সোনার বাংলা-সহ মহান ভারতের সারা দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িকতার যে চোরাস্রোত বইছে, তার বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, বহরমপুর থেকে আসানসোল, উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ চষে বেড়াচ্ছেন— এক প্রান্ত থেকে আর-এক প্রান্ত। সেই সঙ্গে চলছে পদযাত্রা। যত বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পারেন, সেই প্রয়াস চালাচ্ছেন। যে-ঝড় তাঁরা তুলেছেন তার ধারে-কাছে কেউ নেই। আর তারই প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী মুখ সব পরাজয়ের আতঙ্কে, পর্যুদস্ত আশঙ্কায় চুপসে গেছে।
৩৪ বছরের বাম শাসনের অনিয়মকে একধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে বাংলাকে নতুন জীবন দেওয়া এক দুঃসাধ্য কাজ। সেই কঠিন কাজ নিপুণভাবে সামলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন গ্রামবাংলার মানুষ। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে বিগত ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত, বিধানসভা, লোকসভা, পৌরসভার নির্বাচনে হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC Campaign) জয়জয়কার। বিভিন্ন নির্বাচনের ফলেই প্রমাণিত যে, সাধারণ মানুষ মর্মে মর্মে জানে এই সরকারই সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবে।
আরও পড়ুন- প্রায় ৭২% ভোট, হারের ভয়ে মেজাজ হারালেন ট্রেনি সভাপতি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন প্রথম ২০১১ সালে সরকারে আসেন তখন তাঁর সামনে যে-দুটি মূল সমস্যা ছিল তা হল জঙ্গলমহল ও পাহাড়। রাজ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল মাওবাদী। মাওবাদী দমনে তিনি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। জঙ্গলমহলের জন্য তিনি আলাদা প্রকল্প ঘোষণা করেন। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেন। জঙ্গলমহলের জন্য পৃথকভাবে পুলিশ ও হোমগার্ড নিয়োগ করেন। দু-টাকা কিলো দরে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। জঙ্গলমহলের মানুষ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেলেন। পাহাড়ের অশান্ত পরিবেশকে শান্ত করার জন্য আলাদা কমিটি গঠন করেন। পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য আলাদা বরাদ্দ রেখেছেন বাজেটে (TMC Campaign)। আবার তারা পৃথক রাজ্যের দাবি জানালে তাও কঠোর হাতে দমন করেছেন। নবান্ন ও মহাকরণ থেকে জেলার প্রশাসনিক মহল, সর্বত্র তিনি কর্মসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। যতই সমালোচনা হোক না কেন, তিনিই একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী যিনি প্রত্যেক মাসে বিভিন্ন জেলা পরিদর্শন করে বিডিও, এসডিও, ডিএম, জেলা সভাধিপতিদের মুখোমুখি বসে সমস্যার কথা শোনেন এবং সমাধানের পথ বাতলে দেন। কয়েক বছর আগে কল্যাণীতে প্রশাসনিক বৈঠকের সময় দেখেছি, এক খুদে শিশু, আড়াই বছরের কন্যা রাইসা নুরও বাবার কোল থেকেই দিদি, ওই তো দিদি, বলে ছুটে যেতে চাইছিল দিদির কোলে। সকল শ্রেণির মানুষের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন আকাশ স্পর্শ করছে যেন। জনসভার মাঠ জনপ্লাবনে ভরে উঠছে। দেশের কল্যাণে তিনি নিবেদিত প্রাণ হয়ে মানুষের নিকট দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছেন। রাজ্যের সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অবদানের জন্য চালু করেছেন বঙ্গসম্মান। কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্য পান, তার জন্য তৎপর হয়েছেন। স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নয়নের জন্য তিনি জেলায় জেলায় আরও হাসপাতাল নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পিপিপি মডেল স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাসপাতাল খোলার উদ্যোগ রাজ্যেই প্রথম। সখ্যালঘু উন্নয়নের প্রশ্নে বামশাসকেরা ছিলেন নির্বিকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু উদ্যোগী। সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তিনি অনেক মুসলমান গোষ্ঠীকে ওবিসি-র অন্তর্ভুক্ত করেছেন। চাকরিক্ষেত্রে এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সংরক্ষণ ঘোষণা করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় মসজিদ, কবরস্থান, ইদ্গাহ সংস্কারের জন্য ওয়াকফ বোর্ডকে সক্রিয় করে তুলেছেন। রাজ্যে ওয়াচ টাওয়ার ও হস্টেল নির্মাণ করেছেন। সংখ্যালঘুদের সঙ্কট তিনি গুরুত্ব সহকারে বোঝার চেষ্টা করেছেন। রাজ্যে এই প্রথমবার এত সংখ্যালঘু রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধিকার অর্জন করেছেন। পঞ্চায়েতে সংখ্যালঘুদের এত বড় সুযোগ অন্য সরকার দেয়নি। ফলে সামগ্রিক বিচারে এই উন্নয়নকে সার্থক বলা যায় অনায়াসেই। যা চৌত্রিশ বছরে সম্ভব হয়নি, তা মাত্র কয়েক বছরে সম্ভব নয় কখনওই— এই বোধ আমাদের থাকা দরকার। বিরোধীদের অনৈতিক জোট যে মানুষ বরদাস্ত করেনি, তার প্রমাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিনবার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন। বাম সরকারের রাজত্বে সংখ্যালঘুদের হাতে না মেরে ভাতে মারা হয়েছিল। শিক্ষা, চাকরি, বাসস্থান— সবদিক থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছিল। মমতা-সরকার (TMC Campaign) এই বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে প্রকৃত উন্নয়ন কাকে বলে।
দেশ জুড়ে জনগণের গর্জন ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিসর্জন এই স্লোগান তুলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঝড় তুলেছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে ঐতিহাসিক প্রকল্পের সুবিধা পেতেই সাধারণ মানুষের দুহাত ভরে আশীর্বাদ করছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারকে। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বাংলা জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার সুনিশ্চিত শুধু সময়ের অপেক্ষা। পক্ষান্তরে কেন্দ্রীয় সরকারের ভুয়ো প্রতিশ্রুতির একটাও বাস্তবায়ন হয়নি। জনগণের গর্জনে তা পুনঃ পুনঃ প্রমাণিত।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যথাযথই বলেছেন, ‘‘কেউ বলছেন ‘বেলুড়ঘাট’, কেউ লিখছেন ‘মালদহ পূর্ব’ কেন্দ্র! ঠিক এই কারণেই আমরা বিজেপিকে ভোটের পরিযায়ী পাখি বলি। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহকে একপ্রকার উপেক্ষা করে, মালদহ দক্ষিণের জনসভায় যে জন-বিস্ফোরণ ঘটল, তাতে আমি নিশ্চিত এই কেন্দ্রে যতই বিজেপি, সিপিআইএম এবং কংগ্রেস তলে তলে জোট বাঁধুক না কেন, মানুষের পূর্ণ সমর্থন আমাদের সঙ্গে আছে।”
দেশকে এখন ঘিরে রেখেছে এক ঘোর অনিশ্চয়তা। বেকারত্ব থেকে মাতৃশক্তির অপমান, গরিব মানুষকে ইচ্ছাকৃত বঞ্চনা থেকে বিভাজনের রাজনীতিকে আধার করে সম্প্রীতির পুণ্যভূমিতে হিংসার আগুন ছড়ানো— এইসব নোংরা খেলায় মেতেছে বিজেপি। উল্টোদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের মানবকল্যাণে উৎসর্গীকৃত বিভিন্ন উদ্যোগসমূহকে, মানুষ তাঁর যাপনের সঙ্গী করেছে। যাঁরা বলছেন, ‘জয় বাংলা। জয় তৃণমূল’, সেইসব সৈনিকরা প্রতি মুহূর্তে বারংবার বলে চলেছেন— ‘পরোয়া করি না, বাঁচি বা না-বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে,
মাথার ওপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে।’
বৈশাখের তপ্ত রৌদ্রকে উপেক্ষা করে মানুষ যেভাবে ভোট দিচ্ছেন, যোগ দিচ্ছেন জনসভায় তাতে বোঝাই যাচ্ছে, কোনও বাংলা-বিরোধীর স্থান নেই এই বঙ্গে। যে প্রতিনিধি গরিব মানুষের ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা টাকার বিরুদ্ধে প্রশ্ন করেন না, যে প্রতিনিধি স্বামী বিবেকানন্দকে অসম্মান করেন, সেই প্রতিনিধি আর যাইহোক সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হতে পারেন না, মানুষ তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন।
তাই, গ্রামে শহরে ফুটছে উন্নয়নের ফুল, পাহাড় থেকে সাগর— শুধুই তৃণমূল।