প্রতিবেদন : উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন শুরু হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের মাঝেই নিজেদের স্বৈরাচারী কাজকর্মের জন্য কোণঠাসা যোগী আদিত্যনাথ সরকার। নির্বাচন চলাকালীন এবার দেশের শীর্ষ আদালতের কাছে তীব্র সমালোচিত হল যোগী সরকার। রাজ্যে বিজেপি সরকারের তুঘলকি আচরণের জন্য কড়া ভর্ৎসনা করেছেন বিচারপতিরা।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করছিল যোগী সরকার। অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ আদায়ের প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকারকে নির্দেশ দিল সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি সূর্যকান্তের বেঞ্চ উত্তরপ্রদেশ সরকারকে অবিলম্বে এই ক্ষতিপূরণ আদায় বন্ধ করার কথা জানিয়েছে। অন্যথায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে বেঞ্চ। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে নিশ্চিতভাবেই দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে বড় মাপের ধাক্কা খেল যোগী আদিত্যনাথ সরকার।
আরও পড়ুন – ফের ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারির পর্দাফাঁস, এবার মোদির রাজ্যে
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে কেন্দ্রে দ্বিতীয়বার ক্ষমতা দখলের পর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন আনে মোদি সরকার। যার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়। উত্তরপ্রদেশেও এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা বহু সরকারি সম্পত্তি-সহ অনেক কিছুরই ক্ষয়ক্ষতি করেছিল।
ওই সমস্ত ক্ষয়ক্ষতির জন্য আর্থিক জরিমানা আদায় শুরু করে যোগী সরকার। ক্ষতিপূরণ আদায়ে বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকা ব্যক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত শুরু করে। যোগী সরকারের এই তুঘলকি আচরণের প্রতিবাদ করেই সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয় একটি মামলা। সেই মামলার শুনানিতে সর্বোচ্চ আদালতের (Supreme Court) ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশ সরকার নিজেই অভিযোগকারী, বিচারক ও শাস্তিদাতার ভূমিকা পালন করছে। সরকারের উচিত অবিলম্বে এটা বন্ধ করা। পরিবর্তে সরকার আইনের পথে এই ব্যবস্থার মোকাবিলা করতে পারে। সরকার যদি অবিলম্বে এই কাজ বন্ধ না করে তাহলে আদালতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। ক্ষতিপূরণ আদায় বন্ধ করার জন্য ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশ সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে বেঞ্চ।
উল্লেখ্য, পি এ টিটু নামে এক ব্যক্তি যোগী সরকারের ক্ষতিপূরণ আদায়ের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আবেদনকারীর আইনজীবী শীর্ষ আদালতকে জানান, কোনওরকম ভিত্তি ছাড়াই শুধুমাত্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। ৬ বছর আগে মারা গিয়েছেন এমন এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নোটিশ জারি হয়েছে। এমনকী, ৯০-এর বেশি বয়সি বেশ কয়েকজনকেও এ ধরনের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, একজন নবতিপর ব্যক্তি কি এভাবে হিংসা করতে পারে?
অন্যদিকে যোগী সরকার আদালতকে জানায়, ৮৩৩ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে ২৭৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নোটিশ জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ২৩৬ জনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণে অবশ্যই বিজেপির কাছে উদ্বেগের। অন্যদিকে বাকি ছয় দফা নির্বাচনের আগে যোগী সরকারকে আক্রমণ করার জন্য বিরোধী দল এক নতুন অস্ত্র হাতে পেল।