তামিলনাড়ুর জনপ্রিয় শৈলশহর ইয়েলাগিরি (Yelagiri)। পূর্বঘাট পর্বতমালার পাদদেশে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪১০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। কী নেই এখানে? আছে পাহাড়, নদী, জঙ্গল, জলপ্রপাত। দিনের আলোয় চারদিক ঝলমল করে। বর্ষায় আকাশ ঢেকে যায় কৃষ্ণ-মেঘে। মাঝেমাঝেই আপনমনে ঝরে বৃষ্টি। তার মধ্যে ইয়েলাগিরি ভ্রমণ হতে পারে এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা। সবুজ বনানী আরও সবুজ হয়ে ওঠে। গাছের পাতায় লেগে থাকে বিন্দু বিন্দু জলকণা। দেখে মুক্তোর মতো লগে। চোখে পড়ে নানা রকমের ফুল। নানা রঙের। মৃদু হাওয়ায় মাথা দোলায়।
রাতেরবেলা ইয়েলাগিরির আবহাওয়া এবং পরিবেশের কোনও তুলনা হয় না। আলো জ্বলে উঠলে দূর থেকে মনে হয় যেন আকাশ থেকে মাটিতে তারাদল নেমেছে। যাওয়া যায় বছরের যে কোনও সময়। গিয়ে আপনমনে ঘুরে বেড়াতে পারেন।
অতীতে ইয়েলগিরির পাহাড় ইয়েলাগিরি (Yelagiri) জমিদার পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল। গত শতাব্দীর পাঁচের দশকে ভারত সরকার সম্পত্তিটি নিয়েছে। রেড্ডিউরে জমিদার বাড়িটি এখনও বর্তমান। বহু মানুষ দেখতে যান।
ইয়েলাগিরি ঘিরে রয়েছে আরও কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র। সেগুলোও ঘুরে দেখা যায়। যদি পরিবারের ছোট্ট সদস্য বা সদস্যাকে নিয়ে ভ্রমণ করেন, তাহলে এখানকার ফান্ডেরা পার্কে অবশ্যই যাবেন। পার্কটিতে ৩০০-রও বেশি বিদেশি পাখি রয়েছে, যা আপনাকে এবং আপনার ছোট্টটিকে মুগ্ধ করবে। এই সুন্দর পাখিরা আপনমনে খেলে বেড়ায়, বিভিন্নরকম শব্দ করে। তত্ত্বাবধায়কেরা পাখিদের বড় আকারের এভিয়ারিতে অবাধে উড়তে দেয়। পাখি ছাড়াও এই পার্কে রয়েছে বিড়ালছানা, গরু, ছাগল, খরগোশ এবং গিনিপিগ। সবকিছুই মূলত ছোটদের মনোরঞ্জনের জন্য।
ইয়েলাগিরিতে ঘুরে দেখার জন্য আরেকটি মনোমুগ্ধকর পর্যটন কেন্দ্র হল সুন্দর নীলাভুর হ্রদ। এটি ইয়েলাগিরির নীলাভুর গ্রামে অবস্থিত একটি কৃত্রিম হ্রদ। দর্শনার্থীরা নীলাভুর গ্রামের অত্যাশ্চর্য নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি লেকে বোটিং করতে পারেন। লেকের সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিতভাবে বিস্মিত করবে।
মনের মধ্যে আধ্যাত্মিক ভাব থাকলে শান্ত ও নিরিবিলি পেরুমাল মন্দিরে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটাতে পারেন। এটা ইয়েলগিরির অন্যতম প্রধান মন্দির এবং দর্শনীয় স্থান। সারা বছর ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। মন্দিরের স্থাপত্য এবং সুন্দর রঙ্গোলি অবশ্যই দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
আরও পড়ুন: রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেলেন রাজভবনের নির্যাতিতা কর্মী
পুঙ্গানুর লেক পার্ক ইয়েলাগিরির (Yelagiri) বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি। বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই লেক কাম পার্কটির সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। মন ভালো হয়ে যাওয়ার মতো নির্মল পরিবেশ। সমস্ত বয়সের মানুষ তাঁদের প্রিয়জনদের সঙ্গে এখানে সময় কাটাতে পারেন। লেকে বোটিংয়ের সুযোগ রয়েছে। লেকের পাড়ে বসার পাশাপাশি ঘুরে বেড়ানো যায়।
ইয়েলাগিরি গেলে অবশ্যই দেখবেন জলগামপারাই জলপ্রপাত। মূল ইয়েলাগিরি এলাকা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত। বিখ্যাত আত্তারু নদী ইয়েলাগিরি পাহাড়ের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং একটি জলপ্রপাত তৈরি করেছে। এই গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ইয়েলাগিরি উতরাই থেকে জঙ্গলপথে কিছুক্ষণ হাঁটতে হবে। পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার আগে একটু ভাববেন। যেন তাঁদের কোনও রকম অসুবিধা না হয়। বর্ষার মরশুমে, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জলপ্রপাতটিকে পূর্ণ মহিমায় থাকে। দেখে মনের মধ্যে ভয় মিশ্রিত আনন্দের সঞ্চার হয়।
ইয়েলাগিরি অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্প একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। সারা বছর বহু মানুষ ভিড় জমান। অর্জন করেন রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। হাইকিং, রক ক্লাইম্বিং, সাইক্লিং করার সুযোগ রয়েছে। কী ভাবছেন? ইয়েলাগিরি যাবেন? নিশ্চিন্তে সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন।
কীভাবে যাবেন?
আকাশপথে যাওয়া যায়। নিকটতম অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হল সালেমে, যেটি চেন্নাই যাওয়ার জন্য বিমান পরিষেবা দেয়। পরবর্তী নিকটতম বিমানবন্দরগুলো হল চেন্নাই ২১৬ কিলোমিটার দূরে এবং বেঙ্গালুরু ১৯৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দুটোই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। উভয় বিমানবন্দর থেকেই দেশের বেশিরভাগ প্রধান শহরগুলিতে অভ্যন্তরীণ বিমান এবং ব্যাঙ্কক, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ফ্রাঙ্কফুর্ট, লন্ডন ইত্যাদির আন্তর্জাতিক বিমান ছাড়ে। এই বিমানবন্দরগুলির মধ্যে যে কোনও একটি থেকে ইয়েলাগিরিতে যাবার ট্যাক্সি ভাড়া করতে পারেন বা বাসের টিকিট বুক করতে পারেন। যাওয়া যায় রেলপথেও। ইয়েলাগিরির নিকটবর্তী রেল স্টেশন হল জোলারপেট্টাই জংশন। ইয়েলাগিরি থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চেন্নাই, বেঙ্গালুরু এবং কোয়েম্বাটুর থেকে ট্রেন এবং মুম্বই, দিল্লি , পুনে এবং হায়দরাবাদ থেকে দূরপাল্লার ট্রেনগুলো জোলারপেট্টাইতে থামে। রেলওয়ে স্টেশন থেকে ইয়েলাগিরি যাওয়ার জন্য ক্যাব বা বাস পাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন?
ইয়েলাগিরিতে আছে বেশকিছু হোটেল, গেস্ট হাউস, রিসর্ট। থাকা এবং খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। তবে আগে থেকে বুকিং করে গেলেই ভাল। হঠাৎ পৌঁছলে সমস্যায় পড়তে পারেন। সঙ্গে রাখবেন ছাতা, রেইনকোট, টর্চ, ওষুধপত্র। পায়ে হেঁটে শহরটি ঘুরে দেখা যায়। ঘোরাঘুরির জন্য অটোরিকশা নিতে পারেন। স্থানীয়রা খুব হেল্পফুল। মনের ভাষা পড়ে নিতে পারলে মুখের ভাষা কোনও সমস্যা হবে না। এখানকার খাবার দারুণ সুস্বাদু। কফিও যথেষ্ট সুস্বাদু। সবমিলিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছুটি কাটানোর আদর্শ স্থান ইয়েলাগিরি। কমপক্ষে তিনদিন সময় নিয়ে যাবেন। এখানকার নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ দূর করে দেবে শরীর ও মনের ক্লান্তি।