উচ্চমাধ্যমিক ছাত্রছাত্রীদের (Post Higher Secondary Examination) উদ্দেশ্যে প্রথমেই বলব, এই পরীক্ষা তোমাদের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট (Post Higher Secondary Examination)। এই পর্যায়ের অর্জিত জ্ঞান ঠিক করে দেবে ভবিষ্যতের গতিবিধি। এই সময় অত্যন্ত সচেতনভাবে, চোখ খোলা রেখে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বিভিন্ন বিষয়ে যাঁরা পড়াশোনা করেছেন— জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে নিজের লক্ষ্য স্থির করে নিতে হবে। এই সময়ের সামান্য ভুল ভবিষ্যৎ জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকে বিঘ্নিত করতে পারে। আমরা তা কখনও হতে দিতে পারি না। আর এই জন্যই আমাদের এই আলোচনা। আলোচনার দিকগুলি আমরা জেনারেল পড়াশোনার থেকে শুরু করি। কেননা, আমাদের ছাত্রছাত্রীদের ৮০% জেনারেল লাইন নিয়ে পড়াশোনা (Post Higher Secondary Examination) করছে। অর্থাৎ প্রধানত সায়েন্স, কমার্স, আর্টস— এই তিনটি বিষয় নিয়ে পড়ছে। দেখা যাক উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর (Post Higher Secondary Examination) এই বিষয়গুলি নিয়ে পড়াশোনার কী কী দিক আছে এবং সেই পড়াশোনাগুলো করার মাধ্যমে আমরা কোন কোন জীবিকাতে প্রবেশ করতে পারি এবং জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারি। বিষয়ভিত্তিক কোন কোন কোর্স (যেমন বিজ্ঞান বা সায়েন্স, কলা বিভাগ বা হিউম্যানিটিস এবং বাণিজ্য বিভাগ বা কমার্স) আছে যা আমাদের জীবিকার সন্ধান দেয়। সেগুলো শুরু করার আগে প্রথমে আমরা সামগ্রিকভাবে একেকটা বিভাগ ধরে দেখে নিই কী কী কোর্স আমরা পড়তে পারি বা কোন পথে আমরা জীবিকার সন্ধানে অগ্রসর হতে পারি। আজ তৃতীয় পর্ব
আরও পড়ুন: দুই ভিন্ন স্বাদের বাংলা ছবির রমরমা
দর্শন (Philosophy)-এর ক্ষেত্রে
১) উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর অতিক্রম এরপর বিএড করে স্কুল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সুযোগ রয়েছে।
২) নেট/সেট পরীক্ষা দিয়ে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অধ্যাপনা করার সুযোগ রয়েছে।
৩) যদি কেউ ডব্লিউবিসিএস বা আইএস পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করতে চায় তাহলে সেখানে ফিলোসফির একটা আলাদা পেপার থাকে যেখানে দর্শনের ছাত্রছাত্রীরা অনেক সুবিধা পান।
৪) বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার জন্য লজিক্যাল রিজনিং থাকে সেখানে ফিলোসফি থাকলে অনেকটাই সুবিধা হয়।
৫) বহুজাতিক সংস্থাগুলোতে ইথিকস অ্যাডভাইজার থাকে এবং একমাত্র দর্শনের ছাত্রছাত্রীরা সেখানে এপ্লাই করতে পারে। এখানে
৬) বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা আছে সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বা পরামর্শদাতা হিসেবে দর্শনের ছাত্রছাত্রীরা নিয়োগপত্র পান।
ফিলোজফির উল্লেখযোগ্য কলেজ/ ইউনিভার্সিটি গুলি হল
যাদবপুর ইউনিভার্সিটি, বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, রবীন্দ্রভারতী ইউনিভার্সিটি, ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি, বর্ধমান ইউনিভার্সিটি, রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি, কল্যাণী ইউনিভার্সিটি, বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ বেঙ্গল, কাজী নজরুল ইউনিভার্সিটি, কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা ইউনিভার্সিটি, সংস্কৃত কলেজ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ গৌড়বঙ্গ, ডায়মন্ডহারবার ওমেন্স ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি।
কলেজের মধ্যে রয়েছে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ, আশুতোষ কলেজ, বিদ্যাসাগর কলেজ, লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, সরোজিনী নাইডু কলেজ, ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটি, সাউথ ক্যালকাটা গার্লস কলেজ, দেশবন্ধু কলেজ, সোনারপুর মহাবিদ্যালয়, দমদম মতিঝিল কলেজ, বারাসাত গভমেন্ট কলেজ, মৃণালিনী দত্ত মহাবিদ্যালয়, মগরাহাট কলেজ ,সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, সিস্টার নিবেদিতা গভর্মেন্ট জেনারেল ডিগ্রি কলেজ ইত্যাদি।
শারীর শিক্ষা (Physical Education) এর ক্ষেত্রে
১) বিপিএড করে স্কুল সার্ভিস কমিশন পরীক্ষা দিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে চাকরি পাওয়া যায়।
২) এমপিএড করে কলেজ সার্ভিস কমিশন পরীক্ষা দিয়ে পিএইচডি করে গবেষণামূলক কাজে অংশগ্রহণ করা যেতে পারে।
৩) এমপিএড করে নেট/ সেট পরীক্ষা দিয়ে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার কাজে যুক্ত হওয়া যায়।
৪) বিপিএড করে বিভিন্ন খেলার কোচ হিসাবে চাকুরী পাওয়া যেতে পারে।
৫) বড় বড় কোম্পানির স্পোর্টস বোর্ড থাকে। এই সব কোম্পানিতে পরামর্শদাতা হিসেবে বা কোচ হিসেবে নিয়োগপত্র পাওয়া যেতে পারে।
৬) খেলার জাজ বা রেফারি হিসেবে বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক নিয়োগ পত্র পাওয়া যেতে পারে।
যে সকল কলেজ-এ শারীর শিক্ষা পড়ানো হয় তা নিচে তার কিছু নাম দেওয়া। হল
পাঁশকুড়া বনমালী কলেজ, মহিষাদল গার্লস কলেজ, প্রভাতকুমার কলেজ , তারকেশ্বর ডিগ্রি কলেজ, পোস্ট গ্রাজুয়েট গভমেন্ট ইনস্টিটিউট ফর ফিজিক্যাল এডুকেশন (হাবড়া), অঘোরকামিনী প্রকাশচন্দ্র মহাবিদ্যালয়, কানপুর হরিদাস নন্দী মহাবিদ্যালয়, বক্সিরহাট মহাবিদ্যালয় (কোচবিহার), রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ মহাবিদ্যালয় (উত্তরদিনাজপুর), বীরপাড়া কলেজ (জলপাইগুড়ি), নিখিলবঙ্গ শিক্ষণ মহাবিদ্যালয় (বাঁকুড়া), সেবা ভারতী মহাবিদ্যালয়, মেদিনীপুর রাজা রামমোহন রায় মহাবিদ্যালয়, হুগলি গৌরমোহন রায় কলেজ, ইউনিয়ন ট্রেনিং কলেজ, মুর্শিদাবাদ বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয় (মেদিনীপুর), নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজ (নদীয়া), শ্রীরামপুর গার্লস কলেজ (শ্রীরামপুর), চাপড়া বাঙালঝি মহাবিদ্যালয়, মডেল বিপিএড কলেজ (জলপাইগুড়ি), হরিশ্চন্দ্রপুর কলেজ (মালদা), যোগানন্দ সৎসঙ্গ পালপাড়া মহাবিদ্যালয় (মেদিনীপুর), সুভাষচন্দ্র বোস সেন্টেনারি কলেজ (মুর্শিদাবাদ), বহরমপুর কলেজ(মুর্শিদাবাদ), রাণীগঞ্জ গার্লস পলাশি কলেজ (নদীয়া), চন্দ্রপুর কলেজ শ্যামসুন্দর কলেজ (বর্ধমান), চন্দ্রকোনা বিদ্যাসাগর মহাবিদ্যালয় (মেদিনীপুর), ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি মহাবিদ্যালয় (বর্ধমান) ইত্যাদি।
পুষ্টিবিজ্ঞান (Nutrition)-এর ক্ষেত্রে
১) উচ্চমাধ্যমিকের পর নিউট্রিশন নিয়ে পড়াশোনা করলে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর বিএড করে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগদান করা যায়।
২) ক্রিয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ডায়েটিশিয়ানের চাকরি পাওয়া যায়।
৩) Hospital/Clinic-এও ডায়েটিশিয়ান হিসাবে চাকরি পাওয়া যায়।
৪) জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের বিভিন্ন সংস্থাতে খাদ্যবিজ্ঞানী হিসেবে যোগদানের সুযোগ থাকে।
৫) মানুষের খাদ্য-অভ্যাসের পরামর্শ নিতে ডায়েটিশিয়ানের শরণাপন্ন হতে হয়। তাই বিভিন্ন হসপিটালে ডায়েটিশিয়ান হিসেবে যেমন নিয়োগপত্র পেতে পারে তেমনি বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিগুলিতে Nutritionist হিসাবে চাকরির সুযোগ থাকে।
পুষ্টিবিজ্ঞান (Nutrition) নিয়ে পড়ার জন্য বা উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে গেলে কোন জায়গায় পড়া যায় তা নিচে উল্লেখ করা হল:
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলি হল
বিহারীলাল কলেজ অফ গার্হস্থ্য বিজ্ঞান— UG থেকে PhD। এ-ছাড়া আছে মণীন্দ্র, জয়পুরিয়া, বিদ্যাসাগর, গোখলে (ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন) ইত্যাদি।
দেশের কিছু মাস আছে, এনআইএন— হায়দরাবাদ,এসএনডিটি মুনবাই, লেডি আরউইন—দিল্লি, পাঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, অবিনাশিলিংম— তামিলনাড়ু, ক্রাইস্ট কলেজ-কর্নাটক।
কলকাতায় আছে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ, ডাব্লুবিইউএইচএস। যার পুষ্টিবিজ্ঞানের জন্য বিভিন্ন পাঠ্যক্রম রয়েছে এবং জিডি বিড়লা ইনস্টিটিউট, জে ইউ।