শ্রীশ্রী মা (Sri Maa Sarada) অত্যন্ত সহজভাবে জীবনের কঠিন সমস্যা সমাধানের পথ দেখিয়ে গিয়েছেন। আপাতদৃষ্টিতে তথাকথিত কোনও প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিতা এক সাধারণ নারী যেভাবে গভীর দর্শনের কথা বলে গিয়েছেন তা সত্যিই বিস্ময়ের উদ্রেক করে।
সমগ্র জীবন ধরে সন্তানদের দুঃখ-কষ্ট দূর করার সাধনায় ব্রতী ছিলেন তিনি। সহজ-সরল অনাড়ম্বর জীবনে সবাইকে সন্তানরূপে দেখার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল মায়ের। সমাজ যাকে দূরে ঠেলে দিত তাকেও আপন করে কাছে টেনে নিতে পারতেন তিনি স্বভাবসুলভ অনায়াস দক্ষতায়।
সেই মানসিক জোর নিয়েই তিনি বলেছেন— ‘আমি সতের ও মা, অসতেরও মা। আমি সত্যিকারের মা। গুরুপত্নী নয়,পাতানো মা নয়, কথার কথা মা নয়, সত্যজননী।’ সৎ, অসৎ, অনাথ, আতুর, সবল, দুর্বল— তিনি সকলের মা। এককথায় জগজ্জননী।
তাঁর অপরিসীম মাতৃস্নেহ, অতুলনীয় সহনশীলতা ঐকান্তিক সেবা, যুক্তিনিষ্ঠ বিবেচনাশক্তি, স্বচ্ছ চিন্তাধারা, উদার মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে সমাজ পরিত্যক্ত সন্তানকে যেমন আপন করে নিয়েছিলেন তেমন দেশ মুক্তির আগুনে ঝাঁপ দেওয়া বিপ্লবীদের কাছে টেনে দিতেও তিনি এতটুকু কুণ্ঠিত হননি।
তিনি ছিলেন বিপ্লবীদেরও মা
মা সারদা (Sri Maa Sarada) সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকলেও তিনি বিপ্লবী ও দেশপ্রেমিকদের মানসিক ও আধ্যাত্মিক সমর্থন জুগিয়েছেন। তাদের মা ও আশ্রয়স্থল হিসাবে কাজ করেছেন। তাই তো তিনি দেশমাতৃকা সারদা। বিশেষত ১৯০৯ সালে, আলিপুর বোমা মামলার রায় প্রকাশের পরে বাগবাজারে মায়ের বাড়িতে বিপ্লবীদের ঢল নামে। বিপ্লবীদের অনেকেই তাঁর কাছে এসে আশীর্বাদ ও আশ্রয় প্রার্থনা করেন। মা তাঁদের আশীর্বাদ ও শক্তি দিতেন। তিনি তাঁদের নিঃস্বার্থভাবে সেবা করতেন, খাবার দিতেন এবং তাদের দেশপ্রেমের প্রেরণাকে সমর্থন করতেন। মায়ের মতো স্নেহ করতেন এবং তাদের মানসিক শান্তি দিতেন যা তাদের দেশমুক্তির লড়াইয়ে সহায়ক ছিল। তাদের শিক্ষাও স্বাবলম্বী হওয়ার পক্ষে ছিলেন যা পরোক্ষভাবে দেশের সেবাকেই উৎসাহিত করত। গৃহীদের মতোই শ্রীশ্রী সারদামণি ছিলেন বিপ্লবীদেরও মা। সিস্টার নিবেদিতা লিখেছেন, ‘সকল মহান জাতীয়তাবাদী তাঁর (শ্রীশ্রী মা) চরণ স্পর্শ করে যেতেন। যদিও তিনি জানতেন এটা খুবই ঝুঁকির কাজ হয়ে যাচ্ছে।’
মহাবিপ্লবের প্রতীক শ্রীমা
আলিপুর বোমা মামলার রায়-প্রকাশের পরেই নিবেদিতা সারদামণিকে বলেছিলেন— ‘মা ঠাকুর বলেছিলেন কালে আপনি বহু সন্তান লাভ করবেন। মনে হয় তার সময় অতি-নিকট। সমগ্র ভারতবর্ষেই আপনার সন্তান।’
১৯০৯ সালের ২২ জুলাই মিস ম্যাকলাউডকে নিবেদিতা লিখছেন, ‘সব দলগুলিই ঐক্যবদ্ধ হইয়া বলিতেছে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের নিকট হইতে নতুন প্রেরণা আসিতেছে কারাগার হইতে মুক্তি লাভ করিয়া দলে দলে সকলে শ্রীমাকে প্রণাম করিয়া যাইতেছে।’
আর সারদামণির (Sri Maa Sarada) সেই সন্তানদের নিয়ে গর্ব করে বলছেন—‘কী সাহস! এমন সাহস কেবল ঠাকুর আর নরেনই আনতে পারে। দোষ যদি কারও হয় সে তো তাদেরই।’
ভাবলে অবাক হতে হয় একজন নিরক্ষর, প্রত্যন্ত গ্রামের আটপৌরে সহজ সরল নারীর কী আধুনিক মনোভাব! নারীশিক্ষা তো বটেই, দেশ স্বাধীনতায় বিপ্লবীদের প্রতি তাঁর ছিল অগাধ প্রশ্রয় এবং স্নেহ।
বিপ্লবীদের প্রশ্রয় দেওয়ার পরিণাম যে কী হতে পারে সে-সম্পর্কে উনি জানতেন বা বুঝতেন হয়তো, কিন্তু সেসবের কোনও পরোয়া তিনি কখনও করেননি। বারবারই বলতেন— আমার ছেলেরা আমার কাছে আসলে আমি কাউকে ফেরাতে পারব না।
কেন বিপ্লবীরা ছুটে আসতেন সারদামণির কাছে?
বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষ লিখেছেন, ‘ওই শান্ত সমাহিত নীরব জীবনের মধ্যেই রয়েছে অতি বিপ্লবের বীজ। রামকৃষ্ণ সারদা বিবেকানন্দ এই ত্রয়ী এক মহাবিপ্লবের প্রতীক।’
বিপ্লবীদের মায়ের প্রতি ভালবাসা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন পলাতক বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। সে সাক্ষাৎ সম্পর্কে মা বলেছিলেন, ‘দেখলাম আগুন।’ বিপ্লবী বাঘাযতীনকেও মা প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেছিলেন। তবে বাইরের পুরুষদের সঙ্গে মা সরাসরি দেখা করতেন না। কথা বলতেন অন্যের মাধ্যমে। তবে বাঘাযতীনের ক্ষেত্রে মা তা মানেননি। বাঘাযতীন যেন তাঁর কোলের ছেলে।
স্বামীজির বাল্যবন্ধু জাতীয়তাবাদী সন্ন্যাসী ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় স্বরাজ পত্রিকায় লিখেছেন শ্রীমা সম্পর্কে, ‘যদি তোমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হইয়া থাকে তো একদিন সেই রামকৃষ্ণ পূজিত লক্ষ্মীর চরণ প্রান্তে গিয়া বসিও। আর তাঁহার প্রসাদ কৌমুদীতে বিধৌত হইয়া রামকৃষ্ণ শশী সুধা পান করিও। তোমার সকল পিপাসা মিটিয়া যাইবে।’ তবে এই মাতৃবন্দনা শুরু করেছিলেন কিন্তু স্বয়ং স্বামীজি।
আমেরিকা থেকে ফিরে আসার পর মায়ের ভ্রাতৃবধূর বিবরণ উদ্ধৃত করে স্বামী সরদেশানন্দ লিখেছেন— ‘রাজার মতো চেহারা।
ঠাকুরজির পায়ে লম্বা হয়ে পড়ল। জোড়হাতে বলল, মা সাহেবের ছেলেকে ঘাড়া করেছি। তোমার কৃপায়।’ স্বামী সরদেশানন্দের ব্যাখ্যা ‘এ শুধু সংঘজননীর প্রতি স্বামী বিবেকানন্দের প্রণতি নয়। সারদা দেবীর কাছে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ সমগ্র ভারতের আত্মসমর্পণ।’
বিপ্লবীদের জন্য রামকৃষ্ণ মিশন কীভাবে তাদের দরজা খুলে রেখেছিল তা নিয়ে অনুশীলন সমিতির সদস্য প্রিয়নাথ দাশগুপ্ত (স্বামী আত্মপ্রকাশানন্দ) লিখছেন, ‘স্বামী সারদানন্দর যে স্নেহ ভালবাসা ছিল অতুলনীয়। তাঁহার কৃপা না হইলে ওই সময় আমাদের মতো বিপ্লববাদী দলের শহীদ সংশ্লিষ্ট যুবকদের শ্রীশ্রী ঠাকুরের আশ্রয়ে আসা সম্ভব হইত না।’ এর পেছনে যে সারদা দেবী ছিলেন তা পরিষ্কার ব্রহ্মচারী অক্ষয় চৈতন্যের লেখায়। ‘আসলে মা-ই বিপ্লবীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। এই জন্যই শরৎ মহারাজ (স্বামী সারদানন্দ) ওঁদের আশ্রয় দেন। মূলে কিন্তু ‘মা’। এর জন্য রাজরোষে পড়তে হয়েছিল রামকৃষ্ণ মিশনকে।
১৯১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর বাংলার তৎকালীন গভর্নর কারমাইকেল তাঁর ভাষণে রামকৃষ্ণ মিশন সম্পর্কে বলেন— ‘দেশে সন্ত্রাসবাদী তরুণ ও যুবকেরা রামকৃষ্ণ মিশনের মদতপুষ্ট। মিশনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের আনুকূল্যে এবং ত্রাণকার্য করার ছলে প্রকৃতপক্ষে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তরুণদের প্রভাবিত করে যাচ্ছে। দেশবাসী যেন এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের ছেলেমেয়েদের যোগাযোগ যা কিনা রাষ্ট্রদ্রোহিতার নামান্তর সে-ব্যাপারে সাবধান হন।’
গভর্নরের এইরকম মন্তব্যের জেরে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। মঠ ও মিশন থেকে অনেকের বহিষ্কারের দাবিও উঠেছিল।
তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক স্বামী সারদানন্দ সারদা দেবীর কাছে ছুটলেন। সব শুনে শ্রীশ্রী মা বলেছিলেন, ‘ওমা! এসব কী কথা! ঠাকুরের সত্য স্বরূপ যেসব ছেলে তাঁকে আশ্রয় করে তাঁর ভাব নিয়ে সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়েছে দেশের ও আর্তের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছে, সংসারের সুখে জলাঞ্জলি দিয়েছে, তারা মিথ্যা ভাষণ কেন করবে বাবা? স্বামী সারদানন্দকে মা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ঠাকুরের ইচ্ছেয় মঠ ও মিশন হয়েছে। রাজরোষে নিয়ম অলঙ্ঘন করা অধর্ম। ঠাকুরের নামে যারা সন্ন্যাসী হয়েছে, তারা মঠে থাকবে। নয়তো কেউ থাকবে না। তার ছেলেরা গাছতলায় আশ্রয় নেবে, তবু সত্য ভঙ্গ করবে না। তুমি লাটসাহেবের সঙ্গে দেখা করো, তিনি রাজপ্রতিনিধি। তোমাদের সব কথা তাকে বুঝিয়ে বললে তিনি নিশ্চয়ই শুনবেন।’ মায়ের পরামর্শে কাজ হয়েছিল।
সারদাদেবীর (Sri Maa Sarada) কাছ থেকে সন্তানস্নেহ কে পাননি? অরবিন্দ ঘোষ, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়, বিপ্লবী বাঘাযতীন, প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ এবং স্বয়ং নিবেদিতা ভারত সেবার মন্ত্র পেয়েছিলেন সারদা দেবীর কাছ থেকে। ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে। বিপ্লবী প্রিয়নাথ দাশগুপ্তকে শ্রীমা বলেছিলেন— ‘ভয় কোরো না, ঠাকুর সব ঠিক করে দেবেন।’
আরও পড়ুন-জগন্নাথধামের পরিষেবা নিয়ে বৈঠকে মন্ত্রী চন্দ্রিমা
বিপ্লবীদের দিয়েছিলেন দীক্ষা
মানিকতলা বোমা মামলায় জড়িত দুই বিপ্লবী রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে যোগ দিয়েছিলেন। কেবল সারদা মায়ের ইচ্ছায় তাঁরাই হয়ে ওঠেন স্বামী প্রজ্ঞানন্দ ও স্বামী চিন্ময়ানন্দ। পূর্বাশ্রমে তাঁরা ছিলেন দেবব্রত বসু ও শচীন্দ্রনাথ সেন।
অনুশীলন সমিতির আরও যেসব সদস্য শ্রীমায়ের কাছে মন্ত্রদীক্ষা নিয়ে মঠে যোগদান করেছিলেন তাঁদের মধ্যে রয়েছে নগেন্দ্রনাথ সরকার (স্বামী সহদানন্দ), প্রিয়নাথ দাশগুপ্ত (স্বামী আত্মপ্রকাশানন্দ), সতীশ দাশগুপ্ত (স্বামী সত্যানন্দ), ধীরেন দাশগুপ্ত (স্বামী সম্বরুদ্ধ আনন্দ) অতুল গুহ (স্বামী অভয়ানন্দ বা ভরত মহারাজ) প্রমুখ।
স্বদেশি ও বঙ্গবন্ধু বিপ্লবীদের মঠে যোগদান
স্বদেশি ও বঙ্গবন্ধু বিরোধী আন্দোলনের সময় বহু তরুণ বিপ্লবী মঠে যোগদান করেন। কয়েকজন বিপ্লবী মায়ের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে বিভূতিভূষণ ঘোষ, বিজয়কৃষ্ণ বসু, সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, রজনীকান্ত প্রামাণিক প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। বিপ্লবী যোগেন্দ্রনাথ গুহ ঠাকুরতার মেয়ে প্রফুল্লমুখী দেবীও মায়ের কাছে মন্ত্র দীক্ষা নিয়েছিলেন।
ঢাকার স্বাধীনতা সংগ্রামী শ্রীমায়ের ভক্ত রাজেন্দ্রভূষণ গুপ্তের কন্যা গিরিজা গুপ্ত শ্রীমায়ের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। বিপ্লবী বিধবা নারী ননীবালা কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে তখন অনশন করছেন। জনমত তাঁর দিকে। পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট গোল্ডি, ননীবালাকে ডেকে বললেন— ‘আপনি আহার গ্রহণ করুন তার জন্য আপনার যে কোনও ইচ্ছা পূরণ করব।’ ননীবালা দেবী তখন বলেছিলেন— ‘আমায় বাগবাজারের রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের স্ত্রীর কাছে রেখে এলে তাহলেই খাব।’
একজন মানুষের মনের উপর সারদা মায়ের কতটা প্রভাব বিস্তার করেছিল যে জেলে বসে তিনি মায়ের সঙ্গে দেখা তবে খাবার খাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন।
জগজ্জননী
বিশ্বজননী তিনি। তাই জন্যেই শুধু নির্দিষ্ট জনের মধ্যেই তাঁর মাতৃত্ব সীমাবদ্ধ ছিল না। তাই দেশমুক্তির আগুনে ঝাঁপ দেওয়া বিপ্লবীদের মা ছিলেন তিনি। দেশ স্বাধীন করার নামে হানাহানি রক্তারক্তি তাঁর পছন্দ ছিল না। তবে ইংরেজ নিধনের বিরোধী ছিলেন সারদা মা। বলেছিলেন, ‘আমি মা হয়ে কাউকে উচ্ছন্নে যেতে কী করে বলব? গোরা বলে কি আমার সন্তান নয়! আমি বলি সকলের কল্যাণ হোক।’
এই কল্যাণময়ী মা মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন দেশ স্বাধীন হোক। কিন্তু ইংরেজদের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হোক সেটাও তিনি চাননি। তবে কোনও অন্যায় কার্যকলাপও তিনি মেনে নেননি। তীব্র প্রতিবাদও করতেন।
১৯১৭ সালে স্বদেশি মামলা অভিযোগে যূথবিহার গ্রামের দেবেনবাবুর আসন্নসম্ভবা স্ত্রী ও বোনকে হাঁটিয়ে নিয়ে গিয়ে বাঁকুড়া থানায় বন্দি করেছিল পুলিশ। মা বলেছেন এমন কোনও ব্যাটাছেলে কি সেখানে ছিল না যে দু-চড় মেরে মেয়ে দুটিকে ছাড়িয়ে আনতে পারত?
এ ছাড়া জয়রামবাটির অনেকই দূরে কোয়ালপাড়া মঠে ছেলেদের ও অন্যদের চরকায় সুতোকাটা তাঁতবোনার পরামর্শ দিতেন মা। বলেছিলেন— ‘তাঁত কর, চরকা কর, আগে তো তাঁতের কাপড়ই সবাই পরত, চরকা পেলে আমিও সুতো কাটি।’
মায়ের সমর্থনে মুর্শিদাবাদের সারগাছি আশ্রম তরুণ দেশসেবক ও রাজনৈতিক কর্মীদের তীর্থস্থান হয়ে উঠেছিল কোয়ালপাড়া মোটেও পুলিশের কড়া নজরদারি ছিল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে দেশে চরম খাদ্য ও বস্ত্রের অভাব দেখা যায়। মেয়েরা বস্ত্রের অভাবে বাইরে বের হতে পারছে না এক টুকরো কাপড়ের জন্য হাহাকার চারিদিকে। কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। সারদা মা বললেন, কাপড় না পেলে কী করবে গো! তখন ঘরে ঘরে চরকা ছিল, খেতে কাপাস চাষ হত, সকলেই সুতো কাটত নিজেদের কাপড় নিজেরাই করিয়ে নিত কাপড়ের অভাব ছিল না। কোম্পানি এসে সব নষ্ট করে দিল।
কোম্পানি সুখ দেখিয়ে দিলে টাকায় চারখানা কাপড় একখানা ফাও। সব বাবু হয়ে গেল চরকা উঠে গেল এখন বাবু সব কাবু হয়েছে আমাকেও একখানা চরকা নে দাও আমিও সুতো কাটব।’ কত গভীর স্বদেশ প্রেম ও দর্শন লুকিয়ে এই কথায়।
স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবীরা, দেশপ্রেমিকরা মায়ের (Sri Maa Sarada) কাছে ছুটে আসতেন একটু আশীর্বাদের লোভে।
মায়ের সন্তানের আক্ষেপে একদিন ঠাকুর বলেছিলেন, সারা পৃথিবীতে ছেলেরা তোমাকে এত মা-মা করে ডাকবে যে তুমি কূল পাবে না। ঠাকুরের সেই বাণী যেন সার্থক করে শ্রীশ্রীমা হয়ে উঠেছিলেন সর্বজনীন জননী।

