এবার আপনার মন চাইছে একটু ছুটি। তাই তো? কিন্তু এই বাজারে আপনার একসঙ্গে ১৫ দিনের ছুটি পাওয়া মুশকিল। তাই ছোট ট্রিপ করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সেই কথা মাথায় রেখেই আপনাদের আজ বেশ কয়েকটি জায়গার কথা বলব, যেখানে আপনি মাত্র ৩ দিনের জন্য ঘুরে আসতে পারবেন।
পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতেই তো যাচ্ছেন। তাই যদি একটু নিরিবিলি জায়গা হয় তাহলে মন্দ হয় না। আর সেটাও যদি হয় কটেজে থেকে। হ্যাঁ, এই সবই আপনি পাবেন খরিবিলে। কলকাতা থেকে ২৩৫ কিলোমিটার আর দিঘা থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে ওড়িশায় এই পর্যটন কেন্দ্রটি (Kharibil)। সুবর্ণরেখা নদীর ধারে এই জায়গায় আপনি কিন্তু আপনার মনের আনন্দে সময় কাটাতে পারবেন।
কী কী করতে পারবেন আপনি যদি শুধু সারাদিন কটেজে (Kharibil Cottage) বসে থাকতে চান—সেটা যেমন করতে পারবেন, তেমনই সামনে ঘুরতে যেতে চাইলে তাও পারবেন। আপনি যেতে পারেন চন্দনেশ্বর শিব মন্দির আর তার সঙ্গে ভুশণ্ডেশ্বর শিব মন্দির। বলা হয় ভুশণ্ডেশ্বর শিবলিঙ্গ নাকি ভারতের সবচেয়ে বড় শিবলিঙ্গ। এর পাশাপাশি আপনারা উদয়পুর সি বিচ ঘুরতে যেতে পারেন যা এখান থেকে ১৩ কিলোমিটার মতো দূরে। আর বিকেলে বোট ভাড়া করে সুবর্ণরেখার বিচে গিয়ে ঘুরে আসতে কিন্তু একদম ভুলবেন না।
আগেই বলেছি, এটি দিঘার খুবই কাছে। তাই আপনি আগে দিঘা গিয়ে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে খরিবিল যেতেই পারেন। বাস, অটো সব পাবেন। আর এখানে থাকার কটেজ, যেখানে থাকবেন সেখানে আতিথেয়তার কোনও কমতি হবে না। আপনি সামুদ্রিক কোনও খাবার খেতে চাইলে আপনাকে করে দেওয়া হবে।
আমাদের প্রিয় শিব ঠাকুরের মন্দির চন্দনেশ্বর মন্দির। এই মন্দির দিঘা থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে এবং এটি ওড়িশার বালেশ্বর জেলার অন্তর্ভুক্ত।
চন্দনেশ্বরের মন্দির সম্পর্কে অনেক দিনের পুরনো ইতিহাস আছে। কী সেই ইতিহাস? ওই অঞ্চলের বনে এক মহিলা রোজ গরু চরাতে যেতেন আার তার গরুর দুধ নাকি কেউ চুরি করে খেয়ে নিত । মহিলাটি রোজ সন্ধ্যার সময় দেখতেন গরুর মধ্যে আর কোনও দুধ নেই। তিনি একদিন চুপি চুপি গিয়ে দেখলেন দুধ গরু থেকে আপনা আপনি মাটিতে ঝরে পড়ছে। সবাইকে ওই কথা জানানোর পর সবাই যখন মাটি খুঁড়ে দেখলেন ওখানে মাটির অনেক গভীরে একটি শিব ঠাকুরের লিঙ্গ বর্তমান। আর চারদিক থেকে চন্দনের সুগন্ধ ভেসে আসছে। যার কারণে বাবার নাম হয় চন্দনেশ্বর। ছোট হলেও মন্দিরটি খুবই সুন্দর। মন্দিরের ভিতরে ঢুকলে আপনার মন আধ্যাত্মিক অনুভূতি পাবে।
আরও পড়ুন: ভরসাপূর্তির এগারো বছর, আমূল পরিবর্তনের পথে বাংলা
চন্দনেশ্বরের মন্দিরের সামনে একটি জলাশয় আছে। এই জলাশয়ের নাম নীলপুকুর। কথিত আছে এই পুকুরের জল নাকি পাশে থাকা সুবর্ণরেখা নদীর সঙ্গে যুক্ত। ভক্তরা ঠাকুরের দর্শন এর জন্য যাওয়ার আগে এই পুকুরে হাতমুখ ধুয়ে তারপরে মন্দিরে প্রবেশ করেন। চন্দনেশ্বর মন্দিরে আপনারা ভারতবর্ষের পুরনো শিল্পকার্যের কিছুটা নিদর্শন পাবেন। মন্দিরে বিভিন্ন তিথিতে নানারকম মেলা বসে ।
আপনারা গিয়ে ভোলে বাবার মন্দিরে পুজো দিতে পারেন। চন্দনেশ্বরের সবথেকে কাছের রেল স্টেশন হল দিঘা। আর যদি আপনারা আপনারা ওড়িশা (Odisha, Kharibil) থেকে আসতে চান তাহলে আপনাদের জলেশ্বরে নামতে হবে। জলেশ্বর থেকে বাস কিংবা অটোরিকশা নিয়ে নিতে পারেন। দিঘা থেকে আসতে হলে দিঘা রেলওয়ে স্টেশনের সামনে থেকে টোটো কিংবা অটো ভাড়া নিয়ে আসতে পারেন। চন্দনেশ্বরের মন্দির ছাড়াও এখানে খুব সুন্দর সুন্দর সমুদ্রসৈকত রয়েছে। যেগুলির মধ্যে দিঘা উদয়পুর তালসারি অন্যতম।
আমি আপনাদের বলব সমগ্র এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ শিবলিঙ্গের কথা যা এই বাংলার খুব কাছেই অবস্থিত| একটি পুরাণকাহিনি অনুসারে ত্রেতা যুগে লঙ্কার রাজা রাবণ মহাদেবের কাছ থেকে উপহার হিসেবে একটি শিবলিঙ্গ পান কিন্তু রাবণ যখন তাঁর পুষ্পক রথে করে এই শিবলিঙ্গটি নিয়ে চলে যেতে দেখেন তখন ক্ষুব্ধ হন দেবতারা এবং ঠিক করেন এই শিবলিঙ্গ নিয়ে যাওয়া আটকাতে হবে৷ দেবতারা ওই শিবলিঙ্গ চাইলেও তা দিতে রাজি হন না রাবণ, ফলে এই টানাপোড়েনে রাবণ তখন পথের মধ্যেই কোনও এক স্থানে ওই লিঙ্গটি নামিয়ে রাখেন৷ কিন্তু তারপর আবার ওই লিঙ্গটি তুলতে গেলে এত ভারী লাগে যে রাবণ তা তুলতে পারেন না, বহু চেষ্টার পরেও ব্যর্থ হয়ে শূন্য হাতে রাবণকে লঙ্কায় ফিরতে হয় এবং সেই বিশাল ও অপূর্ব সুন্দর শিবলিঙ্গটি চিরকালের জন্যে রয়ে যায় মর্ত্যৈ মনে করা হয় কৈলাসে এই শিবলিঙ্গটি দেবী পার্বতী পুজো করতেন।
এই স্থানটি হল বাংলা থেকে অল্প দুরে, দিঘার কাছে ওড়িশার বালাসোরে এবং এখানেই ভুশণ্ডেশ্বর শিবমন্দিরে সেই শিবলিঙ্গ স্বমহিমায় বিরাজমান। শিবলিঙ্গটি মাটি থেকে ১২ ফুট উঁচু এবং পরিধি ১৪ ফুট। ভুশণ্ডেশ্বর শিবলিঙ্গটির অর্ধেক আসলে দেখা যায় যা মাটির উপর রয়েছে বাকি অর্ধেক রয়েছে মাটির তলায়।
এবার নিরিবিলি এক সৈকতের খোঁজ দেব আজ। এই জায়গাটিও দিঘার খুব কাছেই। তবে দিঘার মতো বিপুল লোকসমাগম এখানে হয় না। এই ডেস্টিনেশন এখনও খুব বেশি পরিচিত হয়ে ওঠেনি পর্যটকদের কাছে। তাই সমুদ্রের তীরে একান্ত সময় কাটানোর জন্য আদর্শ পরিবেশ রয়েছে এখানে।
দিঘা থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে ওড়িশার সীমান্ত লাগোয়া উদয়পুর সৈকত। নিউ দিঘা এবং তালসারির মাঝখানে এর অবস্থান। মাইলের পর মাইল বিস্তৃত বেলাভূমি। ভিড়ভাট্টা থেকে অনেক দূরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে হারিয়ে যাবেন আপনি। দূষণমুক্ত বাতাসে আপনার শহুরে ক্লান্ত মন সতেজ হয়ে উঠবে। এখানকার সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্যও অনবদ্য। উদয়পুরকে ফটোগ্রাফারদের স্বর্গরাজ্যও বলা যেতে পারে। বিশাল বিশাল ঝাউগাছের সারি মুগ্ধ করবে আপনাকে। ছাতার নিচে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারবেন। এখানকার স্থানীয় মানুষরাও খুব আন্তরিক। সমুদ্র থেকে ধরা তাজা মাছ আপনি চেখে নিতে পারবেন খাবারের দোকানে। অসাধারণ স্বাদ। তৃষ্ণা মেটানোর জন্য কম দামে ডাব পাওয়া যায়।
যাঁরা রোমাঞ্চ পছন্দ করেন, তাঁদেরও ভাল লাগবে উদয়পুর। সৈকতে হেঁটে হেটে যদি ক্লান্তি আসে, স্পিড বোট, ব্যানানা বোট কিংবা সি বাইকে চড়ে নেমে পড়তে পারেন সমুদ্রে। রোম্যান্টিক ছুটি কাটানোর ইচ্ছে থাকলে অবসর মিললেই এই খাজানা সৈকতে চলে যান।
তাহলে আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়ুন তিনদিনের জন্য। মনকে সতেজ করে ফের ফিরুন দৈনন্দিন জীবনের ছন্দে।