‘রাবণ’ (Raavan) নামটা শুনলেই যে ছবিটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে তাতে মনে হতেই পারে এ ছবিতে বুঝি জিৎ-কে দর্শক ভিলেন হিসেবে দেখতে চলেছে। বিশেষত যে লুক পোস্টারে দেখা গিয়েছিল তাতে এ ধারণা হওয়া অস্বাভাবিক নয় কিছু। একটা সাসপেন্সও তৈরি হয়েছিল তাই আর সেটাই বুঝি জিৎ চাইছিলেন। কারণ চমকটা তোলা ছিল পর্দার জন্য। আর জিতের আস্থা তাঁর ফ্যান বেস-এর ওপর যেমন ছিল তেমনটাই ছিল গত কয়েক বছরের ট্রেন্ডিং হিট লিস্টে। ভাষা নির্বিশেষে প্যান ইন্ডিয়া ফিল্ম যেগুলি বক্স অফিসের পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে সবই মেনস্ট্রিম মশালা ফিল্ম। আর জিৎ বরাবরই সেই ঘরানার ছবি করতেই বেশি ভালবাসেন কারণ তা অনেক বেশি সংখ্যক দর্শককে কানেক্ট করে থাকে যেটা ইন্ডাস্ট্রির সারভাইভালের জন্য প্রয়োজনীয়। ‘রাবণ’ (Raavan) জিতের ইমেজ, জিতের ঘরানার সঙ্গে তাঁর টার্গেটকেও সফল করতে চলেছে প্রথম সপ্তাহের ট্রেন্ড দেখেই বেশ বলা যায়।
তবে একা ‘রাবণ’ (Raavan) নয়, ছবিতে জিৎ রাম রূপেও ধরা দিয়েছেন। ফলে দর্শক মনোরঞ্জনের দুই তাসকেই মেলে ধরেছেন পর্দায়। ‘রাম’ চরিত্রের জিৎ সাদামাঠা কলেজ অধ্যাপক যার ছাত্রী ‘রাই’-এর সঙ্গে প্রেমও হয়ে যায়। ‘রাই’ চরিত্রটি করেছেন নবাগতা লহমা ভট্টাচার্য। দেখতে মিষ্টি, সাবলীল অভিনয়, জিতের সঙ্গে ডেবিউ, সব মিলিয়ে নিশ্চিতভাবেই লহমা টলিউডে স্থায়ী হতে এসেছে। রাইয়ের ওপর হওয়া আক্রমণ মেনে নিতে পারে না রাম। বদলা নিতেই রামের রাবণ হয়ে ওঠা। সেই সঙ্গেই গল্পে আসে শিশু পাচার, ড্রাগ মাফিয়া, দুর্নীতিপরায়ণ বিধায়ক ও কাগজের সম্পাদক। এরপরই ‘রাবণ’ (Raavan) রূপে একের পর এক অভিনব কায়দায় ও পুলিশের সঙ্গে টক্কর দিয়ে শত্রু নাশ। যে ফাইট সিকোয়েন্সের জন্য বিখ্যাত জিৎ কাহিনিতে খুব প্ল্যান মাফিক তা বুনে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ ছবিতে লুক ও উপস্থাপনার ওপর এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে চেনা ছকের প্রেডিক্টেবল গল্প হলেও আড়াই ঘণ্টা উশুল হয়ে যায়। ছবির শেষে যদিও চমক রয়েছে। রয়েছে পরিচিত ছকের কমেডিও। আর তার জন্য খরাজ মুখোপাধ্যায় টলিউডের প্রথম পছন্দ। তবে ‘রাম’ রূপী জিতের চেয়ে ‘রাবণ’ রূপী জিৎ পর্দায় এলেই দর্শক খুশি হয়েছেন বেশি। সেই দিক থেকে দেখলে নবাগত পরিচালক এম এন রাজ তাঁর ছবির নামের প্রতি সুবিচার করেছেন বলাই যায়। তাই ফরমুলা ছবি হলেও ‘রাবণ’ উপভোগ্য হয়ে ওঠে সাধারণ দর্শকের কাছে। নায়ক ছাড়াও প্রযোজক হিসেবেও যা জিতের জন্য স্বস্তির খবর।
আরও পড়ুন: পাড়ায় সমাধান, দুয়ারে সরকার সফল করতে উদ্যোগী মন্ত্রী
একেবারে অন্য মেজাজের ছবি দেবের ‘কিশমিশ’। অগ্রজ নায়কের মতো তথাকথিত কমার্শিয়াল ছবির হাত ধরেই তাঁরও ‘হিরো’ হয়ে ওঠা। কিন্তু বেশ কয়েক বছর যাবৎই নায়ক ও প্রযোজক হিসেবে নানা ধরনের পরীক্ষামূলক ছবির ওপরেই আস্থা রাখছেন দেব। ‘কিশমিশ’ ছবির প্রমোশনের সময়েই একাধিকবার তাই বলেছেন, ‘‘সেফ জোন-এ খেলতেই পারতাম। কিন্তু সেটা চাইনি। হিরোগিরি তো অনেক করেছি। চাইলে এখনও পারি করতে। কিন্তু মনে হয়েছিল সময়ের সঙ্গে ভাবনা-চিন্তা বদলের প্রয়োজন আছে। কনটেন্ট ভিত্তিক ছবিই তাই আমার প্রথম পছন্দ এখন। ‘টনিক’ তো অনেক হল চালাতেই চায়নি। তারপর শো পেয়েছে এবং একশো দিন পারও করেছে। হাল ছাড়িনি বলেই না হয়েছে। আর সেটাই প্রমাণ করে আমি ঠিক রাস্তায় হাঁটছি।” দেব যে ঠিক রাস্তায় হাঁটছেন সন্দেহ নেই। ‘কিশমিশ’-এর হাউসফুল বোর্ডগুলো তার প্রমাণ। আর এটাও ঠিক তিনি হাল ধরতেই এসেছেন। কারণ ‘টনিক’-এর সাফল্যের অনেক আগে থেকেই ‘কিশমিশ’ -এর প্ল্যান রেডি ছিল। নিঃসন্দেহে রাহুল মুখোপাধ্যায়ের প্রথম ছবি ‘কিশমিশ’-এর স্বাদ ব্যতিক্রমী। দেব-রুক্মিণী জুটির রসায়ন, লুক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট, অ্যানিমেশনের ব্যবহার, দার্জিলিং-কলকাতার চেনা লোকেশন, অতীত-বর্তমানের যোগসূত্র, মিষ্টি প্রেমের সঙ্গে কমেডির সুন্দর মিশেল সব মিলিয়েই তৈরি হয়েছে একটা উপভোগ্য স্বাদ। নাহলে নেহাতই সাদামাঠা একটা প্রেমের গল্প ‘কিশমিশ’। কনটেম্পোরারি উপস্থাপনার জোরেই আলাদা।
শুরুটাই যেমন গ্রাফিক্স নভেলের ধাঁচে। ছবির নায়ক কৃশানু ওরফে টিনটিন একজন অ্যানিমেশন আর্টিস্ট। গ্রাফিক নভেল লেখা স্বপ্ন তার। কিন্তু পড়াশোনায় খুবই কাঁচা। ফেল করে যাওয়া ছেলেকে পাশ করানোর উদ্দেশ্যে বাবা দার্জিলিং-এ ভর্তি করিয়ে আসেন আর সেখানেই রোহিণীর প্রেমে পড়ে টিনটিন। বেশ কয়েক কিলো ওজন ঝরিয়ে, হেয়ার স্টাইল পাল্টে কলেজ ছাত্র হিসেবে চমৎকার মানিয়েছে দেবকে। বোঝা যায় চরিত্র নিয়ে কতটা সিরিয়াস তিনি। আর রুক্মিণীও অনেক পরিণত সব দিক থেকেই। বিশেষত আশির দশকের লুক-এ তাঁদের দেখতে ভারি ভাল লাগে। তবে এই দু’জনের পাশাপাশি ছবির প্রাণ ধরে রেখেছেন ফের সেই খরাজ মুখার্জি। যদিও এবার তাঁর সঙ্গী অঞ্জনা বসু। দুই বিপরীত চরিত্রের মানুষ স্বামী-স্ত্রী হিসেবে এক ছাদের তলায় থাকলে নিত্য যে সাংসারিক ছবি আমরা নিজ গৃহে দেখতে পাই তাই পর্দায় কমেডির মোড়কে মেলে ধরেছেন পরিচালক। নায়ক-নায়িকার প্রেম, বাবা-মায়েদের না-মানা, শেষ অবধি কেন মেনে নেওয়া ইত্যাদি নিয়ে গল্পের গতি একমুখী হলেও আপাদমস্তক বাঙালিয়ানায় ভরপুর ছবিটিকে আধুনিকতার মিশেল সহ পেশ করায় সব প্রজন্মের মানুষেরই ভাল লাগবে ‘কিশমিশ’। ছবির একটি গান তো ইতিমধ্যেই হিট। দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ একটি চমক রয়েছে যা দেখার জন্য দর্শককে হলে যেতে হবে। সব মিলিয়ে দুই সুপারস্টার, প্রযোজক হিসেবে দুই নবাগত পরিচালকের হাতে ব্যাটন তুলে দিয়ে বাংলা সিনেমাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে চেষ্টা নিজেদের আঙ্গিকে করেছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তাই বক্স অফিসে পরস্পরকে টেক্কা দেওয়ার যতই প্রতিযোগিতা থাক, তা স্বাস্থ্যকর। টলিউড দু’জনেরই সাফল্য চায়।