অরূপ বিশ্বাস: এসএফআইয়ের মার খেয়েই প্রথম ছাত্র রাজনীতির পাঠ নিয়েছিলাম নিউ আলিপুর কলেজে। আর সিপিএমের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই প্রথম মার খাওয়া এবং ‘লাল-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে’ শপথ নেওয়া। তারই সূত্র ধরে বছরখানেক বাদে বামেদের সঙ্গে কলেজে-কলেজে ছাত্র রাজনীতির তীব্র লড়াইয়ের মধ্যেই ১৯৮৩ সালে কংগ্রেসের এআইসিসি অধিবেশন বসেছিল কলকাতায়। সেই অধিবেশনে অ্যাকোমোডেশন সাব কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ছাত্রনেতা থেকে একাধিকবার বাংলার নানা গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী হওয়া প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এনএসইউআই-এর সমস্ত ছাত্ররা ছিলেন আমাদের নিউ আলিপুর কলেজে। সেই কারণেই সুব্রতদা আমায় অ্যাকোমোডেশন সাব কমিটির কো-অর্ডিনেটর করেছিলেন। এটাই আমার জীবনের প্রথম পদ পাওয়া। একটা ছবি-সহ আইডেন্টিটি কার্ড করে দিয়েছিলেন সুব্রতদা। আজও সযত্নে সংরক্ষিত আছে আমার কাছে। এই অধিবেশনের কাজের সূত্রেই নিজাম প্যালেসে প্রথম জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় এবং প্রথম আলাপ থেকেই তাঁকে নেত্রী বলে মেনে নিয়েছিলাম। সেই শুরু, তখনই মনে মনে শপথ নিয়েছিলাম, আর দেহে যতক্ষণ প্রাণ আছে ততক্ষণ তিনিই আমার একমাত্র নেত্রী থাকবেন। সেদিন যিনি ছিলেন আমাদের ছাত্র-নেত্রী, আর তারপর বহু ত্যাগ-সংগ্রাম ও লড়াই পেরিয়ে আজ তিনি তিন-তিনবারের বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, চতুর্থবার শপথ নেওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আরও পড়ুন-আমরা শক্তি আমরা বল আমরা ছাত্রদল
একটা ছোট ঘটনা লেখার শুরুতে বলে রাখি। সেদিন এআইসিসি অধিবেশনে কাজের সূত্রে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে যাওয়া এবং চোখধাঁধানো সেই সর্বভারতীয় সম্মেলন দেখা। সেখানেই প্রথম কাছ থেকে দেখি এশিয়ার মুক্তিসূর্য ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে। তখন অবশ্য নিরাপত্তার এত বাড়াবাড়ি ছিল না। বস্তুত এই কারণেই আমার সুযোগ হয়েছিল সামনে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে ইন্দিরা গান্ধীকে প্রণাম করার। ওটাই ছিল প্রথম জীবনের পরম প্রাপ্তি।
ছাত্র পরিষদ করতাম বলে, আমাদের নিউ আলিপুরের দুর্গাপুর কলোনির বাড়িতে অনেকবার চড়াও হয়েছে সিপিএমের হার্মাদরা। লজ্জার কথা হল, এই হার্মাদদের হাত থেকে রেহাই পাননি আমার স্বর্গত মা-ও। তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি, কারণ ততদিনে এলাকার সাধারণ মানুষ আমার সঙ্গে চলে এসেছিলেন। কিন্তু বাবার শখের বেহালা পর্ণশ্রীর বাড়ি সিপিএম হামলা চালিয়ে ভেঙে তছনছ করে দিয়েছিল। পরে পরিস্থিতির জেরে জলের দরে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন বাবা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ তৈরির পর যখন জেলায় জেলায় ঘুরে সংগঠন করতে গিয়েছি তখনও দফায় দফায় সিপিএমের হামলার শিকার হয়েছি। পুরুলিয়ায় গেছি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভা করতে। স্টেশনে আমায় নিতে এসেছিল জয় নামের একজন ছাত্রনেতা, খুব সপ্রতিভ ছেলে ছিল তখন ওই জেলায়। কিন্তু স্টেশনে সিপিএমের লোকেরা আমায় আক্রমণ করবে বলে ট্রেনের কামরার গেটের মুখে দাঁড়িয়ে ছিল। জয়রা একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি পরিস্থিতি বুঝতে পেরে উল্টোদিক থেকে লাইনে লাফ দিয়ে নেমে পড়ি। শেষে লাইন ধরে হেঁটে ওঁদের চোখে ধুলো দিয়ে ঠিক মিটিং স্পটে পৌঁছে যাই। বাম জমানায় সংগঠন করতে গিয়ে এমন অজস্র অত্যােচারের শিকার হয়েছি, সেই সমস্ত বিভীষিকাময় দিনগুলো মনে পড়লে এখন ‘শূন্য’ হওয়া সিপিএমকে দেখে করুণা হয়। এমনকী যে রাস্তা দিয়ে কোথাও যেতাম সেই রাস্তা দিয়ে ফিরতে পারতাম না। এমন অনেক ঘটনা আছে ছাত্র রাজনীতির পথ ধরে চলা জীবনে, যা পাতার পর পাতা, দিনের পর দিন লিখে শেষ করা যাবে না।
আরও পড়ুন-টিএমসিপি ছাত্রসমাজের হৃৎস্পন্দন
ছাত্রজীবন শুরু ইংরেজি মাধ্যমে, হস্টেলে থেকে ‘দ্য মাল্টিভারসিটি’ স্কুলে। মাধ্যামিক পাশ করে কলকাতায় এলাম। ভর্তি হলাম নিউ আলিপুর কলেজের একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে। সালটা ১৯৮২। কো-এডুকেশন কলেজ। কলেজের ছাত্র সংসদে তখন এসএফআই ক্ষমতায়। কলেজে তখন প্রতিদিনই সমস্ত নামকরা সিপিএম নেতা থেকে শুরু করে তাবড় এসএফআই নেতাদের দাপট চলছে। লাল পার্টির মিছিল-মিটিং হলে কলেজ থেকে ঝেঁটিয়ে সবাইকে যেতে বাধ্য করা হত। এমনই একটা মিছিলে একদিন যাওয়ার জন্য ক্লাসে এসে এসএফআই নেতারা বলে গেল। কিন্তু তখন আমার মায়ের নির্দেশ মাথায় ঘুরছিল। মা বলেছিলেন, ‘‘কলেজে পড়ছ, ক্লাস রুম, লাইব্রেরি রুম আর কমনরুম ছাড়া অন্য কোথাও যাবে না। কলেজ মানে শুধু পড়াশোনা।’’ তাই আমরা ক্লাসের বন্ধুরা সবাই মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম, কেউ পরদিন এসএফআই মিছিলে যাব না। যেমন কথা, তেমনই কাজ। পরদিন কেউ লালপার্টির ঝান্ডা ধরে কোনও মিছিলে গেলাম না। একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের প্রায় সমস্ত ছেলে-মেয়ে একসাথে ক্লাস করলাম। কিন্তু তখনও জানতাম না, ভাগ্যে কী আছে? জানা ছিল না, লালপার্টির এই একটা মিছিলে না যাওয়ার প্রভাব যে সারাজীবন বইতে হবে, বদলে দেবে জীবনের চলার পথ।
মিছিল শেষে কলেজে ফিরেই এসএফআইয়ের দাদারা ক্লাসে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, কার কথায় ও কেন আমরা মিছিলে যাইনি? সবাই আমাকে দেখিয়ে দিল। আর মুহূর্তের মধ্যেই ওই দাদারা সবাই আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। শুরু হল বেধড়ক মার। মাটিতে ফেলে একদফা পেটাল। বাবা মেরিনে চাকরি করতেন। বাইরে থেকে আনা একটা সুন্দর গেঞ্জি বাবা দিয়েছিলেন। সেই গেঞ্জিটা পরা ছিল। বুকের দু’পাশে সুতোর জাল ছিল। সেই জালের ভিতর আঙুল ঢুকিয়ে ছিঁড়ে দিল কমরেডরা। বেধড়ক মার খেয়ে শরীরে যতটা ব্যথা লেগেছিল তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম বাবার দেওয়া গেঞ্জিটা ছিঁড়ে দেওয়ার ঘটনায়। দোতলা থেকে মার খেয়ে যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম তখন উপর থেকে এসএফআই করা মেয়েরা থুতু ছিটিয়ে দেয়। সিপিএমের মিছিলে না যাওয়ায় এমন অপমান সইতে হবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। আসলে তখনও পুরোপুরি বন্দেমাতরম বা ইনকিলাব-জিন্দাবাদ স্লোগানের যথার্থ মর্মাথ ভাল করে অনুধাবন করতে পারিনি। তা সত্ত্বেও সেদিন এসএফআইয়ের হাতে খুব মার খেলাম।
আরও পড়ুন-ভারোত্তোলনে বিশ্ব রেকর্ড, হাওড়ার কোয়েলকে শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর
বাড়ি ফিরতেই গেঞ্জি ছেঁড়া দেখেই মা জানতে চাইলেন, কোথায় কার সাথে মারপিট করেছি? উত্তর দিতে পারিনি? শুধু কেঁদেছিলাম। এভাবেই তিনদিন বাড়িতে বসেই কেটে গেল। গায়ে ব্যথা, মানসিক কষ্ট নিয়ে মনের ভিতরে খুব লড়াই চলল। মায়ের নির্দেশ, কলেজে শুধু পড়াশোনা করব, নাকি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জীবন বাজি রেখে লড়ব? শেষে মনের সঙ্গে যুদ্ধ করেই সিদ্ধান্ত নিলাম, সিপিএমের দাদাগিরির বিরুদ্ধে কলেজে লড়াই করব। ক্লাসে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম, কলেজ থেকে এসএফআই-কে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। সেই শুরু, মাস কয়েক পরে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে একাদশ থেকেই শ্রেণি প্রতিনিধি ভোটে লড়লাম। এবং ক্লাসের সহপাঠীদের ভালবাসায় জিতলাম। শুধু আমি নই, ওই ১৯৮২ সালের সেই সময়ে এসএফআইয়ের লাল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে ছাত্র পরিষদের দু’জন শ্রেণি প্রতিনিধি জয়ী হয়েছিলাম।
আরও পড়ুন-পর্যটনে স্বপ্নপূরণ বাংলার
সেই জয় আমাদের জেদ আরও বাড়িয়ে দিল। এরপর তিনবছর খাওয়া-ঘুম ছেড়ে এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে ঘুরে ধৈর্য ধরে, ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে মিশেই সংগঠন করেছি। ক্লাসে ক্লাসে ঘুরে লেকচারিং করেছি। আর নিটফল পেলাম ১৯৮৫ সালে লাল-সন্ত্রাস উপেক্ষা করে ছাত্র সংসদ দখল করল ছাত্র পরিষদ। আমাকে সমস্ত শ্রেণি প্রতিনিধিরা মিলে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করলেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই থেকে আজকের দিনে, টানা ৩৯ বছর নিউ আলিপুর কলেজে এসএফআইয়ের কোনও চিহ্ন নেই। ক্রমে ক্রমে কলেজের গণ্ডি ছাড়িয়ে আমায় দক্ষিণ কলকাতা জেলা ছাত্র পরিষদ, পরে প্রদেশ ছাত্র পরিষদে দায়িত্বে নিয়ে আসেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ তৈরির পর সংগঠনের প্রথমে যুগ্ম আহ্বায়ক ও পরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন জননেত্রী নানা কর্মসূচির দায়িত্ব সামলাতে পাঠালেও বলতে দ্বিধা নেই, ২৮ অগাস্ট এলেই আজও প্রাণের ভিতর সেদিনের সেই আবেগ-অনুভূতি টগবগে ফুটতে থাকে। মুহূর্তে ফিরে যাই ছাত্র-সংগ্রামের সেদিনের লড়াই ও পথে নেমে লাল-পার্টির বিরুদ্ধে মমতাদির নেতৃত্বে একের পর এক আন্দোলনের স্মৃতির সরণিতে। শুরুতে বলছিলাম, এআইসিসি অধিবেশনে প্রথমে মমতাদির সঙ্গে আলাপ হতে তাঁকেই নেত্রী মেনে নিয়েছিলাম। সেদিন থেকেই তাঁর নেতৃত্বে একের পর এক প্রথমে ছাত্র-আন্দোলন, পরে জনস্বার্থে নানা যুব-আন্দোলনে শামিল হয়েছি। মানুষকে সঙ্গে মানুষের স্বার্থে কীভাবে গণ-আন্দোলন করতে হয় সেটা ছাত্রনেত্রী মমতাদিই আমাদের সবাইকে শিখিয়েছেন। আজও তাঁর পাশে থেকে উন্নয়নের নানা পাঠ শিখছি, প্রতিদিনই তাঁর কাছ থেকে আরও শিখেই চলেছি।
ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে সংগঠনের কথা মাথায় রেখে ফার্স্ট ইয়ারে বিজ্ঞান থেকে বাণিজ্য বিভাগে চলে গেলাম। কেন? আরে নিউ আলিপুর নাইট কলেজ ছিল কমার্সের। ওখানে সংগঠন করার কেউ ছিল না। তাই সংগঠন করব বলেই উচ্চমাধ্যমিকে ভাল রেজাল্ট করা সত্ত্বেও বাড়ির অমতেই সেদিন বিজ্ঞান থেকে বাণিজ্য শাখায় ভর্তি হয়েছিলাম। যাই হোক সেদিন সংগঠনে মন দিয়েছিলাম, উদয়াস্ত মানুষের জন্য পরিশ্রম করেছি বলেই নেত্রী আমায় ২০০০ সালে কলকাতা পুরসভার ৮১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচনে প্রার্থী করেন। ভোটে জিতে নেত্রীর নির্দেশ মেনে শহরের বৃহত্তম বরো ১০ নম্বরের চেয়ারম্যাান হই। ২০০৬ সালে টালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হয়ে ভোটে জিতে বিধানসভায়। সেবার আমরা তৃণমূলের ২৯ জন বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে বিধানসভায় পা রেখেছিলাম। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য। সেই থেকে এখনও একাধিক মন্ত্রিত্ব ও রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দলেও নেত্রীর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে চলেছি। কিন্তু একটা বিষয় উপলব্ধি করেছি, মানুষের পাশে থাকলে, মানুষ সঙ্গে থাকলে কেউ তোমার কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। তবে সংগঠন করার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে উঠলে তার উন্নতি কেউ আটকাতে পারবে না। কিন্তু লিফটে করে উঠলে, সংগঠন না করে, মানুষের জন্য কাজ না করলেও একদিন হারিয়ে যাবে। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে দ্রুত পরিচিতি পেতে পারবে, কিন্তু মানুষের সঙ্গে না মিশলে মানুষকে সঙ্গে পাবে না। আর তা না হলে সমাজকর্মী হয়ে রাজনৈতিক মঞ্চে নিজেকে কোনওদিনই প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। আমার বিশ্বাস, নেত্রীর আদর্শ মাথায় রেখে ধৈর্য ধরে, সুস্থ আচরণের মধ্য দিয়ে মানুষের পাশে থাকলে সেই আগামী দিনে হবে দলের আদর্শ কর্মী। তাই কোনও পদের আশা না করে, কোনও প্রলোভনে পা না দিয়ে মন দিয়ে পড়াশোনা ও বিশ্বাস নিয়ে সবাই দল করো। ফলের আশা না করে গাছটাকে যত্ন করো, তা হলেই একদিন না একদিন সফল হবেই।
ছাত্র রাজনীতির সময়ে জীবনের ধারাপাতে জমা হওয়া অন্তত দুটো মর্মান্তিক ঘটনা বলতেই হবে। তা না হলে বাম জমানায় লাল সন্ত্রাসের ভয়াবহ অত্যাচারের কথা বোঝানো যাবে না। একবার কলেজ নির্বাচনের দিন, খবর পেলাম নিউ আলিপুর স্টেট ব্যাঙ্কের মোড়ে একটি ছেলেকে বেধড়ক মারছে এসএফআই। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেলাম, গিয়ে দেখি একটি ছাত্র পরিষদের সক্রিয় ছেলেকে ক্ষুর মারছে সিপিএমের কুখ্যাত গুন্ডারা। ছেলেটির ৬৮টি সেলাই পড়েছিল। প্রতিবাদ করতেই ওকে ছেড়ে আমার মুখে ক্ষুর চালাল। কিন্তু সরিয়ে নিলেও বাঁদিকের চোখের কোণে অনেকটা গর্ত করে কেটে গেল। গলগল করে রক্ত বের হতে থাকল। অনেকগুলি সেলাই পড়ল। তবে কোনওক্রমে চোখটা রক্ষা পেয়েছিল সেদিন। এখনও সেই ক্ষুরের ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছি। দ্বিতীয় হল, আমাদের কলেজে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী আসত বাটা, নুঙ্গি, আক্রা-সন্তোষপুর থেকে। আর একদিন কলেজে বসে মিটিং করছিলাম। আচমকা একটা ছেলে ছুটতে ছুটতে এসে খবর দিল, নুঙ্গিতে আমাদের সমর্থকদের এসএফআই মারধর করছে। কোনও কথা না ভেবেই সেদিন উল্টোদিকের বজবজমুখী ট্রেন ধরে নুঙ্গি পৌঁছে যাই। কিন্তু স্টেশনে নামতেই এসএফআইয়ের বিশাল বাহিনী আমায় ঘিরে ঘরে এত পিটিয়েছিল যে, আমি জ্ঞান হারাই। যখন জ্ঞান ফেরে দেখি, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি। মাথার কাছে দাঁড়িয়ে তৎকালীন ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি অশোক দেব। পরে জেনেছি, আমার অজ্ঞান অবস্থায় এসএফআই রেললাইনের মাঝখানে শুইয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিল। পরিস্থিতিটা এমন হত যে, রেলে কাটা পড়ে মারা গিয়েছি। কিন্তু সেদিন সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ওই রেললাইন থেকে তুলে এনে যে প্রাণ বাঁচিয়েছিল সে এখন বিধাননগরের মেয়র, কৃষ্ণা চক্রবর্তী। বাস্তব হল, কৃষ্ণাই সেদিন আমায় দ্বিতীয় জীবন দিয়েছে, না হলে কেউ মনে রাখত না। এটা আমার ছাত্র-রাজনীতির এক চরম অভিজ্ঞতা। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে একটা চরম সত্য। শিখেছি, যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে মানুষের জন্য কাজ করো, মানুষকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করো, মানুষের জন্য নেত্রীর আদর্শ মেনে সংগ্রাম করো, তা হলে সাফল্য আসবেই।
জয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ, জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়, জয় বাংলা।