জাঁকিয়ে পড়েছে শীত। সামনেই ছুটির মরশুম। অনেকেরই পায়ের নিচে সর্ষে। দলবেঁধে বেরিয়ে পড়তে চান। কেউ ঘোরেন কাছেপিঠে, কেউ দূরে। সমুদ্র বহু মানুষের প্রিয়। আর সমুদ্রের নাম উঠলে বাঙালির প্রথমেই মনে জাগে দিঘা, পুরীর নাম। অথবা বকখালি, মন্দারমণি, শঙ্করপুর, তাজপুর। এই স্পটগুলোয় সারা বছরই ভিড় চোখে পড়ে। যাঁরা একটু নির্জন নিরিবিলি সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে চান, তাঁদের জন্য অপেক্ষায় আছে একটি অফবিট পর্যটন কেন্দ্র। কলকাতা থেকে তিন-চার ঘণ্টার পথ। দূরত্ব প্রায় ২৪৫ কিলোমিটার। জায়গাটা হল পাশের রাজ্য ওড়িশার বাগদা সমুদ্র (Odisha Bagda Beach) সৈকত। এই জায়গাটি পর্যটন মানচিত্রে নতুন। কয়েক বছর হল যুক্ত হয়েছে। অল্প সময়ের জন্য বন্ধু ও পরিবার নিয়ে ছুটি কাটানোর আদর্শ জায়গা। অবস্থান বালাসোর জেলার ডুবলাগড়ি গ্রামে।
বাগদা সমুদ্রতটটি দিঘা, পুরীর মতো বিস্তৃত নয়। লোকজন কম থাকায় একান্তে বেড়ানোর মজা নেওয়া যায়। ভোরে নির্জন নিরিবিলি সমুদ্রতটে দাঁড়িয়ে দেখা যায় সূর্যোদয়। অনন্য সুন্দর অভিজ্ঞতা অনেক দিনের জন্য পর্যটকের মনের মধ্যে গেঁথে থাকবে। কোলাহলহীন এই সমুদ্রতটের পাশে রয়েছে ঝাউবানের সারি। মৃদু হাওয়ায় মাথা দোলায়। মনে হয় যেন নৃত্য করছে। দর্শক সমুদ্রের অগণিত ঢেউ।
বাগদা সি বিচে (Odisha Bagda Beach) দিনকয়েক সময় কাটাতে এখানকার ক্যাম্পগুলি একেবারে পারফেক্ট। সমুদ্র সৈকতের ধার ঘেঁষেই রয়েছে এই ক্যাম্পগুলি। বেশ কয়েকটি ক্যাম্পের সঙ্গে রয়েছে সুন্দর সুন্দর কটেজ। সব ক্যাম্প বা কটেজ থেকেই সমুদ্র হয়তো দেখা যায় না, তবে উপস্থিতি অনুভব করা যায়।
বাগদায় সমুদ্রে জোয়ারের জলে গা ভাসানোর মজাটাই আলাদা। তবে খুব বেশি দূর না যাওয়াই ভাল। যে কোনও সময় বিপদ ঘটে যেতে পারে। ভাটা নামলে বিচময় লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ চোখ জুড়িয়ে দেয়। এককথায়, দিন দুয়েকের জন্য ছুটি কাটাতে ওড়িশার এই সি বিচের তুলনা হয় না।
বাগদা সমুদ্র সৈকতের খুব কাছেই রয়েছে কাসাফল মোহনা। এটা অনেকটা আমাদের রাজ্যের দিঘা মোহনার মতো। মোহনা জুড়ে রয়েছে মাছের আড়ত। সকাল সকাল সেখানে পৌঁছে যেতে পারলে টাটকা মাছ পাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও মোহনায় পাওয়া যায় সামুদ্রিক কাঁকড়াও। এখান থেকে মাছ বা কাঁকড়া বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলেও দোকানদারেরা ঠিকঠাক প্যাক করে দেবেন। বাগদা থেকে অটোয় মিনিট পনেরো গেলেই পড়বে এই মোহনা। এছাড়াও বাগদা সমুদ্রতট থেকেই অটো ভাড়া করে ঘুরে আসা যায় রেমুনা ক্ষীরচোরা গোপীনাথ মন্দির। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী। এই মন্দিরে দেখা যায় কালো পাথরের তৈরি বিগ্রহ। কথিত আছে, শ্রীরামচন্দ্র তাঁর তির দিয়ে গোপীনাথকে খোদাই করেছিলেন এবং সীতা চিত্রকূটে এই দেবতার পুজো করেছিলেন। উৎকলের রাজা লাঙ্গুলা নরসিংহ দেব ত্রয়োদশ শতাব্দীতে চিত্রকূট থেকে রেমুনার কাছে এই দেবতাকে নিয়ে আসেন। এই রাজা ব্রজপোখরি ও কুটাপোখরি নামে দুটি বড় ট্যাঙ্ক খননের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই দেবতা দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য পছন্দ করেন। সেইমতো ভোগ দেওয়া হয়। প্রচুর দর্শনার্থী সারা বছর ক্ষীরচোরা গোপীনাথ মন্দিরে আসেন। বিগ্রহ দর্শন করেন। কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর দিন হয় বড় উৎসব। এছাড়াও দেখা যায় ইমামি জগন্নাথ মন্দির, নীলগিরি রাজবাড়ি ও জগন্নাথ মন্দির। এখান থেকে চাঁদিপুর সমুদ্র সৈকতও খুব কাছে। সবমিলিয়ে, শীতের মরশুমে বাগদা (Odisha Bagda Beach) সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ মনের মধ্যে অদ্ভুত আনন্দের জন্ম দেবে।
আরও পড়ুন- এখনও যদি না বোঝেন তবে অচিরেই বুঝবেন
কীভাবে যাবেন?
হাওড়া বা সাঁতরাগাছি থেকে ট্রেনে ওড়িশার বালাসোর স্টেশনে পৌঁছে যেতে হবে। সেখান থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটারের পথ বাগদা সমুদ্র সৈকত। আগে থেকে সি বিচের কোনও ক্যাম্প বুক করা থাকলে তারাই গাড়ি পাঠিয়ে দেয়। নতুবা বালাসোর স্টেশন থেকেই বাগদা ডুবলাগড়ি সি বিচ যেতে অটো বা ছোট গাড়ি বুক করে নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে একপিঠের যাওয়ার জন্য ৬০০-৭০০ টাকা ভাড়া পড়তে পারে।
কোথায় থাকবেন?
ওড়িশার ইকো-ট্যুরিজমের অংশ এই বাগদা। সুতরাং, এখানে থাকার জন্য হোটেলের বদলে রয়েছে ইকো-ক্যাম্প ও ইকো-রিসর্ট। টেন্টে থাকলে মাথাপিছু মোটামুটি ১৫০০ টাকা করে প্রতিদিন খরচ পড়বে। আর যদি কটেজে থাকতে চান সেক্ষেত্রে মোটামুটি ১৪০০ টাকা থেকে ভাড়া শুরু। থাকা-খাওয়ার এলাহি বন্দোবস্ত করা হয়। প্রতিটি ক্যাম্পেই রয়েছে অভূতপূর্ব সব ব্যবস্থা। থাকা-খাওয়া মিলিয়েই খরচ ধরা হয়। কয়েকটি ক্যাম্পের সঙ্গেই রয়েছে ছোট ছোট কটেজ। পরিবার ও বাড়ির বয়স্কদের নিয়ে গেলে সেখানেও ওঠা যায়। আগে থেকে বুকিং করে গেলেই ভাল।