তাহাদের কথা

যেমন হু-হু করে বাড়ছে অডিওভিস্যুয়ালের নেশা তেমনই পাল্লা দিয়ে কমছে বইপড়ার আগ্রহ। হারিয়ে যাচ্ছে বই, সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছেন বহু অনামী লেখক, তাঁদের গল্প আর গল্পের চরিত্ররা। কারণ তাঁরা যে তারকা নন, তাই গায়ে নেই কোনও প্রচারের আলো। যাঁদের কথা কেউ বলে না, তাঁদের কথা বলতেই আসছে পরিচালক সুব্রত ঘোষের নতুন ছবি ‘তাহাদের কথা’। ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনিন্দ্য সেনগুপ্ত, রাজনন্দিনী পাল এবং ঋষভ বসু। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

মোবাইল, আইপ্যাড, ল্যাপটপের ভিড়ভাট্টায় কোথায় যেন হারিয়ে গেছে বই। আর সিনেমা, সিরিয়াল ওয়েব সিরিজ, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছে বইপোকারা। অডিও ভিস্যুয়ালের নেশা যেমন হু হু করে বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে ঠিক তেমন করেই কমছে বইপড়ার আগ্রহ।
এই আগ্রহ ফিরিয়ে আনা সহজ কাজ নয়। কিন্তু বইয়ের চরিত্ররাও তো বাঁচতে চায়। অথচ তাহাদের কথা কেউ বলে না। বইকে বাঁচিয়ে রাখতে লেখক, প্রকাশকদের উদ্যোগের শেষ নেই। কারণ বই পড়া যত কমবে ততই বাড়বে ব্রেন ডেথ হওয়ার সম্ভাবনা। এমন এক সংবেদনশীল ভাবনা থেকেই পরিচালক সুব্রত ঘোষের নতুন ছবি ‘তাহাদের কথা’ (Tahader Katha)।

নতুন ভাবনা
ছবির প্রেক্ষাপট সত্তর এবং নব্বইয়ের দশক। সেই সময়কার বইপাড়া, বইয়ের প্রকাশক, পাঠক, লেখক এমনকী বইয়ের পাতার চরিত্রদের মধ্যেকার সংকটকে তুলে ধরবে এই ছবি। যাঁদের কথা বলবার মতো কেউ নেই তাঁদের কথা বলবে। বিষয়বস্তুর অভিনবত্বে পরিচালক সুব্রত ঘোষের ‘তাহাদের কথা’ এক নতুন স্বাদের ছবি। বহুবছর সহকারী পরিচালনায় থাকার পর এই ছবির মাধ্যমে ডেবিউ করছেন তিনি। তাঁর ছবি প্রসঙ্গে পরিচালক জানালেন, ‘‘আমরা এখন যে সামাজিক পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে দেখতে পাচ্ছি যে বই পড়া ক্রমশ কমে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে বইয়ের গল্প এবং গল্পের চরিত্ররাও। কারণ মানুষের মনেই তো তারা অমরত্ব পায়। লেখক যেমন চান তাঁর লেখা বই চিরকালীন হয়ে থাকুক তেমনই সেই বইয়ের চরিত্ররাও চায় বাঁচতে, অমর হতে। কিন্তু তাদের কথা বলার কেউ নেই। কারণ তারা প্রচারের আড়ালে রয়ে যায়। চরিত্রদের এই যে বাঁচা এবং মরা এটাই আমার ছবির বিষয়বস্তু।’’

যাদের কথা কেউ বলে না
ছবিতে দু’জোড়া কাপলকে দেখা যাবে। সুস্মিতা, অনল আর প্রিয়াঙ্কা, রফিকুল। অভিনেতা অনিন্দ্য সেনগুপ্ত রয়েছেন অনলের চরিত্রে। অনল এক কর্পোরেট কর্মী। অভিনেত্রী রাজনন্দিনী পাল রয়েছেন সুস্মিতার চরিত্রে যে এক উঠতি নায়িকা। সুস্মিতা নিজের কেরিয়ারের জন্য যে কোনও স্যাক্রিফাইস করতে প্রস্তুত। রফিকুলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋষভ বসু এবং প্রিয়াঙ্কার চরিত্রে তৃষা দাস। রফিকুল সত্তরের দশকের শুরুর দিকের এক নকশাল ছাত্র নেতা আর প্রিয়াঙ্কা একজন বার ডান্সার। এই দুই জোড়া কাপল নিজেদের মতো করে জীবনের স্বপ্ন দেখে। এছাড়া ছবিতে রয়েছে আরও কিছু মৌলিক চরিত্র যেমন এক লেখক, এক প্রকাশক, একজন মুটে যার নাম বুড়ো, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত এক ব্যক্তি দেবরঞ্জন। তাদেরও অনেক অপ্রাপ্তির গল্প বলবে এই ছবি।
ছবির চরিত্ররা প্রত্যেকেই নিজের মতো করে মুক্তি পেতে চায়। কেউ জীবনের মাঝে আবার কেউ মৃত্যুর মাঝে মুক্তি খোঁজে। প্রিয়াঙ্কা আর রফিকুলকে সমাজ স্বীকৃতি দেয়নি, তবুও তারা রোমিও-জুলিয়েটের মতো নিজেদের প্রেমকে অমর করে রাখতে বদ্ধপরিকর। সুস্মিতা এক অনামী অভিনেত্রী যে অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়। বুড়ো এবং অসুস্থ দেবরঞ্জন দু’জনেই মরে গিয়ে মুক্তি চায়। কারা এরা? কিন্তু কী হবে এদের পরিণতি?

চরিত্রেরা
অভিনেত্রী রাজনন্দিনী পাল এর আগে একাধিক ওয়েব সিরিজে অভিনয় করে দর্শকদের নজর কেড়েছেন। এই ছবিতে একেবারে নতুন ধরনের চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। এই প্রসঙ্গে রাজনন্দিনী বললেন, ‘‘আমি অভিনেত্রী হয়ে একজন অভিনেত্রীর চরিত্রে অভিনয় করলাম এই ছবিতে। চরিত্রটা করে খুব আনন্দ পেয়েছি। আসলে এমন চরিত্র করতেই ভাল লাগে যে চরিত্রগুলো আমাকে খুব ভাবায়।’’
এক্স ইজ ইক্যুয়াল টু প্রেম, অতি উত্তম, নীহারিকা ছবির সুবাদে বেশ পরিচিত মুখ অনিন্দ্য। ছবিতে তাঁর চরিত্র প্রসঙ্গে অনিন্দ্য বললেন, ‘‘আমার চরিত্রটা নব্বইয়ের দশকের প্রেক্ষাপটে স্মার্ট, চার্মিং একটা ছেলের, যে কর্পোরেট অফিসে চাকরি করে। জীবনকে সিরিয়াসলি নেয় না খুব বেশি। তার সঙ্গে সেই সময়কার উঠতি হিরোইনের সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক ঘিরে এগোবে কাহিনি। অনল কে এবং কেন সে এখানে সেই রহস্য না হয় তোলা থাক। ছবিটা দর্শকদের ভাল লাগবে নিশ্চই।’’
ছবিতে রফিকুলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋষভ। এর আগে বেশ কয়েকটা ছবি এবং ওয়েব সিরিজে নজর কেড়েছেন তিনি। তাঁর চরিত্র প্রসঙ্গে ঋষভ জানালেন, ‘‘রফিকুলের চরিত্রটা আজকের নয়, নকশাল আন্দোলনের সময়কার একটা চরিত্র। যে এক ছাত্র নেতা, আন্দোলনকারী এবং একজন প্রেমিকও। সে তার ভালবাসাকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়। এটা একটা ওয়ান ডায়মেনশনাল সফট ক্যারেক্টর। খুব ভাল লেগেছে এই চরিত্রটা করে।’’

‘তাহাদের কথা’য় (Tahader Katha) খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্রে রয়েছেন অভিনেতা বিশ্বনাথ বসু। তিনি এই ছবিতে প্রকাশক এবং এক অর্থে গল্পের কথকও। বিশ্বনাথ জানালেন, ‘‘চেনা পরিসরের বাইরের একটা চরিত্রে কাজ করলাম। বইপাড়ার এক প্রকাশক, যার পিছনে অনেকটা ইতিহাস জড়িয়ে আছে এই ছবির মূল চরিত্রগুলোর সঙ্গে। যিনি রোজ বইপাড়ায় আসেন, বসেন, জীবনে কোনও রিফ্রেশমেন্ট নেই, কলেজ স্ট্রিট পাড়াতেই জীবনের পঞ্চাশটা বছর কেটে গিয়েছে। বইয়ের গন্ধেই তার বাস, একদিন সেখানেই মিলিয়ে যাবে। এমন এক অদ্ভুত রিয়্যালিস্টিক চরিত্র। খুব এনজয় করেছি। আশা করি দর্শকদের ভাল লাগবে। ’’ অনিন্দ্য সেনগুপ্ত, রাজনন্দিনী পাল, ঋষভ বসু, নবাগতা তৃষা দাস, বিশ্বনাথ বসু ছাড়াও এই ছবিতে রয়েছেন অমিত সাহা, দীপক হালদার, কৃষ্ণেন্দু দেওয়ানজি, শ্রাবন্তী ভট্টাচার্য প্রমুখ।

আরও পড়ুন- বাংলার মাটি সম্প্রীতির ঘাঁটি বুঝে নিক গেরুয়া দুর্বৃত্ত

নেপথ্যে
‘তাহাদের কথা’ ছবির প্রযোজক এপিক টেল এন্টারটেনমেন্ট। ছবির কাহিনি সোমক ভট্টাচার্য, বোধিসত্ত্ব মজুমদারের। চিত্রনাট্য সংলাপ লিখেছেন বোধিসত্ত্ব মজুমদার এবং শান্তনু মুখার্জি। সম্পাদনায় মলয় লাহা। ছবিতে একটাই গান রয়েছে। সঙ্গীত পরিচালক সপ্তক সানাই দাস এবং গান লিখেছেন ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তী। গান গেয়েছেন শ্রেয়া ঘোষাল ও কিঞ্জল চ্যাটার্জি।
এই ছবির কেন্দ্রে গল্পের বইয়ের পাতা আর সেই বইয়ের চরিত্ররা এক-একটি রহস্য। একরাশ নতুনত্ব এবং চমক নিয়ে আগামী ১৭ মে মুক্তি পেতে চলেছে ‘তাহাদের কথা’। সেই রহস্য উন্মোচন করতে হলে যেতেই হবে প্রেক্ষাগৃহে।

Latest article