বাসুকি ইন্ডিকাসের আত্মপ্রকাশ
ধরিত্রীর বুকে এমন কিছু রহস্য লুকিয়ে থাকে, যেগুলো একদিন হঠাৎ উন্মোচিত হয়— যেন হাজার বছরের নিস্তব্ধতা ভেঙে ইতিহাস নিজেই বলে ওঠে, ‘আমি এখনও শেষ হইনি।’ ভারতের গুজরাতের প্যানন্ধ্রো অঞ্চলের এক প্রাচীন লিগনাইট খনিতে চলছিল দৈনন্দিন খননকাজ, ঠিক যেমন চলে দিনের পর দিন। কেউ জানত না, মাটির গভীরে ঘুমিয়ে ছিল এক প্রকাণ্ড সরীসৃপের অস্থিকঙ্কাল, যার অস্তিত্ব কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। যে হাড়গোড় উদ্ধার হয়েছে, তার বিশ্লেষণে উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য— এই সরীসৃপটির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১১ থেকে ১৫ মিটার, ওজন প্রায় এক টন। নামকরণ হয়েছে ‘বাসুকি ইন্ডিকাস’ (Vasuki indicus), ভারতীয় মাটির প্রাচীনতা আর পৌরাণিক চেতনার সম্মান জানিয়ে।
এই আবিষ্কার শুধু এক বিশাল সাপের নয়, এটি এক যুগের পুনর্জন্ম— যখন দানবাকৃতি সরীসৃপরা রাজত্ব করত পৃথিবীর বুকে। একটি কঙ্কালের পুনরুত্থানে আজ, পুরনো সর্পরাজ টাইটানোবোয়া-র গৌরবকে ছাপিয়ে উঠে এসেছে বাসুকি— যেখানে নতুন আলোয় দেখাচ্ছে আমাদের অতীত, বিজ্ঞান আর পুরাণ হাত ধরাধরি করে চলে।
মাটির নিচে বিস্মৃত অতীতের সর্পরাজ
গুজরাতের কচ্ছ জেলার অন্তর্গত প্যানন্ধ্রো লিগনাইট খনি— সাধারণত যেখানে কয়লার খোঁজে চলে প্রতিদিনের খননযজ্ঞ। কিন্তু হঠাৎই এই জায়গা ইতিহাসের মানচিত্রে নতুন মাত্রা যোগ করে। কয়লার স্তরের নিচে খনন করতে গিয়ে শ্রমিকেরা দেখতে পান বিশালাকৃতির কিছুর হাড়— যার আকার-আয়তন দেখে প্রথমেই আঁচ করা যায়, এটি কোনও সাধারণ প্রাণীর নয়। দ্রুত বিষয়টি জানানো হয় বিজ্ঞানীদের। গবেষকদের একটি দল, যার মধ্যে ছিলেন প্রখ্যাত প্যালিয়ন্টোলজিস্ট আইআইটি রুরকির প্রফেসর সুনীল বাজপেয়ী এবং গবেষক দেবজিত দত্ত, তাঁরা এসে বিশ্লেষণ করে জানান— এই অস্থিরাশি একটি প্রাগৈতিহাসিক সাপের। বয়স প্রায় ৪৭ মিলিয়ন বছর, অর্থাৎ ইওসিন যুগের মাঝামাঝি সময়ের। এটি ম্যাডসোয়িড (Madtsoiidae) গোত্রভুক্ত একটি প্রজাতি, যারা আজ বিলুপ্ত, কিন্তু একসময় আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও ভারতবর্ষ জুড়ে বাস করত।
প্রাপ্ত হাড়গুলোর মধ্যে মূলত ছিল মেরুদণ্ডের ২৭টি কশেরুকা—বিশাল আকারের, প্রতিটি প্রায় মানুষের মাথার সমান। গবেষকরা বলেন, এই সাপের দৈর্ঘ্য অন্তত ১১ থেকে ১৫ মিটার এবং ওজন এক টনেরও বেশি হতে পারে। এর দৈর্ঘ্য টাইটানোবোয়া-র চেয়েও বড় বলেই তাঁরা মনে করছেন। এই আবিষ্কার শুধু একটি জীবাশ্মের নয়—এটি আমাদের ভূতাত্ত্বিক অতীতের এক বিপুল অধ্যায়কে খুলে দেয়, যেখানে ভারতীয় উপমহাদেশ এক বিশাল প্রাকৃতিক জাদুঘরে রূপ নিয়েছিল।
বাসুকি বনাম টাইটানোবোয়ার প্রাগৈতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা
বিশ্ব paleontology-র ইতিহাসে এতদিন পর্যন্ত ‘সবচেয়ে বড় সরীসৃপ’ বললেই উঠে আসত এক নাম—টাইটানোবোয়া। ২০০৯ সালে কলোম্বিয়ার সিরেজন কয়লাখনি থেকে এই দৈত্যাকার সাপের জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়। বৈজ্ঞানিকদের মতে, প্রায় ৬০ মিলিয়ন বছর আগে বাস করা এই প্রাণীটির দৈর্ঘ্য ছিল আনুমানিক ১৩ মিটার, ওজন প্রায় ১.১ টন— একটি আধুনিক স্কুলবাসের সমান দীর্ঘ ও একটি ছোট হাতির সমান ভারী!
তবে ভারতের মাটি যেন এই শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিতে চায়নি। বাসুকি ইন্ডিকাস-এর আবিষ্কার আজ সেই দীর্ঘদিনের আধিপত্যকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাসুকি ছিল প্রায় ১১ থেকে ১৫ মিটার দীর্ঘ, অর্থাৎ সম্ভাব্যভাবে টাইটানোবোয়ার থেকেও দীর্ঘতর। যদিও বাসুকির ওজনের নির্ভুল অনুমান এখনও গবেষণার স্তরে, তবে হাড়ের গঠন এবং কশেরুকার আকৃতি বলছে— তাদের গঠন মোটেই হালকা ছিল না।
উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে উভয়ের উৎপত্তিগত গোত্র ও ভৌগোলিক বিস্তারে। টাইটানোবোয়া ছিল Boidae গোত্রের অন্তর্গত, যা আজও বাঁচিয়ে রেখেছে পাইথন ও বোয়া-দের মতো সাপ। অপরদিকে বাসুকি ছিল Madtsoiidae নামে এক বিলুপ্ত সরীসৃপগোত্রের সদস্য— যা ভারতে প্রথম শনাক্ত হল এত স্পষ্টভাবে। দুই সরীসৃপই থাকত গ্রীষ্মমণ্ডলীয়, আর্দ্র পরিবেশে— যা তাদের বিশাল আকার ধারণে সহায়তা করেছিল। বাসুকি সম্ভবত ছিল তার ইকোসিস্টেমে এক এপেক্স প্রিডেটর— জলে কিংবা স্থলে বড়সড় স্তন্যপায়ী বা কচ্ছপ জাতীয় প্রাণী ছিল তার সম্ভাব্য খাদ্য। কেউ কেউ বলেন, সে হয়তো ছিল ধৈর্যশীল শিকারি, আবার কেউ বলেন, মৃতপ্রায় প্রাণীর দেহ খেয়ে বেঁচে থাকা শিকারি। প্রশ্ন উঠছে— কে ছিল প্রকৃত সর্পরাজ? হয়তো উত্তর লুকিয়ে আছে আরও কিছু অদৃশ্য কঙ্কালের মাঝে, মাটির গভীরে, অপেক্ষায়।
বিবর্তন আর ভূপৃষ্ঠের ইতিহাসে এক নতুন গুরুত্ব
বাসুকি ইন্ডিকাস-এর আবিষ্কার শুধু এক দৈত্যাকার সাপের হাড় খুঁজে পাওয়ার ঘটনা নয়— এটি সাপেদের বিবর্তনের ইতিহাসে, এমনকী মহাদেশগুলোর পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় এক অমূল্য সংযোজন। বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই জানেন, বিশালাকার ঠান্ডা রক্তবিশিষ্ট প্রাণীরা (যেমন সাপ) সাধারণত থাকে উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে। টাইটানোবোয়া যেমন ছিল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দক্ষিণ আমেরিকায়, তেমনি বাসুকির বাসস্থানও ছিল এক উষ্ণ, আর্দ্র ইওসিন যুগের ভারতীয় উপমহাদেশে।
এবং এখানেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ভূ-তাত্ত্বিক ইতিহাস। প্রায় ৪৭ মিলিয়ন বছর আগে, ভারতীয় উপমহাদেশ তখনও ইউরেশিয়ার সঙ্গে পুরোপুরি জোড়া লাগেনি। এটি ধীরে ধীরে উত্তর দিকে সরে আসছিল, আঘাত হানছিল টেকটোনিক প্লেটের সীমানায়। এই সময়কালেই গড়ে উঠছিল হিমালয়। ফলে এই অঞ্চল ছিল ভূমিকম্পপ্রবণ, জলবায়ু ছিল বিশাল বৈচিত্র্যময়— এবং সেই মিশ্র প্রাকৃতিক পরিবেশই জন্ম দিয়েছিল বাসুকির মতো বৃহৎ প্রাণীর। তদুপরি, বাসুকি একটি বিলুপ্ত সরীসৃপগোত্রের (Madtsoiidae) অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে তার প্রজাতির বিবর্তনের পথকে আরও স্পষ্ট করেছে। এতদিন এই গোত্রের পরিচিতি ছিল মূলত আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় সীমাবদ্ধ; বাসুকির মাধ্যমে প্রথমবার স্পষ্ট হল, ভারতেও তারা স্বমহিমায় বিরাজ করত। এই আবিষ্কার তাই শুধু অতীতের নয়, ভবিষ্যতের দিকেও তাকিয়ে— পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাণীর অভিযোজন ও বিলুপ্তির দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।
আরও পড়ুন-বিপ্লব বেচে অর্থ উপার্জনের ফিকির বনাম ত্যাগব্রতী এক নেত্রীর নজির
পুরাণের প্রতিধ্বনি- বাসুকি নাগ থেকে বাসুকি ইন্ডিকাস
পৌরাণিক ভারতের মননে ‘বাসুকি’ (Vasuki indicus) শুধুই একটি সাপের নাম নয়— সে এক প্রতীকের প্রতিরূপ। বাসুকি নাগ হলেন নাগ জাতির রাজা, যিনি বিষ্ণুর নির্দেশে সমুদ্র মন্থনে অংশগ্রহণ করেন। বাসুকি যে ভূমিকা গ্রহণ করেন, তা শুধু পৌরাণিক নয়, এক বিপুল দর্শনের প্রকাশ। দেবতারা অমৃতের সন্ধানে মন্থন করেন ক্ষীরসাগর, পর্বত মন্দারকে ব্যবহার করা হয় মন্থনদণ্ড হিসেবে, আর দড়ির কাজ করেন বাসুকি নিজে— নিজের দেহ দিয়ে। এই দেহ যখন ঘর্ষণে উত্তপ্ত হতে থাকে, তখন তার থেকে নির্গত হয় হলাহল বিষ— যা মহাশক্তিধর দেবতাদের পর্যন্ত স্তব্ধ করে দেয়। তখন সেই বিষ নিজের গলাতেই ধারণ করেন শিব, যিনি তখন হয়ে ওঠেন নীলকণ্ঠ। সহস্র বছরের এই মন্থনে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাসুকিও। বাসুকি এখানে কেবল এক সাপ নয়, তিনি সহিষ্ণুতা, আত্মত্যাগ ও ধৈর্যের প্রতীক। ভারতীয় পুরাণে নাগ কেবল ভয় বা বিষের প্রতীক নয়, তারা প্রকৃতির গূঢ় শক্তির বাহক। আর তাদের মধ্যে যিনি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, তিনিই বাসুকি নাগ— একাধারে নাগরাজ, আবার দেবতা ও দানব উভয়ের মাঝে এক সন্ধিস্থ রূপ। আরও এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ— বাসুকি ছিলেন ভগবান শিবের অন্যতম অলঙ্কার। মহাদেবের গলায় সর্বদা জড়িয়ে থাকা বাসুকি কেবল একটি নাগ নয়, বরং আত্মসংযম, তপস্যা ও শক্তির প্রতীক। এই পৌরাণিক সত্তা তাই ভারতীয় সংস্কৃতিতে বহুকাল ধরে এক গূঢ় প্রতিচ্ছবি বহন করে চলেছে।
ভারতে বাসুকি (Vasuki indicus) নাগের পুজোর জন্য কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মন্দির রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে প্রধান হল নাগ বাসুকি মন্দির, প্রয়াগরাজ (উত্তরপ্রদেশ)— এটি গঙ্গার তীরে দারাগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত এবং নাগপঞ্চমী ও কুম্ভমেলার সময় এখানে হাজারো ভক্ত সমাগম ঘটে। ভদ্রাহা বাসুকি নাগ মন্দির, জম্মু ও কাশ্মীর-এ বাসুকিকে স্থানীয় দেবতা হিসেবে পুজো করা হয়, বিশেষত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে। বাসুকিনাথ মন্দির, দেওঘর (ঝাড়খণ্ড)-এ শিবের সঙ্গে বাসুকিকেও একত্রে পূজা করা হয়, যেখানে ‘বাসুকিনাথ’ শব্দটির অর্থই শিবের সঙ্গে বাসুকির একাত্মতা বোঝায়। দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রাচীন বাসুকি সম্পর্কিত মন্দির হল নাগরাজ মন্দির, নাগারকোইল (তামিলনাড়ু), যেখানে বাসুকিকে ‘নাগরাজা’ রূপে পুজো করা হয় ও বিশেষ ভিজে মাটি (mannu) মন্দিরের পবিত্র প্রতীক হিসেবে মানা হয়। এছাড়া হিমাচলপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন গ্রামীণ অঞ্চলে ছোট ছোট বাসুকি নাগমন্দির ছড়িয়ে রয়েছে, যেখানে তাঁকে গ্রামরক্ষক দেবতা হিসেবে পুজো করা হয়।
এই ব্যাকরণেই বিজ্ঞানীরা যখন ভারতের বুকে আবিষ্কার করেন এক প্রাগৈতিহাসিক দানবাকৃতি সরীসৃপ, তখন তার নাম রাখা হয় ‘বাসুকি ইন্ডিকাস’— একটি নিছক বৈজ্ঞানিক নাম নয়, বরং এক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সংহতির পরিচায়ক। যেমন পুরাণে বাসুকি ছিলেন যুগ পরিবর্তনের সহযোগী, তেমনি বাসুকি ইন্ডিকাসও আজ জীববিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তরের বার্তাবাহক। আকারে, কীর্তিতে এবং ব্যাখ্যায়— এই ফসিল যেন নিজেই এক পৌরাণিক সত্তায় রূপ নিয়েছে। বিজ্ঞান এখানে কেবল খোঁজ পায় কঙ্কালের, আর সংস্কৃতি তাকে পরিধান করায় চিরন্তনের মুকুট।
পুরাতত্ত্ব থেকে জনমানসে
বাসুকি ইন্ডিকাস-এর আবিষ্কার ভারতকে শুধু এক নতুন জীবাশ্ম উপহার দেয়নি, বরং প্যালিয়নটোলজির গ্লোবাল মানচিত্রে ভারতের অবস্থানকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। এতদিন দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা কিংবা মঙ্গোলিয়াকেই প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের জন্য হটস্পট হিসেবে ধরা হত। কিন্তু বাসুকির মতো আবিষ্কার দেখিয়ে দিচ্ছে—ভারতীয় উপমহাদেশও একসময় ছিল বিশাল রেপটাইলদের রাজ্য। বিশেষজ্ঞরা এখন বলছেন— ভারতের মধ্যভাগ, পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জীবাশ্মস্থল আন্তর্জাতিক গবেষণার মূল কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।
এই আবিষ্কারকে ঘিরে জাদুঘর ও এক্সিবিশন কেন্দ্রিক পরিকল্পনাও গড়ে উঠছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় জাদুঘর বাসুকির লাইফ সাইজ কঙ্কালের রেপ্লিকা তৈরি এবং ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রদর্শনীর উদ্যোগ নিচ্ছে। সাধারণ মানুষের আগ্রহও এই বিষয়ে দ্রুত বাড়ছে। পাশাপাশি, বাসুকির পৌরাণিক নাম, বিশাল আকার ও রহস্যময়তা তাকে এক সম্ভাব্য চরিত্রে রূপ দিচ্ছে। বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল, অ্যানিমেশন স্টুডিও, এমনকী তথ্যচিত্র নির্মাতারাও আগ্রহ প্রকাশ করছেন এই সরীসৃপকে নিয়ে নতুন কনটেন্ট তৈরির। ‘মাইথোলজি মিটস ফসিল সায়েন্স’ এই থিমে ভবিষ্যতের কোনও চলচ্চিত্র বা ডকুমেন্টারি বাসুকিকে বিশ্বমঞ্চে হাজির করতেই পারে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল— এই আবিষ্কার ভারতের প্যালিয়নটোলজি গবেষণায় নতুন উদ্দীপনা তৈরি করেছে। সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলি এখন ফসিল সায়েন্স নিয়ে নতুন অর্থ বরাদ্দ ও প্রকল্পভিত্তিক গবেষণা চালুর কথা ভাবছে। বাসুকি ইন্ডিকাস (Vasuki indicus), তাই কেবল ইতিহাস নয়, এক নতুন দিগন্তের দুয়ার।
মাটির গভীরে লুকিয়ে থাকা
অতীতের রহস্য
ভারতের মাটির তলদেশে এখনও রয়েছে এমন অনেক রহস্য, যেগুলো আজও আমাদের অজানা। বাসুকি ইন্ডিকাসের আবিষ্কার প্রমাণ করে, আমাদের দেশে প্যালিওন্টোলজির সম্ভাবনা অপার। প্রাচীন সরীসৃপদের ভুবনে ডুব দেওয়ার মতো আরও অনেক অধরা ইতিহাস অপেক্ষা করছে খোঁজার জন্য। বিজ্ঞান যে আজকের আবিষ্কারকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, তা নয়; বরং নতুন নতুন গবেষণায় প্রতিদিনই আমরা পৌরাণিক কাহিনির আড়ালে লুকানো সত্যের মুখোমুখি হচ্ছি। আজকের কল্পকাহিনি কালকের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার হতে পারে— এটাই বিজ্ঞানের রোমাঞ্চকর চলার পথ। বাসুকির মতো আরও প্রাগৈতিহাসিক জীবাশ্মের সন্ধান আমাদের দেশের ইতিহাসের গহীনে আলো ছড়াবে। পাশাপাশি, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান যখন একসাথে কাজ করে, তখন তারা শুধু অতীতকে সংরক্ষণ করে না, বরং আমাদের ঐতিহ্য ও ভবিষ্যতকে শক্তিশালী করে তোলে।
তাই, মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা গোপন ইতিহাস আমাদের শুধু জানার নয়, তা আগ্রহের সঙ্গে অনুসন্ধানের আহ্বানও দেয়। বাসুকি ইন্ডিকাস (Vasuki indicus) সেই আহ্বানকে আরও শক্তিশালী করেছে— আগামী দিনে আরও অনেক বিস্ময়ের অপেক্ষা আমাদের।