সিক্যুয়েল সমাচার

বলিউডে আনাচকানাচে এখন সিক্যুয়েল-এর হাওয়া। কোনও ছবি ব্যবসায়িক সাফল্য পেলে নির্মাতারা সেই ফর্মুলাতেই সাজাচ্ছেন ওই একই প্রেক্ষাপট ও চরিত্র নিয়ে নতুন ছবির ছক। কিন্তু সত্যি কি ছবি সফল করানোর জন্য সিক্যুয়েল সুপারহিট ফর্মুলা? কারণ বেশিরভাগ সিক্যুয়েল দর্শক টানতে ব্যর্থ। পর্যালোচনায় শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

ইদানীং বাড়ছে পুরোনো সিনেমার সিক্যুয়েল (Sequel) তৈরির প্রবণতা। দর্শকদের টানতে সিক্যুয়েল নির্মাণ এক দুর্দান্ত সুযোগ। আগামী দিনেও রয়েছে ফ্রাঞ্চাইজি ছবির একটা বড়সড় তালিকা। কিন্তু সিক্যুয়েল মানেই কি হিট? সমীক্ষা অনুযায়ী বেশির ভাগ সিক্যুয়েলই ব্যর্থ। আসলে সিক্যুয়েল বা ফ্র্যাঞ্চাইজি সবসময় একটা প্রত্যাশার বোঝা নিয়ে আসে। ব্র্যান্ড ভ্যালু প্রথম দিনটা সাহায্য করে কিন্তু তারপর যখন মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ্যে আসে, ঠিক তখন সবাই জানতে পারেন যে সেই ছবিটি আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। এর পাশাপাশি এটাও ঠিক যে সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি হলে অনেক বেশি সাহায্য করে সিক্যুয়েল (Sequel) হিট করতে। এমন উদাহরণও রয়েছে ভূরি ভূরি।

সিক্যুয়েল তৈরির ফাঁকফোকর
প্রতিবছর একাধিক সিনেমা মুক্তি পেলেও তার মধ্যে থেকে বাছাই করা কিছু ছবিরই দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাগ বেরোয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রথম ভাগের ছবির ‘ম্যাজিক’টা ধরে রাখতে পারে না দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাগ। সেই জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে পারে না। ফলে আখেরে ক্ষতি হয় সেই ফ্র্যাঞ্চাইজিরই। কাজেই সিক্যুয়েল ছবি হিট করার অবর্থ্য ফর্মুলা নয়। জোর করে কোনও গল্প বাড়াতে গিয়ে তাতে একটা বড় রিস্ক ফ্যাক্টর থেকে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে মুক্তি পাওয়া এমন ছবির উদাহরণ ভূরি ভূরি যে সিক্যুয়েল ছবি হিসেবে দর্শক টানতে ফেল। যেমন যশ রাজ ফিল্মসের ‘ধুম’ সিরিজের প্রথম ছবিতে দেখা গিয়েছিল অভিষেক বচ্চন, উদয় চোপড়া, জন আব্রাহামকে। জন আব্রাহাম ছিলেন সেই ছবি চোর-এর চরিত্রে। প্রথম ছবি ব্লকব্লাস্টার হিট হওয়ার কয়েক বছর পরেই মুক্তি পায় ফ্র্যাঞ্চাইজির দ্বিতীয় ভাগ। এবার পুলিশ এক থাকলেও পাল্টে যায় চোর। সে চরিত্রে আসে অভিনেতা হৃত্বিক রোশন। তাঁর অভিনয় আজও চর্চিত। সাত বছর পর আবারও ছবির তৃতীয় ভাগ মুক্তি পায়। আর সেখানেই হয় ছন্দপতন। আমির খানকে চোরের চরিত্রে মানতে পারেননি দর্শক। জন এবং হৃত্বিকের মধ্যে যে ম্যাজিকটা ছিল, আমিরের মধ্যে সেই ম্যাজিকটাই যেন উধাও হয়ে গিয়েছিল। গোলমালটা বাধে এখানেই। বক্স অফিসে ব্যবসা করলেও তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে ‘ধুম ৩’।

যশরাজ ফিল্মসের আরও একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ছবি, যা বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল সেটা হল রানি মুখোপাধ্যায় এবং অভিষেক বচ্চন অভিনীত ‘বান্টি অউর বাবলি’র সিক্যুয়েল (Sequel)। বক্স অফিসে হিট এই ছবির সিক্যুয়েল বেরয় ২০২১ সালে। সেখানে বদলে যায় হিরো। অভিষেকের বদলে আসে সইফ আলি খান, নায়িকা রানিই। দু-জনের অভিনয় ভাল হলেও বক্স অফিসে ভরাডুবি হয় ছবিটির। ‘ধুম ৩’-এর মতো আরও একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ছবি, যা তৃতীয় ভাগে এসে চরম ব্যর্থতার মুখ দেখেছে সেটি হল ‘রেস’। যার প্রথম দুটি ভাগে সইফ আলি খানের অভিনয়ই ছিল আসল পাওনা। কিন্তু তৃতীয় ভাগে বদলে যায় মুখ। আসেন সলমন খান। উল্টোদিকে আবার ছিলেন ববি দেওল। রোহিত শেট্টির ‘গোলমাল’ সিরিজ বলিউডের অন্যতম সেরা কমেডি ফ্র্যাঞ্চাইজি বলে দাবি করেন খোদ দর্শকেরা। এর প্রথম তিনটি ভাগ বক্স অফিসে বেশ সফল হয়েছিল। ননসেন্স কমেডি বানাতে রোহিতের যে জুড়ি মেলা ভার, এ কথা অজানা নয় কারওই। কিন্তু সেই পরিচালকই ‘গোলমাল এগেইন’-এ এসে রীতিমতো ব্যর্থ হন। অনীশ বাজমি পরিচালিত ‘ওয়েলকাম’ ছিল ২০০৭ সালের অন্যতম সেরা হিন্দি সিনেমা। অক্ষয়কুমার-ক্যাটরিনা কাইফ জুটির পর দ্বিতীয় ভাগে এসে পাল্টে যায় এই ছবির নায়ক-নায়িকা। দেখা গিয়েছিল জন আব্রাহাম এবং শ্রুতি হাসানকে। কিন্তু ছবিটি একেবারেই সফল হয়নি।

আরও পড়ুন- সন্ন্যাসীদের সামনে রেখে পুলিশকে হামলা বিজেপির

তথাকথিত হিট সিক্যুয়েল
সিক্যুয়েলে সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে সানি-আমিশার ‘গদর ২’। ‘গদর’-এর ২২ বছর পর ‘গদার ২’ মুক্তি ও তার বক্স অফিস সাফল্য দৃষ্টান্তই বটে। ওএমজি ২’ও ভাল প্রতিক্রিয়া। চলতি বছরেই মুক্তি পেয়েছে শ্রদ্ধা কাপুর, রাজকুমার রাও, পঙ্কজ ত্রিপাঠী অভিনীত ‘স্ত্রী ২’। একের পর এক রেকর্ড ভেঙে চলেছে সিনেমাটি। উদ্বোধনী দিনেই আয় করেছে ৫৪ কোটি, যার মধ্যে অগ্রিম বুকিং ছিল সাত-আট কোটি। ‘ভুলভুলাইয়া ২’ এতটাই হিট করেছিল যে, পরে এর তৃতীয়টি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা ছিলই। যেমন ভাবা তেমন ‘ভুলভুলাইয়া ৩’ এসে গেল। দর্শকদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নে এই সব ক’টা সিক্যুয়েলকেই যদি রাখি দেখব কোনওটাই কিন্তু প্রথম ছবির তুলনীয় নয়। অর্থাৎ কখনওই সফল বলা চলে না। এই কথা প্রযোজ্য কর্প ইউনিভার্স ও রোহিত শেট্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি মুভি ‘সিংহম এগেইন’-এর বেলাতেও। যথেষ্ট ব্যবসা করলেও সার্বিকভাবে ছবিটা ব্যর্থই বলা চলে।

আপকামিং সিক্যুয়েল
অনেক দিন আগেই শোনা গিয়েছিল ‘নায়ক : দ্য রিয়েল হিরো’র সিক্যুয়েল আসবে। ২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অনিল কাপুর ও রানি মুখার্জি। সিক্যুয়েলটিতে অনিল কাপুরের অভিনয়ের কথা ঠিক ছিল। এবার শোনা যাচ্ছে, রানির সঙ্গেও কথা চলছে। সিনেমাটির চিত্রনাট্যের কাজ চলছে। শিগগিরই এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।
কয়েক দিন আগেই ‘সরফারোশ’-এর ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমির খানও ‘সরফারোশ ২’-এর ঘোষণা করেছেন। এই তালিকায় রয়েছে সুভাষ ঘাইয়ের ‘খলনায়ক’ও। প্রায় ত্রিশ বছরের ব্যবধানে তৈরি হবে ‘খলনায়ক ২’। সিক্যুয়েলে সঞ্জয় দত্ত অভিনীত চরিত্র বল্লু বলরামের বয়স দেখানো হবে ৫৫। বল্লুর চরিত্রে সঞ্জয় দত্তই যে চূড়ান্ত, তা জানিয়েছেন সুভাষ নিজেই। আসছে বর্ডার ২। সানি দেওল নিজেই আবার অভিনয় করছেন ‘বর্ডার ২’তে। এই ছবিতে সানির সঙ্গে আরও দেখা যাবে আয়ুষ্মান খুরানাকেও। আগামী দিনেও আপাতত চলবে এই সিক্যুয়েল ট্রেন্ড। কারণ সমীক্ষা বলছে সিক্যুয়েল দেখার উৎসাহ দর্শকদের বেশি। তাই ব্যর্থ অথচ ব্যর্থ নয় এমন ভাবমূর্তিতে এগিয়ে চলবে সিক্যুয়েল।

Latest article