সামথারের হাতছানি

চিরসবুজ পাহাড়ি গ্রাম সামথার। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ শোভা, তিস্তার অববাহিকা। ছোট্ট জনপদটি বৃষ্টিদিনে সেজে ওঠে অন্যরকম সাজে। সবুজের সমারোহে মেলে চোখের আরাম, প্রাণের আরাম। সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

কালিম্পং জেলার স্বল্পপরিচিত গ্রাম সামথার (Samthar)। সবুজ পাহাড়ি অঞ্চলের কোলে রয়েছে অল্পসংখ্যক বাড়ি। এখানকার মানুষজন অত্যন্ত সহজ সরল। প্রকৃতি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে। সামনেই কাঞ্চনজঙ্ঘা। অনেকটা বিস্তৃত। আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে দিনের অনেকটা সময় এখান থেকে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। পিছনে তাকালেই দেখা যায়, অনেক নিচে রয়েছে তিস্তার অববাহিকা। দৃশ্যপট ছবির মতো সুন্দর। মনে হবে, কেউ যেন লিখে রেখে গেছে শ্যামল রঙের কবিতা। বর্ষায় সামথারের পাহাড়ের যেন অন্য রূপ। ভাসমান মেঘের দল ঘরের ভিতরে এসে শরীর এবং মন ভিজিয়ে দিয়ে যায়। চারদিকে সবুজের সমারোহ। মেলে চোখের আরাম, প্রাণের আরাম। রূপের ডালি সাজিয়ে সামথার নিমন্ত্রণপত্র পাঠায় মেঘ পিয়নের হাতে।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে গাড়িতে আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়া যায় সামথার। সেবক পেরিয়ে কিছুটা এগোলে কালিঝোরা ড্যাম। সিআইএসএফ-এর অনুমতি নিয়ে পেরোতে হবে। সামথারে বুকিং আছে বললে সাধারণত যেতে দেয়। ওখান থেকে খাড়াই পথ উঠে গেছে। অনেকগুলো বাঁক পেরিয়ে খুব কম সময়ে অনেকটা উঁচুতে উঠে পড়া যায়। প্রতিটা ধাপে নিচে তাকালে ধরা পড়ে তিস্তার অসামান্য রূপ, রং। করোনেশন ব্রিজও দৃশ্যমান উপর থেকে। দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটারের মতো। উপরে উঠে খানিকটা এগিয়ে হঠাৎই এক বাঁক পেরোতেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে কাঞ্চনজঙ্ঘা। গাড়ি দাঁড় করিয়ে খানিকটা সময় উপভোগ করা যায় সুন্দর দৃশ্যপট। তারপর এগিয়ে যাওয়া যায় গন্তব্য পথে। মাঝে আবার থামতে হবে পানবু ভিউ পয়েন্ট। হাওয়া চলে প্রবল বেগে। এখানে সানরাইজ আর সানসেট দুটোই খুব সুন্দর। এরপরেই আসবে সামথার। বিকল্প রুট হল ২৭ মাইল ড্যামের উপর দিয়ে। খুব সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে এগোনো যায় এই পথে।

আরও পড়ুন- কোর্স শেষ হলেই ছাড়তে হবে হস্টেল, নির্দেশ যাদবপুরের

সারা বছর ফুলের জলসা বসে সামথারে (Samthar)। নানা রঙের ফুল। তাকালেই চোখের আরাম। এটা এমন একটা অফবিট জায়গা, যেখানে দুদিন থাকলে মনে হবে না আপনি কোনও জায়গায় ঘুরতে এসেছেন এবং কয়েক দিন পর ফিরবেন। মনে হবে, আপনি বহুদিন ধরেই এখানে আছেন। এটাই আপনার আসল ভূমি। পাহাড়ি জীবনযাত্রার সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যাবেন। স্থানীয় মানুষরা বড় আন্তরিক। নিজেদের কাজকর্মে ব্যস্ত। ছোট ছোট দোকান রয়েছে। পাওয়া যায় রকমারি জিনিসপত্র। কোথাও নেই কোনও অকারণ প্রতিযোগিতা। অন্য পাহাড়ি জনপদের সঙ্গে এই জনপদের পার্থক্য হল, সামথার নিজেই আপন মানুষজনদের নিয়ে আশ্চর্য আনন্দে রয়েছে। রচনা করেছে একটি সুন্দর জগৎ। সেই জগতে সবার অবারিত দ্বার। কয়েকটা দিন কাটিয়ে দেওয়া যায়। সামথার থেকে বহু মানুষ ঘুরতে যান লামাদারায়। লামাদারা কালিম্পং জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম। খুব সুন্দর জায়গা। এখান থেকে ডুয়ার্সের তরাই থেকে সূর্যোদয় আর অপর দিকে মনোমুগ্ধকর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। শিলিগুড়ি থেকে লামাদারা পৌঁছানো যায় মোটামুটি ২.৫ ঘণ্টায়। লামাদারা হোমস্টেতে থাকার ব্যবস্থা আছে। গাড়ি হোমস্টে পর্যন্ত যায়। সুতরাং হাঁটার কোনও ব্যাপার নেই। লামাদারা হোমস্টে একটি প্রিমিয়াম ক্যাটাগরি হোমস্টে, যেখানে সব রকম সুবিধা দেওয়া হয় অতিথিদের। এখানে ১১টি কটেজ আছে। পুরো পাইনউড ফিনিশিং। একটি কটেজে আছে একটি বেড। যেখানে ২-৩ জন অনায়াসে শুতে পারেন। লামাদারা লন থেকে খুব সুন্দর সূর্যোদয় এবং ডুয়ার্সের তরাই অঞ্চলটা দেখা যায়। একটি দিন থেকে আসতে পারেন। দূর হয়ে যাবে শরীর ও মনের ক্লান্তি।

সামথার (Samthar) থেকে যাওয়া যায় দারাগাঁও। যেতে মোটামুটি ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগে। চাইলে একটি দিন থাকা যায়। আছে হোমস্টে। রংবেরঙের ফুল দিয়ে সাজানো পুতুল ঘরের মতো বাড়ি। হোমস্টের একবারে লাগোয়া ভিউপয়েন্ট হিমালি পার্ক। মনে হবে যেন হোমস্টের নিজস্ব এলাকা। সামনে সিকিমের পাহাড়। নিচে অতল গিরিখাদ। নীলচে সবুজ রঙের তিস্তা বয়ে চলেছে। সিকিম যাওয়ার ব্রিজও চোখে পড়বে। আর আছে মাথার উপর বিশাল আকাশ। রাতে পাহাড়ের মাথায় তারাদের হীরের মুকুট, গলায় শহরের আলোর নেকলেস। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। এই বিশালতার সামনে নতজানু হতে হয়। পার্থিব চাওয়া-পাওয়া, ব্যক্তিগত ইগো, সব তুচ্ছ হয়ে যায়। শুধু এই অসীমের একটা ক্ষুদ্র অংশ হতে পেরেই আনন্দ লাগে।

সামথার (Samthar) থেকেই কালিম্পংয়ের পার্শ্ববর্তী দর্শনীয় স্থানগুলিও ঘুরে দেখা যায়। যেমন পানবু, সিনজি, যুগে ঝরনা, নকদাড়া, ডাবলিং। লাভা, লোলেগাঁও, রিশপও ঘুরে আসতে পারেন। অথবা মন চাইলে কালিম্পং শহরটাও বেড়িয়ে আসা যায়। সবমিলিয়ে বৃষ্টিদিনে সামথার মনের মধ্যে অফুরান আনন্দ দেবে। সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন। কীভাবে যাবেন?
হাওড়া অথবা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি। সেখান থেকে ভাড়া গাড়িতে অথবা বাসে সামথার যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন?
সামথারে আছে কয়েকটি হোমস্টে। থাকা-খাওয়ার কোনও সমস্যা হবে না। খরচ মোটামুটি নাগালের মধ্যে। মনে হবে, নিজের বাড়িতে রয়েছেন। হোমস্টের সদস্যরা এতটাই আন্তরিক।

Latest article