এক যাত্রায় পৃথক ফল তাই আবার হয় নাকি!

ওরা দেশটাকে নিজেদের সম্পত্তি ভেবে জোরজবরদস্তি সব প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে। এখন মানুষের ভোটাধিকারটুকুও কেড়ে নিতে চাইছে। আমরা এটা করতে দেব না। লিখছেন আকসা আসিফ

Must read

কিচ্ছু মানবেন না আপনারা? আধার কার্ড? ভোটার কার্ড? কোনোটাই মানবেন না?
তাহলে আমি যে ভারতের নাগরিক সেটার প্রমাণ কী?
অন্যান্য নথির সাপেক্ষে তা খতিয়ে দেখতে হবে। বিহারে ভোটার (voter) তালিকার স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) ইস্যুতে গোটা দেশ যখন তোলপাড়, সেই সময় কার্যত কমিশনের অবস্থানকেই মান্যতা দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি অমিত বোরকারের বেঞ্চ একধাপ এগিয়ে বলেছে, আধার, প্যান বা ভোটার কার্ড থাকলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ভারতের নাগরিক বলে প্রমাণ হয় না। এগুলি স্রেফ পরিষেবা গ্রহণের সময় বা কাউকে শনাক্ত করতে কাজে লাগে। নাগরিকত্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে শেষ কথা বলবে সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট (১৯৫৫)।
এতদিন পর্যন্ত আমরা ওই নথিগুলিকে উপযুক্ত প্রমাণপত্র হিসেবে বিবেচনা করতাম। এখন আদালত যদি সেগুলিকে নাগরিকত্বের পরিচয় নয় বলে জানায়, তাহলে সেটাকে মান্যতা দিতে হবে। কিচ্ছু করার নেই। সেটা না হয় বুঝেছি, মেনেও নিচ্ছি।
কিন্তু গোল বেঁধেছে অন্যত্র।
বিহারের ভোটার সংখ্যা ৭.৯ কোটি। এর মধ্যে সাড়ে ছ’কোটি ভোটারকেই (voter) নিজেদের বা বাবা-মায়ের কোনও নথি পেশ করতে হয়নি। এর মধ্যে ৭.২৪ কোটি ভোটার এসআইআর প্রক্রিয়ায় সাড়া দিয়েছেন। তাহলে এক কোটি ভোটারের নাম বাদ পড়ে কিভাবে? কোন যুক্তিতে? কোন হিসেবে? সেই সঙ্গে মৃত, স্থানান্তর বা অন্য কেন্দ্রে নাম রেজিস্টার করা ৬৫ লক্ষ ভোটারের তথ্যও প্রশ্নাতীত নয়।একটি কেন্দ্রে দেখা গিয়েছে, ১২ জনকে কমিশন মৃত হিসেবে ঘোষণা করলেও তাঁরা জীবিত। বিহারে এই অবস্থা হলে দেশের অন্যান্য অংশে কী ঘটবে?
সংশয় সেখানেই। আশঙ্কা সেটাই।

আরও পড়ুন-জগন্নাথধামের চূড়ায় সোলার হ্যালো: বিরল দৃশ্য দেখে আপ্লুত হল বাংলা, সমাজমাধ্যমে পোস্ট মুখ্যমন্ত্রীর

স্মর্তব্য, গালভরা গণতন্ত্রের কোনও মূল্য নেই। গণতন্ত্রের কোয়ালিটি নির্ভর করে তার অনুশীলনের ধরনের উপর। আমাদের সংবিধান রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সংসদীয় গণতান্ত্রিক মডেল উপহার দিয়েছে এবং গণতন্ত্রের অনুশীলনে স্বীকৃত হয়েছে বহু দলের অংশগ্রহণ। বহু ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি এবং অঞ্চলের সমন্বয়ে ভারত মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাচীন ভারতের এই বহুত্বের সাধনা অক্ষত ও অব্যাহত রাখতে দেশজুড়ে চাই প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা। আমাদের প্রতিটি সরকার (স্থানীয় সরকার, রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার) প্রত্যক্ষ ভোটদানের মাধ্যমে গঠিত হয়। ভারতে এই মুহূর্তে ভোটার সংখ্যা কমবেশি একশো কোটি! এত সংখ্যক দূর, এর সামান্য এক ভগ্নাংশ মানুষের রায় নিয়েও সরকার গঠন করার কথা বহির্ভারত ভাবতেই পারে না।অথচ, সেটাই ঘটেছে ভারতে। ভোট জালিয়াতি এবং রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের ভয় কাটিয়ে ভারতীয় গণতন্ত্রকে এগোতে হয়েছে এবং হচ্ছে।

এটাও আমরা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, যে নির্বাচন কমিশনকে একটি স্বশাসিত এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বলে আমরা সবাই জানি, সেই ইসিআই খুব কম সময়েই তার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে সমর্থ হয়েছে। বস্তুত টি এন সেশনের আগে কোনও নির্বাচন কমিশনার সম্ভবত জানতেনই না, এই সংস্থাটির প্রকৃত ক্ষমতা কী এবং এই সংস্থার উচ্চতা কতটা? ফলে নানা সময়ে শাসক দল ইসিআই’কে তার চাহিদামতো ব্যবহারের অপচেষ্টা করেছে। সেশন অবসর নেওয়ার পর ইসিআই তার রাশ তেমন ধরে রাখতে পেরেছে বলে ভরসা হয় না। কেননা, সাম্প্রতিক অতীতেও (বিশেষত মহারাষ্ট্র বিধানসভার নির্বাচন) কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিরোধীরা গুরুতর অভিযোগ তুলেছে। তার নিরসন হওয়ার পূর্বেই, মাসকয়েক আগে ভোটার তালিকায় কারচুপির ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত সামনে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার তালিকায় একাধিক ভিন রাজ্যের মানুষের নামধাম পাওয়া গিয়েছে। ওই কেলেঙ্কারি ঘটানো হয়েছে একই এপিক (ভোটারের সচিত্র পরিচয়পত্র) নম্বর ব্যবহার করে।উত্তরপ্রদেশের ভোটার তালিকায় নাম জ্বলজ্বল করছে। তাঁরা গত লোকসভা নির্বাচনে যোগীরাজ্যে ভোটও দিয়েছেন। অথচ বিহারের নতুন খসড়া ভোটার (voter) তালিকাতেও তাঁদের নাম! ইন্টেনসিভ রিভিশনের পর বাল্মীকিনগর বিধানসভা কেন্দ্রের তালিকা পরীক্ষা করে পাঁচ হাজারের বেশি এমন ভোটারের নাম মিলেছে, যাঁরা আগে থেকেই রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকার ভোটার তালিকায়। এর মধ্যে সহস্রাধিক ভোটারের নাম, নিকটাত্মীয়ের নাম ও বয়স দুটি তালিকাতেই হুবহু এক। তাঁদের শুধুমাত্র এপিক নম্বর ও ঠিকানা আলাদা। আর বাকি ভোটারদের নাম ও নিকটাত্মীয়ের নামের কয়েকটি অক্ষর ও বয়স সামান্য বদল করে বিহারের তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশনের (এসআইআর) পর বিহারের খসড়া ভোটার তালিকা নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। এর আগে ‘০’ নম্বর ঠিকানায় বিহারের প্রায় তিন লক্ষ ভোটারের নাম পাওয়া গিয়েছিল। সেই বিতর্ক সামলে ওঠার আগেই যোগ হল এক নয়া কেলেঙ্কারি! নিয়ম অনুযায়ী, একই ব্যক্তির নামে আলাদা এপিক নম্বর থাকার কথা নয়। থাকলেও তা আইনবিরুদ্ধ। অথচ ইউপি’র বহু ভোটারের নাম হঠাত্ চলে এল বিহারের তালিকায়! কেরলের ত্রিশূর লোকসভা এলাকার এক মহিলার দাবি চোখ কপালে তুলে দিয়েছে। প্রসন্ন নামে ওই মহিলার অভিযোগ, ত্রিশূর শহরে তাঁর ঠিকানা ব্যবহার করে অচেনা ন’জনের নাম তোলা হয়েছে ভোটার তালিকায়।গত লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণের এই রাজ্যে শুধুমাত্র ত্রিশূরেই জয় পেয়েছিল বিজেপি। ৭৪ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরেশ গোপী।
কেন এসব হচ্ছে, তার কোনও সন্তোষজনক জবাব নির্বাচন কমিশনের কাছে নেই।

এই আবহে আমাদের সাফ কথা, যদি কমিশনের যুক্তিমতো মেনে নেওয়া হয় ভোটার তালিকায় গরমিল রয়েছে, তার অর্থ গত বছরের লোকসভা ভোটও এই গরমিল-সহ ভোটার তালিকার ভিত্তিতেই হয়েছে। সেই ভোট থেকেই প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে যদি ওই ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকে, তা হলে গোটা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভারই ইস্তফা দেওয়া উচিত।

কমিশন যদি ঠিক হয়, যদি এই ভোটার তালিকায় গরমিল থাকে, তা হলে প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিং’ শুরু করা হোক। তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন থেকে এফআইআর করা হোক। তাঁর তত্ত্বাবধানে এক বছর আগে যে সাধারণ নির্বাচন হয়েছে, সেখানে যদি সত্যিই গরমিল থাকে, ভুয়ো ভোটার থাকে, বাংলাদেশি থাকে, তবে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরু করতে হবে। ওই তালিকার ভিত্তিতে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, সকলের পদত্যাগ করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী-সহ গোটা মন্ত্রিসভার পদত্যাগ চাইছি আমরা

Latest article