বসন্ত দিনে বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে? যেতে ইচ্ছে করছে দূরে কোথাও? আপনার জন্য আদর্শ জায়গা হতে পারে তীর্থন উপত্যকা (Tirthan Valley)। হিমাচলপ্রদেশের কুল্লু জেলার অন্তর্গত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। ছোট্ট জায়গা৷ কিন্তু দেখলে মনপ্রাণ জুড়িয়ে যাবে৷ বিশেষ করে প্রকৃতির প্রতি যদি বিশেষ দুর্বলতা থাকে৷ চারদিকে সুবিস্তৃত হিমালয়ের অংশ৷ মাঝখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে তীর্থন নদী৷ নদীর নামেই নামাঙ্কিত উপত্যকা৷ এই নদী হান্সকুন্ডের হিমবাহী ঝরনা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। নদীর পাশে রয়েছে তীর্থন শহর। শীতকালে বরফের চাদরে ঢাকা থাকে গোটা উপত্যকা৷ বসন্তে পুরোপুরি হলুদ৷
তীর্থন উপত্যকাকে বলা হয় ভারতীয় ট্রেকিং সার্কিটের অন্যতম হিডেন জেম বা হিমাচলের বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট। এই উপত্যকা থেকেই শুরু হয়েছে ভারতের অন্যতম নতুন ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট গ্রেট হিমালয়ান ন্যাশনাল পার্ক বা বৃহৎ হিমালয় জাতীয় উদ্যান অঞ্চল। একটা সময় পর্যন্ত খুব বেশি মানুষের আনাগোনা ছিল না। তবে গত কয়েক বছরে পর্যটকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তার অন্যতম কারণ আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। প্রতি সিজনেই পর্যটকরা নতুন নতুন স্পট ঘোরার সুযোগ পান। তীর্থন নদীর পার-বরাবর তীর্থন উপত্যকা এবং লার্জিং গ্রাম। উভয়েই রিভারসাইড রিট্রিট হলিডের জন্য বিখ্যাত। পর্যটকরা এখানে পাবেন স্থানীয় ট্রাউট ফিশিং ফার্ম থেকে জ্যান্ত ট্রাউট ফার্ম কিনে খাওয়ার সুযোগ। লার্জিং গ্রামের ট্রাউটের খ্যাতি বর্তমানে ভারত জোড়া। খাদ্যরসিকদের জন্যে এই সুযোগ হারিয়ে ফেলা কোনওভাবেই উচিত নয়। গেলে অবশ্যই ট্রাই করবেন।
লার্জিং গ্রামেরই এক প্রান্তে এগিয়ে গেলে দেখতে পাওয়া যায় একটি বিরাট বড় পাথরখণ্ড, যা আকারে আয়তনে এবং রূপে দেখতে অবিকল মানুষের মুখাবয়বের মতো। প্রশস্ত কপাল, টিকালো নাক, সুগঠিত থুতনি, সবমিলিয়ে যেন পাশ থেকে দেখতে পাওয়া এক সুপুরুষ মানুষের প্রোফাইল ভিউ। এই আশ্চর্য মানুষমুখী পাথর খণ্ডের পিছনে কিন্তু মানুষের কোনও হাত নেই। এটা সম্পূর্ণ প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার ফল। গত কয়েক বছরে এই মূর্তির ফটো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পর্যটকরা দেখার জন্য ছোটেন। গুগল ম্যাপে স্ট্যাচু অফ লার্জিং নামে এই মূর্তিটি বিখ্যাত। ক্রমেই এই অঞ্চলে ফোটোগ্রাফার এবং ট্র্যাভেল ব্লগারদের ভিড় বেড়ে চলেছে। যদিও প্রকৃতিবিদরা সাবধান করেছেন পর্যটকদের। কারণ এই অঞ্চলে অ্যাকসিডেন্ট হওয়ার এবং পাহাড়ি রাস্তায় ওপর থেকে আলগা পাথর খসে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা। তাই যাওয়ার আগে সুরক্ষা বিষয়ক সাবধানবাণীগুলো মাথায় রাখা উচিত।
আরও পড়ুন- কৃষক আন্দোলন রুখতে ফের দমননীতি বিজেপির
নদীর বরাবর পাহাড়ের গা বেয়ে এঁকেবেঁকে উঠতে উঠতে হঠাৎ করেই পৌঁছে যাওয়া যায় মেঘে ঢাকা পর্বতচূড়াগুলোর খুব কাছে। ঘন পাইন আর কনিফেরাস গাছের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায় আপনমনে। অপার শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়। বার্ড ওয়াচার বা পক্ষীপ্রেমীদের জন্যে দারুণ জায়গা। দেখা মেলে নানা রকমের পাখির। জঙ্গলে আছে বন্যপশুও।
একটু এগিয়ে জালরি পাস থেকে ৬ কিলোমিটার মতো গেলে খুঁজে পাবেন পাহাড়ের বুকে লুকিয়ে থাকা সেরোলসার লেক, যার স্ফটিকস্বচ্ছ নীল জলে প্রতিফলিত হয় নীল আকাশ এবং ঘন সবুজ পাইন বনের রূপের ছটা। পাশেই রয়েছে বুদ্ধিনাগিন দেবীর মন্দির। হিমাচলের উপকথা অনুযায়ী এই দেবী ৬০ জন নাগ-দেবতার জননী। যাওয়া যায় পরাশর লেকেও। এই অঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণ চোখের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অপরূপ জলপ্রপাতগুলো। সেগুলোর খোঁজে ট্রেক করতে বেরিয়ে পড়া যায়। তার জন্য বন-বিভাগ থেকে অনুমতিপত্র নিতে হয়। যেতে পারেন খড়লি পহির উদ্দ্যেশে। ভাগ্য সহায় থাকলে দেখা পেতে পারেন বিখ্যাত মোনাল পাখিদের, তাদের নিজস্ব বাসস্থানে।
তীর্থন উপত্যকায় (Tirthan Valley) অ্যাঙ্গেলিং বা শখের মৎস্যশিকারে অংশগ্রহণ করা যায়। শীতল খরস্রোতা জলে দেখা যায় প্রচুর পরিমাণে রেইনবো এবং ব্রাউন ট্রাউট মাছের সম্ভার। এখানকার জলের জীববৈচিত্র্যের কারণে সরকারের পক্ষ থেকে অঞ্চলটিকে বায়োস্ফিয়ার হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। নাকচ করা হয়েছে হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্টের প্রস্তাব। তবে বনবিভাগ থেকে সাময়িক অনুমতিপত্র সংগ্রহ করে পর্যটকরা মন খুলে ট্রাউট ফিশিংয়ে মনঃসংযোগ করতে পারেন। সবমিলিয়ে তীর্থন উপত্যকা ভ্রমণ মনের মধ্যে অফুরান আনন্দ সঞ্চার করবে। দেরি না করে সপরিবার চটপট বেরিয়ে পড়ুন।
কীভাবে যাবেন?
কুলু থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তীর্থন উপত্যকা (Tirthan Valley)৷ দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে হিমাচল প্রদেশ সরকারি পরিবহণের বাস চলাচল করে৷ চাইলে গাড়ি ভাড়া করেও যাওয়া যায়। ট্রেনে গেলে নামতে হবে কালকা, চণ্ডীগড় অথবা জলন্ধর স্টেশনে৷
কোথায় থাকবেন?
প্রকৃতির মাঝে থাকা যায়। তার জন্য বিলাসিতা ত্যাগ করতে হবে৷ তেমন কোনও বড় হোটেল বা কটেজ নেই৷ তবে কয়েকটি হোমস্টে রয়েছে। সেখানে থাকতে পারেন। ক্যাম্প খাটিয়েও থাকা যায়।