স্ট্যাসিস ডার্মাটাইটিসকে (Stasis Dermatitis) গ্রাভিটেশনাল ডার্মাটাইটিস, ভেনাস একজিমা এবং শিরাস্থ স্ট্যাসিস ডার্মাটাইটিসও বলা হয়। এটা একজিমাই। একে আবার ভেরিকোজ একজিমাও বলে। এই সমস্যা দেখা দেয় তখন, যখন নিচের পায়ের রক্তচলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ যাঁদের রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া দুর্বল তাঁদের শিরাস্থ যে রক্তরস তা পায়ের নিচের ত্বকে চলে আসে। স্ট্যাসিস ডার্মাটাইটিস গোড়ালির একেবারে কাছে দেখা দেয়। গোড়ালিটাই প্রথম প্রভাবিত হয় তারপর সেটা ধীরে ধীরে হাঁটু পর্যন্ত নিচের পা পুরো জুড়ে ছড়িয়ে যায়। ত্বক গাঢ় লালচে, বাদামী ছোপ হতে শুরু করে। এই স্ট্যাসিস ডার্মাটাইটিস কিন্তু শরীরের অন্য স্থানেও হতে পারে। পায়ে আলসার অনেক সময় স্ট্যাসিস ডার্মাটাইটিসের লক্ষণ হতে পারে। তবে এটি কিন্তু বিরল।
স্ট্যাসিস ডার্মাটাইটিস (Stasis Dermatitis) কী তা আরও একটু সহজ করে বললে— পায়ের শিরাগুলিতে একমুখী ভালভ থাকে। এই ভালভগুলি রক্তচলাচলে সহায়তা করে। ভালভের কাজ হল মহাকর্ষীয় বলের বিপরীতে রক্তকে ঠেলে উপরের দিকে নিয়ে যাওয়া অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডের দিকে পা দিয়ে রক্ত ঠেলে দেওয়া। কিন্তু যেটা হয় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিচের পায়ের ভিতরের এই ভালভগুলো দুর্বল হতে শুরু করতে পারে। এই সময় কিছু তরল ওখান থেকে বেরতে থাকে এবং তা পায়ের নিচের দিকে রক্ত-সহ জমা হয় যার ফলে শিরাগুলো ফুলে যায়। শিরাস্থ অপ্রতুলতার এই অবস্থাই হল স্ট্যাসিস। এর অন্যতম কারণ বয়ঃবৃদ্ধি। এছাড়া পায়ে আঘাত, কোনও কারণে রক্তজমাট বেধে যাওয়া, পায়ে জটিল অস্ত্রোপচারের কারণেও হতে পারে। রয়েছে আরও বেশকিছু কারণ।
প্রাথমিক উপসর্গ
শুরুতেই একটা ফোলাভাব হয় এবং ম্লান, বিবর্ণ দেখতে লাগে ত্বক, বিশেষ করে ভেরিকোজ অর্থাৎ বড় হওয়া, ফুলে যাওয়া শিরাগুলি এই রোগের প্রথম লক্ষণ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ বছরের বেশি বয়সি প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন মানুষের এই রোগ রয়েছে।
৫০ বছর বয়স বা তার ঊর্ধ্বের মানুষের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের
স্ট্যাসিস ডার্মাটাইটিসের সম্ভাবনা বেশি। এর কারণ হিসেবে বলা যায়—
উচ্চরক্তচাপ
ভেরিকোজ ভেন
ওজন বেশি
কনজেস্টিভ হার্ট ফেলিওর
কিডনি ফেলিওর
পায়ের নিচে রক্ত জমাট বাঁধা
নিচের পায়ে অস্ত্রোপচার বা গুরুতর আঘাত ইত্যাদি।
এছাড়াও দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে থাকার কারণেও এটা হবার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে।
লক্ষণ
গোড়ালির চারপাশে বা নিচের পায়ের ত্বক ফুলে যায়, লালচে ভাব হয়।
একটা চুলকানি ভাব থাকে।
ব্যথা বা যন্ত্রণা থাকে।
চামড়ার ওপর আঁশ তৈরি হয়।
চামড়া মোটা ও ফাটাফাটা হয় এবং লোম পড়ে যায়।
আরও পড়ুন- জল সরবরাহে বাধা দিলে কড়া ব্যবস্থা
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
রোগ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকলে সত্বর চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসক উপসর্গ দেখে যদি মনে করেন স্ট্যাসিস ডার্মাটাইটিস (Stasis Dermatitis) তাহলে এক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষা বা টেস্ট জরুরি৷ যেমন কালার ডপলার টেস্ট, অ্যালার্জি টেস্ট, সাধারণ রক্ত পরীক্ষা, আইজি টেস্ট এবং অ্যালার্জি প্রোফাইল করা দরকার। এগুলো থেকেই রোগের গভীরতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা তৈরি হবে। এই রোগের সিভিয়রিটি বা কতটা গভীর, জটিল তার ওপর গোটা চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে সেই সঙ্গে ওষুধের ডোজটাও নির্ভর করবে। এর থেকে এটাও বোঝা যাবে রোগটির পিছনে বংশগত কোনও ইতিহাস রয়েছে কি না।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
অ্যালোপ্যাথিতে এর কোনও চিকিৎসা নেই। একটা দীর্ঘস্থায়ী পদ্ধতি। যা নিয়েই চলতে হয়। কিন্তু হোমিপ্যাথিতে এই ধরনের ডার্মাটাইটিস সারতে মোটামুটি ৩ মাস থেকে ৬ মাস সময় লাগে।
সালফার
এই ওষুধ ব্যবহার করার একটা বিশেষ সময় বা শর্ত রয়েছে। যখন ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায় এবং চুলকানির সঙ্গে আঁশ তৈরি হয়। রাতের বেলায় সেই চুলকানি সর্বোচ্চ পর্যায় পৌঁছয়। আক্রান্ত স্থানে বেশ তাপ বা গরম ভাপ লাগে। ত্বক নোংরা এবং অস্বাস্থ্যকর দেখায়। মিষ্টি খাওয়ার আগ্রহ বাড়ে এবং স্নান এড়ানোর প্রবণতা দেখা দেয়।
রাসটাস্ক
এটা খুব কার্যকরী একটা ওষুধ। এই রোগের সঙ্গে যখন হাঁপানির উপসর্গ থাকে তখন রাসটাস্ক দারুণ কাজ দেয়। ত্বক লাল হয়ে যায়, তীব্র চুলকানি এবং ত্বকে জলভরা ফোসকা দেখা দেয়।
পেট্রোলিয়াম
ত্বক খুব বেশি রুক্ষ হয়ে গেলে, গভীর ফাটা ফাটা ভাব এলে, গভীর ফাটল তৈরি হলে তার সঙ্গে রক্তপাত থাকলে এই ওষুধ খুব কার্যকরী।
মেজোরিয়াম
স্ট্যাসিস ডার্মাটাইটিস হোক বা অন্য কোনও ডার্মাটাইটিস হোক ত্বকের নিচে পুঁজ জমলে বা মোটা শক্ত আঁশ-যুক্ত একজিমা হলে, স্পর্শেই সহজে রক্তপাত হলে মেজোরিয়াম খুব কার্যকরী ওষুধ।
গ্রাফাইটিস
স্ট্যাসিস ডার্মাটাইটিসের ক্ষেত্রে খুব কার্যকরী ওষুধের পাশাপাশি শুকনো এবং আর্দ্র— দুই ধরনের ত্বকের সমস্যায় খুব ভাল গ্রাফাইটিস। ত্বক মোটা এবং ফাটা-ফাটা সেই সঙ্গে তীব্র জ্বালাভাব থাকলে খুব কাজ দেয় সঙ্গে সঙ্গে। আর্দ্র একজিমার ক্ষেত্রে ত্বক ফেটে ঘন চটচটে রস বেরয় এই ক্ষেত্রেও গ্রাফাইটিস খুব কার্যকরী দাওয়াই। এ ছাড়াও ফ্লুরিক অ্যাসিড, ল্যাকেসিস, হ্যামামেলিস, আর্সেনিক ভাইপেরা ইত্যাদি ওষুধগুলো খুব কার্যকর।
সতর্কতা
এই ধরনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের কিছু জীবনশৈলীগত পরিবর্তন আনা জরুরি।
কম্প্রেশন স্টকিংস পরতে হবে যাতে ফোলাভাব কমে এবং রক্তপ্রবাহ উন্নত হয়।
শুয়ে থাকার সময় পা উপরের দিক করে শুতে হবে। পা যেন হৃদপিণ্ডের থেকে সমান্তরালে না থাকে, তার চেয়ে উপরেই থাকে।
একটানা দাঁড়িয়ে অথবা বসে না থেকে চলাচল করুন।
মাংস জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। এছাড়া যে-সব খাবারে অ্যালার্জি রয়েছে সেগুলো এড়িয়ে চলা জরুরি। ধূমপান বা অন্য কোনও নেশা বর্জন করতে হবে।
জায়গাটা ভাল করে অ্যান্টিসেপটিক লোশন দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে।