সুন্দরবন

নদী-জঙ্গলে ঘেরা সুন্দরবন। জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ। ছড়িয়ে রয়েছে ভয়, জড়িয়ে রয়েছে রোমাঞ্চ। তবু মানুষের আশ্চর্য আকর্ষণ রয়েছে বিপদসঙ্কুল ম্যানগ্রোভ অরণ্য-অঞ্চলটির প্রতি। সারা বছর দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক বেড়াতে যান। উপভোগ করেন সবুজ বনভূমি, নদী, সমুদ্র, নৈসর্গিক প্রকৃতি। পরিচিত হন লোকজীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে। রাজ্য সরকার সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে পরিবেশ বান্ধব পর্যটনের উপর জোর দিয়েছে। আয়োজন করেছে প্যাকেজ ট্যুর। পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে আরও কয়েকটি উদ্যোগ। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

ছড়িয়ে রয়েছে গভীর রহস্য
ভয় এবং ভালবাসা। দুটোই জড়িয়ে রয়েছে সুন্দরবন নামটির সঙ্গে। মূলত ম্যানগ্রোভ অরণ্য। হিংস্র রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণভূমি। জলে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় কুমির, চিতল হরিণ, চিতাবাঘ, বিড়াল, বিষধর সাপ। গাছে গাছে উড়ে বেড়ায় নানা প্রজাতির পাখি। পেট চালাতে পুরুষদের যেতে হয় গভীর জঙ্গলে। অসীম সাহসী তাঁরা। মুখোমুখি হতে হয় বাঘের। কখনওসখনও ঘটে যায় মহা বিপদ। প্রাণহানিও। কম সাহসী নন মহিলারাও। নানা কাজে হাত লাগান পুরুষদের সঙ্গে। জঙ্গলের আলোকালো পরিবেশে ছড়িয়ে রয়েছে গভীর রহস্য। বিভীষিকা। তবু সুন্দরবনের অসংখ্য নদীনালা, বনভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আকৃষ্ট করে দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসুদের। প্রায় সকলেই অঞ্চলটি ঘুরে দেখতে চান। এই জাতীয় উদ্যান পরিচিত বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেম হিসাবে। ইউনেস্কো সুন্দরবনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করেছে।
বেড়ানোর আদর্শ সময় নভেম্বর থেকে মার্চ। এটাই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সহ বন্যপ্রাণী দেখার উপযুক্ত সময়। এই সময়ের মনোরম আবহাওয়া সুন্দরবন (Sundarbans ) ভ্রমণকে আরও উপভোগ্য করে তোলে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্য সরকার সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে পরিবেশ বান্ধব পর্যটনের উপর জোর দিয়েছে। পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত হয়ে অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সেজে উঠেছে হোমস্টে। পর্যটকদের কাছে স্থানীয় লোকশিল্পীরা পরিবেশন করছেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বেড়ানোর পাশাপাশি বাড়তি পাওনা। এইভাবে শিল্পীদের আয়ের পথও খুলে গিয়েছে।

কালকবন থেকে সুন্দরবন
সুন্দরবনের (Sundarbans ) বর্তমান অবস্থানটি কমপক্ষে ৪০০ বছরের পুরানো। ভূমির অবনমন, ঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প এবং বিদেশি দস্যুদের অবাধ লুণ্ঠন সুন্দরবনকে বহুবার ধ্বংস করেছে। তবে বনাঞ্চলটি আবার সেজে উঠেছে নতুন ভাবে। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই অঞ্চলে সমৃদ্ধ জনপদ ছিল। তার প্রমাণ পাওয়া যায়। সুতরাং সেই সময় ওই অঞ্চলের নামও ছিল। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০ অব্দে সংস্কৃত বৈয়াকরণ পানিনি তাঁর পতঞ্জলি মহাভাষ্যে আর্যাবর্তের সীমানা উল্লেখ করার সময় লিখেছেন, পূর্বদিকে ছিল ‘কালকবন’। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, ‘কালকবন’-ই হল সুন্দরবন। ৩০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে লেখা মহাভারত এবং প্রায় ২০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে লেখা রামায়ণে গঙ্গার মোহনায় ‘শাকদ্বীপ’-এর কথা উল্লেখ আছে। অন্যান্য পুরাণেও এই শাকদ্বীপের কথা লিপিবদ্ধ আছে। ঐতিহাসিক ধনঞ্জয় দাস মজুমদারের মতে, গুপ্ত যুগে খ্রিস্টীয় চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শতক, আন্দামানে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের দরুন যে প্রবল ভূমিকম্প হয়, তার ফলে প্রবল সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে শাকদ্বীপ ধ্বংস হয়। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, ওই সময় সুন্দরবনের নাম ছিল শাকদ্বীপ। কারও কারও মতে, ‘সমুদ্রবন’ শব্দ থেকে সুন্দরবন শব্দের উৎপত্তি।
সুন্দরবনে (Sundarbans ) রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার যেমন প্রাণীদের রাজা, তেমনই গাছেদের রানি হল সুন্দরী বৃক্ষ। প্রচণ্ড শক্ত সুন্দরীর কাঠ। তাছাড়া এই কাঠ উইপোকা প্রতিরোধী ও অপচনশীল। এই কারণে সুন্দরী বৃক্ষের কদর অত্যন্ত বেশি। অতি মূল্যবান সুন্দরী কাঠ থেকে নৌকো, আসবাব ইত্যাদি তৈরি হয়। তাই অধিকাংশ গবেষকের মতে, সুন্দরী গাছ থেকেই সুন্দরবন নামের সৃষ্টি হয়েছে।
১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার (৬৬%) রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ (৩৪%) রয়েছে ভারতে। বারবার আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড়। ২০০৯ সালের মে মাসে আয়লা ব্যাপক হতাহতের সঙ্গে সুন্দরবনকে বিধ্বস্ত করে। অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন।

আরও পড়ুন: বক্সায় জঙ্গল সাফারির জন্য ৬ অত্যাধুনিক গাড়ি

বিপদ মাথায় জঙ্গলে
হাতছানি দেয় পর্যটকদের। তবে সুন্দরবন (Sundarbans ) জায়গাটি বিপদসঙ্কুল। বিপদের সঙ্গে থাকতে থাকতে স্থানীয়রা বিপদ থেকে মুক্তির বিভিন্ন উপায়ও আবিষ্কার করে ফেলেন। উপায়গুলোর মধ্যে কিছু আধ্যাত্মিক, আবার কিছু ব্যবহারিক। কুমিরদের নিয়ে গ্রামবাসীরা আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। সেজন্য পরিবারের মেয়েরা কুমির ব্রত পালন করেন, যাতে কুমির দেবতাকে সন্তুষ্ট রাখা যায়। আবার মধু সংগ্রহের জন্য মৌয়ালরা যখন বনের ভিতরে যান, সঙ্গে বাউলিদের নিয়ে যান। বাউলিরা নাকি বাঘ সামলাতে ওস্তাদ। বিভিন্ন মন্ত্রবলে তাঁরা বাঘকে কাছে আসতে দেন না বা এলেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
হিন্দু এবং মুসলমান, মূলত দুই সম্প্রদায়ের বসবাস। মুসলমানদের মধ্যে আছে শেখ, সাইয়িদ, পাঠান ইত্যাদি। হিন্দুদের মধ্যে দেখা যায় নাপিত, কৈবর্ত, চণ্ডাল, জালিয়া, ধোবা, যোগী ইত্যাদি শ্রেণির মানুষদের। মূলত শূদ্র গোত্রের। জীবিকার জন্য স্থানীয়দের বনের উপর নির্ভর করতে হয়। সুন্দরবনের বেশিরভাগ মানুষ মৎস্যজীবী।
সমুদ্র, নদী বা খাঁড়িতে মাছ ধরতে যান। অনেকেই গভীর জঙ্গলে যান কাঠ ও মধু সংগ্রহের জন্য। বিগত কয়েক বছরে সংগৃহীত মধুর পরিমাণ বেড়েছে। বেড়েছে চাহিদা এবং দাম। রফতানি হচ্ছে বাইরে। প্রত্যেক বছর ৪০ থেকে ৫০টি মৌলে দলকে মধু সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়। আয় বাড়ার ফলে বাড়ছে মৌলেদের উৎসাহ। মৎস্যজীবীদের মতো মধু সংগ্রহকারীদের কাজও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যেতে হয় বিপদ মাথায়। অতর্কিতে পড়তে হয় মানুষখেকো বাঘের আক্রমণের মুখে। বহুজনের চোখের সামনে তাঁদের সঙ্গীকে নিয়ে হাওয়া হয়ে গিয়েছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। বহু মহিলাকেই হতে হয়েছে বাঘবিধবা। তাঁদের ক্রন্দনরোল ভেসে বেড়ায় বাদাবনের আকাশে বাতাসে। চাষবাস করে দিন গুজরান করেন কিছু মানুষ।

বেড়েছে বাঘের সংখ্যা
প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা সুন্দরবন। সারা বছরই থাকে বহু উৎসুক পর্যটকের ভিড়। একদিকে যেমন রয়েছে ঘন অরণ্য, ঠিক তেমনি এই অঞ্চলে জালিকার মতো বিস্তৃত রয়েছে বহু নদী। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যে বহু জীবজন্তুর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তবে সুন্দরবনের সব থেকে আকর্ষণীয় প্রাণী হল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। বেড়াতে আসা পর্যটকরা মুখিয়ে থাকেন ডোরাকাটার এক ঝলকের জন্য। শুধু পশু নয়, দেখা মেলে নানান প্রজাতির পাখির। ঘন জঙ্গলের মাঝে পশু-পাখির উপস্থিতি অনুভব করতেই মূলত পর্যটকরা ভিড় করেন।
একটা সময় জঙ্গলে কমে গিয়েছিল বাঘের সংখ্যা। গত কয়েক বছরে সংখ্যাটা বহুগুণ বেড়েছে। এর পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে রাজ্য সরকারের। কমেছে চোরাশিকারিদের উৎপাত। নদীবক্ষে ভেসে বেড়ানো কিছু সৌভাগ্যবান পর্যটক সম্প্রতি পেয়েছেন শাবক-সহ বাঘিনীর দর্শন। স্থানীয়রা বাঘিনীর নামকরণ করেছেন, ফুলেশ্বরী।
সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের রায়দিঘি রেঞ্জের কুলতলি বিট অফিসের কৈখালি থেকে সংরক্ষিত জঙ্গলে যাওয়ার পাস দেওয়া শুরু করেছে বন দফতর। দীর্ঘদিন যাবত কুলতলি ফরেস্ট অফিসের কৈখালি ঘাট থেকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল-বেঙ্গলের বনি ও কলস ক্যাম্পে যাওয়া যেত না। এতে সমস্যায় পড়ত কুলতলির পিয়ালি গঙ্গার ঘাট কৈখালি ও নলগোঁড়ায় আসা পর্যটকরা। কুলতলির কৈখালি থেকে বৈধ কাগজ দেখিয়ে পাস নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে দোবাকি, সুধন্যখালি, সজনেখালি, বুড়ির ডাবরি, নেতাধোপানি সহ জঙ্গলের বহু সংরক্ষিত এলাকায়। নেচার গাইডরা বেজায় খুশি। এর ফলে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে বাঘের দর্শন। বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা।

পায়ে পায়ে সুন্দরবন
পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে দিনে দিনে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সুন্দরবন। সুফল পাচ্ছেন স্থানীয়রা। বাড়ছে ব্যবসা। তৈরি হচ্ছে বিকল্প কর্মসংস্থান। উন্নত হচ্ছে জীবনযাত্রার মান। ট্রেন ছুটছে নামখানা, ক্যানিং পর্যন্ত। সড়কপথে ছুটছে বাস, লরি, গাড়ি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, জল। ছেলেমেয়েরা যাচ্ছে স্কুলে, কলেজে। গমগম করছে দোকান-বাজার। মুঠোয় সেলফোন। অরণ্য জীবনে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। প্রসঙ্গত, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পে প্লাস্টিক ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সমগ্র সুন্দরবনটাই দু’চোখ ভরে দেখার মতো। তারমধ্যে কয়েকটি জায়গা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেগুলো হল :

সজনেখালি : সুন্দরবনের চিরসবুজ এক দ্বীপ সজনেখালি। এখানেই আছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার। নদীর ধারে আছে বনবিবির থান। সরকারি পর্যটক আবাসের একপাশে আছে ওয়াচ টাওয়ার। বহু মানুষ উপরে ওঠেন বাঘ দেখার আশায়। কপাল ভাল থাকলে দর্শন পাওয়া যায়। দেখা যায় হরিণও। সজনেখালিতে আছে গেস্ট হাউস। কলকাতা থেকে গাড়িতে সায়েন্স সিটি ও ঘটকপুকুর হয়ে সোনাখালির নতুন সেতু পেরোতে হয়। ওপারেই গদখালির ঘাট। সেখান থেকে লঞ্চে সজনেখালি যেতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। থাকা যায় সজনেখালি ট্যুরিস্ট লজে। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করা যায় বিবাদী বাগের ট্যুরিজম সেন্টারে।

ঝড়খালি : সুন্দরবনের পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের জায়গা ঝড়খালি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। নদী ও ম্যানগ্রোভ অরণ্য দিয়ে ঘেরা। শান্ত নির্জন পরিবেশ। চাইলে কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়িতে পৌঁছনো যায়। বোটে সামান্য গেলেই সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল। ঝড়খালিতে বন বিভাগের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে সুন্দরবন ‘ওয়াইল্ড অ্যানিম্যাল পার্ক’। সেখানে রয়েছে একটি বাঘিনী ও দুটি বাঘ, ১১টি কুমির ইত্যাদি। পাখিদেরও দুটি এনক্লোজার তৈরি হচ্ছে। মিলবে বিভিন্ন রকমের পাখি দেখার সুযোগ। সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে পার্কটি। এই পার্কের জন্য সুন্দরবন আর্থিকভাবে উন্নত হবে। এখান থেকে দিনের বেলা বেড়িয়ে আসা যাবে নেতিধোপানি, সজনেখালি, সুধন্যখালি, কলস ইত্যাদি দ্বীপের ওয়াচ টাওয়ার। ঝড়খালির মিষ্টি জলের দিঘিতে শীতকালে পরিযায়ী পাখির মেলা বসে। সামান্য দূরে নদীতীর। এখানকার আরেক অবশ্য দ্রষ্টব্য ম্যানগ্রোভ ইকোলজিক্যাল গার্ডেন। ঝড়খালির বাদাবনের ভয়ঙ্কর প্রকৃতির কোলে কয়েকটা দিন খুব মজায় কাটানো যেতে পারে। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার লোকাল ট্রেনে ক্যানিং নেমে সেখান থেকে বাসে বা গাড়িতে ঝড়খালি যাওয়া যায়। ক্যানিং থেকে দূরত্ব মোটামুটি ৪৪ কিলোমিটার। বাসন্তী থেকে আরও কাছে। গাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে কলকাতা-ধামাখালি রুটে সরবেড়িয়া হয়ে ঝড়খালি পৌঁছনো যায়। থাকার জন্য মৎস্য দফতরের গেস্টহাউস আছে। বুকিং করা যায় সল্টলেকের ময়ূখ ভবন থেকে।

নেতিধোপানি : নেতিধোপানির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু কিংবদন্তি, বেহুলা-লখিন্দরের প্রচলিত কাহিনি। পদ্মপুরাণে, মনসা মঙ্গলকাব্যে বেহুলা-লখিন্দরের প্রেম কাহিনিতে নেতাধোপানির ঘাটের উল্লেখ রয়েছে। ভাটার সময় বিখ্যাত ঘাটটি দেখা যায়। হিন্দুদের কাছে এই স্থান অতি পবিত্র। এখানে আছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো শিবমন্দির। অনেকটাই ধ্বংসপ্রাপ্ত। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। আছে ওয়াচ টাওয়ার। কপাল ভাল থাকলে এখান থেকে দেখতে পাওয়া যায় বাঘ। আসে পরিযায়ী পাখিও। সমুদ্র এখান থেকে খুব কাছে। সারাবছর লেগে থাকে পর্যটকদের আনাগোনা।

দয়াপুর : গোমর নদীর ধারে দয়াপুর দ্বীপ। এখানেই গড়ে উঠেছে সুন্দরবন বেড়ানোর একটি বেসক্যাম্প। দয়াপুর সজনেখালির কোনাকুনি, নদীর ঠিক ওপারে। তাই যাতায়াতের ব্যবস্থা মোটামুটি সজনেখালির মতোই। এখানে আছে বেশকিছু রিসর্ট। তাদের নিজস্ব জলযান আছে। গদখালি থেকে পর্যটকদের নিয়ে এবং দিয়ে আসা হয়। সেইসঙ্গে ঘোরানো হয় সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে। দয়াপুর থেকে ঘুরে আসা যায় জটিরামপুর বার্ড স্যাংচুয়ারি।

বালি দ্বীপ : সুন্দরবনের বালি দ্বীপে গ্রামভিত্তিক ইকো ট্যুরিজমের বিকাশ ঘটেছে। নদীর পাশে ছবির মতো সুন্দর এক গ্রাম। বালিকে ঘিরে প্রবাহিত কয়েকটি নদী। যেমন, মাতলা, পিরিখালি, খনাখালি, বিদ্যা, গুমটি। লঞ্চ থেকে নেমে বাঁধের রাস্তা ধরে কিছুটা হাঁটলেই কটেজের দেখা মেলে। দিনের আলো থাকতে থাকতে এখান থেকে জলপথে সজনেখালি এবং আরও দূরের দ্বীপের ওয়াচটাওয়ারগুলি ঘুরে আসা যায়। সায়েন্স সিটি থেকে গাড়িতে সোনাখালি হয়ে যাওয়া যায় গদখালি। সেখান থেকে লঞ্চ বা ভুটভুটিতে বালি দ্বীপ যেতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে।

বকখালি : সুন্দরবনের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র বকখালি। শিয়ালদহ থেকে নামখানা পর্যন্ত ট্রেন। সেখান থেকে বাস অথবা টোটোয় যাওয়া যায় বকখালি সমুদ্র সৈকতে৷
হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদীর উপর নির্মিত হয়েছে সেতু। ফলে এখন সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায়। বকখালির সমুদ্র সৈকত, ম্যানগ্রোভ বন, চিড়িয়াখানা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণের৷ ঘুরে আসা যায় ফ্রেজারগঞ্জ৷ এখানে একটি মৎস্যবন্দর রয়েছে৷ বকখালিতে আছে সরকারি অতিথিশালা, অসংখ্য বেসরকারি হোটেল। থাকা খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না।

হেনরি দ্বীপ : হেনরি দ্বীপ সুন্দরবনের একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। এখানে মাছ চাষের নানা প্রকল্প আছে। শীতের সময় এখানে উড়ে আসে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। দ্বীপটি বকখালির খুব কাছে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ও সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানের দক্ষিণে অবস্থিত। ম্যানগ্রোভ অরণ্যের সৌন্দর্য এবং প্রাণীজগতের বৈচিত্র উপভোগ করার আদর্শ জায়গা। কলকাতা থেকে বকখালিগামী বাসে বকখালি পৌঁছে হেনরি দ্বীপ যাওয়া যায়।

সাগরদ্বীপ : বঙ্গোপসাগরের মোহনায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের শেষ ভূখণ্ড সুপরিচিত ও সুবিস্তৃত সাগর ব-দ্বীপ৷ প্রতি বছর এখানে পৌষসংক্রান্তিতে কপিলমুনির মেলা ও পুণ্যস্নান উপলক্ষে চার-পাঁচ লক্ষ মানুষের সমাবেশ হয়৷ এটাই গঙ্গাসাগর মেলা নামে পরিচিত। প্রবাদ আছে, এই তিথিতে পুণ্যস্নানে পাপক্ষালন ও স্বর্গলাভের পথ সুগম হয়৷ শুধু মেলার সময়েই নয়, সারা বছরই পর্যটকরা এখানে আসেন৷ তাঁদের থাকার জন্য রয়েছে জেলা পরিষদের বাংলো, পঞ্চায়েতের বাংলো এবং ছোট বড় নানান হোটেল৷ এছাড়াও আছে সরকারি অতিথিশালা।

অন্যান্য জায়গা : মোয়ার জন্য বিখ্যাত জয়নগর-মজিলপুর। এই অঞ্চলে দেখা মেলে আদি গঙ্গা, বহু প্রাচীন মন্দিরের। শিবনাথ শাস্ত্রী, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বৃহত্তর এই অঞ্চলের সুসন্তান। একটি দিন বেড়িয়ে আসা যায়।
ঘুরে আসা যায় ঘুটিয়ারি শরিফ থেকে। এখানে আছে পির মোবারক গাজি বা বড়খাঁ গাজির দরগা ও মসজিদ৷ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র তীর্থক্ষেত্র।
আরেকটি দর্শনীয় স্থান পুরাতন গির্জা। ক্যানিং থেকে নৌকায় বা মোটর লঞ্চে গোসাবা হয়ে যাওয়া যায়৷ এখানে ভরতগড় স্থানটিও প্রাচীন৷
হ্যামিলটনের বাংলো ঘুরে আসা যায়। স্যার ড্যানিয়েল ম্যাকিনন হ্যামিলটন সুন্দরবন অঞ্চলে চাষাবাদ প্রবর্তনের জন্য গোসাবায় একটি কৃষি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করেন৷ তাঁর কাঠের তৈরি বাংলোটি দর্শকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে৷ দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ঐতিহাসিক ও অন্যান্য পর্যটকরা৷ একটি ঐতিহাসিক গ্রন্থের গ্রন্থাগারও এখানে স্থাপিত হয়েছে৷
আরও একটি আকর্ষণীয় জায়গা হ্যালিডে দ্বীপ। বঙ্গোপসাগর ও মাতলা নদীর সঙ্গমে অবস্থিত এই দ্বীপটিতে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এবং পাখি দেখা যায়৷ আলিপুর ডিএফও অফিসের অনুমতি নিয়ে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে এখানে যাওয়া যায়৷ সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে হোটেল, লজ, হোমস্টে। বিভিন্ন সংস্থা জলপথে ঘুরিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করে।

পর্যটন দফতরের প্যাকেজ ট্যুর
সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য রাজ্য সরকারের পর্যটন দফতর বেশ কিছু প্যাকেজ ট্যুরের আয়োজন করেছে। ১ রাত ২ দিনের ট্যুরে জনপ্রতি খরচ ৫৬৯০ টাকা। বুকিং করা যায় অনলাইনে। কলকাতা থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে যাওয়া হয় সোনাখালি। মাতলা-হোগল নদীর উপরে দাঁড়িয়ে থাকে জাহাজ এমভি সর্বজয়া। ভেসে যায় পর্যটকদের নিয়ে। দু’পাশে দিগন্ত বিস্তৃত জঙ্গল। সবুজ আর সবুজ। তাকালেই চোখের আরাম। জাহাজের মধ্যেই হয় রান্না, খাওয়া-দাওয়া। মাঝে মাঝে হল্ট দেওয়া হয়। নৌকা করে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন ঘাটে। সেখান থেকে জঙ্গলের ভেতরে ঘুরিয়ে নিয়ে আসা হয়। যাওয়া হয় সুধন্যখালি, সজনেখালি, ডোবানকি। তারপর আবার সোনাখালি ফিরে আসা হয়। সেখান থেকে সোজা কলকাতা। এই প্যাকেজটি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে। আছে আরও একটি উল্লেখযোগ্য প্যাকেজ। ২ রাত ৩ দিনের। খরচ মাথাপিছু ৭১৪০ টাকা। সোনাখালি থেকে সফর শুরু। সর্বজয়া জাহাজে। যাওয়া হয় সুধন্যখালি, সজনেখালি, বুড়ির ডাবরি, ঝিঙেখালি, ডোবানকি। রয়েছে থাকা এবং খাওয়ার সুব্যবস্থা। বহু পর্যটক এই পরিষেবা নিচ্ছেন। সুন্দরবনের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে রয়েছে সরকারি অতিথিশালা। নির্জন নিরিবিলি নোনা জল হাওয়ায় কয়েকদিন কাটিয়ে আসা যায়।

লৌকিক দেবদেবী
সুন্দরবন প্রথম থেকেই ছিল শ্বাপদসঙ্কুল এক গহন বাদাবন। যেখানে জীবনধারণ করা ছিল চরম কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। স্বভাবতই সেখানে যে বা যাঁরা অভাবনীয় বীরত্ব বা মহত্ত্ব দেখিয়েছেন তাঁরা সুন্দরবাসীর মনে দেবতার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তাঁদের নিয়ে তৈরি হয়েছে লোককথা, উপকথা, লোকগাথা। সুন্দরবনে এমনই এক লৌকিক দেবতা দক্ষিণ রায়। সুন্দরবনবাসীর কাছে তিনি হলেন ব্যাঘ্রদেবতা। সপ্তদশ শতকে কবি কৃষ্ণরাম দাসের লেখা ‘রায়মঙ্গল’ কাব্যে দক্ষিণ রায়ের মহিমার উল্লেখ পাওয়া যায়। মুখে মুখে ছড়িয়ে বেড়ায় নানা গল্পগাথা। ব্যক্তি দক্ষিণ রায় কে ছিলেন বা তিনি কোন সময়ে ছিলেন তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। লৌকিক দেবতা সুন্দরবনে দারুণ জনপ্রিয়। বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁকে পুজো করা হয়। সেই উপলক্ষে বসে মেলা।
সুন্দরবন অঞ্চলের মৎস্যজীবী, মধু-সংগ্রহকারী ও কাঠুরিয়া জনগোষ্ঠীর মানুষেরা হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বাঘের হাত থেকে রক্ষা পেতে বনবিবির পুজো করেন। ইতিহাসবিদ সতীশচন্দ্র মিত্রের ‘যশোহর খুলনার ইতিহাস’ গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী, ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সুন্দরবন এলাকায় দক্ষিণ রায়, বণিক ধোনাই ও মোনাই এবং গাজির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। বনবিবি ছিলেন ইব্রাহিম বা বেরাহিম নামে এক আরবের কন্যা। ইব্রাহিমের স্ত্রী গুলাল বিবি সতীনের প্ররোচনায় সুন্দরবনে পরিত্যক্ত হলে সেখানেই বনবিবির জন্ম হয়। কথিত আছে, গুলাল বিবি মদিনা এবং ইব্রাহিম মক্কা থেকে এসেছিলেন। বর্তমানে সুন্দরবন অঞ্চলের লোকসংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেন বনবিবি। মাহাত্ম্যবিষয়ক কাব্যের নাম ‘বনবিবির জহুরানামা’। এই কাব্য মঙ্গলকাব্যের শৈলীতে রচিত। অরণ্যচারী মানুষের ধর্মবিশ্বাস ও জীবনযাত্রার ছবি এতে ফুটে উঠেছে। গবেষকদের মতে, বনবিবি প্রকৃতপক্ষে হিন্দু দেবী বনদুর্গা, বনচণ্ডী, ষষ্ঠী বা বিশালাক্ষী। বাংলায় ইসলামি প্রভাবে তিনি বনবিবিতে পরিণত হয়েছেন।
বনবিবি এবং দক্ষিণ রায় ছাড়া আর যাঁর আরাধনা সুন্দরবনের মানুষ সবচেয়ে বেশি করেন, তিনি হলেন বড় খাঁ গাজী। ইসলামি অর্থে ‘গাজি’ হলেন ধর্মযুদ্ধে বিজয়ী। মৈত্রী এবং অহিংসার মাধ্যমে ভিনধর্মের মানুষেরও হৃদয় জয় করার ক্ষমতা রাখেন। দক্ষিণ রায়ের মতো বড় খাঁ গাজিও সাধারণ সুন্দরবনবাসীর কাছে ব্যাঘ্রদেবতা বলে পূজিত হন। তবে একজন ধর্মপ্রচারক পির কীভাবে দেবত্বে উন্নীত হলেন, সেটা স্পষ্ট নয়। সম্ভবত এই গাজি পিরের মহত্ত্বের প্রতি আকৃষ্ট সাধারণ মানুষ গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তিবোধ থেকে তাঁকে দেবতুল্য মর্যাদা দেন। পরে কালক্রমে আদি কোনও ব্যাঘ্রদেবতার সঙ্গে বড় গাজি খাঁর মিশ্রণ ঘটে।
একটা সময় সুন্দরবনের অধিকাংশ জায়গা ছিল দুর্গম। চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল অপ্রতুল। শিক্ষার অভাবে শিশুমৃত্যুর বা গর্ভস্থ ভ্রূণের মৃত্যুর কারণ ছিল মানুষের অজ্ঞতা। পোলিও, টিটেনাস, কলেরা ইত্যাদি নানা রোগে প্রচুর শিশু ভুগত বা মারা যেত। বহু গর্ভবতী মহিলা অপুষ্টির কারণে বা জিনগত কারণে মৃত সন্তান প্রসব করতেন। ফলে জন্মের আগে ও পরে সন্তানের মঙ্গল কামনা করে অসংখ্য মহিলা দেবতার কাছে মানত করতেন। সেইসব দেবতার মধ্যে অন্যতম হলেন পাঁচুঠাকুর। আগেকার দিনে রিকেট রোগকে চলতি কথায় বলা হত ‘পেঁচোয় ধরা’। তার মানে পাঁচু ঠাকুর যদি কারও ওপর অসন্তুষ্ট হন, তবে তার সন্তানের রিকেট হয়। কেউ কেউ ‘ভূতে ধরা’-কেও বলে পেঁচোয় ধরা। অনেকে মনে করে পাঁচুঠাকুর হলেন ভূত-প্রেতের দেবতা বা অপদেবতা। সন্তানের উপর যাতে তাঁর ‘কুনজর’ না পড়ে সেজন্য মায়েরা সচেষ্ট থাকতেন। তাঁরা পাঁচুঠাকুরের থানে গিয়ে গাছের গায়ে দড়িতে ঢিল বেঁধে ঝুলিয়ে দিয়ে আসতেন। সুন্দরবনের বিভিন্ন গ্রামে এখনও এই প্রথা বজায় আছে। মানুষের বিশ্বাস, ওই ঢিল পাঁচুঠাকুরের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি শিশুটিকে রক্ষা করেন। সুন্দরবনের মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কাছে শিবের এক লৌকিক রূপ হল মাকাল ঠাকুর। নদী, সমুদ্র বা জলাশয়ে মাছ ধরতে যাওয়ার আগে সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষরা মাছের প্রত্যাশায় মাকাল ঠাকুরের পুজো করেন। এই দেবতার কোনও মূর্তি নেই। মাটির দুটি স্তূপকে মাকাল ঠাকুরের প্রতীক হিসেবে পুজো করা হয়।

সাহিত্যের পাতায়
বাদাবন অঞ্চলের সাদামাটা জনজীবন নিয়ে রচিত হয়েছে বহু সাহিত্য। ‘সুন্দরবনে সাত বৎসর’ প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি রোমাঞ্চকর উপন্যাস। তাঁর মৃত্যুর দুই বছর পর, ১৯৫২ সালে প্রথম বইয়ের আকারে প্রকাশিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়ের গল্প-উপন্যাসে ধরা পড়ে সুন্দরবনের ছবি। বাঘবিধবাদের নিয়ে বই লিখেছেন কুণাল ঘোষ, সুরঞ্জন মিদ্দে। বাইরের লেখকরাও মজেছেন সুন্দরবনের প্রেমে। অমিতাভ ঘোষের উপন্যাস ‘দ্য হাঙ্গরি টাইড’, সলমন রুশদির বুকার পুরস্কার বিজয়ী ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাসের কাহিনির মধ্যে রয়েছে সুন্দরবন। বহু নাটক ও চলচ্চিত্রেও স্থান করে নিয়েছে নদী জঙ্গল পরিবেষ্টিত অঞ্চলটি। সুন্দরবন অঞ্চলের সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার যথেষ্ট সুনাম আছে। নিয়মিত বসে আসর। আয়োজিত হয় উৎসব, অনুষ্ঠান। বেশ কয়েকজন কবি-সাহিত্যিকদের জন্ম হয়েছে এই মাটিতে। ছুটি নিয়ে কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন চিরসবুজ বনাঞ্চলে।

Latest article