণতি ঠাকুর
আমাদের বাড়ির বসার ঘরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Kabiguru Rabindranath Tagore) একটা পুরনো ছবি ছিল। আমার মা সেই ছবিতে সুন্দর করে চন্দন এবং টগর ফুলের মালা পরিয়ে তাঁর সঙ্গে আমার এবং পাড়ার আমার বয়সি বন্ধুবান্ধবদের পরিচয় করান। দিনটা ছিল পঁচিশে বৈশাখে। তখন আমার পাঁচ কি ছ’ বছর বয়স। ‘হাট’ কবিতাটা মুখস্থ ছিল। মা বলেছিলেন, ‘‘যা জানো তাই তোমাদের করতে হবে।’’ তখনকার দিনে ঘরে ঘরে গান শেখার চল ছিল না। কবিতা তো নয়ই। তবু ‘হাট’ কবিতাটা বলেছিলাম। এই ভাবেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে পরিচয় হল ফ্রেমে বাঁধানো তাঁর ছবির মাধ্যমে। মায়ের উৎসাহে। আমার মা শিক্ষিকা ছিলেন না। তাঁর পড়াশোনা ক্লাস সিক্স পর্যন্ত। তবু তাঁর অদম্য পড়ার ইচ্ছে ছিল। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর প্রাণ। পড়ে শোনাতেন ‘কর্ণ-কুন্তী সংবাদ’, ‘গান্ধারীর আবেদন’। তারপর স্কুলের বইয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ি, পরীক্ষা দিই, নম্বর পাই। কলেজে ঢোকার পর বিভিন্ন আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় যাওয়া শুরু হয়। রবীন্দ্রনাথের কবিতা বলতাম। বলতে বলতে ভাললাগাটা গভীর হয়। আজ এই প্রৌঢ়ত্বে আমার কাছে ঈশ্বর বলতে শুধুই রবীন্দ্রনাথ। তিনি তো নিজেই বলে গেছেন, ‘ভজন পূজন সাধন আরাধনা সমস্ত থাক পড়ে/ অন্ধকারে দেবালয়ের কোণে কেন আছিস ওরে।’ অনেক মন্দির দর্শন করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। অনেক তীর্থস্থান ভ্রমণ করেছি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বলে গিয়েছেন, কোনও মন্দিরে দেবতা থাকতে পারে না। দেবতা থাকেন আমাদের মনে। আমাদের মননে। চারপাশে। আনন্দ হচ্ছে দেবতার একটি রূপ। প্রেম হচ্ছে দেবতার একটি রূপ। পূজাতে তার সমাপন। সবটাই তো রবীন্দ্রনাথ আমাদের শিখিয়ে গেছেন। আমার জীবনে যখন সংকটের কালো মেঘ ঘনিয়ে আসে, ‘গীতাঞ্জলি’ খুলে বসি। কোনও কোনও সময় ‘সঞ্চয়িতা’ বা ‘গীতবিতান’-এর গানগুলো কবিতার মতো পড়ি। শরীরের অসুখ ওষুধ খেয়ে সারানো যায়। মনের অসুখ তো সহজে সারানো সম্ভব নয়। এই অবস্থায় বিশল্যকরণী হলেন রবীন্দ্রনাথ। আমরা তাঁর শরণাপন্ন হই। ক্রান্তিদর্শী মানুষ ছিলেন। কত বছর আগে বলে গেছেন, ভবিষ্যৎ কোনদিকে এগোচ্ছে। তিনি আমাদের নানা বিষয়ে সাবধান করেছেন। প্রকৃতি নিয়ে সাবধান করেছেন। ধর্ম নিয়ে পৃথিবীময় আজ যে বিরোধ, হানাহানি, রক্তপাত, তিনি সেটা নিয়েও আমাদের ভাবতে সাহায্য করেছেন। তাঁর গল্পে, নাটকে, উপন্যাসে, কবিতায়। আমার ব্যক্তিগত জীবনে যখনই একটা শূন্যতার সৃষ্টি হয়, আমি তাঁর কথা ভাবি। পুরনো লেখা বারবার পড়ি। দেবতা নন, তিনি আমার প্রাণে আছেন। দিয়ে গেছেন সব। তাঁর উপর আমার নির্ভরতা। তাঁকে ভালবাসা। তারপর তাঁকে প্রণাম।
আরও পড়ুন-জীবনে প্রতিক্ষণে রবীন্দ্রনাথ
উনি আমার শুদ্ধতা
জয় গোস্বামী
রবীন্দ্রনাথের (Kabiguru Rabindranath Tagore) কবিতার সঙ্গে আমার পরিচয় বাল্যকালে বাবার মুখে শুনে। বাবা রবীন্দ্রনাথের কবিতা মুখস্থ বলতেন। এরপর রবীন্দ্রনাথের কবিতা প্রতি ধীরে ধীরে আগ্রহ জন্মাল যখন আমি আর একটু বড়। তাঁর কবিতা না পড়লে আমার কখনও কবিতা লেখার ইচ্ছে জন্মাত না। আর শুধু কি রবীন্দ্রনাথের কবিতাই পড়েছি তা নয় আমি তাঁর গল্প, উপন্যাস, নাটক সবই পড়েছি। তাঁর রক্তকরবী, ডাকঘর, রাজা নাটকগুলো দেখেছি। যখন রবীন্দ্রনাথের নাটক দেখার অভিজ্ঞতা হয় তখন আমার বয়স সতেরো থেকে বাইশ বছরের মধ্যে। সারাজীবন রবীন্দ্রনাথের কবিতা তাঁর লেখার প্রতি আগ্রহ রয়ে গেছে কখনও মনে হয়নি যে আগ্রহটা চলে যাচ্ছে। তবে রবীন্দ্র কবিতা পড়ার প্রচলন আজকের দিনের কবিদের মধ্যে অনেকটা কমে এসছে। তার কারণ বাংলা কবিতার ঐতিহ্য এখন বেশ শক্তিশালী। জীবনানন্দ, বিষ্ণু দে, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অলকরঞ্জন দাশগুপ্ত এঁরা আসার পর বাংলা কবিতার ধারা অনেক শক্তিশালী হয়ে গেছে যে রবীন্দ্রনাথ না পড়লেও চলে। এখানে আমার কোনও বক্তব্য নেই। যার যেটা ভাল লাগে লাগবে সে সেটা পড়বে। তবে রবীন্দ্রনাথের কবিতার মধ্যে গল্পের মধ্যে, নাটকের মধ্যে আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন ছিন্নপত্র, রক্তকরবী, ডাকঘর এমন লেখা তো তাঁর আগে কেউ লেখেনি বাংলায়। নাটক যে ওরকম হতে পারে আমরা কেউ ভাবিনি তাই না। আমি রবীন্দ্রনাথকে এখনও পড়ি তার কারণ আমার মনকে শুদ্ধ করে নেব বলে। আমি মনকে অনেকটা শুদ্ধ করে নিতে পারি তাঁর গল্প, কবিতা, গদ্যে। উনি আমার শুদ্ধতা। রবীন্দ্রনাথের গান ছাড়া, কবিতা ছাড়াও তাঁর একটা গোটা বিশ্ব রয়েছে। কতরকম লেখা তিনি লিখেছেন। তিনি যে চিঠিগুলো লিখেছেন তা তাঁর মতো করে আর কে লিখতে পেরেছে। ‘পথে ও পথের প্রান্তে’ বলে রবীন্দ্রনাথের একটা গদ্যের বই আছে সেই বইটা যখন পড়েছিলাম তখন ভাবলাম কেউ কি এমনভাবেও ভাবতে পারে। আমার মনকে অনেকখানি শান্তি দিতে পারে রবীন্দ্রনাথ। ব্যক্তিগতভাবে রবীন্দ্রনাথ আমার নিজের জন্য সবসময় খুব প্রয়োজনীয়।
আমার কাছে তিনি জীবনদর্শন
মাধবী মুখোপাধ্যায়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Kabiguru Rabindranath Tagore) আমাদের সবার কাছে অমর হয়ে আছেন তাঁর কর্ম দিয়ে। আমার কাছে তিনি জীবনদর্শন। জীবনের যে কোনও আনন্দ, বেদনা, বাধা, বিপত্তি, সংশয়, মানে, অভিমানে আমি রবীন্দ্রনাথকে খুঁজে পাই। জীবনের প্রতিটা স্তরে আমি ওনাকে নিজের সঙ্গে একাত্ম করে পাই। শৈশব থেকেই ওঁর গল্প, গান কবিতা, নাটকে সমৃদ্ধ আমি। আমি রবীন্দ্রনাথের তিনটে গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা ছবিতে অভিনয় করেছি স্ত্রীর পত্র, চারুলতা, মালঞ্চ। চারুলতায় দেখানো হয়েছিল যে তখনকার দিনে স্বামী- স্ত্রীর সম্পর্ক ছিল গুরুশিষ্যার মতো। স্বামীকে দেখতে তখন দূরবিন লাগত, এতটাই দূরত্ব। কিন্তু যখন অমল এল চারুর জীবনে তখন তার রিয়েলাইজেশন হল যে কাছ থেকেও মানুষকে ভালবাসা যায়। এমন এক অনুভূতি, এত সুন্দর গল্প, এ তো স্বাভাবিক। এমন করে আর কে লিখবে। স্ত্রীর পত্র করতেও ভীষণ ভাল লেগেছিল, তেমনই মালঞ্চ করতে। এ এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। অভিনয় করতে গিয়ে চরিত্রগুলোর সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছি কখন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেও এক হয়ে গেছি।
রবীন্দ্রনাথ আমার বন্ধু
লোপামুদ্রা মিত্র
রবীন্দ্রনাথ আমার কাছে ঈশ্বরের মতো আর রবীন্দ্রজয়ন্তী এলে মনে হয় যেন পুজো আসছে। এখনও ওই দিনটা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেলে, গান গাইলে মনে হয় যেন পুজো করছি। আবার আর একদিক থেকে রবীন্দ্রনাথ আমার বন্ধু, যেন আমার সমবয়সি। আমার ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত উনি যেন ধাপে ধাপে আমার সঙ্গে পরিণত হয়েছেন। তাঁকে আমি পেয়েছি জীবনের সব সন্ধিক্ষণে। যখন আমি বলি ‘দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার গানের ওপারে’ তখন আমার মনে হয় যেন এই কথা রবীন্দ্রনাথ আমাকে দিয়ে বলাচ্ছেন। রবীন্দ্রনাথ আমার সেই বন্ধু, যিনি আমাকে ফ্রেন্ড, ফিলজফার এবং গাইডের মতো জীবনচর্চায় সাহায্য করছেন।
রবীন্দ্রনাথ আমার আবেগ
সোহিনী সেনগুপ্ত
ছোট থেকে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রবীন্দ্রনাথও আমার জীবনে পাল্টাতে পাল্টাতে এগিয়ে গেছেন। বিভিন্ন বয়সের ধাপে ধাপে তাঁকে উপলব্ধি করার বোধটাও বদলে গেছে। রবীন্দ্রনাথ আমার আবেগ। আমার দিদা দিনু ঠাকুরের কাছে গান শিখেছিলেন, আমার ছোড়দিদা মীরা মুখোপাধ্যায় উনি স্কাল্পচারড, শান্তিনিকেতনে সারাজীবন কাটিয়েছেন। কিন্তু মজার বিষয় হল, আমার একেবারেই রাবীন্দ্রিক পরিবেশে বড় হওয়া নয়। ছোটবেলায় যখন এলাহাবাদে ছিলাম তখন দিদার কাছে প্রথম জ্ঞানে যে গানটা শিখি সেটা রবীন্দ্রসংগীত। তারপরে যখন কলকাতায় চলে আসি তখন মূলত আমি রক মিউজিক শুনেই বড় হয়েছি। বব ডিলান, এরিক ক্লাপটন এঁদেরই শুনেছি। বাড়িতে রবীন্দ্রচর্চা ছিল। মা গাইতেন, বাবা গাইতেন আমি শুনতাম এবং আমি প্রায় শ-খানেক রবীন্দ্রসংগীত জানি। সেটা কিন্তু শুধু কানে শুনেই শিখে নিয়েছি। সবগুলো পুরোটা না হলেও অনেকটাই জানি। আমি যে স্কুলে পড়াই তার নাম রাজকুমারী স্কুল। সেই স্কুলে রবীন্দ্রনাথের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। সেখানে যে অনুষ্ঠানই হয় তাতে রবীন্দ্রনাথের গান বাধ্যতামূলক ছিল। ওই স্কুল জয়েন করার সময় আমার সাতাশ কী আটাশ বছর বয়স। ওই সময় আমি আবার তাঁকে নতুন করে আবিষ্কার করি। এই প্রথম রবীন্দ্রনাথকে আমি মানুষ হিসেবে চিনলাম। তাঁর আগে আমার কাছে তিনি ছিলেন ভগবানের আসনে। তখন তাঁকে পড়লাম নিজের মতো করে। তাঁর অনেক কিছু পছন্দ হল, অনেক কিছু অপছন্দ হল। আমার জীবনের অনেকটা ঘিরে উনি রয়েছেন। আমার খুব প্রিয় নাটক ‘বিসর্জন’। আমার শাশুড়ি শান্তিনিকেতনের কলাভবনের ছাত্রী, আমার অনেক প্রিয় মানুষ ওখানে আছেন তাই উনি আমার দৈনন্দিন জীবনে কোনও না কোনও ভাবে জুড়ে আছেন। এই বয়সে এসে রবীন্দ্রনাথের গান শুনলে আমার খুব আরাম লাগে। আমি অধিকাংশ গানের সঙ্গে রিলেট করতে পারি। উনি আছেন সবসময় আমার সঙ্গে।