বোলপুর শহরের অদূরে নানুরের মোহনপুর, লাভপুর ইত্যাদি জায়গা জুড়ে শুটিং শুরু হয়েছে পরিচালক ব্রাত্য বসুর নতুন ছবি ‘শেকড়’-এর (Shekor)। ‘হুব্বা’র মতো ক্রাইম থ্রিলার ঘরানার পর এবার সাহিত্যধর্মী সামাজিক, পারিবারিক ভালবাসার, মাটির, সম্পর্কের, সম্প্রীতির গল্প বুনলেন ব্রাত্য বসু। আর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া এতগুলো বিষয় একসঙ্গে ক’জন সাহিত্যিকের ভাণ্ডারেই বা মিলবে! বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত দুটি ছোট গল্প ‘দ্রবময়ীর কাশীবাস’ এবং ‘দাদু’ অবলম্বনে এই ছবির কাঠামো তৈরি হয়েছে। এখানে তিনটে প্রজন্মের গল্প বলবেন পরিচালক। ছবির প্রধান চরিত্রে রয়েছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন সীমা বিশ্বাস। পরিচালক ব্রাত্য বসু তাঁর ছবি ‘শেকড়’ সম্পর্কে বললেন, ‘‘আমি মনে করি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্য চিরন্তন সেই কারণে আমি তাঁর দুটো গল্পকে এই সময়ে অর্থাৎ ২০২৫ সালে নিয়ে এসেছি। দুটো কাঠামোকে ভেঙেচুরে একত্রে মেলানো তারপর এই সময়ের আঙ্গিকে গড়ে তোলা হয়েছে। রেসিপি দুটো প্রাচীন কিন্তু খাবারটা এই সময়ের। খুব চ্যালেঞ্জিং পুরো বিষয়টা। নতুন চরিত্র, নতুন নতুন সিচুয়েশন আনা হয়েছে এবং দুটো গল্পকে এক করে তোলা হয়েছে। ছবিতে তিনটে প্রজন্ম রয়েছে। একজন বৃদ্ধা এবং একজন বৃদ্ধ, যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন সীমা বিশ্বাস এবং লোকনাথ দে। তাঁদের কেন্দ্র করে তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম। বাবা-ছেলের সম্পর্ক। কী গল্প তা আর পুরোপুরি বলছি না তবে এই গল্প ভালবাসার এবং প্রেমের। যেখানে প্রকৃতি, নারী, পুরুষ সব মিশে রয়েছে।
এখন এই যে সারা পৃথিবী জুড়ে একটা ক্যাকোফনি চলছে, ট্রোলিং বাড়ছে, ভায়োলেন্স বাড়ছে, এই যে সামাজিক চিৎকার চলছে, সেটা মানুষের আত্মাকে কোথাও ক্ষইয়ে দিচ্ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে একটা মানবিকতার গল্প বলতে চেয়েছি। বিভূতিভূষণের লেখায় অসম্ভব মানবিক আবেদন থাকে। ছবিতে দেখাতে চেয়েছি এটাই যে, সব খারাপ, হিংস্রতা দূরে গিয়ে একটা সময় মানুষের ভালবাসা জয়ী হয়।’’
এই ছবির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পরিচালক অরিন্দম শীলের ‘কর্পূর’-এর পর প্রখ্যাত রাজনীতিক, সাহিত্যিক এবং অভিনেতা কুণাল ঘোষের এটি দ্বিতীয় ছবি। ‘শেকড়’-এ (Shekor) আবার তাঁকে একটি বিশেষ চরিত্রে দেখতে পাওয়া যাবে। ‘কর্পূর’-এও তিনি ছিলেন রাজনৈতিক নেতার চরিত্রে। আবার এখানেও তিনি সাজিরহাটের দাপুটে নেতা গোপাল ঘোষ। যাঁকে সবাই মেজদা বলে ডাকে। এই প্রসঙ্গে অভিনেতা কুণাল ঘোষ বললেন, ‘‘প্রথম থেকেই আমি সিনেমা-থিয়েটারের ভক্ত৷ গল্পটা জব্বর বানিয়েছে ব্রাত্য। বিভূতিভূষণের দুটো গল্প মিলিয়ে একটা সমকালীন স্কেচ তৈরি করা হয়েছে। এখনই এর থেকে বেশি কিছু বলছি না। আশা করি এই ছবি দর্শকদের ভাল লাগবে।’’

আরও পড়ুন-হাই কোর্টে খারিজ গদ্দারের রক্ষাকবচ, সরকার-দলের বক্তব্যকেই মান্যতা: মত তৃণমূলের
এই ছবির অন্যতম অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী সম্পর্কে পরিচালক ব্রাত্য বসু বললেন, ‘‘চঞ্চল চৌধুরী খুবই ভাল অভিনেতা। টেকনিক্যালিটির সঙ্গে ইমোশন, লেন্স— সবটাই বোঝে৷ ওপার বাংলার খুব নামকরা অভিনেতা, এপার বাংলাতেও জনপ্রিয়। তাই আমি আশাবাদী৷’’
এই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন ব্রাত্য বসু, সংলাপ লিখেছেন স্বয়ং পরিচালকই। তাঁকে সংলাপে সাহায্য করেছেন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। ছবির অন্যতম অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী আবেগমথিত হয়ে জানালেন, ‘‘অনেক আগে থেকে ব্রাত্যদাকে চিনি। প্রথমে আমি তাঁর অভিনয়ের ভক্ত। ওঁর পরিচালনার কাজও দেখেছি। উনি আমাকে একবার একটা অনুষ্ঠানে দেখা হওয়ায় বলেছিলেন আমাকে নিয়ে কাজ করতে চান। আমি সত্যি খুব উৎসাহী ছিলাম এবং ‘শেকড়’ (Shekor) ছবি দিয়ে সেটা সম্ভব হল। এটা অনেক আনন্দের এবং ভাললাগার। ‘শেকড়’ ছবির বিস্তৃতিটা আমার কাছে অনেক বেশি কারণ প্রত্যেকটা মানুষেরই একটা ‘শেকড়’ থাকে। কোনও মানুষেরই সেটা ভুলে যাওয়া উচিত না। আমি যেখানে জন্মেছি, যাঁদের সান্নিধ্যে বড় হয়েছি, আজ এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি তাঁদের অস্বীকার করা যায় না। বোলপুর, শান্তিনিকেতন— যেখানে এই ছবির শুটিং হচ্ছে সেখানে আসার বহুদিনের স্বপ্ন ছিল যা আজ পূরণ হল। আমি সৌভাগ্যবান যে শুধু এলামই না এখানে শুটিংও করলাম। যাঁদের সঙ্গে কাজ করছি তাঁদের সবার শেকড় হল মঞ্চ। ফলে ভীষণভাবে বুঝতে পারছি একে অপরকে। দুর্দান্ত একটা টিম ওয়ার্ক চলছে। ব্রাত্যদার সঙ্গে আমার ভাবনার জায়গাটায় খুব মিল পাচ্ছি যেটা আরও ভাল লাগছে।’’
ছবিতে চঞ্চল চৌধুরীর চরিত্রের নাম ইন্দ্র। সে কারখানায় কাজ করে। তার বাবা স্মৃতিভ্রংশের অসুখে ভুগছেন। ইন্দ্রর বাবার ভূমিকায় অভিনয় করছেন মঞ্চের নামকরা অভিনেতা লোকনাথ দে। তিনি বড়পর্দাতেও যথেষ্ট পরিচিত মুখ। তাঁকে এখানে প্রস্থেটিক মেকআপে দেখা যাবে। মেকআপ করেছেন সোমনাথ কুণ্ডু। এই প্রসঙ্গে লোকনাথ দে বললেন, ‘‘বাড়ির দেওয়ালে আটকে থাকার মতো একটা চরিত্র আমার এই ছবিতে। মাটির খুব কাছের। মঞ্চে প্রস্থেটিক মেকআপের সুযোগ নেই, খরচসাপেক্ষ তাই করা হয়ে ওঠে না তবে বড়পর্দায় এটা সম্ভব হয়। খুব ইন্টারেস্টিং লাগছে এই কাজটা করে। সোমনাথদা যখন সাজিয়ে তুলছে সেটাই দেখছি অবাক হয়ে। এছাড়াও এই ছবিতে রয়েছেন পৌলোমী বসু, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, ঋদ্ধি সেন, অঙ্গনা রায়, অনসূয়া মজুমদার, অনুজয় চট্টোপাধ্যায় এবং আরেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নারায়ণ গোস্বামী।
ছবির প্রযোজনায় ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন এবং উল্কি এন্টারটেনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড।


