স্বপ্নের সূত্র ধরে
পর্দায় গোয়েন্দা-গল্প দেখতে ভালবাসেন বহু মানুষ। তাই তো বছরের পর বছর ব্যোমকেশ, কিরীটী, ফেলুদা, শবর, কাকাবাবুদের এত চাহিদা। সমাদর জুটেছে দীপক চ্যাটার্জি, একেন, সোনাদার কপালেও। মিতিন মাসিও অনেকের পছন্দের। এরমধ্যে হাজির নতুন গোয়েন্দা, রুমি। তিনি আসলে একজন দুঁদে সিআইডি অফিসার। তবে আর পাঁচজনের মতো স্বাভাবিক নন। তাঁর আছে বড় রকমের প্রতিবন্ধকতা। একটি দুর্ঘটনায় দু-চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। যদিও সেই প্রতিবন্ধকতা তদন্তে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। চোখে জ্যোতি নেই তো কী, আছে তীক্ষ্ণ মেধা। গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে কথা শোনেন। তুড়ি মেরে সমাধান করেন জটিল সমস্যার। যখন দৃষ্টিশক্তি ছিল, তখন একটি খুনের ঘটনার তদন্ত করছিলেন। দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই তিনি অদ্ভুত স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কাহিনি এগোলে জানা যায়, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল রুমির মায়ের। কিন্তু সেটা নিছকই দুর্ঘটনা, নাকি হত্যাকাণ্ড— প্রশ্ন জাগে। রহস্যের সমাধান করতে থাকেন রুমি। সেইসঙ্গে স্বপ্নের সূত্র ধরে আবারও আগের খুনের ঘটনার তদন্তে নামেন। ধীরে ধীরে এগোতে থাকেন প্রকৃত সত্যের দিকে, খুনির দিকে। শেষ পর্যন্ত কী ঘটে?— জানার জন্য দেখতে হবে হইচইয়ের নতুন ওয়েব সিরিজ ‘রুমি’ (Rumi)। ১০ এপ্রিল শুরু হয়েছে স্ট্রিমিং।
দেখা যাচ্ছে নানাভাবে
নাম ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী অভিনেতা। এপারেও নানাভাবে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। ওয়েব সিরিজ, নাটক, সিনেমা সবেতেই তাঁর সাবলীল অভিনয় প্রশংসিত হচ্ছে। বর্তমানে বিনোদন দুনিয়ায় ওটিটির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তাই অনেক বড়পর্দার তারকারাই এখন ওয়েব সিরিজে ঝুঁকছেন। গত কয়েক বছরে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দুর্দান্ত সব কাজ করে চমকে দিচ্ছেন চঞ্চল। বেশি খ্যাতি পাচ্ছেন থ্রিলার ঘরানার একাধিক ওয়েব সিরিজের দৌলতে। ভারতে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে তাঁর ভক্তের সংখ্যা অগণিত। কয়েক বছর আগে তাঁর অভিনীত ‘হাওয়া’ কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে ঝড় তুলেছিল।
কালো চশমা বাঁকা হাসি
এপ্রিলের গোড়ায় মুক্তি পেয়েছে ট্রেলার। তখন থেকেই ‘রুমি’ (Rumi) ছিল চর্চায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের লুক শেয়ার করেছিলেন চঞ্চল চৌধুরী। চোখে কালো চশমা। গায়ে জিনসের কোট। মুখে বাঁকা হাসি। লিখেছিলেন, ‘কেস সলভ করতে চোখ লাগে না, মাইন্ড দিয়েই চেক মেট করা যায়’। ভুল বলেননি তিনি। তাঁর মেথড অ্যাক্টিং মন ছুঁয়েছে দর্শকদের। তাঁর একটি সংলাপ মুখে মুখে ফিরছে— ‘বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, পুলিশে ছুঁলে ৩৬ ঘা আর কানা পুলিশে ছুঁলে ৭২ ঘা।’ তিনি যে-কোনও চরিত্রের সঙ্গেই নিজেকে সহজেই মানিয়ে নিতে পারেন, সেটা আরও একবার প্রমাণ করলেন। এই সিরিজের মূল আকর্ষণ তিনিই। কালো চশমা থাকুক বা না থাকুক, প্রতিটি দৃশ্যেই তাঁকে রীতিমতো অন্ধ লেগেছে। অভিনয় এতটাই নিখুঁত। সিরিজটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গভীর রহস্যে মোড়া। রবীন্দ্রনাথের ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ ফিরে ফিরে এসেছে বিভিন্ন দৃশ্যে। গানটি যেন রহস্যকে আরো জীবন্ত করে তুলেছে। প্রথম দৃশ্য থেকেই টানটান। ঘটনার ঘনঘটা। কেসের তদন্তের পাশাপাশি রুমির ব্যক্তিগত জীবনের রহস্যও জমে উঠেছে সিরিজ জুড়ে। এর আগে হইচইয়ের ‘কারাগার’ সিরিজে অন্যরকম লুকে দেখা গিয়েছিল চঞ্চল চৌধুরীকে। অভিনয় মন কেড়েছিল সকলের।
আরও পড়ুন- বেদগর্ভা নর্মদা
লম্বা রেসের ঘোড়া
৬ এপিসোডের ‘রুমি’ (Rumi) পরিচালনা করেছেন ভিকি জায়েদ। তিনি মূলত নাট্যজগতের মানুষ। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ধারার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নির্মাতা হিসাবেও তাঁর নাম এই মুহূর্তে প্রথম সারিতে রয়েছে। ‘রুমি’র প্রথম সিজনে উজাড় করে দিয়েছেন নিজেকে। চঞ্চল চৌধুরীর মতো জাত অভিনেতাকে চমৎকারভাবে ব্যবহার করেছেন। অভিনেতা এবং পরিচালকের একসঙ্গে এটাই প্রথম কাজ। দেখে সেটা একেবারেই মনে হয়নি। টান রয়েছে ‘রুমি’র গল্পে এবং চিত্রনাট্যে। পুরোটাই যথেষ্ট নির্মেদ। আছে কয়েকটি স্বপ্নদৃশ্য। কোনওটাই আরোপিত লাগে না। এসেছে গল্পের দাবি মেনে। স্বপ্নদৃশ্যগুলো বোনা হয়েছে নিপুণভাবে। আবহসংগীত আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। গল্প এগিয়েছে স্বাভাবিক গতিতে। শেষে রয়েছে বিরাট চমক। সিরিজটি দেখে মনে হয়েছে, পরিচালক লম্বা রেসের ঘোড়া।
শেষ কথা
চঞ্চল চৌধুরী ছাড়াও দেখা গেছে রিকিতা নন্দিনী শিমু, সজল-সহ অনেককেই। সিরিজটা কিন্তু একশো শতাংশ নিখুঁত নয়। চোখে বেশকিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে। যে খুনের ঘটনার তদন্ত করছিলেন চঞ্চল অভিনীত চরিত্রটি, সেটা ঠিক কতটা জটিল, যথাযথভাবে বোঝানো হয়নি। কয়েকটি দৃশ্য অতিরঞ্জিত মনে হয়েছে। আছে আরও কিছু ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি। সেগুলো আলোচনার বাইরে থাক। দর্শকরা বুঝে নেবেন। শেষে একটা কথা বলা যায়, আপনি যদি রহস্য-রোমাঞ্চ, গোয়েন্দা-গল্পের ভক্ত হন এবং চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় পছন্দ করেন, তাহলে সিরিজটি নির্দ্বিধায় দেখে নিতে পারেন। মনের কোণে জেগে উঠবে ভয়-মিশ্রিত আনন্দ।