সুনতালেখোলার হাতছানি

বর্ষায় বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে? ঘুরে আসুন দার্জিলিংয়ের সুনতালেখোলা। ছোট্ট এক পাহাড়ি গ্রাম। এখানকার উঁচু-নিচু পাহাড়, নদী, জঙ্গলের অপরূপ সৌন্দর্য প্রাণে জাগাবে খুশির তুফান। ডুয়ার্সের স্বল্পপরিচিত এই জায়গাটি দিনে দিনে হয়ে উঠছে চমৎকার ট্যুরিস্ট স্পট। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

বর্ষায় ভেজে গাছপালা। নতুন সাজে সেজে ওঠে প্রকৃতি। আরও বেশি ঘন, আরও সবুজ হয়ে ওঠে অরণ্য। সেই রূপ আস্বাদন করা এক বিরল অভিজ্ঞতা। সেই কারণেই প্রকৃত প্রকৃতিপ্রেমীরা বৃষ্টিদিনে শ্যামল বনাঞ্চলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। তাঁদের অনেকের পছন্দের জায়গা সুনতালেখোলা। এই বর্ষায় সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন। কর্মব্যস্ততা দূরে সরিয়ে নির্জনতার মুখোমুখি বসার সুযোগ ঘটবে। কথা হবে প্রকৃতির সঙ্গে।
সুনতালেখোলা (Suntalekhola) জায়গাটি দার্জিলিং জেলার অন্তর্গত৷ ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। নেপালি ভাষায় সুনতালের অর্থ কমলালেবু এবং খোলার অর্থ ছোট নদী৷ অর্থাৎ কমলালেবু এবং নদী মিশিয়ে এই নামকরণ। ঘন সবুজ বনানী-বিস্তৃত গিরিরাজের পাদদেশে অবস্থিত ডুয়ার্সের স্বল্পপরিচিত এই জায়গাটি দিনে দিনে হয়ে উঠছে চমৎকার ট্যুরিস্ট স্পট। নেওড়া ভ্যালির গহন অরণ্য এখানে এসে মিশেছে সমতলের সঙ্গে। ছোট বড় চা-বাগান এবং ঘন জঙ্গলে মোড়া উঁচু-নিচু পাহাড়ে ঘেরা জায়গাটা প্রাণের মধ্যে ভরে দেয় মুক্ত সতেজ বাতাস। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ নুড়ি-পাথরের মাঝ দিয়ে বয়ে আসা ছোট্ট নদী মূর্তি। বর্ষায় বারিধারায় পুষ্ট সরু নদীই রুদ্রমুর্তি ধারণ করে। অন্যসময় দেখা থাকলে রীতিমতো অচেনা লাগে। ঝমঝমিয়ে লাফিয়ে চলে নিচে। চঞ্চলা কিশোরীর মতো। ঝাউ, দেবদারু, মেহগিনি, অর্জুন, জাম, কমলালেবুর হালকা-ঘন চিরহরিৎ জঙ্গলের বর্ষাস্নাত দৃশ্য এককথায় অবর্ণনীয়।

সুনতালেখোলার (Suntalekhola) অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ৩০০০ ফুট উচ্চতায়। মূর্তি নদীর উপরে রয়েছে কাঠের পাটাতনবেষ্টিত একটি ঝুলন্ত সেতু। এই সেতু দুই পাড়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। সেতু পার হয়ে রাস্তা গিয়েছে পাহাড়ের গা ঘেঁষে, গভীর জঙ্গলের পাশ দিয়ে। সেটা ধরে একটু এগিয়ে গিয়ে ডানদিকে বাঁক নিলেই যাত্রাপথ আটকে দাঁড়ায় ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের মূল ফটক। বাইরের গাড়ি যেতে পারে সুনতালেখোলা চেকপোস্ট পর্যন্ত। সেখান থেকে নির্দিষ্ট স্পটে পৌঁছাতে স্থানীয় গাড়ি ভাড়া করতে হয়। শরীর সঙ্গ দিলে ট্রেক করেও যাওয়া যায়। সুনতালেখোলা চেকপোস্ট থেকে ফরেস্ট বাংলো বা নেচার ক্যাম্পের দূরত্ব প্রায় ১ কিলোমিটার।
গাছে গাছে উড়ে বেড়ায় নানারকমের পাখি। যেমন বন-কপোত, রেড-ভিন্টেড বুলবুলি, হরেক রঙের ফিঙে, হিমালয়ান ঈগল, বন মোরগ, গ্রিন ম্যাগপাই, গ্রে-গোল্ড ট্রিপাই, ফ্যানটেল, স্কারলেট-মিনিভেট, হর্নবিল ইত্যাদি। সারাদিন চলে কিচিরমিচির। সারাবছর পক্ষীপ্রেমীদের ভিড় চোখে পড়ে।
এখানকার প্রকৃতি যতটা সুন্দর, ততটাই সুন্দর এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা। বড় সহজ-সরল তাঁরা। পাহাড়ের গায়ে রয়েছে ছোট-ছোট দোকান। স্থানীয় মহিলারা মোমো, চাউমিন, চা ইত্যাদি বিক্রি করেন। এর স্বাদ এককথায় অতুলনীয়। নেই দূষণের কোনও চিহ্ন। এখানকার নদী, জঙ্গল এবং পাহাড় আপনার মন মাতাল করে তুলবে। প্রাণে জাগাবে খুশির তুফান।
সুনতালেখোলার (Suntalekhola) কাছেপিঠে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। সামসিং অবস্থিত ৪ কিলোমিটার দূরে। ৫ কিলোমিটার দূরে আছে রকি আইল্যান্ড। এ-ছাড়াও ঘুরে দেখা যায় ২৩ কিলোমিটার দূরের ঝালং, ২৮ কিলোমিটার দূরের চাপড়ামারি ফরেস্ট, ৩০ কিলোমিটার দূরের গরুমারা ন্যাশনাল পার্ক, ৩১ কিলোমিটার দূরের প্যারেন, ৩৪ কিলোমিটার দূরের বিন্দু। সারাদিনের জন্য গাড়িভাড়া করে নিতে পারেন। ভরা বর্ষায় কিছু জায়গা বন্ধ থাকে। যাবার আগে জেনে নেওয়াই ভাল।
সুনতালেখোলা চেকপোস্টের সামনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কিছু দোকানপাট আছে। কাঠের তৈরি ঘর সাজানোর জিনিসপত্র কেনার জন্যে অবশ্য সামসিং বাজারে যেতে হবে। এখানকার বিশেষ আকর্ষণ হল পার্শ্ববর্তী বাগানের ভিন্ন স্বাদের টাটকা তাজা চা। ফেরার আগে কিছু চায়ের প্যাকেট সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। হাতছানি দেয় সুনতালেখোলা? চটপট বেরিয়ে পড়ুন।

আরও পড়ুন- পুলিশের বিরুদ্ধে এবার অভিযোগ জানাতে কমিটি

কীভাবে যাবেন?
সুনতালেখোলা যাওয়া যায় রেল ও আকাশপথে। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন ও বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে গাড়ি ভাড়া করে সোজা চলে যেতে পারেন সুনতালেখোলা। অথবা পৌঁছে যান শিলিগুড়ি। সেখান থেকে বাসে যেতে হবে চালসা। চালসা থেকে যে কোনও গাড়ি নিয়ে সুনতালেখোলা। চালসা থেকে মূর্তির দূরত্ব ভায়া মাতেল্লি-সামসিং রোড, আনুমানিক ২০ কিলোমিটার। মালবাজার বা মাল জংশন থেকে গাড়ি ভাড়া করেও সুনতালেখোলা আসা যায় সেক্ষেত্রে দূরত্ব আনুমানিক ২৮ কিলোমিটার।

কোথায় থাকবেন?
থাকার জন্য সুনতালেখোলায় আধুনিক সুবিধাযুক্ত বাংলো টাইপের দু-তিনটি বাড়ি এবং স্থানীয় মানুষদের ব্যবস্থাপনায় কিছু হোম স্টেও রয়েছে। এছাড়াও রাত কাটানোর জন্য রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের ছোট ছোট অনেকগুলি আধুনিক সুবিধাযুক্ত কটেজ। আগে থেকে বুক করে যেতে হয়৷ যে রিসর্ট বা হোম স্টে বুক করবেন, তাঁরাই খাবার পরিবেশন করেন। খুব ছোট জনপদ হওয়ায় চাইলেও বাইরে খাবারের বিশেষ ব্যবস্থা নেই। কাছাকাছির মধ্যে আছে সামসিং বাজার। সেখানে দু-একটি ছোট রেস্তোরাঁ ও হোটেল আছে। এখানকার মোমো এবং নুডুলসের স্বাদ যথেষ্ট ভাল।

Latest article