‘বন্ধুত্ব’-এর ওপর ভরসা করে বহু কাল্ট ছবি বলিউড উপহার দিয়েছে। ‘প্রেম’-এর পাশাপাশি এই এক জঁর যা আমজনতার মন জয় করেছে একাধিক ছবিতে। আর তাই কামব্যাক ছবির থিম হিসেবে দুঁদে পরিচালক যে এমন একটা বিষয়কে বেছে নেবেন, তাতে আর আশ্চর্য কী। সুরজ বরজাতিয়া। একসময় পরপর হিট ছবি বেরিয়েছে যে পরিচালকের ঝুলি থেকে। জমজমাট পারিবারিক প্রেক্ষাপটে নানা বর্ণ- আবেগের নিপুণ বুনোটের নকশি কাঁথা গেঁথে হাজির করতেন দর্শকের সামনে। তারকা নির্বিশেষে দর্শক প্রধানত গল্পেই বুঁদ হত। ‘ম্যায় নে প্যায়ার কিয়া’, ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’, ‘ম্যায় প্রেম কি দিওয়ানি হু’, ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ এরকম আরও অনেক ছবি। ‘প্রেম রতন ধন পায়ও’ ছবির পর সাত বছরের ব্রেক। ছবিটি তেমন সাফল্য পায়নি। এবার ‘উঁচাই’ (Uunchai)। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব কিছুতেই এনেছেন পরিবর্তন। শুধুমাত্র এক জায়গায় নিজের সিগনেচার রেখে দিয়েছেন সুরজ। তা হল মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করার মতো কাহিনি। মাথা নয়, তাঁর ছবি মনকে নাড়িয়ে দেয়। ‘উঁচাই’-এর (Uunchai) ট্রেলার সেই কথাই বলে।
এ তো গেল পরিচালকের কথা। ছবির (Uunchai) কাস্ট লিস্ট চেক করলেও চমক। অমিতাভ বচ্চন, ড্যানি ডেঞ্জংপা, অনুপম খের, বোমান ইরানি, সারিকা, নীনা গুপ্তা এবং পরিণীতি চোপড়া। চার প্রবীণ বন্ধুর বন্ধুত্ব, মজা, জীবনকে ভালবাসা, তাকে উদযাপনের জন্য পাগলামি দুর্দান্তভাবে দেখিয়ে ছবির আলাপ পর্ব সেরেছেন সুরজ। বিস্তার ও ঝালা নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। সে উচ্চতা হিমালয় ছোঁয়! জীবন যেমনই হোক, তাকে ঘিরে সব স্বপ্ন পূরণ না হোক, স্বপ্নগুলো থেকেই যায়। কখনও অবচেতনে, কখনও মুখ ফসকে ‘বন্ধু’দের আড্ডায় বেরিয়ে পড়ে। এমনইভাবে ভুবন (ড্যানি) যখন বন্ধুদের বলে, তাদের একবার হিমালয়ে ট্রেকে যাওয়া উচিত, বহুদিনের স্বপ্ন তার, বন্ধুরা হেসেই উড়িয়ে দেয়। তিন বন্ধুই। অমিতাভ তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, বাস্তব ভেবে কথা বলতে। অনুপম ও বোমান বলেন, কথাটা বলার আগে নিজেদের বয়সটা ভেবে দেখেছে? নিজেদের শারীরিক লিমিটেশন আর তার সঙ্গে হিমালয়ে ট্রেক করতে যাওয়া নিয়ে হাল্কা ঠাট্টা-মজাও চলে। মজাটা পাল্টে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। যখন ভুবন আচমকা মারা যায়। তিন বন্ধুকেই পেয়ে বসে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুটির অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণের জেদ। বাস্তব ভুলে এবার স্বপ্ন দ্যাখেন তাঁরাও। আর কে না জানে স্বপ্ন দেখলে তবেই তা পূরণ করা যায়!
আরও পড়ুন-প্র্যাকটিক্যাল ১৫ই
শুরু হয় এক অসম লড়াই। হিমালয়ের বেস ক্যাম্প ট্রেকিং-এ যাবার ট্রেনিং। দিল্লি শহরের আরাম-আয়েস ছেড়ে বন্ধুর স্বপ্নকে শিখরে পৌঁছে দেবার দৌড়। সাথী হতে চাইলেন আরও দু’জন— সারিকা ও নীনা। সাহায্যের হাতও জুটে গেল একটা। ট্রেক লিডার পেলেন পরিণীতি চোপড়াকে। প্রতিকূল আবহাওয়া, প্রাণঘাতী ঠান্ডা, কঠিন যাত্রাপথ যখন প্রবল রূপে প্রতিবন্ধক তখন লিডার তাদের শোনালেন সেই আপ্ত বাক্য, ট্রেকিং-এর পরিশ্রম, প্রতিশ্রুতি পালনের ভার মাথা থেকে নামিয়ে সবটুকু উপভোগ করুক তারা। প্রকৃতির রূপ, তার সঙ্গে লড়াই, লড়াই জেতা, সবটা। দৃষ্টিভঙ্গির এই বদলই অনেক সহজ করে দেয় তিন বন্ধুর ভাবনা। অমিতাভের উদাত্ত গলায় শোনা যায়, “আমরা বাড়িতে বসে নেই। আমরা পাহাড়ে চড়তে এসেছি। ডিঙোতে এসেছি নদী, আবিষ্কার করতে চলেছি অরণ্য!” শেষ অবধি দলছুট বন্ধুর শেষ স্মৃতিকে তারা পৌঁছে দেয় তার স্বপ্নের কাছে।
নিঃসন্দেহে এক ব্যতিক্রমী গল্প। শুধু তাই নয়, সঙ্গে আছে সিনিক বিউটি। কিন্তু পর্দায় যেটুকু দেখবেন দর্শক তার চেয়ে আরও অনেক ‘গল্প’, আরও অনেক ‘বিউটি’ ছড়িয়ে আছে পর্দার পিছনে। শ্যুটিং-এর জন্য যে কসরত, যে ট্রেনিং, যে পরিশ্রম ও কষ্ট করতে হয়েছে, ছবির তারকাদের বয়স বিবেচনা করলে তা আরেক স্বপ্নের গল্প বলে। পরিণীতি চোপড়া ছাড়া মূল কাস্টের প্রত্যেকের বয়স বিবেচনা করলে এক অসাধ্যসাধন করেছেন সকলে মিলে। তাই বয়সকে সংখ্যাতত্ত্বের সিলেবাসে ফেলে ভাল কাজের যে স্বপ্ন আজীবন দেখে চলেন তাঁরা, সেই তাড়নাই তাঁদের পৌঁছে দেয় এমন সব ছবির কঠিন আউটডোরে। এক হিন্দি ওয়েব সিরিজের পর সারিকাও কামব্যাক করলেন এই ছবির হাত ধরে।
সুনীল গান্ধীর গল্পকে চিত্রনাট্যের রূপ দিয়েছেন অভিষেক দীক্ষিত। সিনেমাটোগ্রাফির দায়িত্বে মনোজকুমার খাটোল। ছবির ঘোষণা হয়েছিল গত বছর অক্টোবরে। শ্যুটিংও শুরু হয়েছিল তখনই। এক বছরে ছবি হাজির দর্শকদের সামনে। বহুদিন বাদে রাজশ্রী প্রোডাকশনের ছবি পরিবেশনার দায়িত্বে যশ-রাজ ফিল্মস। এও তো এক অন্য বন্ধুত্বের গল্প! ছবির মিউজিকের দায়িত্বে অমিত ত্রিবেদী।