বর্তমান বিধানসভার বিরোধী নেতার (Suvendu Adhikari) কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে একজন দায়িত্বজ্ঞানহীন, মিথ্যাবাদী, অদক্ষ ও অযোগ্য ব্যক্তিকে ভারতীয় জনতা পার্টি এই আসনে বসিয়েছে। যিনি বিরোধী নেতার ভূমিকা পালনে শুধু ব্যর্থ নন, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ইতিহাসে এই জাতীয় বিরোধী নেতা এর আগে কেউই কখনও দেখেননি। ভাবতে অবাক লাগে যে একজন বিরোধী নেতা বিধানসভাকে এড়িয়ে যান, বিধানসভার বিতর্কে ঠিকমতো অংশগ্রহণ করেন না। এবং এই এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা প্রমাণ করে যে তিনি বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সামনাসামনি হতে ভয় পাচ্ছেন। ভয় পাওয়ার কারণও আছে। কারণ যিনি পিছনের দরজা দিয়ে ষড়যন্ত্র করে ভোটে জিতে বিধায়ক হন, তিনি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকারে আসা জননেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর সামনে কোন Next নিয়ে আবির্ভূত হবেন! তাই যে কোনও অজুহাতে বিধানসভার অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার অথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।
কয়েকদিন আগেই লক্ষ করলাম, রাজ্যপালের ভাষণের দিন এমন একটা চিত্রনাট্য রচনা করেছিলেন বিরোধী নেতা স্বয়ং রাজ্যপালকে সঙ্গে নিয়ে যাতে বিধানসভার ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করে একটা সাংবিধানিক সংকট তৈরি করা যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপাল এবং বিরোধী নেতার এই যৌথ চক্রান্ত ধরে ফেলেছিলেন বলে সেদিন বিধানসভায় কোনও অঘটন ঘটেনি। ঠিক একইভাবে বাজেট পেশের দিনেও হইহট্টগোল করে ভাষণ বন্ধ করার চেষ্টা ও পরে ওয়াকআউট করে বাইরে এসে সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস বুঝিয়ে দিচ্ছে মিথ্যাচার তাঁর স্বভাবে পরিণত হয়েছে। কারণ তিনি বিধানসভার অন্দরে একদমই সাবলীল নন। আর সেটা আড়াল করতেই বাইরে নাটক করেন।
বাজেট নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে যে কথাগুলো তিনি বললেন সেটা প্রমাণ করে বিরোধী নেতার অজ্ঞানতা। পুরোপুরি শিশুসুলভ ভঙ্গিতে i ব্যক্তি বলেন যে সব কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলোর নাম নাকি মা-মাটি-মানুষের সরকার পরিবর্তন করে নিজের নাম দিয়ে চালাচ্ছে। ভাবতেও অবাক লাগে যে একসময় তিনি এই সরকারের একাধিক দফতরের মন্ত্রী ছিলেন এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্বশাসিত সংস্থার কর্তাব্যক্তি ছিলেন। একদা এত দায়িত্ব সামলানো ব্যক্তি আজ কিনা এত বড় মিথ্যা কথা বলছেন! ভাবুন তো— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত ‘কন্যাশ্রী’, ‘যুবশ্রী’, ‘শিক্ষাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’, ‘সবুজসাথী’, ‘কৃষকবন্ধু’, ‘গতিধারা’, ‘কর্মতীর্থ’, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’, ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’, ‘উৎকর্ষ বাংলা’, ‘ঐক্যশ্রী’, ‘মাতৃযান’, ‘মুক্তির আলো’, ‘সবুজশ্রী’-সহ অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষার যে যে প্রকল্প চলছে সেগুলোর একটাও কি কেন্দ্রের? সবগুলোই তো চলছে রাজ্য সরকারের নিজের টাকায়। সর্বোপরি এই প্রকল্পগুলোর সাফল্যের দরুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই জনদরদি প্রকল্পগুলোর নকল ভারতীয় জনতা পার্টি অন্যান্য রাজ্যে করছে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য। সব জেনেশুনে বিরোধী নেতার এই মিথ্যাচার।
একদিকে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সাধারণ মানুষের স্বার্থে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে মানুষের উপর কোনওরকম করের বোঝা না চাপিয়ে শুধুমাত্র রাজস্ব বাবদ আয় বৃদ্ধি করে মানুষের হাতে সরাসরি সামাজিক সুরক্ষার সুফল পৌঁছে দিচ্ছেন, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনায় রাজ্য প্রাপ্য ৯০হাজার কোটি টাকা বকেয়া মেটায়নি। এমনকী জিএসটি বাবদ ছয় হাজার কোটি টাকা ইচ্ছাকৃতভাবে না দিয়ে অন্যায়ভাবে ৬,৪২৫ কোটি টাকা ঋণের বোঝা রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে। রাজ্যের ন্যায্য অধিকার যা কেন্দ্র এই রাজ্যকে দিতে বাধ্য অর্থাৎ পরিভাষায় যেটাকে বলা হয় Central Divolution, সেই অর্থ থেকেও রাজ্য আজ বঞ্চিত। কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতার জন্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঘটছে প্রতিনিয়ত। সর্বোপরি পেট্রোল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তার একটা তথ্য তুলে দিলে আরও স্পষ্ট হবে বিষয়টা।
২০১৮-২০১৯— এই অর্থবর্ষে পেট্রোলের দাম বেড়েছে ১৪৮ বার এবং ডিজেলের দাম বেড়েছে ১৪০ বার।
২০১৯-২০২০— এই অর্থবর্ষে পেট্রোলের দাম বেড়েছে ৮৯ বার, ডিজেলের দাম বেড়েছে ৭৯ বার।
২০২০-২০২১— এই অর্থবর্ষে পেট্রোলের দাম বেড়েছে ৭৬ বার আর ডিজেলের দাম বেড়েছে ৭৩ বার। এমনকী পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের শেষ তথ্য অনুযায়ী ১ জানুয়ারি ২০২১ থেকে ৯ জুলাই ২০২১, শুধুমাত্র এই ৬ মাসে পেট্রোলের দাম ৬৩ বার এবং ডিজেলের দাম ৬১ বার বেড়েছে এবং কমেছে মাত্র ৪ বার। আর শুধু এই সময়কালে রান্নার গ্যাসের দাম বেড়েছে পাঁচবার। ভাবুন সাধারণ মানুষের কী করুণ অবস্থা! আর এই ২০২০-২০২১ অর্থবর্ষে পেট্রোল ও ডিজেলের শুল্ক বাবদ কেন্দ্রীয় সরকারের ৩,৪৪,৭৪৬ কোটি টাকা আয় হয়েছে। অথচ বাংলাকে টাকা দেওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্র ভাতে মারার চক্রান্ত করছে।
সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হল, কেন্দ্রীয় সরকারের ভুল অর্থনীতির কারণে দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার ৬.০১ শতাংশে পৌঁছেছে— যা কি না এক অশনি সংকেত। ৬ শতাংশ অতিক্রম করা মানেই তো বিপদ সীমা অতিক্রম করা। অর্থাৎ , দেশ এক সাংঘাতিক অবস্থার সম্মুখীন।
আমাদের মুখ্যমন্ত্রী এত বঞ্চনার পরেও রাজ্যের আর্থিক ঘাটতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখছেন সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘাটতি বেড়েই চলছে। আজ বেকারত্ব থেকে শুরু করে দারিদ্র, সবকিছুই ঊর্ধ্বমুখী আর এইসব জেনে বুঝেও একজন বিরোধী নেয়া অবুঝের মতো দায়সারা ভাবে শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করাটা নিয়মে পরিণত করে ফেলেছেন। বাংলার মানুষের জন্য এঁদের না আছে কোনও দায়, না আছে কোনও দায়িত্ব। বিরোধী নেতার (Suvendu Adhikari) পদকেই শুধু তিনি কলঙ্কিত করেননি বরং, বলা ভাল, অধিকার হারিয়েছেন বিরোধী নেতার পদে আসীন থাকার। এই কারণে বিগত দিনে বাংলার মানুষ এর বিরুদ্ধে জবাব দিয়েছেন এবং আগামী দিনে এঁদের শূন্যে নামিয়ে দেবেনই দেবেন। এই অনিবার্য আগামী কেউ ঠেকাতে পারবেন না।