মণীশ কীর্তনিয়া: যে দলের ‘রিজার্ভ বেঞ্চ’ যত শক্তিশালী সেই দলও ততটাই শক্তিশালী। আবহমান কাল ধরে ফুটবল জগতে এটি চিরসত্য বলেই ধরা হয়। শুধু ফুটবল কেন, যে কোনও খেলার ক্ষেত্রেই এই কথাটি একশো শতাংশ খাঁটি। রাজনীতির ময়দানেও শক্তিশালী ‘রিজার্ভ বেঞ্চ’ প্রয়োজন। প্রজন্মান্তরে নতুন নেতা-নেত্রী উঠে আসাটা দরকার। সময়ের দাবি মেনেই তারাই একটা সময় দলের-সমাজের-দেশের কান্ডারি হয়ে ওঠে। ৮ মার্চ বুধবার নারীদিবস উদযাপনের ধুম উঠেছিল গোটা দেশ জুড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীদের নিজস্ব দিনযাপনের হাজারো শুভেচ্ছা। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে মহিলাদের ‘সশক্তীকরণের’ জন্য ভারতবর্ষের সব রাজনৈতিক দল কি সমান ভাবে আগ্রহী? উত্তর হল— না। এদিক থেকে নিশ্চিতভাবে এগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে মহিলা হয়েও একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে একেবারে নিচের স্তর থেকে শীর্ষে উঠে এসেছেন। তাঁর হাতে রাজ্যের ভার। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক সামলেছেন। সাতবারের সাংসদ। তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী। এ-পথ বড় সহজ ছিল না, এখনও নেই। তাই নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সবসময় মহিলাদের গুরুত্ব দিয়েছেন। ওপরে তুলে এনেছেন। সংসদে-বিধানসভায়-মন্ত্রিসভায়-দলীয় সংগঠনে-ত্রি-স্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থায়— সব জায়গাতেই মহিলাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। যা অন্য কোনও রাজনৈতিক দলে নেই। মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভানেত্রী ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য নিজেই একটা উদাহরণ। তিনি বললেন, আমাদের দেশের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসই একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় মহিলাদের নমিনেশন দিয়ে থাকে। ভারতবর্ষের কোনও দলের এই পরিসংখ্যান নেই। বাম-কংগ্রেস মুখে এত প্রগতিশীলতার কথা বললেও এই দুটি দলও এই পরিমাণে ‘মহিলা এমপাওয়ারমেন্ট’-এ জোর দেয়নি। এ-রাজ্যের বামেরা দশকের পর দশক গুটিকয়েক মহিলাকে ওপরে উঠতে দিয়েছে৷ কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্ব মহিলা (TMC Women Cell) হলেও তারাও মহিলাদের সশক্তীকরণের ক্ষেত্রে দশ-বারো শতাংশও করেনি। আর বিজেপির কথা তো বাদই দিলাম। মূলত গোবলয়ের পার্টি হিসেবে উঠে আসা বিজেপি আগে তো এসবে বিশ্বাসই করত না। সাম্প্রতিক কালে স্মৃতি ইরানি-নির্মলা সীতারামনদের মতো হাতেগোনা দু-এজনকে দেখা যায়। শতাংশের বিচারে বাম-কংগ্রেস বা বিজেপি কেউই তৃণমূল কংগ্রেসের ধারে-কাছে নেই। এদিক থেকে অবশ্যই তৃণমূল কংগ্রেসের ‘রিজার্ভ বেঞ্চ’ শক্তিশালী। এখন যারা স্বমহিমায় বঙ্গ-রাজনীতির ময়দানে দাপিয়ে খেলছেন, তাঁরা ছাড়াও আরও কয়েকটা প্রজন্ম রিজার্ভ বেঞ্চে ‘রেডি’। এখানেই বাকি রাজনৈতিক দলগুলির থেকে কয়েক যোজন এগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস। এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংসদ মালা রায়, দোলা সেন, উত্তর-পূর্বের সুস্মিতা দেব, ডাঃ কাকলি ঘোষদস্তিদার, শতাব্দী রায়, অপরূপা পোদ্দার, মহুয়া মৈত্র, মৌসম নুর— এরকম একাধিক মহিলা তৃণমূল সাংসদ রয়েছেন যাঁরা নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। আবার চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ডাঃ শশী পাঁজারা রাজ্য মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদে। রয়েছেন অসীমা পাত্র। আবার সংগঠনে জলপাইগুড়ির জেলা সভাপতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলাচ্ছেন মহুয়া গোপ, দার্জিলিং জেলার সভাপতি পাপিয়া ঘোষ। বিধায়ক লাভলি মৈত্র, নন্দীগ্রামের শহিদের মা ফিরোজা বিবি। গানের জগৎ থেকে একেবারে আনকোরা হিসেবে তুলে এনে বিধায়ক করেছেন অদিতি মুন্সিকে। এ-ছাড়াও বাংলা জুড়ে রয়েছেন হাজারো কাউন্সিলর ও মহিলা পঞ্চায়েত প্রধানরা। কলকাতা লাগোয়া বিধাননগর কর্পোরেশনের মেয়র কৃষ্ণ চক্রবর্তী দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে তাঁর টিম নিয়ে সল্টলেকের মতো জায়গা সামলাচ্ছেন। জঙ্গলকন্যা বিধায়ক বিরবাহা হাঁসদা রয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি নামের উল্লেখ করলেও গোটা রাজ্য জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC Women Cell) সাংগঠনিক পরিকাঠামো ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে মহিলাদের দাপুটে উপস্থিতি রয়েছে। এমনটা আর কোনও রাজনৈতিক দলে খুঁজে পাওয়া যাবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মহিলাদের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু করেছেন। পরিবারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড মহিলার নামে। সবুজসাথীর সাইকেল। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী— এরকম একাধিক সরকারি প্রকল্প শুধুমাত্র মহিলাদের ডেডিকেট করে হয়েছে। এ-ছাড়া মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশে তৈরি হয়েছে স্পেশাল টিম ‘দ্য উইনার্স’। কলকাতা বা রাজ্য পুলিশেও প্রতি বছর নিয়ম করে মহিলা পুলিশ নেওয়া হয়। রাজ্যে বেশ কয়েকজন দক্ষ মহিলা অফিসার রয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনেও একাধিক দফতরের সচিব-তার বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন মহিলারাই। ফলে শুধু রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নয় সার্বিকভাবেই সমাজের সবক্ষেত্রে মহিলাদের সশক্তী…