কথামুখ
১৯৫৪ সাল। অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল এবং ক্যালকাটা মোটর স্পোর্টসের যৌথ উদ্যোগে কলকাতা থেকে জামশেদপুর একটা মোটর র্যা লির আয়োজন করা হয়েছিল। তা শুরু হয়েছিল ময়দানে মনুমেন্টের নিচে থেকে। শুরুটুকু দেখার জন্য শহরের এলিট সোসাইটির অনেকেই হাজির। এলিটদের পাশাপাশি বেশ কিছু সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি হাজির ছিলেন । তাঁদের এই কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন এক রমণী। সবাই ভাবছেন এক বাঙালি রমণীর পক্ষে এই র্যা লিতে জেতা কি সম্ভব? তিনি হয়তো কোলাঘাট পর্যন্ত যাবেন তারপর বিফল হয়ে ফিরে আসবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সেই রমণীই এই র্যা লিতে চ্যাম্পিয়ন হলেন। পরেরদিন সংবাদপত্রগুলোতে ওই বিজয়ী রমণীর ছবি দিয়ে বিস্তারিত খবর প্রকাশিত হল। আপনারা হয়তো ভাবছেন ওই রমণীটি কে? তিনি হলেন মঞ্জু দে (Manju Dey)। ইতিপূর্বে তাঁর অভিনীত কয়েকটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। ফলে এই সফল অভিনেত্রী সেদিনের যে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন, তা বলাই বাহুল্য।
জীবনকথা
মঞ্জু দে-র (Manju Dey) জন্ম ১৯২৬ সালের ৭ মে বহরমপুরে তাঁর মামার বাড়িতে। বাবা অমরেন্দ্রনাথ মিত্র, মা কমলা মিত্র। তাঁদের বড় আদরের সন্তান ছিলেন তিনি। বহরমপুর, পাটনা মিলিয়ে তাঁর স্কুলজীবন। লেখাপড়ায় বরাবরই ব্রিলিয়ান্ট, সঙ্গে খেলাধুলাতেও। কলকাতার আশুতোষ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। কলেজে পড়াকালীন আচমকা সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব আসে মঞ্জু দে-র কাছে। সেটা ১৯৪৫ সাল। দেশপ্রিয় পার্কে নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজ-এর বীর সৈনিকদের সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যাঁদের মধ্যে ছিলেন মেজর জেনারেল শাহনওয়াজ খান, লেফটেন্যান্ট সায়গল, রানি ঝাঁসি বাহিনীর ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী স্বামীনাথন প্রমুখ। সভায় বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ভলান্টিয়ার কোর গঠন করে, সামরিক সজ্জায় সজ্জিত হয়ে, সামরিক কায়দায় গার্ড অফ অনার দেবে আজাদ হিন্দ ফৌজ-এর বীর সৈনিকদের। ভলান্টিয়ার কোরের নেতৃত্ব পড়েছিল মঞ্জু মিত্রের উপর। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত পরিচালক সুশীল মজুমদার। তিনি তাঁর নির্মীয়মাণ হিন্দি ছবি ‘সিপাহী কা সপ্না’তে অভিনয়ের সুযোগ দেন মঞ্জু মিত্রকে ছোট্ট চরিত্রে। ছবিটা জমেনি। চলেওনি ভাল করে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলায় এমএ পড়াকালীন তাঁর বিয়ে হয়ে যায় দেবব্রত দে-র সঙ্গে ১৯৪৮ সালে।
অভিনয় জীবন শুরু
বিবাহের সূত্র ধরে অসাধারণ এক শ্বশুরমশাই পেয়েছিলেন। বিয়ের পর অনুভব করলেন ওঁর জীবন থেকে সামথিং ইজ মিসিং। জীবনে কিছু হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হয়নি। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল তাঁর তো অভিনেত্রী হওয়ার কথা ছিল। শ্বশুরমশাই অধ্যাপক ক্ষেমেন্দ্রচন্দ্র বউমা-অন্তপ্রাণ। তাঁকে গিয়ে জানালেন তিনি অভিনয় করতে চান। শ্বশুরমশাই অনুমতি দিতে দ্বিধা করলেন না। তিনি দেখা করলেন পরিচালক হেমেন গুপ্তর সঙ্গে । হেমেন গুপ্ত মুহূর্তে চিনতে পারলেন ভবিষ্যতের সফল অভিনেত্রীকে। পরিচালক তখন নির্মীয়মাণ ৪২ ছবিতে তাঁকে নায়িকা চরিত্রের জন্য নির্বাচন করলেন। ১৯৪৯ সালে শুটিং শুরু হলেও মুক্তি পেল ১৯৫১ সালের ৯ অগাস্ট। বাম্পার হিট ছবি। ইন্ডিয়া ফিল্ম ল্যাবরেটরিতে ওই ছবির প্রোজেকশন দেখে তিন পরিচালক তাঁকে তাঁদের ছবিতে মনোনীত করলেন। ছবি তিনটি হল দেবকীকুমার বসু পরিচালিত ‘রত্নদীপ’, অজয় কর পরিচালিত ‘জিঘাংসা’ এবং প্রদীপকুমারের দাদা কালিদাস বটব্যাল পরিচালিত ‘পলাতকা’। এ-ছাড়াও নরেশ মিত্র তাঁকে নিলেন ‘নিয়তি’ ছবিতে। সব ক’টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫১ সালে। এরপর তাঁকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।
অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা
অসংখ্য ছবিতে কাজ করেননি ঠিকই তবে বাংলার বহু বিখ্যাত পরিচালকের ছবিতে তিনি কাজ করেছেন। কোন কোন পরিচালকের একাধিক ছবিতে তিনি কাজ করেছেন? তপন সিংহের কথাই ধরা যাক। তপন সিংহ পরিচালিত অঙ্কুশ, উপহার, কাবুলিওয়ালা, লৌহকপাট ছবিতেই তিনি প্রধান ভূমিকায়। অজয় কর শুধু জিঘাংসা ছবিতেই নয়, বড়দিদি, পরেশ, গৃহপ্রবেশ, প্রভাতের রং ছবিগুলিতে তিনি মঞ্জু দে-কে নিয়েছিলেন। এ-ছাড়া তিনি কাজ করেছেন মৃণাল সেন (নীল আকাশের নিচে), সুশীল মজুমদার (মর্মবাণী), নরেশ মিত্র (বউ ঠাকুরানীর হাট ), সলিল সেন (নাগিনী কন্যার কাহিনী), চিত্ত বসু (মন্ত্রশক্তি), হরিদাস ভট্টাচার্য (নববিধান), নীরেন লাহিড়ী (শুভদা, কল্যাণী), সুধীর মুখোপাধ্যায় (সিঁদুর ), মানু সেন (পুনর্মিলন), কালীপ্রসাদ ঘোষ (কার পাপে), গুরু বাগচী (তীরভূমি), অর্ধেন্দু চট্টোপাধ্যায় (শিবশক্তি), মঙ্গল চক্রবর্তী (আলেয়ার আলো) যাত্রিক (কাচের স্বর্গ), অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় (অজান্তে অর্পিতা), তরুণ মজুমদার (পথভোলা) প্রমুখ পরিচালকের ছবিতে তিনি কাজ করেছেন। বিকাশ রায়কে যেমন পেয়েছেন সহ-অভিনেতা হিসেবে একেবারে গোড়া থেকেই। যেমন বিকাশ রায় পরিচালিত অর্ধাঙ্গিনী, সূর্যমুখী, কেরী সাহেবের মুন্সী প্রভৃতি ছবিতে তিনি মুখ্য ভূমিকাগুলিতে যোগদান করেছিলেন। শিল্পী জীবনে শুধু বিকাশ রায় তাঁর বিপরীতে রয়েছেন এমনটি নয়, তিনি বিপরীতে পেয়েছেন প্রদীপ কুমার, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, অসিতবরণ প্রমুখ শিল্পীকে। উত্তমকুমারকে বিপরীতে পেয়েছেন বউ ঠাকুরানীর হাট, পুনর্মিলন, উপহার প্রভৃতি ছবিতে।
আরও পড়ুন-বহুমুখী প্রতিভার অধিকারিণী জয়া মিত্র
নির্দেশনার জগতে আত্মপ্রকাশ
বেহড় হল চম্বলের গিরিপথ। এখানকার ডাকাত সর্দার হলেন সুলতান সিং। সেই সুলতানের নজরে পড়লেন মোরেনার বিখ্যাত বাঈজি। তাঁকে তুলে নিয়ে এলেন সুলতান তাঁর গভীর আস্তানায় রানি করে রাখবেন বলে। পুতলিবাইয়ের নতুন জীবন শুরু হল। এদের সঙ্গে থাকতে থাকতে পুতলি দেখলেন খুন রক্ত মারপিট। এরই মধ্যে জন্মাল সন্তান তান্নো। সন্তানকে তার দিদার কাছে রেখে এসে মন বসে না পুতলির। পুলিশ চারদিকে যে জাল ফেলেছিল তাতে ধরা পড়ল পুতলি। পুতলির অভিশপ্ত জীবনকথা লেখা থাকবে পুলিশের রেকর্ডে, হিংস্র নৃশংসতার কাহিনি বলে, কিন্তু সত্যি কি তাই? এমন রোমহর্ষক কাহিনি লিখেছিলেন তরুণ কুমার ভাদুড়ী। উপন্যাসটির নাম ‘অভিশপ্ত চম্বল’। এই দুরূহ কাহিনির চিত্ররূপ দেওয়ার কথা ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে যেকোনও পরিচালক অন্তত দশবার ভাববেন। কিন্তু সাহস করে সেই কাজে এগিয়ে এলেন মঞ্জু দে। তিনি ‘অভিশপ্ত চম্বল’ ছবির (১৯৬৭) প্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও পুতলিবাই চরিত্রের শিল্পী। বিপরীতে সুলতানের চরিত্রে প্রদীপ কুমার। বিরাট ইউনিট নিয়ে চম্বলের লোকেশনে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শুটিং করে এসেছিলেন। সে-কাজটা অবশ্য সহজে হয়নি। মধ্যপ্রদেশের পুলিশ প্রধানকে চিঠি লিখে অনুমতি চেয়েছিলেন তিনি। উত্তর এল পুরুষ পরিচালককে শুটিং করার পারমিশন দেওয়া হয় নয়তো মহিলাকে দেওয়া হবে কেন? উত্তরে মঞ্জু দে জানিয়েছিলেন তিনি তাঁর স্পোর্টস ক্যারিয়ার আর ফিল্ম ক্যারিয়ারের সম্পূর্ণ বায়োডেটা যেখানে পাঠিয়েছেন, সেখানে অসুবিধাটা কোথায়? পুলিশ প্রধান জবাবে সামনাসামনি দেখা করার কথা বললেন মঞ্জু দে-কে। পুলিশ প্রধান তাঁর সঙ্গে আলাপ করে এত সন্তুষ্ট হয়েছিলেন যে, শুটিংয়ের পারমিশন দিয়েছিলেন তিনি, সেই সঙ্গে পুলিশ থেকে শুরু করে মিলিটারি পর্যন্ত দিয়ে সাহায্য করেছিলেন মঞ্জু দে-কে (Manju Dey)। ছবির টাইটেল কার্ডের কৃতজ্ঞতা স্বীকারে সেকথা উল্লেখ করেছেন তিনি। অভিশপ্ত চম্বল অবশ্য তাঁর প্রথম পরিচালিত ছবি নয়, ইতিপূর্বে ১৯৬৪ সালে তাঁর নির্দেশনার জগতে আত্মপ্রকাশ। ছবির নাম ‘স্বর্গ হতে বিদায়’। প্রচুর শিল্পীর ভিড়। প্রতিপক্ষ দু’জন অর্থাৎ দিলীপ মুখোপাধ্যায় এবং বিকাশ রায় দেখালেন অভিনয় কাকে বলে। সঙ্গে ছিলেন মাধবী মুখোপাধ্যায়, অনুভা গুপ্তা, পাহাড়ি সান্যাল, সুমিতা সান্যাল প্রমুখ শিল্পী। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘আমি চাই ছোট্ট একটি বাসা’ সেসময় জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। দর্শক-সমালোচকধন্য এই ছবি। মঞ্জু দে-র শেষ পরিচালিত ছবি ‘শজারুর কাঁটা’ (১৯৭৪)। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ পর্বের গল্প। এখানেও তিনি অভিনয় করেননি। এই ছবি অবশ্য দর্শক আনুকূল্য পায়নি। শিল্পী নির্বাচন (শ্যামল ঘোষাল, বাসবী নন্দী, সতীন্দ্র ভট্টাচার্য) আকর্ষণ করেনি দর্শকদের।
বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর আত্মপ্রকাশ
পেশাদারি মঞ্চের ডাক উপেক্ষা করতে পারেননি মঞ্জু দে (Manju Dey)। ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত স্টার থিয়েটারে তাপসী নাটকে আধুনিকা মায়ের চরিত্রে তিনি অভিনয় করলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই নাটকের মাধ্যমে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম পেশাদারি রঙ্গমঞ্চে যোগ দিয়েছিলেন। বিশ্বরূপা থিয়েটারে দীর্ঘদিন ধরে চলা শঙ্করের ‘চৌরঙ্গী’ নাটকে তিনি মিসেস পাকড়াশি চরিত্রে দুরন্ত অভিনয় করলেন। সঙ্গে পেয়েছিলেন বিকাশ রায়, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, তরুণকুমার প্রমুখ শিল্পীদের। মিনার্ভা থিয়েটারে ‘ব্যভিচার’ নাটকেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। যাত্রাপালার ডাকেও সাড়া দিয়েছিলেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৬ সালে নিউ বীণাপাণি অপেরার ‘পসারিণী’তে প্রথম যাত্রাভিনয়। জনতা অপেরার ‘ফুলনদেবী’ পালায় তিনি দর্শকদের মাতালেন। ক্যালকাটা অপেরার ‘অভিশপ্ত চম্বল’ পালাটির তিনি পরিচালনা করলেন এবং পুতলিবাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করলেন। বর্ণপরিচয় যাত্রা সংস্থা ডাকে তিনি করেছিলেন ‘বিশ্ববরেণ্য ইন্দিরা’ যাত্রাপালাটি। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা। দিল্লিতে সে-খবর পৌঁছল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শীলা কল নিজে উদ্যোগী হয়ে এই যাত্রাপালা পরিবেশনের ব্যবস্থা করেছিলেন বিশিষ্ট মানুষজনদের সামনে। আকাশবাণী কলকাতার বেশ কয়েকটি নাটকে তিনি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
ব্যক্তিগত সম্পর্ক
বরাবর মঞ্জু দে-র (Manju Dey) অভিনয় আমার কাছে আকর্ষণীয়। বাল্যকালে তাঁর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম গুরু বাগচী পরিচালিত ‘তীরভৃমি’ ছবিতে (১৯৬৯)। ছবিতে বিকাশ রায় মঞ্জু দে-দম্পতির একমাত্র পুত্র গৌতমের চরিত্রে আমি। ইনডোর শুটিংয়ের সময় একজন শিল্পীকে তেমন ভাবে বোঝা যায় না, কিন্তু আউটডোর শুটিংয়ের সময় অনেকদিন একসঙ্গে থাকলে শিল্পীকে অনেক ভাল করে চেনা যায়।
‘তীরভূমি’ ছবির আউটডোর হয়েছিল ওয়াল্টেয়ারে (বর্তমান নাম ভাইজাক)। সেখানে দেখলাম তিনি আমার ব্যাপারে কতখানি মনোযোগী এবং আন্তরিক। তাঁর একদিনের শুটিংয়ের কথা চিরদিন মনে থাকবে। যেদিন মঞ্জু দে জানতে পারছেন তাঁর স্বামী বিদেশে থাকাকালীন একবার বিয়ে করেছিলেন, সেই সন্তান ছবির নায়িকা মাধবী মুখোপাধ্যায়, সেখানে আমাকে জড়িয়ে ধরে যে এক্সপ্রেশন তিনি হোল্ড করেছিলেন, তা এখনও স্মৃতিপটে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
অন্যান্য গুণপনা
১৯৫৯ সালে কমনওয়েলথ মোটরিং কনফারেন্সে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি বাঙালি মেয়ে হিসেবে এই সম্মান সম্ভবত প্রথম অর্জন করেছিলেন। ওই সময়ই সাক্ষাৎ করেছিলেন রানি এলিজাবেথের সঙ্গে। ১৯৫২ সালে দিল্লিতে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি। একই কাজ করেছিলেন ১৯৬২ সালেও। পাশাপাশি ১৯৬২ সালে জাকার্তায় ইন্ডিয়ান ফিলম ফেস্টিভ্যালে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁর শেষ অভিনীত ছবি তরুণ মজুমদার পরিচালিত পথ ভোলা’ (১৯৮৬)। তপন সিংহের প্রথম তিনটি ছবির তিনি-সহ প্রযোজক ছিলেন; অঙ্কুশ, উপহার এবং টনসিল। শেষের ছবিটিতে তিনি অবশ্য অভিনয় করেননি।
শেষ জীবনের কথা
এত কর্মব্যস্ত মানুষটি শেষের দিকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। খানিকটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন। ঘটনাচক্রে তিনি পরিচিত হয়েছিলেন ভবানীপুরের ইন্দ্র রায় রোডে শুভাশ্রমের প্রধান স্বামী শুভানন্দের সঙ্গে। ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে শুভানন্দের কাছ থেকে দীক্ষা নিলেন। সেই থেকে গুরুদেব তাঁর জীবনের সব। ধর্মচর্চায় মনোনিবেশ করেছিলেন। নিঃসন্তান মঞ্জু দে (Manju Dey) আমাদের ছেড়ে চলে যান ১৯৮৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। তাঁর প্রয়াণে আমরা হারালাম স্বর্ণযুগের এক দাপুটে শিল্পীকে, যিনি আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন বেশ কিছু স্মরণীয় ছায়াছবি।