উত্তমকুমার স্মরণ

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডুয়েট গাইলেন ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে। গান শোনালেন আরও কয়েকজন শিল্পী। প্রদান করা হয় সম্মাননা। সবমিলিয়ে ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত উত্তমকুমার স্মরণ অনুষ্ঠান ছিল জমজমাট। ঘুরে এসে লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহ এমনিতেই মায়াবী। যেন আরও বেশি মায়ারং ছড়িয়ে পড়েছিল বৃহস্পতিবার বিকেলে। একটি আলো ঝলমলে অনুষ্ঠান ঘিরে। অনুষ্ঠানটি এমন একজনের স্মরণে, যিনি ৪৫ বছর আগে, ১৯৮০-র ২৪ জুলাই, পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চিরবিদায় নিয়েছেন। তিনি মহানায়ক উত্তমকুমার। বাঙালির ম্যাটিনি আইডল।
সাড়ে চার দশক সশরীরে নেই। তবে ভুবন ভোলানো হাসি ছড়িয়ে তিনি আছেন। রাজার মতো। অগণিত মানুষের হৃদয়ে। তাঁকে ভোলা অসম্ভব। আজও আছেন জোর চর্চায়। তাঁকে ঘিরে আয়োজিত হয় চলচ্চিত্র উৎসব, অনুষ্ঠান। বর্তমান সময়ের নামী পরিচালকদের বক্স অফিসের বৈতরণী পেরোতেও নিতে হয় তাঁর মুখ, তাঁর নাম, তাঁর সিনেমার গানের আশ্রয়। তিনি মহাগুরু। মিশে গেছেন বাঙালির আবেগে। কয়েক প্রজন্ম ভক্ত। এই সময়ের স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির পড়ুয়ারাও পর্দায় তাঁকে দেখে মুগ্ধ, মোহাচ্ছন্ন। এমনিই জাদু। তাই তাঁকে ঘিরে দিন দিন বেড়েই চলেছে মানুষের উন্মাদনা।
বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, মহানায়কের প্রয়াণদিবসে, আলিপুরের ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে, উত্তমকুমার (Uttam Kumar ) স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে। বিকেল সাড়ে চারটে ছিল নির্ধারিত সময়। তার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় প্রেক্ষাগৃহ। শহর কলকাতার পাশাপাশি, এসেছিলেন দূর-দূরান্তের মানুষজন। বয়স্ক, মধ্যবয়স্কদের পাশাপাশি ছিলেন কম বয়সি দর্শকেরাও। চোখ-ধাঁধানো মঞ্চসজ্জা। পিছনের পর্দায় ভেসে উঠছিল মহানায়কের ছবি, মহানায়ক অভিনীত বিভিন্ন চলচ্চিত্রের নাম।
উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন মহানায়কের প্রতি। এছাড়াও ছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মন্ত্রী তথা কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম, বিধায়ক দেবাশিস কুমার, বিধায়ক মদন মিত্র, বিধায়ক অদিতি মুন্সী, বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী, অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, চলচ্চিত্র পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী, চলচ্চিত্র পরিচালক অরিন্দম শীল, চলচ্চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা অম্বরীশ ভট্টাচার্য, ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস প্রমুখ। এসেছিলেন মহানায়কের পরিবারের সদস্যরাও। সবমিলিয়ে চাঁদের হাট। পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্যে দিয়ে তাঁরাও মহানায়কের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন।
এই অনুষ্ঠানে ‘মহানায়ক সম্মান’ প্রদান করা হয় সোমনাথ কুণ্ডু, আনন্দ আঢ্য, গার্গী রায়চৌধুরী, ইমন চক্রবর্তী, রূপঙ্কর বাগচীকে। ‘মহানায়ক শ্রেষ্ঠ সম্মান’ প্রদান করা হয় গৌতম ঘোষকে। প্রত্যেকের হাতে সম্মাননা তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। শুভেচ্ছা জানান সম্মাননা প্রাপকদের।

আরও পড়ুন: MCA পোর্টালে পরিবর্তন, রাজ্য সরকারের ওয়ার্কশপের উদ্বোধন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র

পরিবেশিত হয় মনোগ্রাহী সংগীতানুষ্ঠান। মহানায়ক উত্তমকুমার (Uttam Kumar) অভিনীত বিভিন্ন চলচ্চিত্রের গান গেয়ে শোনান এই সময়ের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পীরা।
শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় গাইলেন সবিতা চৌধুরী ও সহশিল্পীদের গাওয়া ‘সিস্টার’ ছবির ‘বিশ্বপিতা তুমি’। মনোময় ভট্টাচার্য শোনালেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘মন নিয়ে’ ছবির ‘ওগো কাজলনয়না হরিণী’। তৃষা পাড়ুই গাইলেন গীতা দত্তের গাওয়া ‘হারানো সুর’ ছবির ‘তুমি যে আমার’। বিবেক কুমার শোনালেন ‘রাজকুমারী’ ছায়াছবির ‘কী বলিতে এলে’। মূল গানটি গেয়েছিলেন কিশোর কুমার। জোজো শোনালেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘কে জানে ক-ঘণ্টা’। ছায়াছবির নাম ‘সোনার খাঁচা’। নচিকেতা চক্রবর্তী পরিবেশন করেন ‘ছদ্মবেশী’ ছবি থেকে মান্না দে-র গাওয়া ‘আমি কোন পথে যে চলি’। ঐতিহ্য রায় গাইলেন লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া ‘মন নিয়ে’ ছবির ‘চলে যেতে যেতে দিন চলে যায়’। রূপঙ্কর বাগচী শোনান ‘আনন্দ আশ্রম’ ছবির ‘পৃথিবী বদলে গেছে’। মূল গায়ক কিশোর কুমার। রাঘব চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় মান্না দে-র গাওয়া ‘দুই পুরুষ’ ছবির ‘বেহাগ যদি না হয় রাজি’। ইমন চক্রবর্তী শোনান ‘দেয়া নেয়া’ ছবির ‘আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারাদিন’। মূল গায়ক শ্যামল মিত্র।
এরপরেই চমক। গান গাইতে উঠে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মঞ্চে ডেকে নেন ইন্দ্রনীল সেন। তাঁরা পরিবেশন করেন ডুয়েট। ‘দেয়া নেয়া’ ছবিতে শ্যামল মিত্রের গাওয়া ‘গানে ভুবন ভরিয়ে দেবে’। পরে ইন্দ্রনীল সেন এককভাবে শোনান ‘আনন্দ আশ্রম’ ছবি থেকে কিশোর কুমারের গাওয়া ‘আশা ছিল ভালবাসা ছিল’। শেষে বাবুল সুপ্রিয় পরিবেশন করেন একই শিল্পীর গাওয়া ‘অমানুষ’ ছবির ‘কী আশায় বাঁধি খেলাঘর’।
প্রত্যেক শিল্পীর পরিবেশনাই মন ছুঁয়ে যায়। গেয়ে ওঠেন সাধারণ দর্শকেরাও। প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরোতে বেরোতে অনেকেই গুনগুন করতে থাকেন অনুষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন গানের কলি। এটাই উত্তমকুমারের জাদু। এতবছর পরেও অটুট। সত্যিই তিনি অতুলনীয়। আছেন মানুষের অন্তরে। আগামী দিনেও থাকবেন। এইভাবেই। নায়ক তো অনেক, তবে মহানায়ক একজনই। আজও তাঁর আকর্ষণে পূর্ণ হয় প্রেক্ষাগৃহ। স্মরণ-অনুষ্ঠানটি ছিল রূপকথার মতো। মনের মণিকোঠায় থেকে যাবে। আজীবন।

ছবি : সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

Latest article