উইলিয়াম শেক্সপিয়রের কালজয়ী ট্র্যাজেডি ‘ওথেলো’। নাটকটির মূল নাম ‘দ্য ট্র্যাজেডি অফ ওথেলো, দ্য মুর অফ ভেনিস’। অনুবাদে ‘ভেনিসের মুর ওথেলোর বিয়োগান্ত নাটক’। মনে করা হয়, ১৬০৩ সালে শেক্সপিয়র নাটকটি রচনা করেন। আজ থেকে প্রায় ৪২০ বছর আগে। সিনথিওর কাহিনি উন ক্যাপিট্যানো মোরো অবলম্বনে। নাটকের দুটি প্রধান চরিত্র ভেনেসীয় বাহিনির মুর সেনানায়ক ওথেলো এবং তাঁর বিশ্বাসঘাতক অধস্তন সেনানায়ক ইয়াগো। বর্ণবিদ্বেষ, প্রেম, ঈর্ষা, বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতিশোধ ও অনুশোচনার মতো বহু বিচিত্র ও চিরকালীন বিষয়বস্তুর প্রেক্ষাপটে রচিত ‘ওথেলো’ বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বহু দেশের পেশাদার ও সামাজিক নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হয়েছে। আজও হচ্ছে। এই নাটক অবলম্বনে তৈরি হয়েছে একাধিক সিনেমাও। সমাদৃত হয়েছে। ক্লাস এবং মাসের মধ্যে।
আমাদের দেশে ও রাজ্যে ‘ওথেলো’ মঞ্চস্থ হয়েছে বহুবার। বিভিন্ন নাট্যদলের উদ্যোগে। কখনও সরাসরি মূল নাটক, কখনও ছায়া অবলম্বনে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মূল কাহিনি অপরিবর্তিত রেখে বদলানো হয়েছে নাম। বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। হাওড়া শহরের উল্লেখযোগ্য নাটকের দল শিব মুখোপাধ্যায়ের ‘নটধা’ও মঞ্চস্থ করেছে এই ক্লাসিক নাটক। ২০১৬ সালে। বাংলা নাট্যরূপ দিয়েছিলেন পরিচালক তথা অভিনেতা অর্ণ মুখোপাধ্যায়। নাটকটির নাম ‘অথৈ’ (Athhoi)। মুখ্য তিন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অর্ণ মুখোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য এবং তূর্ণা দাশ।
এইবার সেই বহুচর্চিত নাটক সিনেমার আকারে আসতে চলছে বড়পর্দায়। অভিনয় করেছেন অর্ণ মুখোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সোহিনী সরকার। অভিজ্ঞ মুখের পাশাপাশি দেখা যাবে একঝাঁক নতুন মুখ। কিছুদিন আগেই সামনে এসেছে ট্রেলার। উচ্চপ্রশংসিত হয়েছে। ট্রেলার প্রকাশ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ছবির কুশীলবেরা। অভিনয় ছাড়াও এই ছবির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টরের দায়িত্বে রয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। নাটকের মতোই ছবিটি পরিচালনা করেছেন অর্ণ মুখোপাধ্যায়। এটাই তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি। অর্ণ এবং অনির্বাণের বন্ধুত্বের সূচনা রবীন্দ্র ভারতীতে। একটা সময় একসঙ্গে চুটিয়ে নাটক করেছেন। এবার সিনেমা।
ছবিতে ড. অথৈ (Athhoi) লোধ অর্থাৎ ওথেলোর চরিত্রে দেখা যাবে অর্ণকে। ওথেলো দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, একজন বড় মনের মানুষ। বীর, অসীম সাহসী। প্রেমিক মন তাঁর। ভালবাসার কাঙাল। প্রেম পেতে ভালবাসেন। ভালবাসেন প্রেম দিতেও। এই চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন অর্ণ, সেটা ট্রেলার দেখেই বোঝা যায়। বদলেছেন নিজের লুক। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ‘অথৈ’ হল ভালবাসার একটি শ্রম, যা সফল হতে বহু বছর লেগেছে। ট্রেলারের মাধ্যমে চেয়েছি মানুষের আবেগের গভীরে যেতে। ছবির মাধ্যমে আমরা গভীর আবেগ এবং তার প্রতিফলন জাগিয়ে তুলতে চাই।
আরও পড়ুন- ডোভালই ফের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে
ছবিতে ওথেলোর স্ত্রী এবং ব্রাবানশিওর কন্যা ডেসডিমোনার নামকরণ করা হয়েছে দিয়া। বুদ্ধিমতী, স্পষ্টবাদী এবং আন্তরিক এক নারী। চিরন্তন ভালবাসার প্রতীক। অভিনয় করেছেন সোহিনী। তিনি বলেছেন, দিয়া চরিত্রে অভিনয় করা আমার কাছে একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতা। চরিত্রটি আমাকে মানুষের স্থিতিস্থাপকতা এবং দুর্বলতার গভীরতা অন্বেষণ করার সুযোগ দিয়েছে।
মূল নাটকের ইয়াগো চরিত্রটি সিনেমায় হয়েছে গোগো। ফুটিয়ে তুলেছেন অনির্বাণ। সম্পূর্ণ রহস্যময় একটি চরিত্র। আলো আছে, কালো আছে। এই যুবকের মন সহজ-সরল পথে হাঁটে না। অথৈয়ের বন্ধু সে। দুজনের বন্ধুত্বের মধ্যে জন্ম নেয় মস্ত জটিলতা। নৈতিকতার নাটকে গোগো নৃশংসতার মূর্ত প্রতীককে জনসমক্ষে তুলে ধরে। ‘দ্য ডার্ক নাইট’-এর জোকারের চরিত্রের ছায়া খুঁজে পাওয়া যাবে তাঁর চরিত্রে। নেতিবাচক চরিত্রটি নিয়ে যথেষ্ট উচ্ছ্বসিত অভিনেতা। সম্প্রতি নিজের লুকও পালটে ফেলেছেন। তিনি বলেছেন, শুরু থেকেই পরিষ্কার ছিলাম কীভাবে এই শেক্সপিয়রীয় জগৎ তৈরি করা যায়। প্রতিটি শট বিভাজন অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে করা হয়েছে। সমস্তকিছু পূর্বপরিকল্পিত ছিল। আমাদের দল প্রি-প্রোডাকশন থেকে পোস্ট-প্রোডাকশন পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। মুক্তির দিন যতই এগিয়ে আসছে, ততই উত্তেজনার পারদ চড়ছে। নার্ভাস আছি। তবে, ভাল কিছুই হবে, আশা রাখি।
ছবির গল্প বলা হয়েছে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে। এসভিএফ এন্টারটেইনমেন্ট ও জিও স্টুডিওস-এর ব্যানারে নির্মিত ‘অথৈ’ (Athhoi) প্রযোজনা করেছেন শ্রীকান্ত মোহতা, মহেন্দ্র সোনি অভিষেক দাগা ও জ্যোতি দেশপান্ডে। ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ছবির শ্যুটিং। কনকনে শীতের মধ্যে দৃশ্য গ্রহণ হয়েছে ইনডোর এবং আউটডোরে। সুরারোপ করেছেন শুভদীপ গুহ, চিত্রগ্রাহক সৌমিক হালদার, সম্পাদনায় সংলাপ ভৌমিক। রাজ্যের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি পাবে আজ। শেক্সপিয়রের ট্র্যাজেডির প্রতি গভীর আগ্রহ থাকলে নির্দ্বিধায় দেখা যেতে পারে। বড়পর্দায় এই সময়ের দুই দাপুটে অভিনেতা অর্ণ এবং অনির্বাণের দ্বৈরথ আশা করি হতাশ করবে না।