প্রতিবেদন: দেশের সংবিধান রক্ষায় দৃঢ় ভূমিকা নিল শীর্ষ আদালত। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দদুটি বাদ দেওয়ার আবেদন সোমবার খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক শব্দগুলি বাতিলের অনুরোধ জানিয়ে দাখিল করা তিনটি আবেদনই খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতিরা। ১৯৭৬ সালে জাতীয় জরুরি অবস্থার সময় ৪২তম সংশোধনের মাধ্যমে এই শব্দগুলি ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় যুক্ত করা হয়েছিল। ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি পি ভি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ বলেছে যে অনুচ্ছেদ ৩৬৮ অনুসারে সংবিধানের প্রস্তাবনা সংশোধনের ক্ষমতা সংসদের রয়েছে। বিচারব্যবস্থা এনিয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।
আরও পড়ুন-আদানির শ্রীলঙ্কা বন্দর প্রকল্পে মার্কিন সংস্থার নজরদারি
শীর্ষ আদালত বলেছে, রিট পিটিশনগুলি নিয়ে আর কোনও বিস্তারিত আলোচনা বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন নেই। সংসদের সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা প্রস্তাবনাতেও প্রযোজ্য। আমরা ব্যাখ্যা করেছি যে এত বছর পর এই প্রক্রিয়াকে বাতিল করা সম্ভব নয়। সংবিধানের গৃহীত হওয়ার তারিখ সরকারের অনুচ্ছেদ ৩৬৮-এর অধীনে ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করবে না। তবে সেই সংশোধনী অবশ্যই সংবিধানের মূল কাঠামো বা ‘বেসিক স্ট্রাকচার’-এর অনুসারী হতে হবে। ভারত রাষ্ট্রের পরিচয় হিসাবে আগে থেকেই সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত ছিল সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক এবং প্রজাতান্ত্রিক এই তিনটি শব্দ। ১৯৭৬ সালে তার সঙ্গে যুক্ত হয়, ওই নতুন দু’টি শব্দ। বিজেপি জমানায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই শব্দদুটি বাদ দেওয়ার আবেদন জানিয়ে মামলা করেছিলেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী, আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় এবং বলরাম সিং। মামলাকারীদের যুক্তি ছিল, ৪২তম সংবিধান সংশোধনী আসল সংবিধানকে বিকৃত করছে। আবেদনকারীদের যুক্তি খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে সংসদকে ক্ষমতা দিয়েছে সংবিধানই। তাছাড়া এই দু’টি শব্দ এত বছর ধরে বহু বিচারবিভাগীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিতর দিয়ে গিয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ শীর্ষ আদালতের। এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট বুঝিয়ে দিয়েছে, এতদিন পর এই শব্দদুটি বাদ দেওয়ার দাবি অযৌক্তিক। ১৯৯৪ সালের এসআর বোম্মাই মামলার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এই দু’টি শব্দ সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিপন্থী নয়। গত ২২ নভেম্বর শুনানি শেষে আদালত রায় সংরক্ষিত রেখেছিল। সোমবার আর্জি খারিজ করা হয়।