সমুদ্র অনেকের পছন্দের। তবে পাহাড়ের আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। বিশেষত গরমের দিনে। প্রচণ্ড দাবদাহের হাত থেকে রেহাই পেতে অনেকেই ছুটে যান উত্তরের দিকে। একটু আরামের আশায়। তবে সব জায়গা সমান নয়। এক-এক জায়গা এক-এক রকম। কোনও জায়গা ঘিঞ্জি, কোলাহলমুখর। কোনও জায়গা শান্ত, নির্জন। প্রথমটা কিছু মানুষের পছন্দের। বিশেষত যারা বেড়াতে গিয়ে হইহল্লায় মাতেন, কেনাকাটা করেন প্রচুর পরিমাণে। পাশাপাশি দ্বিতীয়টা বেছে নেন বহু মানুষ। বিশেষত যাঁরা নিরিবিলিতে থাকতে এবং ঘুরতে ভালবাসেন। গরমের মরশুমে তাঁদের জন্য আদর্শ জায়গা হতে পারে পেডং (Pedong)।
পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের সীমান্তে ৫০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সুন্দর চিরসবুজ পাহাড়ি গ্রাম। গরমের দিনেও অনেকটাই শীতল। পেডং কালিম্পং জেলার মধ্যে পড়ে। শহর কালিম্পং থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কালিম্পং থেকে আলাগাড়া হয়ে যে রাস্তা সিকিমের দিকে বেঁকে গিয়েছে, সেই পথেই পড়ে পেডং। গত কয়েক বছরে পর্যটকদের মধ্যে সিল্করুটের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বহু মানুষ যান। এই রুটে বেড়াতে গেলে দু-দিন অনায়াসে পেডংয়ে কাটিয়ে আসা যায়। জায়গাটা এখনও পর্যন্ত খুব বেশি পরিচিত নয়। তবে একবার পেডংয়ে গেলেই মন ভাল হয়ে যাবে। এই ছোট্ট জনপদকে প্রকৃতি যেন পরম যত্নে সাজিয়েছে তার অপরূপ দিয়ে।
পেডংয়ের (Pedong) পাহাড়ি রাস্তায় কুয়াশামাখা ভোরে হাঁটতে বেরোনো যায়। একা নয়, অবশ্যই দলবেঁধে। চোখে পড়বে নানা রকমের গাছপালা। কিছু চেনা, কিছু অচেনা। দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বুনোফুলের সৌন্দর্য। দুই পাশে ফুটে থাকা নানা রঙের ফুলগুলো বাড়িয়েছে পথের শোভা। সকালের দিকে দেখা মেলে নাম না-জানা বহু হিমালয়ের পাখির। তাদের কিচিরমিচির নিমেষে দূর করে দেবে ক্লান্তি। মনকে ভরিয়ে দেবে অদ্ভুত প্রশান্তিতে। এ-ছাড়াও এখানে মাঝে মাঝেই মেঘেদের দল এসে জানান দেয় তাদের উপস্থিতির কথা। ঝরে পড়ে বৃষ্টি।
আবহাওয়া ভাল থাকলে, আকাশ পরিষ্কার থাকলে চোখের সামনে ধরা পড়বে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য। এই সময়টুকু মোবাইল দূরে সরিয়ে রাখতে পারলেই ভাল। দুচোখ ভরে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ আস্বাদন করলে অন্যরকম অনুভূতি হবে। মুহূর্তটুকু হয়ে থাকবে আজীবনের সঞ্চয়। এ-ছাড়াও এখান থেকে দেখা যায় কাব্রু ও পান্ডিম শৃঙ্গ। পাহাড়ের ঢালে রয়েছে চা-বাগান।
এ-ছাড়াও পেডংয়ে (Pedong) বসেই দেখা যায় দার্জিলিং, সিকিম, ভুটান এবং তিব্বতের কিছু অংশ। এই দৃশ্য আরও মায়াময়ী হয়ে ওঠে রাতের অন্ধকারে। পূর্ণিমার জ্যোৎস্নায় ঝিকিমিকি আলোয় এক স্বর্গীয় দৃশ্য রচিত হয় ঢেউ খেলানো পাহাড়ের বুকে। তিস্তায় অবিরাম বয়ে চলা পেডংকে আরও মোহময়ী করে তুলেছে। তাকিয়ে থাকলে চোখের আরাম। চাইলে দিনের আলোয় বেশ কিছুক্ষণ নদীর ধারে কাটিয়ে দেওয়া যায়। বন্ধুতা করা যায় জলের সঙ্গে। পেডংয়ে গরম গরম মোমোর স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
কাছেপিঠে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। ঘুরে আসতে পারেন তিনচুপে ভিউ পয়েন্ট, রিকিসুম ভিউ পয়েন্ট। পেডং থেকে সেলারি গাঁও ১১ কিলোমিটার, লাভা ২২ কিলোমিটার, লোলেগাঁও ৩৮ কিলোমিটার, রিশপ ৩২ কিলোমিটার, ইচ্ছেগাঁও ৪২ কিলোমিটার, ডেলো ৩৫ কিলোমিটার। এছাড়া দুর্পিন, কোলাখাম, ঝান্ডি, ফাফারখেতি, দলগাঁও, ডামডিম, চাইলখোলা খুবই কাছাকাছি। চাইলেই ঘুরে আসা যায়। তবে, পেডংয়ের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা হল ১৮৭৩ সালের তৈরি মনেস্ট্রি। খ্রিস্টান ও বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও প্রসারকে ঘিরে এই মনেস্ট্রি তৈরি হয়েছিল। অসাধারণ স্থাপত্য শৈলী। বহু মানুষ দেখার জন্য যান।
কাছেই রয়েছে ক্রস হিল পয়েন্ট। পেডংয়ের গ্রামের রাস্তা ধরে কিছুক্ষণ হেঁটে গেলেই পৌঁছে যাওয়া যায়। চড়াই-উতরাইয়ের মাঝে এখানে পর্যটকরা এক নৈসর্গিক পরিবেশ খুঁজে নিতে পারবেন। তারপরেই পড়বে ঘন সবুজ জঙ্গল এবং আরেকটি ছোট্ট গ্রাম, কাশ্যম। এই গ্রামে লেপচাদের বাস। খুব কাছ থেকে দেখা যায় তাদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি। হাসিখুশি, সরল এই মানুষগুলোকে দেখলে মন ভাল হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে গরমের দিনে সেরা ডেস্টিনেশন হতে পারে পেডং। দেরি না করে চটপট ব্যাগপত্র গুছিয়ে ফেলুন।
আরও পড়ুন- আকচা আকচি আর খেয়োখেয়ি সম্বল ওদের
কীভাবে যাবেন?
শিয়ালদা বা হাওড়া থেকে যে কোনও উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনে চেপে পৌঁছে যান নিউ জলপাইগুড়ি। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি যেতে পারেন পেডং। কালিম্পং পৌঁছে সেখান থেকেও যেতে পারেন। মালবাজার থেকেও পেডং যাওয়া যায়। গরুবাথান, চেইল খোলা, ঝান্ডি, লাভা, রিশপ হয়ে পেডং পৌঁছানো যায় আড়াই ঘণ্টায়।
কোথায় থাকবেন?
পেডংয়ে থাকার জন্য রয়েছে বেশ কিছু হোমস্টে, গেস্ট হাউস ও রিসর্ট। থাকা-খাওয়া নিয়ে খরচ পড়তে পারে মাথাপিছু আনুমানিক ১,২০০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকা। গুগল সার্চ করুন। বিস্তারিত পেয়ে যাবেন। যাবার আগে যোগাযোগ করে গেলেই ভাল। কোনওরকম সমস্যা হবে না। কাছেপিঠে বেড়ানোর জন্য হোমস্টে, গেস্ট হাউস ও রিসর্টের লোকজনদের পরামর্শ নিতে পারেন। ওঁরা গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।